Thursday, April 23, 2020

"ভয়ংকর সন্ধ্যা" শেষ পর্ব



পপি কে এ অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে সবার হুশ ঊড়ে গেলো! সবাই ভয়ে স্তব্ধ হয়ে গেছে মনে হচ্ছিল! আবির সবার দিকে একবার তাকালো তারপর রাতুল কে মৃদু ধাক্কা দিয়ে বললঃ দোস্ত কিছু কর! মরে গেলে ত সবাই ফাঁসবো! 

আবিরের কথায় রাতুলের হুশ হলো! সবাইকে নিয়ে রাতুল জমিদার বাড়ির ভিতর ঢুকলো। সিড়িগুলো এখনো অনেক মজদুত আছে! বাড়ির দেয়ালগুলোতে আগাছা জন্মে আছে। গা ছমছমে রহস্যময়তায় ভরা যেন এক মৃত্যুপুরী এটা!! সবাই পপির কাছে গোল হয়ে দাঁড়িয়ে গম্ভীরমুখে একে অন্যের দিকে তাকাতে লাগলো। রাতুল পপির নাকে পাশে হাত নিয়ে পরিক্ষা করল জীবিত আছে কি না!....... হ্যাঁ..... জীবিত! 

রাতুল চেঁচিয়ে সবাইকে নির্দেশ দিলো পপিকে কে নিচে নিয়ে যেতে।সবাই ধরাধরি করে কোন রকমে পপিকে যখন গ্রামের ভিতর নিয়ে আসছিল আশেপাশের বাড়িগুলোতে তখন রীতিমতো গবেষণা শুরু হয়ে গেছে!! এ বিষয়টা যে যেমন পারছে তেমন ই ব্যাখ্যা দিতে শুরু করেছে!! 

পপির মা আর দাদী প্রায় জ্ঞান হারানোর অবস্থা!  পপির দাদী তো রীতিমতো মাতম শুরু করে দিয়েছে! সবাইকে উদ্দেশ্য করে টেনে টেনে বলতে লাগলোঃ যদি....আ-মার না-ত--নীর কিছু হয় তোগোরে জেলে দিমু গোলামেরা!! আমার একটা ই মাত্র না-তনী! আল্লাহ বাঁচাও আমার নাতনীরে!!

কেউ একজন গিয়ে হরিবল তান্ত্রিক কে খবর দিলো। হরিবল এসে ঘটনা পর্যবেক্ষণ করে গম্ভীর হয়ে বললঃ হুম্........ ঘটনা বেশি ভালা না! পপিরে ডাকিনী ধরছিল! ভগবানের কৃপায় এ যাত্রায় বেঁচে গেছে তবু স্বাভাবিক হতে সময় নিবে!!
ঘটনা টা সবার মনে গেঁথে গেলো। সেদিনের পর থেকে কেউ ই আর বাহিরে তেমন আড্ডা দিতে বের হতো না। রাতুল রা গ্রামে আসার পর থেকেই খেয়াল করল সন্ধ্যার পর পর ই পুরো গ্রামের আবহাওয়া কেমন যেনো থমকে যায়! স্তব্ধতায় ঢেকে যায় পুরো গ্রাম। ভয়ানক লাগে তখন। নেহায়েত অতি আবশ্যক কোন কাজ ছাড়া কেউ তেমন একটা বের হয় না! যাই হোক দেখতে দেখতে পরিক্ষা প্রায় শেষের দিকে চলে এলো। আর মাত্র ২ টা পরিক্ষা আছে। দুটা পরিক্ষা দিতে সময় লাগবে ৭ দিন! তাই একটু রিলাক্স মুডে ই রইল সব পরিক্ষার্থী রা। এ কয়েক দিনে সবার মন থেকে ভয় টা দূরে সরে গেছে। গ্রামের কোথাও মেলা বসেছে। গ্রামের বেশিরভাগ কিশোর কিশোরীরা সেখানে যাচ্ছে। বাবলু,আনিকা,পপি সহ আরো কয়েক জন পরিক্ষার্থী ও গেলো মেলা দেখতে। রাতুল যায় নি। সে মাঠের মাঝে বিশালাকৃতির বটগাছের নিচে বসে আবির, জামাল, কাদের সহ আরো কয়েক জন স্থানীয়দের সাথে বসে আড্ডা দিচ্ছিল। কথায় কথায় বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নেমে আসল। আড্ডা টা মাতিয়ে তুলল রাতুল গান গেয়ে তাই কেউ টের ই পেলো না কখন সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে.…....রাতুল গান গাইছিল হঠাৎ ওরা দেখলো ওদের দিকে একটা মহিলা এগিয়ে আসছে! কোলে একটা বাচ্চা, পড়নে সাদা রং এর একটা শাড়ি.... আবির কে তাকিয়ে থাকতে দেখে সবাই হেসে উঠল।  রাতুল গান থামিয়ে বললঃ ভিখারি হবে শিউর ই।

মহিলা টা ওদের সামনে দিয়ে হেঁটে চলে গেলো,বাচ্চাটা কান্না করছিল, অন্ধকারে মহিলার মুখ বোঝা গেলোনা.........

***রাতুল হাসি তামাশায় সবাইকে মাতিয়ে তুললো।  বন্ধু বান্ধবরা সবাই আড্ডাতে এতোটাই মশগুল ছিল যে খেয়াল ই করেনি কখন যে সবাই হাঁটতে হাঁটতে পুরাতন সেই শশ্মশান ঘাটে এসে পড়েছে! রাতুল যখন গান থামালো তখন সবার হুঁশ হলো।  সাজিদ নামের একজন রাতুলের দিকে তাকিয়ে চোখ কটমট করে বলল- 

তুই আমাকে আগে বললি না কেন! আমি যদি জানতাম তোরা শশ্মানে আসবি আমি কখনোই আসতাম না! আমি এক মার এক ছেলে! 

কথাটা বলেই সাজিদ মেয়েদের মতো চোখ মুছতে লাগলো যা দেখে বাকি সবাই হেসে উঠলো। কিন্তু ওদের হাসি মিশে যেতে বেশি সময় লাগলো না কেননা আবির চোখ বড় বড় করে শশ্মানের এক কোনে তাকিয়ে রইল। ওর চোখ অনুসরণ করে বাকিরা যখন সেই দিকে তাকালো তখন সবার শ্বাস বন্ধ হওয়ার উপক্রম হলো!  সবাই দেখলো একটু আগের সেই মহিলাটি কোলের বাচ্চাটা কে হাটুর উপর রেখে ডান হাত দিয়ে কলিজাটা টেনে বের করে খাচ্ছে! সারা মুখে রক্ত লেগে আছে! মুখে পৈশাচিক হাসি! ওদের দেখে রক্তমাখা মুখে হাসিটা আরো চওড়া করে হাত ইশারায় ওদের কে কাছে ডাকলো........!!!

এ দৃশ্য দেখে সবার অন্তর আত্মা কেঁপে উঠল! রাতুলের হাত ধরে সাজিদ জোড়ে টান দিয়ে বাবাগো বলে চিতকার করে দৌড় দিলো! ওদের পিছু পিছু বাকিরাও দৌড়ে পালাতে শুরু করলো........ সেই মানুষ খেকো মহিলাটিও ওদের পিছু পিছু ধাওয়া করতে শুরু করল! এ দৃশ্য দেখে একেক জনের জ্ঞান হারানোর অবস্থা প্রায়!! 
এভাবে এতোক্ষণ দৌড়েছে কেউ বলতে পারবেনা, ওদের যখন হুঁশ ফিরলো তখন দেখলো ওদেরকে ঘিরে আছে গ্রামের শ খানেক লোক, সবাই ওদের নানান কথা জিজ্ঞেস করছিল........কিন্তু কারো কথায় ওদের কান নেই, সব শেষে এরা বেঁচে আছে এটা ভেবে দীর্ঘ একটা নিশ্বাস ছেড়ে সবাই একে অন্যকে জড়িয়ে ধরলো আর ওয়াদা করলো আর ভুলেও কখনও শশ্মান ঘাটে যাবে না কেউ.......রাতুল সেদিন বাসায় ফিরেই বাবলু আর আনিকাকে ব্যাগ গুছাতে বলল..........এখানে আর এক মূহুর্তও নয়........


(শেষ) 

Saturday, April 18, 2020

"ভয়ংকর সন্ধ্যা" পর্বঃ৪



রাতের এই ভয়ানক ঘটনা টা পরদিন সকালে পরিক্ষা দিতে গিয়ে বাবলু কিছুটা শুনতে পেয়েছিল আশে পাশের বন্ধু বান্ধব থেকে কিন্তু পুরোপুরি বুঝতে পারেনি তাই সে পরিক্ষা শেষে বাসায় এসে রাতুলের সংগে ব্যাপার টা শেয়ার করল। রাতুল ঘটনা শুনে হেসে বললঃ 

"আমি নিজেই ছিলাম এই ঘটনায়"!! তুই ত শুধু শুনেছিস আর আমি পুরো ঘটনা লাইভ দেখেছি!! 

রাতুলের কথায় আনিকা আর বাবলু চোখ গোল করে হা করে তাকিয়ে রইল। বাবলুর একবার মনে হলো রাতুল ওদের কে ভয় দেখানোর জন্যে এসব কিছু বলছে কিন্তু একটু পর ই ওর ভুল ভেংগে গেলো কেননা ইতিমধ্যেই রাতের ব্যাপারটা পুরো গ্রামেই ডাক পড়ে গেছে যার প্রভাব টা এই বাড়িতেও পড়েছে! 

পপি মেয়েটা আনিকাকে ডেকে নিয়ে আরো কয়েক জন মেয়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছিল এমন সময় ওর দাদী ই আগে কথাটা সবার সামনে তুলল। বৃদ্ধা মহিলার বয়স হয়েছে অনেক কিন্তু মুখের একটা দাঁত ও পড়ে নি। তিনি পান মুখে দিয়ে গম্ভীরমুখে সবার দিকে তাকিয়ে বললঃ 

"এই পপি! তোরা কেউ সন্ধ্যার পর কাজ ছাড়া ঘর থেকে এক পাও বের করবি না! গতকাল রাতে তোর বাচ্চু চাচার মেয়েরে খাটাস এ ধইরা মাইরা ফেলতে চাইছিল! কোন রকমে ওরে গ্রামের মানুষ বাঁচাইয়া আনছে"! 

আনিকা উৎসুক হয়ে জিজ্ঞেস করলঃ কি হয়েছিল দাদী? আমার ভাইয়াও আজকে ঘটনা টা বলেছে কিন্তু আমরা কেউ বিশ্বাস করি নি, ভেবেছি হয়ত আমাদের কে ভয় দেখাচ্ছে!!

মহিলা আরো গম্ভীর হয়ে বললঃ তোমরা ত জানো না, আমাদের এ গায়ে বহু আত্মা, প্রেতাত্মা, রাক্ষাস আছে! দিন দুপুরেই হেরা যারে তারে মাইরা গাছে ঝুলাইয়া রাখে! গত রাতে ত এই গ্রামের সেরা তান্ত্রিক হরিবল রে অজ্ঞান ই কইরা ফালাইয়া রাখছিল প্রেত্নীরা!! ভাগ্য ভালো যে অনেক মানুষ আছিল আর ঠিক সময় বাঁচাইতে পারছে!! সাবধান থাকো সবাই!! দিন কাল খারাপ!! 

মহিলার কথা শুনে আনিকার কিছুটা ভয় লাগলো, পপি মেয়েটা আনিকার মুখের দিকে তাকিয়ে বললঃ আমাদের বাসা থেকে সোজা যেই বাড়িটা দেখা যায় বট গাছের পিছনে, ওইটা চেয়ারম্যান বাড়ি। ওই বাড়িতেও ভূত আছে! চেয়ার ম্যানের ছোট পোলা, ফাঁসি দিয়ে মারা গেছিল! গ্রামে হের আত্মা ঘুরে বেড়ায়,  অনেকে ই দেখছে রাত দুপুরে!!

আনিকা এবার ঢোক গিলে চোখ গোল করে সবার মুখের দিকে তাকিয়ে রইল ফেলফেল করে! সে মনে মনে বললঃ এ কোন ভূতুড়ে গ্রামে এসে পড়েছি!! সব কিছুই ভৌতিক লাগছে এখন!!
রাতুল বিকেলে যখন বাবলুর কাছে রাতের সেই অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা করছিল তখন আনিকাও যোগ দিলো। তাদের কথার মাঝে সেখানে পপি, কান্তা আর কয়েকজন যুক্ত হলো। সবাই মনোযোগ দিয়ে রাতুলের কথা শুনছিল। কথার ফাঁকে ফাঁকে সুকৌশলে পপি বাবলু কে একটা চিঠি ধরিয়ে দিলো! বাবলু ভেতরে ভেতরে অনেক excited হয়ে পড়েছিল,  প্রেমের আভাস পাচ্ছিল সে। তাই সবাই যখন কথার মাঝে ব্যস্ত তখন সে আড়ালে গিয়ে চিঠিটা খুলে দেখলো কি লিখা আছে.......কিন্তু চিঠিতে কিছু লিখা নেই!! সাদা পেজ! বাবলু বিরক্তি নিয়ে কাগজটা ফেলে দিলো!  তারপর আবার আগের জায়গায় এসে সবার সাথে আলোচনায় যোগ দিলো। রাতুল তার অভিজ্ঞতার সাথে আরো রসিকতা মিলিয়ে এমন ভাবে ঘটনা টা উপস্থাপনা করতে লাগলো যে উপস্থিত সবাই ভীমড়ি খেয়ে গেলো! 


দেখতে দেখতে এ গ্রামে প্রায় রাতুল দের ১৫ দিন কেটে গেছে যার মাঝে গ্রামের অনেকের সাথেই তাদের খুব ভালো সম্পর্ক হয়ে গেছিল। এর ফলে প্রতিদিন বিকেলে বিভিন্ন বাসার পরিক্ষার্থী রাও আড্ডা দেওয়ার জন্যে রাতুলদের সাথে এসে যোগ দিতো। সামনে গণিত পরিক্ষা তাই ৩ দিন গ্যাপ দেওয়া হয়েছে পরিক্ষার মাঝে। এর ফলে অনেকে ই অবসর সময় টা উপভোগ করার জন্যে রাতুলদের সাথে যুক্ত হলো। বাবলুদের গ্রাম থেকে ওর যে সব সহপাঠী পরিক্ষা দিতে এসেছে তাদের অনেক অনুরোধের পর রাতুল রাজি হলো আজকে সবাই মিলে গ্রামের মাঝখানে যে বিশাল বড় জমিদার বাড়ি টা আছে সেখানে ঘুরতে যাবে। ওদের সাথে আনিকা,পপি কান্তা ও যুক্ত হলো।

রাতুল অনেক রসিক মানুষ। ওর কথা সবার ভালো লাগে তাই ও যখন কোন মিথ্যা কথা সবার সামনে সত্য বলে চালিয়ে যায়, তখন কেউ এ নিয়ে দ্বিমত পোষণ করে না। রাতুল আবির কে সাথে নিয়ে নিলো।

ওরা সবাই যখন বের হলো তখন বিকেল ৫ টার মতো বাজে। আকাশ পরিস্কার ই ছিল কিন্তু জমিদার বাড়ির পাশে পৌঁছাতে পৌঁছাতে আকাশটা মেঘলা হয়ে গেছে। প্রায় কুড়ি মিনিট হাঁটার পর ওরা যখন প্রাচীন সেই জমিদার বাড়ির সামনে এসে পৌঁছাল তখন পুরো আকাশ কালো হয়ে গেছে মেঘে!! পরিবেশটা কেমন যেন থমথমে হয়ে গেছে!  আকাশের এমন অবস্থা দেখে সবাই মন খারাপ করে ফেললেও রাতুল হেসে বললঃ 

"এটাই তো সুন্দর পরিবেশ "!! বৃষ্টি বৃষ্টি ভাব থাকবে, ঝড়ো বাতাস থাকবে! এসব না থাকলে হান্টেড প্লেস এ এসে কি কোন মজা আছে! তোমরাই বলো! 

সবাই রাতুলের কথায় ইতিবাচক সাড়া দিলো। আবির গ্রামের স্থানীয় ছেলে। সে একে একে সবাই কে জমিদার বাড়ির সব ঐতিহ্য ব্যাখ্যা করতে লাগলো। ওরা সবাই জমিদার বাড়ির সামনে বিশাল মাঠ টায় এসে বসল। সবার ভিতরেই এক অন্য রকম ভালো লাগা কাজ করছিল। আবির যখন জমিদার বাড়ির ঘটনা বলতে ব্যস্ত তখন কথার ছলে আনিকা হঠাৎ আবির কে উদ্দেশ্য করে বললঃ " ভাইয়া, মনে কিছু না করলে আপনি যদি আমাদের কে একটু বলতেন..... আপনার চেহারা এসিডে কি করে ঝলসে গেছে? 

আনিকার প্রশ্নে আবির কথার মাঝে হঠাৎ চুপ হয়ে গেলো।  রাতুল ব্যাপার টা খেয়াল করে সাথে সাথেই আনিকা ধমক দিয়ে বললঃ "পাগলের মতো কথা বলস কেন! ঘুরতে আসছিস, ঘুর, এতো বাড়তি কথা বলতে কে বলছে তোকে? 

রাতুলের কথার পাত্তা না দিয়ে অন্য সবাইও আনিকা কে সমর্থন করল। রাতুল সবাইকে ই বিষয়টি নিয়ে কথা না বলার অনুরোধ করতে যাচ্ছিল কিন্তু ওর কথা মাঝ পথে থামিয়ে দিয়ে আবির কিছুক্ষন চুপ করে নিচের দিকে তাকিয়ে রইল..... তারপর বড় একটা নিশ্বাস ছেড়ে বলতে শুরু করলঃ 

" আমার এ অবস্থা আসলে অনেকটা আমার খালামনির জন্যেই হয়েছে! আমাদের দু টা বাড়ি পরেই একটা বাসা আছে। ওই বাড়ির বড় ছেলেটা আমার খালামনিকে ভালো বাসতো কিন্তু খালামনি পাত্তা দিতো না!.... 

আবির কিছুক্ষন আবার চুপ করে রইল। ওর সিরিয়াস মুড দেখে সবাই চুপ হয়ে গেলো।  কিছুক্ষন চুপ থাকার পর আবির আবার বলতে লাগলো....... 

"খালামনি প্রতিদিন যে ঘরে থাকতো সে ঘরে আমি বেশি একটা যেতাম না, কিন্তু ওই রাতে আমাদের ঘরে মেহমান ছিল অনেক তাই আমি আর আমার ছোট বোন খালামনির রুমে ছিলাম। আমি খালা মনির জায়গায় ঘুমিয়ে ছিলাম, উনি আমার বোনার সাথে নিচে শুয়ে ছিল হঠাৎ মাঝ রাতে সেই পাশের বাসার ছেলেটা জানালা দিয়ে খালামনিকে ভেবে আমার গায়ে এসিড ঢেলে পালিয়ে যায়! আমার গায়ে এসিড পড়েছে, খালার গায়েও পড়েছে কিছুটা!!! 

সবাই নিশ্চুপ হয়ে গেছে। আনিকা আবার জিজ্ঞেস করলঃ যে এসিড মেরেছে তাকে ধরতে পারছিলেন পরে?

আবির মাথা নেড়ে বললঃ না! সে সেদিন থেকেই গ্রাম থেকে পালিয়েছে!! 

এ ঘটনা শুনে কেউ আর কোন কথা বলল না।রাতুল সবার সিরিয়াস মুড ঠিক করার জন্যে হেসে কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল কিন্তু আকাশে খুব ঘন ঘন বিজলি চমকাতে দেখে সবাই বাসায় ফিরতে ব্যস্ত হতে উঠলো। এর মাঝে সেখানে ছোটখাটো একটা দুর্ঘটনা ঘটে গেলো.......

আবির যখন নিজের কথাগুলো বলছিল তখন ওদের কথার মাঝে পপি মেয়েটা হাঁটতে হাঁটতে জমিদার বাড়ির চিলে কোঠার দিকে চলে গেছিল। কেউ খেয়াল করে নি। হঠাৎ ওর চিতকার শুনে সবাই তড়িঘড়ি করে ওকে খুঁজতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো!  কোথাও দেখা যাচ্ছে না ওকে কিন্তু ওর চিতকার শুনা যাচ্ছে বারবার!!  
অনেক্ষন পর পাভেল নামে বাবলুর বন্ধু টা চিলে কোঠার  জানালায় পপিকে দেখে, সবাই কে ডাক দিয়ে আংগুল দিয়ে দেখাতে লাগল!! সবাই পাভেলের হাতের দিকে নজর দিয়ে যখন উপরে তাকালো, সবার চোখ ছানাবড়া হয়ে গেছে!!!

পপির অর্ধেক শরির জানালার বাহিরে আর অর্ধেক শরির জানালার ভিতরে ছিল! পপি অজ্ঞান হয়ে জানালার মাঝখানে পড়ে আছে, চুল দিয়ে ওর পুরো মুখ ঢেকে গেছে,হাত দুটি ছড়িয়ে দুপাশে পড়ে আছে!!!

এ দৃশ্য দেখে সবাই 'থ' হয়ে গেলো, সবাই যেনো নড়ার শক্তি হারিয়ে ফেলেছে!!!


Monday, April 13, 2020

"ভয়ংকর সন্ধ্যা" পর্বঃ ৩



বাবলুদের বাসায় পরিক্ষা উপলক্ষ্যে মিলাদ পড়ানো হচ্ছিল। মসজিদের ইমাম সাহেব আর কিছু মুসল্লি ছাড়াও বাড়ির মুরুব্বিরা ও এতে ছিলো।  আনুমানিক ২ টার দিকে সবার খাওয়া দাওয়া শেষে রাতুল, আনিকা আর বাবলু অটো রিক্সায় তাদের জিনিসপত্র উঠাচ্ছিল, শায়লা বেগম বাসার গেট পর্যন্ত এসে বার বার বাবলুর মাথায় হাত বুলিয়ে দোয়া করতে লাগলো।  ভালো করে পরিক্ষা দিবি, কারো দিকে তাকাবি না, প্রশ্ন একবারের জায়গায় দশ বার পড়বি ইত্যাদি নানা নির্দেশনা দিয়ে শেষ বার বাবলু কে দোয়া করে বিদায় দিলো। বাবলুর মনে হলো সে কোন পরিক্ষা দিতে যাচ্ছে না, যুদ্ধে যাচ্ছে, সবার এতো সিরিয়াস মনোভাব দেখে মনে মনে অবাক ই হলো। 


আঁকাবাঁকা রাস্তা দিয়ে তাদের গাড়ি এগিয়ে চলছে।আনিকা গাড়ির ভিতর কখনোই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে না। সেটা বাস হলে ত একেবারে ই নয়, অটো রিক্সা তেও ওর সমস্যা। সারা রাস্তা সে ক্ষনে ক্ষনে জিজ্ঞেস করতে লাগলো কখন শেষ হবে রাস্তা, কখন
পৌঁছাতে পারবে..... 
অন্যদিনের তুলনায় আজকে ওদের পৌঁছাতে অনেক দেরি হলো কারন রাস্তায় গাড়ির বেশি ভির ছিল। ওদের গাড়ি যখন রূপসদী গ্রামে প্রবেশ করেছে তখন বিকেল প্রায় ৫ টা বেজে গেছে, সারা গ্রামে  একটা খুশির আমেজ বিরাজ করছিল, পরিক্ষার্থী দিয়ে পুরো গ্রামের বাড়িগুলো ভরে গেছে, এ যেনো অন্য রকম এক আনন্দময় পরিবেশ!! 

আনিকার ঘরে ঢুকে ব্যাগ পত্র রেখেই শুয়ে পড়ল,  কারন গাড়ির ধকল সে সামলাতে পারে না। অনেক ক্লান্ত হয়ে গেছে। রাতুল ব্যাগ থেকে কাপড় বের করে গোসল করার জন্যে বের হয়ে ফিরে এলো। গোসল খানায় পপি গোসল করছে। বাবলু পড়ার টেবিল টা ভালো করে গুছিয়ে বই নিয়ে পড়তে বসে গেলো..........
রাতুল এই গ্রামের অনেক কে ই ভালো করে চিনে কারন সে এই গ্রামে থেকেই পরীক্ষা দিয়েছিল। সন্ধ্যার দিকে সে বেরিয়ে গেলো স্থানীয় কিছু বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে। 

সন্ধ্যার পর পর ই পুরো গ্রাম থমথমে হয়ে যায়। নেহাৎ ঠেকায় না পড়লে খুব বেশি মানুষ জন বের হয় না। দোকান পাটের মৃদু আলো ছাড়া আর তেমন কিছু তখন চোখে পড়েনা কিন্তু কানে বাজে দূর কোথাও থেকে  ভেসে আসা শিয়ালের হুক্কাহুয়া ডাক আর ঝিঝি পোকার শব্দ........
রাতুল, আবির, পলাশ সহ আরো ৩/৪ জন মাঠের নিচের বটগাছটার নিচে বসে আড্ডা দিচ্ছিল। রাতুল কথা প্রসঙ্গে আবির কে জিজ্ঞেস করলঃ 

"আচ্ছা আবির,  শুনলাম তোদের গ্রামে নাকি ভূতপ্রেত আছে? সত্যি নাকি কথাটা"?

আবির কিছু বলার আগেই পলাশ বললঃ দোস্ত তুমি সত্যি ই শুনছো! আমাদের গ্রামের ইতিহাস ত তোমরা জানোই। বাপ দাদার আমলের জমিদার আর লাঠিয়াল রা যে অত্যাচার করে গেছে তাদের সেই অভিশাপ ই সারা গ্রাম বহন করছে। এই তো সামনেই একটা বিশাল বড় জমিদার বাড়ি আর একটা লাঠিয়াল বাড়ি আছে! সন্ধ্যার পরে ওই দিক টায় কোন মানুষ জন যায় না কারন যারা ই আজ পর্যন্ত গেছে সবাই বলছে সেখানে খারাপ আত্মা রা ঘোরাঘুরি করে, কাউকে কাউকে ত দিন দুপুরেও অনেক ক্ষতি করেছে!

রাতুল হেসে বললঃ বন্ধু আমার ত এ সব হান্টেড প্লেস অনেক ভালো লাগে। চলোনা একদিন সবাই মিলে সেখানে গিয়ে বসে আড্ডা দিবো!

আবির ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বললঃ তুই জানোস ওইখানে চিতাখোলা আছে? দিনে যাইতেই ভয় লাগে, আবার তুই বলস সন্ধ্যার পর যাইতে! বাপ দাদার দেওয়া জান টার প্রতি তর মায়া না থাকতে পারে, আমাদের মায়া আছে! 

আবিরের কথায় রাতুল ছাড়া বাকি সবাই সম্মতি দিলো। ওদের আড্ডা টা প্রায় শেষ হয়েই আসছিল এমন সময় কারেন্ট চলে গেলো!  কারেন্ট চলে যেতেই মূহুর্তের ভিতর পুরো গ্রাম কেমন যেনো থমথমে হয়ে উঠল!  পিনপন নিরবতা বিরাজ করছিল চারপাশে! হঠাৎ খুব দূর থেকে কোন একজন লোক কে দৌড়ে আসতে দেখে রাতুল,আবির সহ সবাই নড়েচড়ে বসল! লোকটা পাগলের মতো দৌড়াচ্ছিল তাই রাতুল অনেকটা আগ্রহ নিয়েই জিজ্ঞেস করলঃ 
"চাচা, এভাবে অন্ধকারে দৌড়ে কোথায় যাচ্ছেন! কি হয়েছে?

লোকটা দৌড়ের মাঝে থেকেই বললঃ লাইঠঠাল বাড়িতে কারে জানি বেল গাছে ঝুলাইয়া রাখছে! বেবাগ লোকেরা হেইদিকেই যাইতাছে, তোমরা গেলে আহো! 

লোকটা কারো জন্যে অপেক্ষা করলো না। যেভাবে দৌড়ে এসেছিল সেই গতিতেই চলে গেলো।  রাতুল আবির কে অনেক বার যাওয়ার জন্যে বলার পর সবার অনিচ্ছা থাকা স্বত্তেও আবিরসহ সবাই যেতে রাজি হলো। রাতুল মনে মনে অনেক উত্তেজনা অনুভব করছিল! অনেক দিন পর স্বচোক্ষে কোন ভূতে ধরা মানুষ দেখতে পাবে ভেবেই রোমাঞ্চকর অনুভূতি কাজ করতে লাগলো কিন্তু বাকিদের চেহারা দেখে মনে হচ্ছিল যেনো সবাইকে কোন যুদ্ধে পাঠানো হচ্ছে যেখান থেকে ওদের ফিরার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে!!

১০/১৫ মিনিট হাঁটার পর ওরা গ্রামের দক্ষিন দিকে একটা পুরাতন হিন্দু বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ালো। এখানে আসার আগে সবার ভিতরেই একটা ভয় কাজ করছিল কিন্তু আসার পর যখন দেখলো কম পক্ষে ১০০/১৫০ জন লোক জমে গেছে ইতিমধ্যেই, তাই সবাই মনে ভরসা পেলো। রাতুল, আবির, পলাশ সহ বাকিরা ভির ঠেলে একটু সামনে যেতেই দেখলো সত্যি সত্যি একটা ১০/১২ বছরের মেয়েকে বেল গাছের মাথায় কে যেনো বসিয়ে রেখেছে!! মেয়েটার চুলগুলো খোলা, এলোমেলো হয়ে আছে,বুকে উড়না নেই, অন্ধকারে ও বেশ ওর বিশ্রি হাসিটা সবার কানে বাজছিল!!

মধ্য বয়সের কোন একজন মেয়েটাকে গাছ থেকে নামাতে গাছে উঠতে যাচ্ছিল কিন্তু মেয়ে ভয়ংকর গলায় চেঁচিয়ে উঠে বললঃ খবরদার!! কেউ যদি গাছে উঠস তাইলে আমি গাছ থেকে লাফ দিয়া আত্মহত্যা করমু!!
লোকটা গাছে উঠতে যাবে কিনা অন্যদের সম্মুতির জন্যে যখন সবার দিকে তাকালো, দাঁত ছাড়া ৬৫/৭০ বছরের এক বৃদ্ধ ভাংগা ভাংগা কন্ঠে বললঃ 
"আরে মিয়া দেখো কি! গাছে উঠো!নামাইয়া আনো কমলারে"! ওরে প্রেতনী ধরছে, হরিবলরে দিয়া ঝাড়াইতে হইবো!


ভিড়ের মাঝখান থেকে লম্বা চুলওলা মধ্যবয়সী এক লোক দাঁড়িয়ে বললঃ কাদেরে বাপ, ভয় পাও কেন, গাছে উঠো, আমি প্রেতাত্মা তাড়ানোর মন্ত্র জপতাছি, তুমি শুধু মাইয়াডারে গাছ থেকে নামাইয়া আনো! 
কাদের বাপ খ্যাত লোকটি পুনরায় গাছে উঠে এক রকম জোড় করেই মেয়েটাকে গাছ থেকে নামিয়ে আনলো। সবাই অনেক আগ্রহ নিয়ে ঝুকে মেয়েটাকে দেখছিল, অন্ধকারের মধ্যে তেমন কিছু দেখা যাচ্ছিল না, দু এক জন লোক হাতের টর্চ জ্বেলে রেখেছিল। মেয়েটা চুপ হয়ে বসে নিজ মনে কি যেন বিড়বিড় করছি........হরিবল হাতে থাকা শংখটা তে কিছু একটা পড়ে ফুঁ দিয়ে মেয়েটার মাথায় রাখার সাথে সাথেই মেয়েটা তীব্র চিতকার করে উঠলো!!  ওর কন্ঠটা অনেক ভয়ানক শোনাচ্ছিল! উপস্থিত সকলেই ভয়ে কয়েক পা পিছিয়ে গেলো কিন্তু হরিবল আগের মতোই নির্বিকার ভাবে মন্ত্র জপ করতে করতে মেয়েটাকে ঝাড় ফুঁ দিতে লাগলো। মেয়ের চিতকার ক্রমশ বাড়ছিল......এভাবে হরিবল যখন ক্রমাগত মন্ত্র জপ করছিল মেয়েটা কিছু একটা ছুড়ে মারল হরির গায়ে!! হরিবল জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো!!  ঘটনাটি এতোই দ্রুত ঘটলো যে উপস্থিত সকলেই হতবাক হয়ে গেলো!  মেয়েটা লাফিয়ে উঠে চোখ পাকিয়ে জোড়ে চিতকার করে বলে উঠলঃ

 "আমি কাউকে ছাড়বো না! সব কয় টাকে আজ শেষ করে দিবো"! 
মেয়েটা মাথা ডানে বায়ে পাগলের মতো ঘোরাতে শুরু করল যা দেখে সবাই ভয়ে জ্ঞান হারানোর অবস্থা! সবাই দৌড়ে পালাতে লাগলো!! রাতুলের দিকে কটমট চোখে তাকিয়ে পলাশ বললঃ তুই আজ আমাদের কে মারার জন্যে এখানে আনছিস!! পালা জান থাকতে!! তোর কথায় আর কখনো আমি কোথাও যাবো না!
রাতুল ও ওদের সাথে দৌড়াতে দৌড়াতে বললঃ আরে মজা ই ত লাগছিল! তোরা দৌড় না দিলে ত আমি সব টা দেখে আসতাম! 
আবির ভয়ানক হাসি দিয়ে বললঃ দোস্ত আর এক মিনিট ওই জায়গায় দাঁড়ালে আমাদের জান আর দেহে থাকতো না! তুই বেটা মানুষ না নাকি! ভয় ডর তর নাই! 

রাতুল ও মনে মনে বেশ ভয় পেয়েছিল কিন্তু মুখে প্রকাশ না করে আগের মতোই হেসে বললঃ এটাই ত আসল সাসপেন্স!! যা তোরা বুঝবি না কখনো!!




Saturday, April 11, 2020

"মানুষরূপী কিছু অমানুষ "

বন্ধুরা আমার আজকের লিখাটি কোন গল্প নয়। আজকে আমি আপনাদের সামনে কয়েকজন মানুষ বেশের অমানুষদের চিত্র তুলে ধরবো। যারা দিনের পর দিন সহজ সরল মানুষের সরলতার সুযোগ নিয়ে তাদের রক্ত পানি করে উপার্জিত টাকা কে হজম করে চলেছে। সময় থাকতে এদের থেকে সাবধান হন....
আসুন তাহলে আমাদের Expose এর প্রথম পর্বে আমরা আজকের ভন্ডদের তালিকা টা একটু দেখে আসি.........
আমার তালিকায় যাদের নাম আজকে প্রকাশ করছি তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে আমার কাছে কম করে হলে ৪০/৫০ টা জালিয়াতির প্রমাণ আছে, কবে কোথায়,কার কাছ থেকে কতো টাকা নিয়েছে আর নেওয়ার পর কি করে সেই অসহায় মানুষ গুলোকে ব্লক করে রাখছে। তান্ত্রিক ব্লাক ম্যাজিক চ্যানেলটি তারা বেশি চিনবেন যারা ইউটিউব এ আশা নিয়ে ঢুকেন যে, কোন বাবা হয়তোবা আপনার কষ্টটা লাঘব করতে আপনাকে হেল্প করবে।এ চ্যানেল টা যে চালায় তার নাম রেজওয়ান রফিকি! বয়স ২৫/৩০ এর বেশি হবে না। নিজেকে বড় মাপের কবিরাজ দাবী করলেও প্রকৃত অর্থে সে একজন বড় মাপের ধোকাবাজ, সে বিভিন্ন বই থেকে মন্ত্র তন্ত্র সংগ্রহ করে সেটা ইউটিউব এ নিজের বলে চালায়। তাকে আপনি কখনো কল দিয়ে পাবেন না কারন টাকা মারতে মারতে এমন পর্যায়ে পৌছে গেছে যে, কল ধরতেও ভয় পায়, বাটপারির প্রথম ধাপ হচ্ছে সে সবাইকে এস এম এস করে নিজেদের সমস্যা বলতে বলে কারন দেখে যারা এস এম এস করছে তাদের কাছ থেকে আগে টাকা মেরেছে কিনা, যদি দেখে আগের পরিচিত তাহলে ব্লক দিয়ে দেয় আর অপরিচিত হলে সাথে সাথে ই এস এম এস করে, এমন ভাবে আপনাকে পটাবে যে কাজ রাত ভোর হলেই শেষ কিন্তু ও ত কাজের "ক"ও জানে না এটা বেশিরভাগ মানুষ ই জানেন না। যেমনঃগত দু মাস আগে সৌদি প্রবাসি এক ভাইয়ের কাছ থেকে কাজ করে দেওয়ার প্রতিশ্রতি ফিয়ে ৩৫০০০ টাকা নিয়েছে, এখন সেই লোক কে ব্লক দিয়ে রেখেছে। ওই প্রবাসী ভাই দিন রাত এস এম এস করে কিন্তু রেজওয়ান ত টাকা মেরে সাথে সাথেই মোবাইল অফ করে ফেলে,পাবে কই???এই রেজওয়ান নিজের এলাকায় ২/৩ বার বিচারের মুখোমুখি হয়েছে, এলাকাবাসী তাকে কয়েকবার মারধর ও করেছে, এক শালিসে সে প্রায় ২৫০০০ টাকা মুচলেখা ও দিয়েছিল যে আর এমন ভন্ডামি করবে না কিন্তু লোভ আর ধোকাবাজি তার রক্তে মিশে আছে সে তা ছাড়তে পারেনি।চ্যানেল যখন খুলেছিল তখন ওর দাদার কিছু লোক দিয়ে প্রচার করাত। গত মার্চ এ এই রেজওয়ান কে গ্রামবাসী প্রায় ৪ ঘন্টা গাছের সাথে বেধে রেখে নির্যাতন করেছিল কারন সে গ্রামের এক লোক কে ৭ দিনে বৌকে বশিকরন করে দিবে বলে ২০০০০ টাকা নিয়েছিল কিন্তু টাকা নেওয়ার পর রেজওয়ান আগের মতোই হাওয়া! তাই এবার তাকে পুলিশে দেওয়া হয়। বর্তমানে জামিনে আছে সে।
বড় মাপের বাটপার যে শুধু বাংলাদেশের তান্ত্রিক চ্যানেল গুলো তা নয়। এই লোক কে হয়ত অনেকে ই চিনবেন। নিজেকে মা তারার ভক্ত পরিচয় দেওয়া এই বাটপারের নাম তারানাথ। সে কোন তান্ত্রিক নয়, সাধনা মাত্র শিখতে চলেছে, ভিডিওতে যা বলে তার সবটাই হলো মিষ্টি কথায় লোক ভুলানো আর টাকা মারার ধান্দা, অনেক প্রবাসী ভাইয়েরা থাকেন যারা কষ্ট করে টাকা উপার্জন করেন, তান্ত্রিকদের কাছে বিভিন্ন কাজের জন্যে আসেন, সেই সব প্রবাসীদের টার্গেট করাই এই ভণ্ডর কাজ। সে এ পর্যন্ত প্রায় ২০/৩০ হাজার টাকার জালিয়াতি করে ফেলেছে আমাদের ই বাংলাদেশের এক ভাইয়ের সাথে আর তার ১০০% প্রমাণ ও আছে।





এমন আরো অসংখ্য চ্যানেল আছে যারা প্রতিনিয়ত সহজ সরল মানুষের সরলতার সুযোগ নিয়ে তাদের রক্ত পানি করে উপার্জিত টাকা কে মেরে খাচ্ছে! ভাই আপনারা একটু বিবেক দিয়ে ভাবেন, কাদের হাতে টাকা দিচ্ছেন! এরা ত মানুষ না! ওরা হচ্ছে একেকটা নরপশু!  রক্তচোষা বাদুর!ইউটিউব এ কোন তান্ত্রিক নেই! যে কয়েকজন আছেন তারা কেউ ই ইউটিউবার নয়, উনারা কোন তান্ত্রিক নয়, সবাই আল্লাওলা, পীর, আর এসব গাজাখোর রা  ত নামাজ কি এটাই জানে না, সাধনার কোন নাম ও বলতে পারেনা! তারানাথ এর ভিডিও যারা দেখছেন তারা বুঝবেন, সে জিন কি এটাই জানে না! রুহ কি তা জানে না!রেজাউল গায়েব কি তা কোন তান্ত্রিক জানে না! বশিকরন ২৪ ঘন্টায় করতে হলে কোন জায়গায় কি লাগবে তাও বলতে পারে না, বই বিদ্যা দিয়ে যদি সব হতো তাইলে ত দোকানদার রা আরো বড় কবিরাজ হয়ে যেতো! সব ই বিবেক দিয়ে চিন্তা করতে পারেন তাহলে এদের কে বিশ্বাস করে টাকা ধরা খেয়ে কান্না করতে হবে না! একবার ভাবেন, বশিকরন কি হাতের মোয়া যে চাইলেই ১ ঘন্টায়, ১ দিনে হয়ে যাবে? এসব হচ্ছে টাকা খাওয়ার ধান্দা।বিবেক কে জাগান.........



 সবাই যে খারাপ তা নয়, যে আপনার কাজের মূল্যায়ন করবে, যে কাজের সাথে সাথে জবান রক্ষা করবে, কাজ না হলে টাকা ফেরত দেওয়ার স্ট্যাম্প সই করবে এসব তান্ত্রিকদের অভাব নেই কিন্তু এমন লোক ইউটিউব এ খুজলে পাবেন কই? যারা ইউটিউব চালায় ওরা কবিরাজ না, তান্ত্রিক না, এরা ব্যবসায়ী,  এদের মাথায় একটা জিনিস ই কাজ করে ১০ জন ভিডিও দেখলে এক জন ফোন দেবেই আর সেটাই ওদের ধান্দার মূল উদ্দেশ্য। এসব জানোয়ারদের থেকে নিজে সাবধান থাকুন,অন্যকে সাবধান করুন।

Wednesday, April 8, 2020

"ভয়ংকর সন্ধ্যা " পর্বঃ ২



পরিক্ষার আর মাত্র দুদিন বাকি আছে তাই বাবলু জোড়াজুড়ি করতে লাগলো আজকেই জিনিস পত্র নিয়ে ওই বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিতে.......রাতুল বাসায় ছিল না তাই মায়ের কানের কাছেই ঘ্যানঘ্যান করতে থাকলো বাবলু।

বাবলুরা ছিল ৫ভাই, ৪ বোন। ওর বাবা ছিলেন সরকারি চাকুরিজীবী। অল্প বয়সেই তিনি ব্রেনস্টোক করে মারা যান যার ফলে বাবলুর বড় ভাই প্রবাসী হতে বাধ্য হন পরিবারের তাগিদে। বাবলুর মা শায়লা বেগম অনেক কষ্ট করে স্বামির অবর্তমানে সন্তানদের মানুষ করেছেন। বাবলু কে নিয়ে উনার গর্ব অনেক কারন অন্যদের তুলনায় বাবলু পড়াশোনায় একটু এগিয়ে ছিল, মেধা ভালো থাকায় মায়ের আদর টাও বেশিই পেয়েছে।যাই হোক,শায়লা বেগম কিছুতেই দুই দিন আগে যেতে দিতে নারাজ। বাবলু অনেকক্ষন চেচামেচি করলেও তেমন কোন ফল হয় নি দেখে মুখ ভার করে বড়ুই গাছের নিচে বসে রইল।

বাবলু মনে মনে বললঃ আমি ত আজকেই যাবো, দরকার হলে ঝগড়া করবো! ইস কত সুন্দর গ্রাম, এক দুই দিন আগে গিয়ে গ্রামটা দেখতে হবে না!

এমন করে অনেক ক্ষন ভাবার পর উঠতে যাচ্ছিল এমন সময় বাবলুর মেঝো বোন আনিকা এলো। সে চোখ দুটো গোল করে বাবলুর দিকে তাকিয়ে বললঃ কিরে! এতো যাওয়ার জন্যে পাগল হইছস ক্যান, কি আছে ওই গ্রামে? পরিক্ষা দিতে যাবি নাকি ভ্রমন করতে?

বাবলু হেসে বললঃ আরে তুই জানস না, কি সুন্দর গ্রাম! পুরা ই ছবির মতো! আর অনেক ভয়ানক!
আনিকা হেসে বললঃ আমি ও যাচ্ছি তোদের সাথে! একা যেতে পারবি না, রাতুল ভাইয়া তুই আর আমি যাবো।

বাবলু হেসে বললঃ তাই নাকি! তুই গেলে ত আমার ভালো ই হয়, ওই বাসায় একটা মেয়ে আছে, পটাইয়া দিবি আমাকে!
আনিকা বাবলুর দিকে নাক ফুলিয়ে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বললঃ

"আজেবাজে কথা কম বল! পরিক্ষা দিতে গিয়ে এসব করলে পরিক্ষা খারাপ হবে আর আম্মা জানতে পারলে জুতা দিবে তোকে"!

বাবলু মুখ কালা করে বললঃ আরে! মজা ও বুঝোস না! আমি ত এমনি মজা করে বলছি!
আনিকা বাবলুর দিকে তাকিয়ে রইল কিন্তু কিছু বলল না কারন সে জানে বাবলু কথাটা দুষ্টমি করে বলে নি, বাবলু যেখানেই যায় মেয়েদের আড্ডা থাকেই তাই কথাটা যে নিছক দুষ্টমি ছিল না তা আনিকা বুঝেই চুপ করে রইল।

দুপুর আনুমানিক ১২টার দিকে যখন রাতুল বাসায় এলো তখন শায়লা বেগম ই আগে বললেন বাবলুর মালপত্র আজকে নিয়ে যেতে। বাবলু মন খারাপ করে ছিলো কিন্তু মায়ের কথায় ওর মন সাথে সাথেই ভালো হয়ে উঠল।

শায়লা বেগম বললেনঃ মাল পত্র রেখে চলে আসিস, আগামীকাল মিলাদ পড়ানোর পর চলে যাস আনিকা আর রাতুল কে নিয়ে। আনিকা রান্না করবে।

রাতুল একটু আলসে প্রকৃতির! সে সহজে কোন জায়গায় নড়তে নারাজ তাই একটু বেকে বসলো। শায়লা বেগমের অনেক জোড়াজুড়ির পর রাতুল বাজার থেকে অটো রিক্সা নিয়ে এলো!
বাবলুর মন খুশিতে ছটফট করছিল! সে আগেই সব বই পত্র,বিছানা, কিছু হারিপাতিল গুছিয়ে রেখেছিল আনিকার সাথে মিলে। তাই অটো আসার পর গাড়ি ভরতে বেশি বেগ পেতে হলো না ওদের। আজকে শুধু রাতুল আর বাবলু ই যাবে, ওরা আবার বিকেল নাগাদ ফিরে আসবে।

গাড়িতে সারা রাস্তা বাবলু মনে মনে ছক কষছিল সেখানে গিয়ে আগে কোন কোন বন্ধু বান্ধবের সাথে দেখা করবে! ওর ধারনাতে এস এস সি ছিলোই না, ওর মনে হচ্ছিল কোথাও পিকনিক করতে যাচ্ছে!!

ঘন্টা খানিক পর ওরা যখন নির্ধারিত বাসার সামনে পৌছল কিছু উৎসুক ছোট ছেলে মেয়ে দৌড়ে এলো অটো রিক্সার সামনে!
ওদের মাঝে কেউ একজন গলা ফাটিয়ে ডাকছিলঃ পপি আপা তোমাগো মেহমান রা আইসা পড়ছে, চালাইয়া(জলদি) আহো(আসো)!!!

রাতুল গাড়ি থেকে নেমে মাল পত্র ভিতরে নিয়ে যাওয়ার জন্যে রেডি হচ্ছিল, সব ছেলে মেয়েরা হুড়োহুড়ি করে মাল পত্র নিজেরা এগিয়ে নিতে লাগলো।

এমন সময় গাড়ির সামনে শ্যামলা চেহারার ১৩/১৪ বছরের একটা মেয়ে এসে দাঁড়াল। বাবলু চিনতে পারলো, সেইদিন এই মেয়েই দরজার পাশে দাঁড়িয়ে ওদের দেখছিল, বাবলুর মনে হলো অনেকটাই মোটা!

মেয়েটা বলল ঃ ব্যাগটা আমার কাছে দেন মামা!!

রাতুলের হাত থেকে ব্যাগ টা নিতে চাইলে রাতুল অনেক বিনয়ী হয়ে কাচুমাচু স্বরে বললঃ না না! তুমি কেন নিবে, আমি ই নিতে পারবো!

রাতুল ব্যাগ নিয়ে ভেতরে চলে গেলো। বাবলুর মনে মনে রাগ হলো! মামা ডাকে কেন এই মেয়ে!! সব মজা টা ই নষ্ট হয়ে গেলো!

ঘরটা ছোট হলেও পরিবেশ টা খুব সুন্দর, বিশেষ করে জানালার সামনে পড়ার টেবিলে বসছে সামনে বিশাল মাঠ, আর মাঠের মাঝখানে বিশাল বড় বট গাছ টা চোখে পড়ে যা দেখতে অনেক সুন্দর লাগে। বাবলু ব্যাগ থেকে বই পত্র গুছিয়ে টেবিলে রাখছিল, রাতুল বিছানায় চাদর বালিশ রাখছিল হঠাৎ বাইরে কিসের গন্ডগোল শুনি দৌড়ে বেরিয়ে এলো ওরা উঠানে! উঠানে অনেক মানুষ জমে গেছে!! কান্তা নামের কোন এক মেয়েকে নাকি পাশের গাব গাছ থেকে কিসে তাড়া করেছে, মেয়েটা পপির সমবয়সী, এক বাড়িতেই থাকে, দুটা ঘর পরে ওদের ঘর!মেয়েটা হাঁপাতে হাঁপাতে উঠানের উপর শুয়ে পড়লো! জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে!!

ঘটনার আগামাথা বুঝতে রাতুল বাবলুদের কষ্ট হলেও উঠানে উপস্থিত সবার চোখ ই তখন ছানাবড়া হয়ে আছে, কেউ কেউ মেয়ের মাথায়, মুখে পানি ছিটাচ্ছে,আবার কেউ কেউ নানান আজগুবি কথা শোনাচ্ছে।
প্রায় দাঁত নেই বললেই চলে এমন একজন দাদী বয়সী মহিলা পান চিবুতে চিবুতে সবার দিকে তাকিয়ে হাত নেড়ে বললঃ

 "আমি ত আগেই কইছিলাম, চেয়ারম্যান বাড়ির আশেপাশে ভরদুপুরে,  সন্ধায়, রাত বিরাইতে মাতামতি না করতে"! চেয়ারম্যান এর পোলার আত্মা ঘোরে,টঠল দেয়! মাইয়া ডাংগর হইছে, আমাগো উচিৎ কথা ত ভালা লাগে না, এখন বুঝুক,থাপ্পড় টোপ্পড় দিয়া দিছে নি ভালা কইরা তোমরা দেখ! 

বুড়ির পান চিবানো কথার বেশিরভাগ কথাই কেউ না বুঝলেও ঘটনাটা যে বেশ ভয়াবহ ই ঘটেছে তা সবাই বুঝতে পারলো। প্রায় আধা ঘন্টা পর যখন মেয়ের হুশ ফিরল ওর মুখের কথা শুনে উপস্থিত সবার সাথে সাথে রাতুল বাবলুও হা হয়ে তাকিয়ে রইল! 

মেয়েটা কাঁপাকাঁপা কন্ঠে ঘটনার বর্ণনা দিতে লাগলো ঃ

" আমি লাকড়ি কুড়াইয়া চেয়ারম্যান বাড়ির পাশের গাব গাছের নিচে যখন আইছি, আমার মনে হইতাছিল কেউ আমার পিছে আছে! আমি ঘাড় ফিরিয়ে দেখি কেউ নাই! আবার যখন গাব গাছ তলা থেকে একটু সামনে আসছি, দেখি একটা মহিলা বাচ্চা কোলে নিয়া আমার দিকেই আসতাছে!

কিছুক্ষন থেমে থেকে কান্তা আবার বলতে লাগলোঃ আমার সামনে আইসা কয়, আমার কাছে হের কোলের বাচ্চাটারে রাখতে! আমি কইলাম" আমি কেমনে কোলে নিমু, আমার মাথায় লাকড়ির বোঝা দেহেন না! তখন মহলাটা হাত লম্বা কইরা আমার মাথা থেকে লাকড়ির বোঝাটা টানতে লাগলো! কি বড় হাত যে হইছিল আপনারা না দেখলে বিশ্বাস করবেন না!! আমি লাকড়ির ঝুড়ি রাইখা দৌড় দিতেই দেখি মহিলা এক হাতে আমার উড়না টাইনা ধইরা হাসতাছে, আর এক হাতে বাচ্চাটারে আলগাই ধইরা কামড়াইতাছে!! সারা মুখে রক্ত!! আমি কোন রকমে জান লইয়া পলাইছি!!

কান্তার কথা শেষ হতেই আরেক জন বললঃ তোরা ত মুরিব্বিদের কথা হুনোস না! মানা করার পর ও দূষিত জায়গায় ঘোরাঘুরি করস, কোন দিন জানি মাইরা তোগোরে ওই বট গাছে ঝুলাইয়া রাখে, দেখিস!! 

রাতুল ঘটনাটি মনোযোগ দিয়ে শুনছিল কিন্তু বাবলুর ভয়ে হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে গেছে, সে রাতুল কে বাসায় ফিরে যাওয়ার জন্যে টেনেটুনে বের করে নিয়ে আসলো! 

রাতুল মাঠে বেরিয়ে বললঃ খুব মজার ব্যাপার তো! গ্রামটা দেখেই মনে হয়েছিল এখানে ভূত প্রেত থাকতে পারে! 

বাবলু চোখ গোল করে বললঃ তোমার কাছে কি মনে হয় এই মেয়ে সত্যি কথা বলছে সব? 

রাতুল হেসে বললঃ অবশ্যই সত্যি বলছে, মেয়ের চোখ মুখ ই বলে দিচ্ছে মেয়ের অবস্থা কতোটা খারাপ হয়ে গেছে এই ঘটনায়! 

বাবলু সব জান্তার মতো মাথা নেড়ে সায় দিলো।  ওরা বটগাছ টার নিচে আসতেই বাবলুর মনে কেমন জানি একটা ভয় কাজ করতে লাগলো তাই সে রাতুলের ঘা ঘেসে হাঁটতে শুরু করল! 

ওদের কপাল খারাপ, রাস্তায় কোন রিক্সা বা অটোরিকশা পেলো না তাই বাধ্য হয়ে এই বিকেল বেলা হেঁটে হেঁটেই বাড়ি পৌছার সিদ্ধান্ত নিয়ে গ্রামের ভিতর দিয়ে শটকার্ট রাস্তা ধরে এগুতে থাকলো। 

রাতুল এই গ্রামের খুটিনাটি সব চিনে, জানে তাই বাবলুকে যখন সামনে যা পড়লো তা নিয়েই বড় বড় ইতিহাস শোনাতে লাগলো যার কিছুটা সত্য আবার কিছুটা নেহায়েতই বাবলু কে ভয় দেখানোর জন্যে! ওরা যখন রূপসদী গ্রাম টা ছেড়ে বিশাল ধান ক্ষেতের পাশ ঘেসে হাটঁছিল তখন হঠাৎই রাতুল দাঁড়িয়ে গেলো! বাবলু চোখ গোল করে জিজ্ঞেস করলোঃ 

"কি হইল আবার!  তোমারে ভূতে ধরছে নাকি!! 

রাতুল এক গাল হেসে বললঃ আরে সামনে দেখ! কি বিশাল বড় কবরস্থান!! মাইকপুর কবরস্থান বলে এটাকে!! জমিদার আমলে এই কবরস্থানে হাজার হাজার মানুষকে জ্যন্ত সমাহিত করা হয়েছিল! ওদের আত্মা এখনো ঘুরে ফিরে! যদি আমাদের ধরে.....!!!

বাবলু ঢোক গিলে চোখ সরু করে বললঃ কি কও এইসব!! সত্যি ই যদি ধরে তাইলে আমার পরিক্ষার কি হইবো!! বাসায় আমগোরে না পাইলে কই খুঁজবে আম্মা!!

রাতুল বুঝল বাবলু বেশ ভয় পেয়ে গেছে তাই হেসে বললঃ কি বলিস তুই! আমি সব ভূত প্রেত, ডাকিনী যোগীনির ওস্তাদ!! আমার কাছে আসলে ফু দিয়ে উড়িয়ে দিবো! 

কথাটা বলে গোল করে বাবলুর দিকে তাকিয়ে বললঃ অবশ্য তুই যেই চিকনা! তোরে ত ভূতেরা কোলে করে নিয়েই দৌড় দিবে, তখন অবশ্য তোরে বাঁচাতে আমার আবার একটু শক্তি খরচ হবে, সেটা ব্যাপার না! 

বাবলু ঢোক গিলে চোখ গোল করে ফেল ফেল করে তাকিয়ে মনে মনে বললঃ আরে বাপরে! আমার ভাই এতো বড় ক্ষমতাশালী আগে জান্তাম না! আয় রে ভূত দেখি কেমনে ধরস!!

আরো একটা গ্রাম পার হয়ে ওরা যখন ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল বাবলুকে নিয়ে একটা বড় আম গাছের নিচে দাঁড়িয়ে বিশ্রাম নিতে লাগলো রাতুল। 

বাবলু চারপাশে ভালো করে তাকিয়ে দেখে বললঃ আরে বাহ! গ্রামেও কি আংগুর ফল গাছ আছে নাকি!! 

রাতুল বললঃ কই আংগুর ফল গাছ রে, ট্যাংরা!!!

রাতুলের মুখে নিজের খিতাবী নামটা শুনে বাবলু অপমানিত বোধ করল তাই একটা গাছ দেখিয়ে বললঃ এটা কি গাছ তাইলে? 

রাতুল গাছ টা দেখে হেসে বললঃ তোর ত সেই ট্যালেন্ট,  আমি চিনি নাই, তুই চিনে ফেলেছিস! খাবি নাকি আংগুর ফল? পাড়বো গাছ থেকে? 

রাতুলের কথায় বাবলুর জিবে জল এসে গেছে! তাই তো! খিদে পেয়েছে বেশ!সেই ১ ঘন্টা যাবত হাঁটছে! যদিও আংগুর গুলো দেখতে কাচা, তাতে কি, খাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে হেসে বললঃ যাও বেশি করে আনো! 

রাতুল হেসে বললঃ এক নাইলা গাছ, উপরে উঠতে পারবো না! তোকে নিচে থেকে কুড়িয়ে দেই, খা! 

রাতুল কয়েকটা নিচে থেকে কুড়িয়ে বাবলুর হাতে দিলো, পাশেই একটা ছোটখাটো বিল ছিল, বাবলু সেখান থেকে ফলগুলি হাতে নিয়ে ধুয়ে একসাথে ৩ টা মুখে দিয়েই চিবাতে গেছে সারা মুখ তিতায় বিষাক্ত হয়ে উঠল!! বাবলু সাথে সাথে মুখ থেকে ফেলে, বিল থেকে বেশি করে পানি নিয়ে মুখ পরিস্কার করতে করতে চিল্লাতে লাগলোঃ

 "কি খাওয়াইছ এটা"! আংগুর কি এতো তিতা হয় জীবনে!! বমি আসতাছে আমার!!

রাতুল হেসে অস্থির! সে মুলার মতো দাঁতগুলো বের করে হাসতে হাসতে বললঃ SSC পরিক্ষা দিবি এখনো নিম গাছ আর আংগুর গাছ চিনস না!! এটা নিম!! 

রাতুলের কথায় বাবলু থ হয়ে দাঁড়িয়ে রইল!!! বোকা এতোটা আগে লাগেনি নিজেকে!!!





Wednesday, April 1, 2020

"ভয়ংকর সন্ধ্যা" ১ম পর্ব



আমার আজকের গল্পটি তাদের জন্যে নয় যারা ভূতপ্রেত বিশ্বাস করেন না অথবা যারা অতিশিক্ষিত হওয়ার নামে কাকের মতো চোখ বুঝে থাকেন আর আশেপাশের সব সত্যগুলো কে অবজ্ঞা করে যান।আমি আমার Blogg এ শুধু সেসব ঘটনাগুলো ই উপস্থাপন করি যেসব ঘটনার চাক্ষুষ প্রমাণ আছে এবং যা বাস্তব।আমি কোন মনগড়া কাহিনী লিখি না, আমি নিজেও গ্র‍্যাজুয়েশন কমপ্লিট করেছি, সত্য মিথ্যা যাচাই করার ক্ষমতা আমার ও একটু আধটু আছে তাই। আজকের ঘটনা টা আমি যাদের কাছে শুনেছি তারা বেশিরভাগ ই এই ঘটনা স্বচোখে দেখেছে। আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে........

সালঃ২০১০, মার্চ মাস;

সময়টা SSC exam এর। আমাদের দেশে তখন ম্রেট্রিক পরিক্ষাটা মার্চ মাসেই শুরু হতো আর প্রতিটি পরিক্ষার ভিতর প্রায় ২/৪ দিন করে বন্ধ থাকতো। যার ফলে ১৪ টা পেপার দিতে প্রায় ১মাসের উপরে সময় লেগে যেতো। গ্রামে সাধারণত পরিক্ষার কেন্দ্রগুলো অনেক দূরে হয়। কারো কারো পরিক্ষার কেন্দ্র ত ৫ গ্রাম পড়েও পড়তো। যার ফলে বেশিরভাগ ছাত্র ছাত্রীদেরই যাতায়াতে অনেক অসুবিধা দেখা দিতো ফলে পরিক্ষা শুরু হওয়ার ১মাস আগেই কেন্দ্রের আশে পাশের গ্রামগুলোতে তারা সেই এক মাসের জন্যে বাসা ভাড়া নিয়ে রাখতো। বাবলুর বেলায় ও তেমন ই হলো। বাবলু ssc পরিক্ষার্থী ছিলো। ওর স্কুলের কেন্দ্র পড়েছিল ওদের গ্রাম থেকে ৪/৫ গ্রাম পরে রূপসদী তে। রূপসদী কুমিল্লার অন্তর্ভুক্ত অনেক প্রাচীন আর অনেক বৃহৎ একটা গ্রাম। চার পাশের গ্রামগুলোর তুলনায় এ গ্রামটি সবচেয়ে বেশি আকর্ষণীয় ছিল জমিদারি আমলের বাড়িঘরের জন্যে আর বিশাল খাল হ্রদের কারনে। যাই হোক, বাবলু ও অন্যদের মতো ওর পরিবারের সম্মুতিতে রূপসদী গ্রামে বাসা ভাড়া নেওয়ার জন্যে গেলো। ওর সাথে ছিল ওর সেজো ভাই রাতুল। যেহেতু আর এক সপ্তাহ পরেই এস, এস, সি এক্সাম শুরু হয়ে যাবে তাই শেষ মূহুর্তে বাসা ভাড়া নিতে এসে বাবলুদের প্রায় দিশেহারা অবস্থা। রাতুল যখন এস,এস,সি এক্সাম দিয়েছিল তখন ও এই গ্রামেই ওদের পরিক্ষার কেন্দ্র ছিল। রাতুল যখন বাবলু কে নিয়ে সেই কেন্দ্রের কাছে এলো তখন প্রায় মধ্যবিকেল হয়ে গেছে। রোদের তীব্রতা নেই বললেই চলে। হালকা হাওয়া বইছে। সাধারনত মার্চ মাসে প্রচন্ড গরম পড়ে। রূপসদীতে গরমের তীব্রতা আরো বেশি এর কারন হলো এ গ্রামের কোথাও মাটি নেই, নদি নেই.....আছে শুধু বালি আর খাল!

রাতুল বাবলুর সেজো ভাই হলেও ওদের দুজনের মাঝে সম্পর্ক টা বন্ধুর মতো ই। রাতুল একদম সাদা মনের মানুষ। সহজ সরল আর চঞ্চল স্বভাবের। কোন জায়গায় গেলে সে জায়গার অতীত ঐতিহ্য নিয়ে বিস্তারিত না বলতে পারলে রাতুলের পেটের ভাত হজম হয় না! তাই ওরা দুজন যখন কেন্দ্রের সামনে এসে উপস্থিত হলো, রাতুল হাত দিয়ে ইশারা করে বাবলু কে দেখিয়ে বললঃ
"দেখ! এইটা তোদের কেন্দ্র! আমরাও এই কেন্দ্রেই পরিক্ষা দিয়েছি! কি সুন্দর"!

বাবলু দেখলো চোখের সামনে দাঁড়িয়ে আছে বিশার বড় এক বিদ্যালয়ের গেট যার উপর বড় করে লিখা আছে" রূপসদী বিন্দাবন উচ্চ বিদ্যালয়"

বিদ্যালয়ের গেট তালা দেওয়া তাই ভেতরে ঢোকার সুযোগ তখন ওদের হয়নি। খুব সুন্দর আর মনোরম পরিবেশ বাবলুর মন কে খুশি করে তুলল! সে দাঁত বের করে হেসে বললঃ সত্যি অনেক সুন্দর কিন্তু অনেক পুরাতন!

বাবলুর কথায় রাতুল ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বললঃ তুই সুন্দরের কি বুঝিছস! যে জিনিস যতো পুরান হবে সে জিনিসের সৌন্দর্য ততোই বাড়বে! মূর্খ কোথাকার!

শেষের কথাটায় বাবলুর দাঁত বন্ধ হয়ে গেলো। সে চোখ গোল করে ফেলফেল করে তাকিয়ে রইল।

রাতুল ছেলেবেলা থেকেই ছিল কবি স্বভাবের আর প্রকৃতি প্রেমি।বলা বাহুল্য, এক ই সাথে বিশ্বপ্রেমিক বললেও ভুল হবে না কেননা প্রেমের যদি রেকর্ড গননা করা হতো তাহলে এতোদিনে সেঞ্চুরি করে ফেলতো!!

অনেক খোঁজাখুঁজি করেও যখন কোন বাসা পাওয়া যাচ্ছিল না, তখন রাতুলের দেখা হয়ে গেলো ওর সাথে পরিক্ষা দেওয়া এক বন্ধুর সাথে। রাতুল অনেক মিশুক স্বভাবের ছেলে তাই সহজেই সবার মন কাড়তে পারে। রাতুল কে দেখে আবির ডাক দিতেই দুজন ঘাড় ফিরিয়ে তাকালো। রাতুল হেসে উঠল আবির কে দেখে কিন্তু বাবলু যেনো চোখের সামনে জলজ্যান্ত একটা ভূত দেখছিল! সে নড়তে পারছিল না, হা করে তাকিয়ে রইল‌! ওদের দিকেই তাকিয়ে আছে ভূতটা,হাসছে,এদিকেই আসছে!!

ভয়ে সারা গা কাটা দিয়ে উঠল বাবলুর! কি ভয়ানক চেহারা! আসলে ভয় পাওয়ার ই কথা কারন আবিরের সারা দেহের বেশিরভাগ জায়গায় ই এসিডে ঝলসে গেছে, বিশেষ করে মুখটা! শুধু চোখ দুটো কিছুটা ভালো আছে, যে কোন মানুষ প্রথম দেখাতে আবির কে ভূত ই ভাববে!

আবির পোড়া মুখে হেসে রাতুলের দিকে তাকিয়ে বললঃ কি দোস্ত, তুমি এখানে?

রাতুল বাবলুর দিকে দেখিয়ে বললঃ আমার ছোট ভাই, ও এবার পরিক্ষার্থী, ওর জন্যে বাসা খুঁজতে আসছি।

ওদের কথোপকথন এ বাবলু মনে মনে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল! ও আগে কখনো এসিডে ঝলসে যাওয়া কাউকে দেখে নি তাই ওর কাছে আবির কে প্রথম ভূত মনে হয়েছিল!

আবির বললঃ দোস্ত তোমরা অনেক দেরি করে আসছ, এতোদিনে ত সবাই ভাড়া নিয়ে নিছে, চলো তবু একটু খুঁজে দেখি।

আবির কে সাথে নিয়ে রাতুল আর বাবলু প্রায় ৩ ঘন্টা খুঁজার পর স্কুলের সামনেই একটা বাসা পেলো। বাসার মালিক থাকেন সৌদিতে, বাসায় শুধু ওনার বৌ, দুইটা মেয়ে,বৃদ্ধা মা থাকেন। বাসা টা সবার ই পছন্দ হলো। ওদের কে যে রুম টা দেওয়া হলো ওই ঘরে প্রবশ করে চারদিন ভালো করে দেখে সন্তুষ্টির হাসি ফুটলো সবার মুখে। বাবলু দেখলো পড়ার টেবিলের সামনে বসলে সোজা মাঠ টা দেখা যায়, বিশাল বড় মাঠ! যার ঠিক মাঝখান জুড়ে শত বছরের পুরানো একটা বিশালাকার বট গাছ দাঁড়িয়ে আছে! জায়গাটা খুব সুন্দর আর ভৌতিক! রাতুল বাসার মালিকের বৃদ্ধা মায়ের সাথে যখন সব কথা পাকা করছিল, দরজার আড়ালে দাঁড়িয়ে বৃদ্ধার বড় নাত্নী উকি দিয়ে বাবলুর দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসছিল! ব্যাপার টা রাতুল বাবলু দুজন ই খেয়াল করল। সব কথা পাকাপোক্ত করে ওরা যখন এডভান্সড দিয়ে বেরিয়ে আসলো তখন প্রায় সন্ধ্যা ৭টা বেজে গেছে! যা এই গ্রামের জন্যে অনেক রাত!!