Saturday, March 21, 2020

"সেই তুমি" পর্বঃ১৪



মানুষ যখন বেশী আনন্দে থাকে শয়তানের নাকি তা হিংসের কারন হয়ে দাড়াঁয়। জল আর অন্তুর ভালোবাসাতেও ঠিক তাই হলো কিন্তু এক্ষেত্রে শয়তান নিজে নেমে আসেনি, তার কিছু মানুষ বেশের শয়তান দিয়ে উপরে থেকেই কাজ সারিয়ে নিয়েছে........


জল আর অন্তুর সম্পর্ক টা না চাইতেও অনেকের কানে পৌছে গেলো। এর অন্যতম কারন ছিল জলের প্রতি অন্তুর অতিরিক্ত ভালোবাসা। জলের সাথে অন্তুর প্রেমের ৪মাস হতে চলেছে। জল এর ভিতর অন্তুর কোন কথার খেলাপ করেনি কিন্তু জল কয়েক মাস আগে যখন অন্তু কে লিখা জান্নাতের চিঠিটা পেয়েছিল সে থেকে ই জান্নাতের সাথে জলের দূরত্ব সৃষ্টি হয়ে গিয়েছিল। চিঠির লিখাটা সে জান্নাত কে দেখিয়েছিল কিন্তু জান্নাত এসব কথা নিয়ে জলের সাথে কোন কথা বলতে রাজি তো হয় ই নি বরং এ ঘটনার পর থেকে নন্দিনি আর অন্য মেয়ের ভিতর অন্যরকম হিংসের সৃষ্টি করে জান্নাত সহ সবাই আলাদা আলাদাভাবে পড়া শুরু করল! যার ফলে জান্নাত, নন্দিনিদের সাথে জলের সম্পর্ক একেবারেই শেষ পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছিল! জলের ভিতর ও অন্তুকে নিয়ে সন্দেহ সৃষ্টি হতে বেশিক্ষন লাগলো না যদিও নন্দিনিরা আলাদা হওয়ার পর থেকে এই কয়েক মাসে অন্তুর সাথে জলের অনেক ছোটখাটো ঝগড়া হলেও তা বেশি দিন স্থায়ী হয় নি। কিন্তু ১৪ ই এপ্রিলের  ঘটনা টা অন্তু আর জলের মাঝে বিশাল ব্যবধান গড়ে দিয়েছিল! 

অন্তুর বাসায় কেউ নেই। সবাই গ্রামের বাড়িতে গেছে। অন্তু একাই ছিলো।  জান্নাত পড়ার বাহানা করে অন্তুর বাসায় আসলো। অন্তুর পাখি পোষার অনেক শখ ছিল। বারান্দায় খাঁচাতে ৩ জোড়া ঘুঘু পাখি পুষতো অন্তু। জান্নাত ঘরে ঢুকে দেখলো অন্তু রান্না ঘরে রান্না করছে। তাই সোজা রান্দায় গিয়ে অন্তুর পাখিগুলো নিয়ে দুষ্টুমি করতে লাগলো। 

জল জানে অন্তু বাসায় একা, তাই সে আজকে অন্য দিনের তুলনায় একটু আগেই নিজের বাসা থেকে বেরিয়ে গেলো। হেনা বেগম কিছু একটা বলছিল কিন্তু জল পাত্তা না দিয়ে বের হয়ে এলো। জল আসার আগে জান্নাতের বাসায় ফোন করেছিল। জান্নাতের মা বলেছে ও পড়তে গেছে! এই কথাটাই জলের দুশ্চিন্তার কারন। জল জান্নাতকে একদম ই দেখতে পারে না কারন জান্নাত অন্তুকে লাভ করে এটা সে জানে। জল একটু তাড়াতাড়ি হেঁটে অন্তুর বাসার সামনে পৌছাতেই পেছন থেকে নন্দিনি ডাক দিলো!  
নিন্দিনির ডাকে জল কেবল মাত্র হাত ইশারা করল কিন্তু কোথাও দাঁড়াল না, সোজা সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে এলো। দরজা ধাক্কা দিয়ে দেখল ভেতর থেকে লক করা!  জলের মাথা সাথে সাথে ই গরম হয়ে গেলো! সে দাঁত চেপে খুব জোড়ে দরজায় নক করতে লাগলো। 

অন্তু রান্না ঘরে ছিল তাই শব্দটা ততোটা শুনতে পায়নি। জান্নাত বুঝতে পেরেছিল জল আসছে তাই ইচ্ছে করেই একটু দেরি করে দরজাটা খুলল! 

দরজা খুলতেই জল দরজা টা জোড়ে ধাক্কা দিয়ে ভেতরে চলে গেলো!  জান্নাত বিরক্ত হলো কিন্তু মুখে কিছু বললো না। সে চুপচাপ আবার আগের মতো ই পাখি নিয়ে দুষ্টুমি করতে লাগলো যা দেখে জলের গায়ে আগুন লেগে গেলো রাগে! সে ব্যাগটা বিছানায় ছুড়ে মেরে অন্তুকে ডাক দিয়ে বললঃ এই!  এইদিকে আসো একটু!

অন্তু রান্না ঘর থেকে যখন এলো দেখলো জল কোমড়ে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।  অন্তুকে দেখে জল গলার স্বরটা তীব্র করে বললঃ খালি ঘরে দরজা খুলতে এতো ক্ষন লাগলো কেন তোমার? আর খালি ঘরে তুমি জান্নাতকে কেন ভেতরের রুমে এনে রাখছ! 

সামনাসামনি অপমানে জান্নাত রেগে উঠল!  সে অন্তুর দিকে তাকিয়ে বললঃ স্যার, আমার ব্যাপারে আপনার Gf যেনো কোন কথা না বলে! আমি পড়তে আসছি, ওর মতো প্রেম করতে আসিনি! 


অন্তু কিছু বলার আগেই জল আরো জোড়ে চেঁচিয়ে উঠে ভ্রুজোড়া উপরে তুলে বললঃ তোর স্বভাব আমার জানা আছে! তুই তো এটা জানিস,  ওর সাথে আমার সব হইছে তাও একবার দুবার না! হাজারবার! ওকে আমি স্বামী মানি মন থেকে! তুই কি বুঝস, একটা মেয়ের কাছে স্বামী মানে কি! আমি পূজা করি ওর! আমার রাতে ঘুম হয় না ওর জন্যে চিন্তা করতে করতে! তুই কেন আমার জিনিসটাতে ভাগ বসাতে চাস!

জান্নাত নত স্বিকার না করে উল্টো আরো রেগে গেলো।  সে চাইছিল অন্তু ওর পক্ষ নিয়ে জল কে কিছু বলুক তাই অন্তুর দিকে তাকিয়ে বললঃ স্যার, জল যদি আর একবার বাজে কথা বলে আমার হাত উঠবে ওর গায়ে আর তারপর যা হবে তা আপনি সহ্য করতে পারবেন না, আমি আমার আব্বু আম্মু নিয়ে আসবো বলে দিলাম! 

অন্তু এতোটা অবাক আগে কখনো হয়নি! সে ভেবে পেলোনা জল এতো বাজে ব্যবহার কেন করছে আর কেন ই বা সামনাসামনি জান্নাতকে এতো অপমান করছে! 
অন্তু এবার জলের দিকে তাকিয়ে বললঃ তুমি অযথা কেনো এমন করতাছ? আমি রান্না ঘরে ছিলাম তাই শুনিনি, আর জান্নাত ত দরজা খুলছেই! এতে রাগার কি হলো! 

অন্তুর কথায় জলের মেজাজ এতোটা ই খারাপ হলো যে, সে হাত থেকে কলম টা ফ্লোরে ছুড়ে মারল তারপর জান্নাতের দিকে তাকিয়ে বললঃ
 আমার গায়ে হাত তুলবি? তুলে দেখা? তোর মতো ১০ টা কে আমি এক থাপ্পড় দিয়েই অজ্ঞান বানাতে পারবো, আয় সামনে?  

জান্নাত টিটকারি দিয়ে বললঃ 
আল্লাহ তোর মতো সাইজ আমাকে দেয় নি এটাতে আমি আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞ! আর শোনেন স্যার, আমি চলে যাচ্ছি! এতো অপমান সহ্য করে পড়ার তো কোন দরকার নাই আমার! জান্নাত ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছিল,কিন্তু দরজা পর্যন্ত গিয়ে  আবার ফিরে এলো! জলের দিকে তাকিয়ে বললঃ এখনো বিয়ে করিস নি, অধিকার কম দেখাবি তা না হলে অনেক ভোগান্তি আছে তোর কপালে, কথাটা মনে রাখিস! বলেই দ্রুত বেরিয়ে গেলো। 


জান্নাত চলে যাওয়ার পর অন্তুর দিকে কড়া নজরে জল কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল, তারপর বললঃ ঘরের তালা কই? 

অন্তুঃ আলমারির উপর।

জল আলমারির উপর থেকে তালা চাবি নিয়ে বললঃ 
আমি যাওয়ার সময় তোমাকে বাসায় তালা দিয়ে যাবো। তোমার তো বাইরে কোন কাজ নেই, আর ঘরে ত অন্য কেউ ও আসবে না তাই আজকে কাউকে পড়াইতে হবে না, আমি কালকে এসে তালা খুলবো কারন বলা ত যায় না, ছেলেদের মন, কখন দেখা যাবে জান্নাত রাতে চলে আসবে!

জলের কথাগুলো অন্তুর কাছে কাটা ঘায়ে নুনের ছিটার মতো লাগছিল, সে একটু কেশে বললঃ 
তুমি কি শুরু করছ এসব! ভালো লাগতাছে না তো আমার এসব শুনতে! আমি কোন অপরাধ করিনাই! তালা দিয়ে যাইবা, আমি দোকানে যাবো না? খাবো কি- তোমাকে রেঁধে? 


জল  ঠোঁট চুষতে চুষতে বললঃ আমি খাবার নিয়ে আসবো বাসা থেকে! বের হওয়ার কোন দরকার নেই! 

অন্তু বুঝলো জল আজকে অনেক রেগে আছে তাই আর কথা কাটাকাটি করতে চাইলো না। জল কে শান্ত করার জন্য বললঃ আচ্ছা, তালা দিয়ে ই যাইও, আগে বসো, তোমাকে দেখিনা মন ভরে একটু দেখি!

অন্তুর কথা ঘোরানোর স্বভাবটা জল আগে থেকেই টের পেয়েছিল তাই ওর দিকে কড়া নজরে তাকিয়ে রইল, অন্তু হেসে বললঃ 
" আচ্ছা, এতো পাগলামি করতাছ কেন?  কি হইছে বলবা তো"! 

জল একটু ভেবে বললঃ যা বলবো তা শুনবা? 

অন্তু মাথা নেড়ে সায় দিলো। জল একটা মুচকি হাসি দিয়ে বললঃ আচ্ছা, আজকে থেকে আর জান্নাত কে পড়াতে পারবানা!

অন্তু অবাক হয়ে বললঃ এইসব কি! আর কয়েকদিন পর SSC এক্সাম, আমি এখন যদি ওকে ছেড়ে দেই তাহলে ওর পরিবার কি ভাববে! 

জলের ঠোঁটের হাসি টা বন্ধ হয়ে গেলো,  সে বিছানা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে  কড়া স্বরে বললঃ  
তার মানে তুমি আমার কথা রাখতে পারবা না? এটাই তো?

অন্তু জল কে শান্ত করার চেষ্টা করতে চাইলো কিন্তু জল আরো একবার বললঃ just এটা বলো, পারবা কি না? 

অন্তু মাথা নিচু করে বললঃ এই মূহুর্তে এটা করতে পারবো না! 

জল মুখে আর কোন শব্দ ই করলো না, সোজা ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে গেলো,  অন্তু জায়গায় ই বসে ছিল, এক মিনিট পর জল আবার ফিরে এলো...তালা চাবিটা টেবিলের উপর থেকে নিয়ে দরজাটা খুব জোড়ে লাগিয়ে তালা মেরে চাবি নিয়ে চলে গেলো!!  

অন্তুর  অনেক রাগ হচ্ছিল! সে হাতের পাশে রাখা ডাইরিটা বিছানা থেকে ছুরে নিচে ফেলে দিয়ে জোড়ে একটা আর্তনাদ করে উঠলো!  সব কিছু বিরক্ত লাগছিল! জল কেনো এতো সন্দেহ করতে শুরু করেছে তা ভেবে পেলো না.......


জান্নাত বাসায় এসে রাগে ফুলে ফেঁপে উঠল! ঠোঁট কামড়াতে লাগলো...... মনে মনে বললঃ আজকের অপমানের প্রতিশোধ তো আমি নিয়েই ছাড়বো! আমি বেঁচে থাকতে অন্তুর সাথে তোর মিল হতে দিবো না। 

জান্নাত ছিলো অনেক চালাক। সে অনেক ভেবেচিন্তে একটা বুদ্ধি বের করল জলের সাথে অন্তুর ঝগড়া লাগানোর জন্যে। বুদ্ধিটা বের করে নিজেই নিজেকে ধন্যবাদ দিতে লাগলো!   জান্নাত নন্দিনি কে ফোন করে ওর বাসায় আসতে বলল। নন্দিনি যখন জান্নাতের বাসায় এলো জান্নাত নন্দিনি কে আজকের অপমানের কথাটা অনেকটা ই বাড়িয়ে কান্নাভেজা কন্ঠে বলতে থাকলো। সব শুনে নন্দিনি ও রেগে গেলো। নন্দিনি জান্নাতের দিকে তাকিয়ে বললঃ 
"আজকে রাতেই কাজটা করবো, ভাবিস না"! 


নন্দিনি চলের যাওয়ার পর জান্নাতের ভিতর অন্তুকে নিয়ে অন্যরকম একটা অনুভূতি কাজ করছিল! সে পাগল হয়ে যাচ্ছিল অন্তুকে কাছে পাওয়ার জন্য! সে অন্তুকে কল দিলো।অনেক ক্ষন রিং হওয়ার পর অন্তু ফোন টা রিসিভ  করতেই জান্নাত বললঃ 
" স্যার, আপনার মেডামের যদি পড়া শেষ হয় আমাকে একটু জানাইয়েন, আমি হিসাব বিজ্ঞানের একটা অধ্যায় বুঝতে পারছিনা, ওটা বুঝতে হবে।

অন্তু রেগেই ছিল। সে আরো রেগে বললঃ ও পড়েনি, ও আমাকে ঘরে তালাবদ্ধ করে রেখে রেগে চলে গেছে!
 
জান্নাত সুযোগ টা হাত ছাড়া করল না, সাথে সাথেই অনেকটা টিটকারির সুরে বললঃ ঢং ইজ কুয়ারা! আপনাকে তালা দিয়ে যায় আর আপনি বসে বসে মুড়ি খান! ওয়াও!!

জান্নাতের টিটকারি অন্তুর গায়ে লাগলো। অন্তু বললঃ আজেবাজে কথা বাদ দাও তো! মন মেজাজ এমনিতেই খারাপ,  আমি রান্না করার জন্য কোন জিনিস আনতে যাবো, সেই টা ও পারছিনা!  
কথাটা বলে অন্তু ফোন রেখে দিলো! জান্নাতের এত্তো রাগ হলো জলের উপর!  সে রাগে হুঁশ হারিয়ে ফেললো!  জলের নাম্বারে কল দিতেই ওর মা ফোন ধরল।

হেনা বেগম ঃ কে?
জান্নাত বললঃ আন্টি আমি জান্নাত, জল কে একটু দেওয়া যাবে?

হেনা বেগম ফোন কানে রেখেই জল কে জোড়ে ডাক দিয়ে বললঃ এই তোর ফোন আসছে, জান্নাত ফোন দিছে।

জান্নাতের নাম শুনতেই জলের মেজাজ এতোটা ই খারাপ হলো যে কোল থেকে ছোট বোন কে একরকম আছাড় দিয়েই খাটে নামিয়ে দৌঁড়ে এলো। 

জলঃ কেন ফোন করেছিস? 

জান্নাত ঃ স্যার বলছে চাবি দিতে! আমি স্যারের বাসায় একাউন্টিং করতে যাবো, আমি আসতাছি, চাবি টা রেডি রাখিস!

জান্নাত খুব স্বাভাবিক ভাবেই মিথ্যে কথাগুলো সত্য হিসেবে বলে গেলো কিন্তু ওর কথাতে জল আরো বেঁকে বসলো!  জল বড় একটা নিশ্বাস ছেড়ে জান্নাতকে বললঃ 

তাই নাকি! চাবি দেওয়ার জন্যে তোকে দিয়ে ফোন দেওয়াইছে? ওকে বলে দে, চাবি আমি কালকের আগে দিবো না, আর দরজা টা ও কালকের আগে খুলবো না!

জান্নাতঃ কাজটা কিন্তু বেশি বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে জল! চাবি দিবি,  আমি আসবো!

জল স্বাভাবিকভাবেই বললঃ কখনো সম্ভব না। রাখি! 
জল ফোন রেখে দিতেই জান্নাত রাগে ফেটে পড়ল! দেখলো পাশে ওর মা দাঁড়িয়ে আছে!  
জান্নাতের মা কড়া কন্ঠে জিজ্ঞেস করল ঃ কিসের চাবি? কাকে আটকে রাখা হইছে?

জান্নাত রাগে মায়ের কাছে সব বলে দিলো! জান্নাতের মা অবাক হয়ে বললেনঃ আরে বাপ রে! বকুলের মাইয়ার এতো পাখা গজাইছে! আমি কালকেই বলতাছি জলের মার কাছে সব!
জান্নাত মাথা নেড়ে না করে বলল বললঃ না, তোমার কিছু বলার দরকার নাই, যা বলার আমি ই বলবো! 

জান্নাতের সাথে কথা বলে জল অন্তুর উপর রেগে ফেটে পড়ছিল! সে পাগল হয়ে যাচ্ছিল!  উঁকি দিয়ে দেখলো মা কি করে। হেনা বেগম পাকের ঘরে রান্না করছিল, জল বললঃ আম্মু আমি নিচের দোকান থেকে একটা ডিম নিয়ে আসি! কথাটা বলে উত্তরের আশায় না থেকে বোরকা পড়ে অন্তুর বাসার চাবি নিয়ে রাস্তা দিয়ে পাগলের মতো দ্রুত হেঁটে আসছিল, অন্তুর বাসার নিচে আসতেই কয়েকটা বখাটে ছেলে জল কে উদ্দেশ্য করে বাজে বাজে মন্তব্য করতে লাগলো!  অন্য সময় হলে জল চুপ থাকতো কিন্তু আজকে রাগে ওর মেজাজ এতোটা ই খারাপ হয়ে গেছিল যে, সে কথাগুলো শুনা মাত্র ছেলে গুলির সামনে গিয়ে বললঃ 
এই!  কি বলছিস তোরা?

জলের কথায় একটু অবাক হয়ে গেলো সবাই, কেউ একজন রাগ দেখিয়ে জায়গায় থেকে উঠতে যাচ্ছিল জল পা থেকে জুতা টা খুলে দেখিয়ে বললঃ এটা চিনিস? জুতা দিয়ে পিটিয়ে ইভটিজিং করা বের করে দিবো জানোয়ারের দল! 

জলের চেচামেচি দেখে অন্য লোকজন এদিকে আসতে লাগলো যা দেখে ছেলেগুলো সেখান থেকে চলে গেলো.... 

জল দরজার কাছে এসে হাত দিয়ে দুপাশের গাল মুছে দরজার তালা খুলে ভেতরে ঢুকে দেখলো অন্তু লুংগি পড়ে শুয়ে আছে, যা দেখার পর জলের মেজাজ আরো খারাপ হয়ে গেলো!  সে অন্তুর দিকে তাকিয়ে হাত থেকে ডিম দুইটা দিয়ে বললঃ 
ভালোইতো! জান্নাত আসবে, তাই প্যান্ট চ্যাঞ্জ করে লুংগি পড়ে অপেক্ষা করা হচ্ছে! ওয়াও! আশ্চর্য না হয়ে পারলাম না!

অন্তু আগেই রেগে ছিল তাই জল এসব বলাতে সাথে সাথে ই বললঃ তোমার কি সমস্যা? আমি কার জন্যে অপেক্ষা করবো না করবো আমার ব্যাপার!  

অন্তু জানতো না জান্নাত জল কে কল দিয়ে চাবির মিথ্যে কথাটা বলেছে তাই অন্তু যখন জলের কথার এমন উত্তর দিলো জলের মন করল জান্নাত সত্যি ই বলেছে! জলের রাগ এতো টাই বাড়লো সে টেবিলের উপর থেকে একটা স্কেল নিয়ে অনুর গায়ে ঢিল মারলো! স্টিলের স্কেল ছুড়ে মারাতে অন্তুর হাতের এক পাশ কেটে রক্ত বের হচ্ছিল যা দেখে জল প্রথমে একটু নরম হয়ে পড়েছিল কিন্তু মূহুর্তের ভিতর ই নিজেকে সামলে নিয়ে বললঃ 
তোর এত্ত বড় সাহস! আমার সাথে প্রেম করে, আমার সাথে সব কিছু করার পর তুই আবার অন্য মেয়ের কাছে যাবি! আমি বেঁচে থাকতে তা কোন দিন ই সম্ভব না! 

একে রেগে ছিলো, তারপর জল হাত কেটে ফেলেছে তারউপর জলের মুখে তুই করে কথা শুনার পর অন্তুর মেজাজ এতোটাই বিগড়ে গেলো যে, সে জলের দিকে আংগুল তুলে বললঃ যদি নিজের ভালো চান আমার সামনে থেকে এখন চলে যান! তা না হলে অনেক খারাপ হবে! প্রত্যেক বৃহস্পতিবার আপনার কি হয়! আপনি ঝামেলা করেন ই! পাইছেন কি! কথাগুলো বলে ব্যাথায় হাতে টিস্যু দিয়ে চেপে ধরল!

জল অন্তুর হাতের দিকে তাকিয়ে মনে মনে অনেক কষ্ট পাচ্ছিল কিন্তু মুখে সেই আগের রাগ রেখেই বললঃ তুই আমার সাথে এমন করতাছস কেন তাইলে! আমি কি না করছি তোর জন্যে! সব ছেড়ে দিছি! ঘর থেকে এক পা ও বের হইনা, কারো সাথে কথা বলি না! এমন কি আপন মামা র সাথেও তুই না করার পর কথা বলি নাই আর তুই রাত আট্টার সময় জান্নায় কে খালি বাসায় আনার কথা ভাবিস! মজা শেষ হয়ে গেছে বুঝি আমার কাছ থেকে, তাই না! জান্নাত রাগে কেঁদে ফেলল! 

অন্তু ওর কাঁন্নার দিকে না তাকিয়ে বললঃ আমার না,  বলেন আপনার মন উঠে গেছে আমার উপর থেকে! মেয়েরা তো একজনের কাছে বেশি দিন থাকতে পারেনা তাই অন্যজনের কাছে যাওয়ার বাহানা খুঁজে!  পুরনো হয়ে গেছি তাই অবহেলাটাও বেশি ই করতাছেন! যাকে তাকে নিয়ে সন্দেহ করেন! একটা কথা মনে রাখবেন, আল্লাহ কারো জন্যে এককভাবে রাত রাখেনা! রাতের পর দিন আসবেই!আজকে আমাকে যতোটা কষ্ট দিয়েছেন একদিন আপনিও ততোটাই কষ্ট পাবেন!

জল বুঝল অন্তু অনেক কষ্ট পেয়েছে। জল ইচ্ছে করে আঘাত করে নি, স্কেল যে এতো জোড়ে লাগবে জল বুঝে উঠতে পারে নি, সে মুখে তা প্রকাশ করল না। জল কান্নাভেজা কন্ঠে বললঃ একটা কথা মনে রাখিস, ভালোবাসি মন থেকে আর তোকে বিশ্বাস করি হৃদয় থেকে! আমার সাথে অন্য কারো তুলনা দিতে আসিস না! আমার ধারের কাছেও একটাও নেই তবু আমি শুধু তোকেই ভালোবাসি আর তোর জন্যেই অপেক্ষা করে পথ চেয়ে থাকি! বাসায় গেলে মনে হয় দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে!
 কথাগুলো বলে জল অন্তুর সামনে গিয়ে ওর হাতটা ধরতে চাইল কিন্তু অন্তু হাত স্পর্শ করতে দিলো না! জল অন্তুর ব্যবহারে কষ্ট পেলেও মুখে কিছু না বলে অন্তুকে জড়িয়ে ধরে ঠোঁটে কিস করতে লাগলো! জল ভেবেছিল অন্তুর রাগ হয়তোবা এতে কমবে কিন্তু অন্তু আরো রেগে গেলো! 

অন্তুঃ গায়ে হাত দিবেন না! বাসায় যান! 

জল স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করে বললঃ না, যাবো না, তুই আমাকে রাগাইলি কেন! এখন রাগ ভাংগা, তারপর যাবো! 
অন্তু ঃ সামনে থেকে যদি এখন ই না যান অনেক খারাপ হবে! 

এবার জলের অনেক ঘৃন্না লাগছিল! সে আবার রেগে উঠল! কাঁন্নাভেজা কন্ঠে রেগে বললঃ শোন তোকে যদি আমি না পাই, অন্য কাউকে পাইতেও দিবোনা! এমন অবস্থা করবো যে আমি না পেলে তুই নিজেও থাকবি না! তুই শুধু আমার! কোন মেয়ের কলিজাতে এতো সাহস নেই যে তোকে আমার কাছ থেকে আলাদা কর‍তে পারে! 

জলের শেষের কথাগুলোতে অন্তুর রাগ  একেবারেই শেষ হয়ে গিয়েছিল কিন্তু ততোক্ষনে জল দরজা জোড়ে ধাক্কা দিয়ে বেরিয়ে গেছে! জলের কথায় অন্তুর নিজেকে অনেক ভাগ্যবান মনে হতে লাগলো!  সে মনে মনে বললঃ সত্যি আমি তোমার মতো কাউকে দেখিনি কখনো!











No comments:

Post a Comment