Monday, March 23, 2020

"সেই তুমি" পর্বঃ ১৫



শনিবার সকালে জলের ঘটনাটা চায়ের দোকানে বসে কোন এক জন আলোচনা করছিল। বকুল হোসেন ও সেখানে উপস্থিত ছিলেন কিন্তু তিনি খেয়াল করেন নি মেয়েটা কে। বকুল হোসেন খেয়াল না করলেও ঘটনা বাসা পর্যন্ত পৌঁছাতে বেশি সময় লাগলো না। 
হেনা বেগম বাসার নিচে ভ্যান গাড়ি থেকে তরকারি কিনছিলেন। এমন সময় জান্নাতের মা সেখানে এসে উপস্থিত হলো। মুখে পান চিবুতে চিবুতে হেনা বেগমের দিকে তাকিয়ে বললঃ কিরে জলের মা, জল কে বিয়ে দিয়েছিস কবে? আমাদের কে দাওয়াত ত দিলি না!

হেনা বেগম অবাক হয়ে বললঃ কে বলছে আমার মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি? 
জান্নাতের মা মুচকি হেসে বললঃ শুনলাম যে স্যারের কাছে পড়তে দিয়েছিস ওই স্যারের সাথে নাকি তোর মেয়ের বিয়ে হয়েছে? আর তোর মেয়েতো এখন সব সময় ই নাক ফুল পড়ে থাকে!

হেনা বেগম কি বলবেন বুঝে উঠতে পারছিলেন না তাই কিছুটা বিব্রতবোধ করতে লাগলো। 
হেনা বেগম কে কথাটা বলতে পেরে জান্নাতের মায়ের অনেক খুশি লাগছিল তাই আরো একটু দলিল দেওয়ার চেষ্টা করতে গিয়ে বললঃ যারা যারা ওই স্যারের কাছে পড়ে সবাই এই কথাই বলে যে, তোর মেয়ের সাথে স্যারের সম্পর্ক আছে আর তোর মেয়ে নাকি অনেক মাতবুরি করে ওই বাসায়!

হেনা বেগম বিরক্ত হয়ে বললেনঃ আরে এসব বাজে কথায় কান দিও না তোমরা। আমার মেয়ে একটু চঞ্চল এটা ঠিক কিন্তু আমার মেয়ে এসব করবে না।

জান্নাতের মা হেসে বললঃ তুই তাহলে কিছুই জানিস না। গতকাল আমার মেয়ে র অংকে কি জানি সমস্যা হয়েছিল,  আমাকে বলল, আম্মু আমি একটু স্যারের বাসায় যাবো। মেয়ে বলাতে আমি বললাম, একা যাস না, জল কে নিয়ে যা। আমার মেয়ে তোর মেয়েকে ফোন দিলো আর তোর মেয়ে রেগে বলল "এখন কারো ওর বাসায় যাওয়া যাবেনা! আমি ওকে তালা দিয়ে রেখে চাবি নিয়ে চলে এসেছি"! 
তুই ই বল, এটা কোন কথা হলো? কথাগুলো বলে সরু চোখে হেনা বেগমের দিকে তাকিয়ে রইল দেখার জন্যে যে হেনা বেগমের অবস্থায় কোন পরিবর্তন হয় না কি!

হেনা বেগম মাথা নিচু করে বাজার নিয়ে উপরে উঠে গেলেন! মনের ভিতর বার বার জান্নাতের মায়ের কথাগুলো বাজতে লাগলো। ঘরে ঢুকে ই দেখলো জল নেই, মেজাজটা আরো খারাপ হয়ে গেলো!  মনে মনে বললঃ আজকে আসুক স্কুল থেকে! ওর একদিন, কি আমার একদিন!


জল স্কুলে ঢুকেই জান্নাত কে খুজে বের করল। সাথে নন্দনি ছিল। জল জান্নাতের দিকে তাকিয়ে বললঃ যদি নিজের ভালো চাস অন্তুর পিছন থেকে সরে যা, তা না হলে খুব খারাপ হবে! কাল রাতে তুই অন্তুর খালি ঘরে যেতে চাইছিলি কেন? সমস্যা কি তোর? 

জান্নাত নদিনির দিকে তাকিয়ে বললঃ জল কে চুপ করতে বল, তা না হলে কিন্তু আমার মুখ ছুটবে!

নন্দিনি কিছু বলার আগেই জল চেঁচিয়ে উঠলো!  সে রেগে বললঃ ওয় কি বলবে! তুই অন্য টিচার দেখ, অন্তুর কাছে তোর পড়ার কোন দরকার নাই! 

নন্দিনি জলের দিকে তাকিয়ে শুকনো মুখে বললঃ জল, এটা কেমন কথা তোর! আমরা স্যারের কাছে শুধু পড়তে যাই, প্রেম করতে যাই না, ঠিক আছে? তুই প্রেম করিস এটা তোর ব্যাপার কিন্তু আমাদের কে অযথা সন্দেহ করা ছাড়! 

নন্দিনি সরাসরি জান্নাতের সাপোর্ট করাতে জল বুঝেই গেছে, ওরা দুজন মিলে আছে তাই কড়া নজরে দুজনের দিকে তাকিয়ে বললঃ এমন কোন মার মেয়ের সাহস নাই যে অন্তুকে আমার কাছ থেকে আলাদা করতে পারবে! 
বলে দ্রত ক্লাস রুমে ঢুকে পড়লো 

জান্নাত আর নন্দিনি একে অপরের দিকে তাকিয়ে রইল।  নন্দিনির দিকে গম্ভীর মুখ করে জান্নাত বললঃ জলের একটা ব্যবস্থা করতে হবে, তা না হলে ওর সাহস দিন দিন বেড়েই চলেছে! 

নন্দিনি মাথা নেড়ে সায় দিল!


অন্তু যখন ছেলেদের কে পড়াচ্ছিল আবুল একটু কাচুমাচু করে হেসে বললঃ স্যার, আমি আপনার বেস্ট স্টুডেন্ট, তাই না? একদিন ও বন্ধ কতিনাই!

সাজু বললঃ মিয়া, তুমি বন্ধ করবা কেমনে, তুমি ত এখনো ললিপপ খাও! 

আহমেদ বললঃ মেনশন নট, তবে তুই (আবুল) দেখতেই ত বোকা মার্কা তাই শুক্রবারে ও পড়তে আসিস!

আবুল হেসে বললঃ তোমরা ত পড়ো না, শুধু আড্ডা দাও, আমি পড়ি তাই প্রতিদিন আসতে হয়!

অন্তু সহ সবাই হেসে উঠল।  

*** স্কুল ছুটির পর জল যখন বাসার দিকে যাচ্ছিল, গত রাতের সেই বখাটে ছেলেগুলো জল কে দেখে একে অন্যকে বলতে লাগলোঃ আজকাল জুতার দাম অনেক বেড়ে গেছে, তাই পায়ের জুতা পায়েই যেনো থাকে, তা না হলে নিয়ে গেলে বাপ মায় আবার কানবে!
সবাই হেসে উঠল!  জল বুঝতে পেরেছে কথাগুলো ওকে বলছে কিন্তু আজকে সে আর জবাব দিলো না, অনেক ক্লান্ত লাগছিল ওর, তাই পাত্তা না দিয়ে দ্রুত বাসায় চলে গেলো! বাসায় গিয়ে রুমে ঢুকতেই হেনা বেগম ডাক দিলেন।জল মায়ের কন্ঠ শুনেই বুঝে গিয়েছিল কিছু একটা হয়েছে তাই মনে মনে অনেক ঘাবড়ে গেলো। শান্ত থাকার চেষ্টা করে হেনা বেগমের সামনে গিয়ে বললঃ

" মাত্র আসছি, আগে ফ্রেস তো হতে দাও, তারপর বলতে পারবা কথা"

হেনা বেগম কড়া সুরে বললঃ এসব কি শুনতাছি তোর নামে! 

জলের ভেতটা কেঁপে উঠল!  মনে মনে বললঃ মা কি জেনে গেছে সব কিছু! 
মুখে বললঃ আমি আবার কি করলাম! আর কি শুনছ তুমি আমার নামে? 

হেনা বেগম ঃ তুই নাক ফুল খোল আগে! সারা মহল্লা ডাক পড়ে গেছে তোর নাকি বিয়ে হয়ে গেছে স্যারের সাথে! এসবের মানে কি! আর,তুই নাকি স্যারের বাসায় গিয়ে অতিরিক্ত করিস?

মায়ের কথা বলার ঢং দেখেই জল বুঝে ফেলেছিল কেউ একজন প্যাঁচ লাগিয়েছে তাই রাগে গা জ্বলে উঠল ওর! সে মায়ের দিকে তাকিয়ে বললঃ কে কি বলছে তোমারে! নাম বলো কে বলছে! 

হেনা বেগম জলের রাগ দেখে কিছুটা থতমত খেয়ে গেলো,  তাই আগের চেয়ে একটু নরম স্বরে বললঃ হুম যে বলছে তার নাম আমি তোর কাছে বলি আর তুই গিয়ে ঝগড়াঝাটি শুরু করে দে! বড় হইতাছিস সে খেয়াল আছে! এমনিতেই ত তোকে দেখলে মনে হয় তুই কত বড় তার উপর যদি এমন করিস তোকে ভালো বিয়ে দিবো কি করে! তোর সাইজের ত কোন মেয়েই নেই আমাদের এলাকায়! এখন ই নাক ফুল খোল!

জলের রাগ আরো বেড়ে গেলো,  সে নাকফুল টা মায়ের সামনেই খুলে ফেলল! নাক ফুল খুলার সময় ওর অনেক কান্না পাচ্ছিল কারন অন্তুর সাথে সব হওয়ার পর পর ই জল ঘরে ঝগড়া করে নাক ফুটিয়েছিল, সে নিজেকে অন্তুর বৌ ভাবতে গর্ববোধ করতো, ওর নাকফুল পড়াটাও অন্তুর অনেক পছন্দ ছিল তাই চোখ ভিজে উঠল! মুখে কোন কথা না বলে রেগে ভিতরের রুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিলো! 

হেনা বেগম চিল্লাইয়া বললেন ঃ আজকে থেকে আর পড়তে যাওয়া লাগবে না, আমি অন্য মাস্টার ঠিক করে দিবো তোকে!

**** বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে আসছিল কিন্ত ছেলেরা ছাড়া আর কেউ পড়তে এলো না। সবাই না আসা নিয়ে অন্তুর মাথাব্যথা ছিল না, জল আসেনি তাই ভেতটা,অস্থির হয়ে উঠল।  নানান চিন্তা মাথায় ঘোর পাক খাচ্ছিল। এই রুম, ওই রুম পায়চারী করতে থাকলো, কিছুই ভালো লাগছিল না তাই জলের নাম্বারে sms করল কিন্তু কোন রিপ্লাই আসলো না! অস্থিরতা আরো বেড়ে গেলো অন্তুর।


জল কয়েকবার চেষ্টা করল কিন্তু তার কোন কথা হেনা বেগম শুনতে রাজি হলেন না। পড়তে যেতে দিতে দিতে কোন রকমেই রাজি হলেন না। এমন সময় পাশের ঘরের এক মেয়ে আসলো জলের মায়ের কাছে। নাম মিম। সে হেনা বেগমের সাথে বসে কথা বলতে বলতে জলের দিকে তাকিয়ে বললঃ 

"আন্টি জল কে আর ওই অন্তু স্যারের কাছে পড়তে দিয়েন না, আমি ওর জন্যে মেয়ে টিচার ঠিক করে দিবো"!  কারন জলকে নিয়ে চারদিকে অনেক কথা ছড়িয়ে পড়েছে!

একে মা পড়তে যেতে দিচ্ছিল না তার উপর মিমের মাতুব্বরি তে জলের গায়ে যেনো আগুনের ফোস্কা পড়লো!  
সে রেগে বললঃ দেখো মিম আপু! আমার নামে কে কি বলে না বলে তা নিয়ে আমার কোন মাথা ব্যথা নেই! আমি এই স্যারের কাছেই পড়বো! স্যার তো কোন দিন আমাকে এমন কোন কথা বলেনি! যদি বলতো আমি নিজেই চলে আসতাম স্যারের কাছ থেকে! আমাকে নিয়ে তোমার এতো ভাবতে হবে না! 


মিম হেনা বেগমের দিকে তাকিয়ে বললঃ ভালোই বলছি তোর, খারাপ চাই নি! আন্টি আপনার মেয়ে বেশি বুঝে, পরে একটা বিপদে পড়লে বুঝবে কেমন লাগে, কথাগুলো বলে চলে গেলো! 

মিম ছিল জান্নাতের ফুফাতো বোনের বান্ধবি তাই জলের বুঝতে বেশি অসুবিধা হলো না প্যাচগুলো কে লাগাচ্ছে! জলের মন মেজাজ আরো খারাপ হয়ে গেছে, কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল তার আগেই হেনা বেগম একটা মাঝারি সাইজের বেত দিয়ে খুব জোড়ে জল কে দু চার টা আঘাত করে রেগে বললঃ অনেক সাহস বেড়ে গেছে এ কয়েক মাসে তোর! যারতার সামনে যা তা বলে বসিস কেন তুই! 

এটা বলে আরো কয়েকটি আঘাত করল যা জলের সহ্যের বাইরে ছিল কিন্তু জল মায়ের মুখের উপর কোন কথা বলল না। ভেতরে গিয়ে বোরকা পড়ে ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছিল, হেনা বেগম চিতকার করে বললঃ যাচ্ছিস যা! কিন্তু জিবনে আর কখনো এই ঘরে ঢুকার চিন্তা করবিনা! আসুক আজকে তোর বাবা! আদর দিতে দিতে তোকে মাথায় তুলে রেখেছে! 

জল কোন কথাই পাত্তা দিলো না, চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছিল, সে বেরিয়ে গেলো অন্তুর বাসার উদ্দেশ্যে!! 




No comments:

Post a Comment