Thursday, March 19, 2020

"সেই তুমি" পর্বঃ ১২



সকাল থেকেই আকাশটা মেঘলা হয়ে আছে, সেই সাথে বাতাস বইছে কিছুটা জোড়ে। বৃষ্টি যে আসবে তা বোঝা ই যাচ্ছিল। জল দাঁত দিয়ে নখ কাটছিল আর মনে মনে সৃষ্টকর্তার কাছে প্রার্থনা করছিল যেনো বৃষ্টি না আসে। অন্তু এর উপর এমনিতেই অনেক রেগে আছে তার উপর আজকে ওর বার্থ ডে! যদি যেতে না পারে অন্তু ভীষণ কষ্ট পাবে......তাই ঘরের কাজগুলো হেনা বেগম না বলতেও জল সব করে ফেলল। হেনা বেগম মাঝে মাঝে আড়চোখে জল কে দেখছিল। মনে মনে ভাবলেনঃ 
'এতো ভালো  হলো কবে'!  না বলতেই সব কাজ সেরে ফেলছে! নিশ্চয়ই কোন মতলব আছে। 
কিন্তু মুখে কোন কথা বললেন না। ইদানিং জলের আচার ব্যবহার হেনা বেগম কে ভাবিয়ে তুলছে কারন জল অনেকটা ই চঞ্চল স্বভাবের কিন্তু গত ১ মাসে জলের এই স্বভাব টা একেবারেই পরিবর্তন হয়ে গেছে! জল এখন আগের মতো বায়না করেনা, নিজে নিজে হাসে, কারো সাথে কথা বলতে চায় না! যে মেয়েকে সপ্তাহে অন্তত একবার ঘুরতে না নিয়ে গেলে রাগারাগি কর‍তো সে মেয়েকে এখন জোড় করেও ঘরের বাইরে বের করা যায় না! কেমন জানি এক ঘেয়ে হয়ে যাচ্ছে মেয়ে! হেনা বেগম আরো বেশি চিন্তায় পড়ে গেলেন। 
মনে মনে বললঃ আমি তোর মা, দুনিয়া তোর আগে দেখেছি, তোর সমস্যা ত আমি বের করবো ই! 
তাই তীক্ষ্ণ নজর রাখার চিন্তা করলেন। ঘড়িতে তখন সকাল ১০ টা বাজে। দিন খারাপ তাই স্কুলে যাওয়ার জন্যে হেনা বেগম না করলেন। জল কোন জবাব দিলো না।বোরকা পড়ে ব্যাগ নিয়ে বের হতে যাচ্ছিল। 

হেনা বেগম বললেন ঃ কিরে! আজকের দিনেও তোর প্রাইভেট পড়তে যেতে হবে? আজ যাওয়ার দরকার নাই। ঘরে বসে থাক, বৃষ্টি আসবে।

জলের হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে আসছিল মায়ের কথায়! যে ভয়টা পেয়েছিল সেই টা ই হচ্ছে! জল নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে বললঃ 
'আম্মু আজকে যেতে হবে, বিকেলে স্যারের বাসায় পার্টি আছে! 
হেনা বেগম ভ্রু কুচকে বললঃ এই রকম দিনে কোন পার্টি ফাটি করতে হবে না! চুপচাপ ঘরে বসে থাক, আর পার্টি যদি থাকেও সেটা বিকেলে,  এই খারাপ আবহাওয়া তে আজকে দুইবার পড়তে যাওয়ার কোন দরকার নাই! 

জলের মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে গেলো। সে অনেক ভাবে চেষ্টা করল হেনা বেগম কে মানাতে কিন্তু হেনা বেগম নিজের সিন্ধান্ত থেকে এক বিন্দু পরিমান ও নড়লেন না। জল রাগে ফেটে পড়ল কিন্তু মায়ের মুখের উপর কিছু বলার সাহস ওর হলো না। তাই সে ঘরে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিলো.....অনেক কান্না পাচ্ছে ওর! 

জলের প্রতিটি মুহূর্তের প্রতি হেনা বেগম সূক্ষ্ম নজর রাখার সিদ্ধান্ত নিলেন। তিনি ভাবতে লাগলেনঃ যে মেয়েকে আগে বকাঝকা করেও প্রাইভেট পড়তে পাঠাতে পারেনি সেই মেয়ে গত ১ মাসে একবার ও প্রাইভেট মিস দেয় নি, হোক না হোক এই প্রাইভেট এ ই কিছু একটা আছে, বের করা লাগবে! 


আকাশের অবস্থা দেখে অন্তুর মন টা আরো খারাপ হয়ে গেলো।  বাতাসের পরিমাণ ও বেড়েই চলেছে, যে কোন মূহুর্তে বৃষ্টি আসবে......সকালে কেউ ই পড়তে আসে নি, সবাই জানে আজ অন্তুর জন্মদিন তাই সবাই কল দিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়েছে। কেউ আজ পড়তে আসবে না কিন্তু সন্ধ্যায় পার্টিতে আসবে। 


প্রায় পৌনে বারোটার দিকে প্রচন্ড বৃষ্টি শুরু হলো! জল ভেবেছিল আকাশের অবস্থা হয়ত ভালো হবে কিন্তু ওর ধারনা পাল্টে দিয়ে আকাশ যেনো আরো কালো হয়ে উঠল আরটানা বৃষ্টি পড়তেই লাগল......জানালার পাশে হাটুর উপর মাথা রেখে বিষন্ন মন নিয়ে জল বৃষ্টি দেখতে লাগল। মনের ভিতর নানা প্রশ্ন ঘোর পাক খাচ্ছে! কি হতে কি হয়ে গেছে বুঝেই উঠতে পারছেনা! অন্তু এতো সামান্য একটা ব্যাপার নিয়ে কথা বলাই বন্ধ করে দিলো এটা ভেবে চোখের পানিতে গাল ভিজে গেছে জলের.......


বৃষ্টির তীব্রতা দেখে তানহা অন্তুকে বললঃ দাদা, আজকে তোমার স্টুডেন্ট রা মনে হয় মনের সুখে ঘুমাচ্ছে! প্রায় ৩ টা বাজে, বৃষ্টি থামার কোন নাম ও নেই.........

তানহার কথার জবাবে অন্তু শুধু ওর মুখের দিকে তাকালো, কোন কথা বলল না। তানহা চলে যাবার পর,অনেক ক্ষন বৃষ্টি তে হাত ভিজিয়ে অন্তু তানহার রুমে গিয়ে বলল-

"তানহা, আজকে পার্টির সব তুই রান্না করিস, আমার মন ভালো না, রান্না খারাপ হবে আমার......."

তানহা হেসে বললঃ আরে সব আমি আরবো না, তুমি বিরিয়ানি টা রান্না করে দিও, বাকিগুলো আমি করবো, আর ওরা আসবে বলে ত মনে হয়না........

অন্তু আগের মতোই নিরস কন্ঠে বললঃ আসবে.........

***জল অনেক ভেবে সিদ্ধান্ত নিলো যা ই হোক ও যাবে অন্তুর বাসায় এক মিনিটের জন্যে হলেও.......তাই নন্দিনির ফোনে কল দিলো.......নন্দিনির ফোন ওর মাসি ধরলঃ 

"হ্যালো'!! কে বলতাছেন?

জলঃ আমি জল, নন্দিনি আছে বাসায়?

মাসিঃ নন্দিনি ত একটু আগে পড়তে চলে গেছে!  

জল ফোন কেটে দিলো। 
"জান্নাতকে কল দিয়ে লাভ নেই, নন্দিনি গেলে বাকিরাও সবাই গেছে! আমিও যাবো"! জল নিজে নিজেই রেগে উঠল......  
সে রেডি হয়ে ব্যাগ নিয়ে বের হতে যাচ্ছিল এমন সময় বকুল হোসেন ছাতা নিয়ে ঘরে ঢুকল.......  

বকুল হোসেনঃ কিরে! এই বৃষ্টি তে কই যাস তুই? 

জল মাথা নিচু করে বললঃ আব্বু স্যারের বাসায় আমরা সব স্টুডেন্ট রা টাকা দিয়ে পার্টি করতাছি, সবাই গেছে, আমি দেরি করে যাচ্ছি! 

বকুল হোসেনঃ না, থাক,  ওই পার্টিতে যাওয়া লাগবে না, তুই বৃষ্টি থামলে তোর মাকে নিয়ে একটু তোর খালাদের বাসায় যাইস, আমি ওই বাসায় কিছু কাপড় কিনে রেখে এসেছি তোর জন্য, বৃষ্টির জন্য আনি নি, নিয়ে আসিস গিয়ে! 

জলের অনেক কান্না পাচ্ছিল তবু নিজেকে সামলে বললঃ আচ্ছা,আমি খাবো না, শুধু যাবো আর আসবো! কথাটা বলে বকুল হোসেনের উত্তরের জন্য অপেক্ষা না করে সামনে দিয়ে বের হয়ে গেলো! 

বকুল হোসেন জিবিনেও এইটা ভাবেনি যে মেয়ে এমন করতে পারে, উনি 'থ' হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন সেখানেই!


অন্তুর মন খারাপ দেখে জান্নাত নন্দিনিকে ইশারা দিয়ে বললঃ তুই একটু তানহা আপু কে হেল্প কর, আমি দেখি স্যারের কি হয়েছে......

নন্দিনিকে তানহার কাছে পাঠিয়ে জান্নাত অন্তুর আশে গিয়ে বসে হেসে বললঃ 

জানেন তো, আমার আবার ঘোমরা মুখ একদম ভালো লাগেনা! আজকে আপনার ডাউনলোড দিবস, কই আমাদেরকে একটু আনন্দ করার জন্য উৎসাহিত করবেন, তা না করে মুখ ভার করে আছেন! 

অন্তু জান্নাতের দিকে তাকিয়ে বললঃ আজকের দিনে মিথ্যে বলবো না......আমার জন্যে মনে হয় বৃহস্পতিবার টা অনেক কুফা দিন কারন জলের সাথে সম্পর্ক টাও বৃহস্পতিবার হয়েছে আর প্রতিটা ঝগড়া ও ঘটনাক্রমে সেই বৃহস্পতিবার ই হয়েছে! 

অন্তুর মুখে জলের কথা শুনে জান্নাত নাক ফুলিয়ে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে রইল। সে একটু চুপ থেকে বলতে লাগলো ঃ আপনি কি! ওর কথাটা আজকের দিনে না বললে কি হয়! জল কে এই বৃষ্টি তে ওর ঘরের কেউ বের হতে দিবেনা! আপনি ত জলের কথাই ভাবলেন, আমার কথা ত একবারও ভাবেন না! জলের চেয়ে কোন অংশে কম ভালো ত আমি বাসি নাই আপনাকে!

অন্তু বুঝল জান্নাত আবার সেই আগের কথা শুরু করেছে তাই কথাটা এড়ানোর জন্যে কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল, পাশের রুম থেকে আবুল দৌড়ে এসে বললঃ স্যার!! মেডাম আইছে! মানে জল আপু আসছে! 

আবুলের মুখের কথা শেষ ও হয়নি জল রুমে ঢুকলো।  ভেতরে ঢুকেই জলের মেজাজটা আর খারাপ হয়ে গেলো জান্নাত কে অন্তুর এতো পাশ ঘেসে বসে থাকতে দেখে! জান্নাত হাতের শো পিস টা বিছানার এক পাশে একটু জোড়েই ছুড়ে মারল....... সারা রাস্তা জল এই কথাটাই ভাবছিল যে, জান্নাত যেহেতু আছে ঘরে, কিছু না কিছু প্যাচ ত হবেই, তাই অন্তুর জন্যে ভিজে একটা গ্রিফট কিনে তড়িঘড়ি করে অন্তুর বাসায় চলে এলো কিন্তু এসে এমন করে বসে থাকতে দেখে জলের মেজাজ এতোটা ই খারাপ হলো যে, ও ভুলেই গেলো বাসা থেকে ৫ মিনিটের কথা বলে আসছে! জল ভেজা বোরকা টা খুলে চুলগুলো হাত দিয়ে বারি দিয়ে পানি ঝাড়তে ঝাড়তে জান্নাতের দিকে তাকিয়ে বললঃ 

' জান্নাত, তুই একটু তানহার রুমে যা ত'..... তানহা যেনো এ ঘরে না আসতে পারে খেয়াল রাখিস! আর আবুল ভাইয়া, তুমি ছেলেদেরকে বইল বাহিরের দরজায় কেউ নক করলে আগে যেনো আমাদের রুমে এসে বলে তারপর দরজা খুলে আর কেউ যেনো এ রুমে না আসে! 

কথাগুলো বলে জল ইচ্ছে করেই জান্নাতের সামনে অন্তুর দিকে তাকিয়ে কিছু হয়নি এমন ভাবে বললঃ তোমার কি মনে হয়েছিল?  তোমার জন্মদিন আর আমি আসবো না? তা কি হয় জান, বলো?

জান্নাতের গা জলছিল কিন্তু মুখে কিছু না বলে হাসি হাসি মুখে বললঃ ঢং ইজ কুয়ারা! তুই না স্যারের সাথে ঝগড়া করেছিস!

জল অন্তুর দিকে তাকিয়ে বললঃ তাই নাকি! কবে, কখন! আমার তো মনে নেই! আরে তুই যা, দেরি হয়ে যাচ্ছে আমার! 
জল একরকম জোড় করেই আবুল আর জান্নাত কে রুম থেকে বের করে দিলো!  

জল ওদের বের করে অন্তুর দিকে কড়া নজড়ে তাকিয়ে বললঃ এসবের মানে কি! তুমি আমার সাথে কথা বলবা না, আমার ফোন ধরবা না ভালো কথা! তুমি জান্নাত কে কোলে নিয়ে বসে আছো কেন? 


অন্তু জলের কথায় চোখ সরু করে দাঁত খিঁচিয়ে বললঃ আজেবাজে কথা কম বলেন! এসব স্বভাব আপনার থাকতে পারে, আমার নেই! 

অন্তুর কন্ঠ শুনেই জল বুঝতে পারল অন্তুর রাগ এখনো কমে নি তাই হেসে বললঃ আজকে তোমার খবর আছে, এখন রুম থেকে বের হও! আমি শাড়ি নিয়ে আসছি! শাড়ি পড়ব, তানহা আপু কে পাঠাও, যাও বের হও!

জল অন্তুকে জোড় করে ঘর থেকে বের করে দিলো। নন্দিনি জান্নাত আর তানহাকে জোড়ে রুমে ঢুকিয়ে ধপাস করে দরজা লাগিয়ে দিলো! 


ছেলেরা আর বাকি মেয়েরা সবাই পাশের রুমে জোড়ে শব্দ করে গান বাজাচ্ছিল কিন্তু ওদের গানের শব্দ বাহিরে ভালো করে শোনা যাচ্ছিল না, বৃষ্টির শব্দ ছিল তার চেয়ে বেশি প্রকট! 

প্রায় ২০ মিনিট পর তানহাকে নিয়ে জান্নাত আর নন্দিনি যখন বের হয়ে গেলো তখন ও জল ভিতর থেকে দরজা চাপিয়ে রেখেছিল। তানহা কে কথার ছলে নন্দিনি অন্য রুমে নিয়ে গল্পে জড়িয়ে পড়ল। জান্নাতের ভিষণ রাগ হচ্ছিল তবু অনিচ্ছাকৃত ভাবেই অন্তুর সামনে এসে বললঃ 

" আপনাকে জল ডাকে! বলছে জরুরি কথা আছে.....

জলের উপর অন্তুর রাগ একটু ও কমে নি বরং আরো বেড়ে গেছে এখন! কারন অন্তুর হিংসে হচ্ছিল!  ঘর ভর্তি ছেলে স্টুডেন্ট, ওদের সামনে জল শাড়ি পড়ে সেজে দেখাবে! অন্তুর মেজাজ সাথে সাথেই আরো বেশি খারাপ হয়ে গেলো। সে চোখ গরম করে বললঃ " আমি পারবো না যেতে, যার কথা আছে তাকে বলো এসে বলে যেতে! 


জান্নাত ভিতরে গিয়ে কথাটা বলতেই জল রেগে চিতকার করে বললঃ ওই!! তুমি আসবা নাকি আমি সবার সামনে এই সাজ নিয়ে বেরিয়ে আসবো! তাড়াতাড়ি আসো, শুধু একটা কথা আছে, শুনেই চলে যেও.....


সাজু হেসে বললঃ স্যার যান, আমরা আমরাই ত! 

আবুল বললঃ আরে স্যার, ভাই রাগ করিয়েন না! ভাবি রে মাফ করে দেন! 

আহমেদ বললঃ মেনশন নট, তবে পারসন টা কিন্তু বিপদ জনক, যান, না হলে এখানে লংকাকান্ড ঘটে যেতে পারে! 

অনিচ্ছা থাকা সত্বেও অন্তু জলের কাছে গেলো....... ভেতরে ঢুকতেই জল কে দেখে অন্তু থমকে গেলো! জল লাল একটা শাড়ি পড়েছে, লাল টিপ আর লাল লিপিস্টিক যেনো চেহারার সৌন্দর্য আরো বাড়িয়ে তুলেছে! আগে কখনো জল কে এমন সাজতে দেখেনি অন্তু! মনে হচ্ছে সামনে কোন মানুষ নয়, একটা পরী বসে আছে! জল এমনিতেও অনেক সুন্দর ছিলো। গায়ের রং কাঁচা হলুদের মত, টানা চোখ, জোড়া ভ্রু আর গোলাপি ঠোঁট যেন স্রষ্টার এক অনন্য সৃষ্টি!  

জল অন্তুকে রুমে ঢুকতে দেখে হেসে বললঃ জান! সুন্দর লাগছে না আমাকে! দেখো! 
বলেই হাত দুটি তে পড়া লাল চুড়িগুলো দেখালো! অন্তু ততক্ষণে নিজেকে সামলে নিয়েছে। আগের মতো ই রাগ দেখিয়ে বললঃ আমাকে এসব দেখাতে কে বলেছে! আপনি যাদের কে দেখাতে সাজছেন আর যার সাথে মেলায় গেছেন তাদের কে দেখান, কাজে দিবে! 

অন্তুর কথায় জল অনেক কষ্ট পেলো তবু নিজেকে সামলে বললঃ আমি একমাত্র তোমাকে দেখাতে সেজেছি, আমি ত এই ঘরে কোন পুরুষ মানুষ ঢুকতে দিবো না আজকে! তুমি দেখার পর পর ই আমি সব খুলে বোরকা পড়ে নিবো! 

অন্তুঃ তাতে,আমার কি! আপিনার যা খুশি করেন! 

জল মাথা নিচু করে দাঁত দিয়ে নখ কাটছিল,  হঠাৎ উঠে দরজাটা লাগিয়ে ঘরের বাতি অফ করে দিলো। অন্তুকে ধাক্কা দিয়ে খাটে ফেলে পাগলের মতো ওর দুই ঠোঁটে, গালে একের পর এক চুমো দিতে লাগলো!  অন্তু নিজেকে ছাড়ানোর বৃথা চেষ্টা করল, লাভ হলো না! জল অন্তুকে আরো শক্ত করে ধরে চুমো দিতে লাগলো......... এভাবে অনেক্ষন কিস করার পর বললঃ আজকে আমার জীবনের প্রথম কোন ছেলেকে নিজের দেহ দিলাম, একটা,অবিবাহিত মেয়ের কাছে তার ইজ্জৎ সব চেয়ে দামি, আমি আমার সব আমার ভালোবাসার জন্য তোমার কাছে বিলিয়ে দিয়েছি, আশা করিনা এর পর তোমার মনে আমার ভালোবাসা নিয়ে আর কোন সন্দেহ থাকতে পারে.......আমি তোমাকে ছাড়া অন্য কাউকে ভালবাসার কথা কল্পনাতেও আনতে পারিনা.....আমি আজ থেকে মন থেকেই তোমাকে আমার স্বামি মেনে নিলাম......ধোকা দিওনা! 

জল অন্তুর উপর থেকে নেমে গেলো। চোখ ভিজে গেছে পানিতে......অন্তুর রাগ কমে গেছে........সে জলের হাত ধরে বললঃ 

ভালোবাসি বলেই তোমাকে অন্য কারো সাথে দেখলে হিংসে হয়, ভালোবাসি তাই তোমাকে এক দিন না দেখলে ভিষন কষ্ট হয়! তুমি বুঝো? আমি এক মূহুর্ত তোমাকে না দেখলে পাগল হয়ে যাই! তুমি না এলে সারাদিন ই মন খারাপ থাকে, আমি চাইলেও নিজেকে সামলাতে পারি না! আমি তোমাকে সত্যি অনেক, অনেক ভালোবাসি!  তুমি আর এমন ভুল করোনা তাহলে আমি সত্যিই মরে যাবো! 

কথাগুলো শুনে জলের চোখ দিয়ে পানি পড়ে দুগাল ভিজে উঠল!  অন্ধকারেও জলের চোখের ছলছল চোখ অন্তু স্পষ্ট লক্ষ্য করল তাই জল কে বুকে জড়িয়ে নিলো! 

বাহির থেকে নন্দিনি আর জান্নাত বুঝার চেষ্টা করছিল ভিতরে কি হচ্ছে কিন্তু বৃষ্টির শব্দের ভিতর অন্য কোন শব্দ তাদের কানে আসলো না আসলেও জলের তীব্র একটা চিতকার কানে ঠিক ই বাজল যার ফলে বাহিরের অন্য কারো বুঝতে কোন অসুবিধা হলো না ভেতরে কি হচ্ছে!

এভাবে কতোক্ষন ছিল অন্তু আর জলের মনে নেই! দুজল ঘেমে উঠেছে! হাঁপাতে লাগলো দুজন! জলের পাঁচ আংলের দাগ অন্তুর পিঠে বসে গেছে! এমন সময় আবুল দরজায় কড়া নেড়ে বললঃ ও স্যার, জলদি আসেন, খাবার রেডি!!! 

জল কাপড় পড়তে পড়তে বললঃ অন্তু যা ছিল সব তোমার কাছে আমানত রেখেছি! ঠকাইও না আমাকে......মরে যাবো তাহলে!

অন্তু কি বলবে ভেবে পেলো না, শুধু জলের কান্নাভেজা মুখের দিকে তাকিয়ে রইল!!! 





No comments:

Post a Comment