উঠানের এক কোনে দাদি, কাকি রা বসে মাথায় তেল দিচ্ছিল। পোকড়া দাঁত বের করে ৬০ বছরের এক দাদি বয়সী মহিলা হেনা বেগম কে উদ্দেশ্য করে বললেনঃ
মাগো মা! "তোর মেয়ে ত অনেক ঢাংগোর হইয়া গেছে"!! বিয়া শাদি দিবি নাকি? কথাটা বলে দুইটা পান এক সাথে মুখে দিয়ে চিবাতে লাগলো।
হেনা বেগম এক গাল হেসে বললঃ খালা তুমি ভালো ছেলে পাইলে জানাইও আমাকে। বুড়ি এক একটু আড় চোখে জলের দিকে তাকিয়ে পরক্ষনেই আবার হেনা বেগমের দিকে ফিরে ফিসফিস করে বললঃ
মেয়ে ত তোর অনেক সুন্দরী, লম্বাচুড়াও অনেক আর মোটা! তাড়াতাড়ি বিয়ে দিয়ে দে। পরে না হলে প্রেমটেম করে পালাইয়া তোর মুখ কালা করবে!!
এবারের কথাগুলো হেনা বেগমের সহ্য হলো না, তিনি জলের দিকে একবার চাইলেন, তারপর বৃদ্ধ মহিলার উদ্দেশ্যে বলতে লাগলেনঃ নাগো খালা, আমার মেয়ের মাত্র ১৬ বছর চলে, ও প্রেমের কি বুঝে? আর ও ঘর থেকে প্রাইভেট পড়তে যাওয়া ছাড়া অন্য কোথাও কখনও বের হয়না। প্রেম করবে কি করে? আমার মেয়ে আমি চিনি, এসব নিয়ে তাই ভাবি না।
বৃদ্ধাঃ আরে প্রেম কি সবাই রাস্তায় ই করে নাকি! আজ কাল জমানা খারাপ অনেক! মাস্টারের সাথেই প্রেম শুরু করে মেয়েরা! কথাটা বলে মুখটা একটু বাকা করে জলের দিকে তাকাল। জল উঠানের এক পাশে বসে দাঁত দিয়ে নখ কাটছিল। মা দাদির কথার সবটুকু না শুনলেও বুড়ি যে মায়ের কান ভারী করতাছে ওর বিরুদ্ধে তা বুঝতে দেরি হলো না। তাই উঠে যখন বৃদ্ধার দিকে আসছিল বৃদ্ধার চোখ বড় হয়ে গেলো। মনে মনে বুড়ি বললঃ
মাগো মা! কি জোড়ে হাইটা আসতাছে! শুইনা ফেলছে নাকি কথা! হাতির মতো শরির গো বাবা!
জল সামনে আসতেই বৃদ্ধা হেসে বললঃ দাদুভাই তুই ত মেলা বড় হয়ে গেছিস? আমার মাথাটা,একটু বিলি দিয়ে দে ত? বলে কোন রকমে জলের দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে নিলো।
হেনা বেগম কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল। জল হাত দিয়ে থামিয়ে, এক হাত কোমড়ে দিয়ে অন্য হাতের আংগুল খাড়া করে মহিলাকে বললঃ আহা! কি শখ বুড়ির!! এতোক্ষণ কি বলতাছিলা আমার মায়ের কাছে? মনে করছ আমি বুঝি না? তোমার নিজের মেয়ের ত বয়স প্রায় ৩০ হতে চলেছে, আমার দিকে না তাকিয়ে নিজেরটার দিকে খেয়াল দেও, বিয়ে দাও, আল্লাহ্ ও খুশি হবে, মেয়েও দোয়া করবে বাপ মার জন্য।
বৃদ্ধা চুপ করে মুখটা কালো করে বসে আছে। জল কথাটা বলে হেনা বেগমের দিকে তাকিয়ে বললঃ
আম্মু ৫ দিন হয়ে গেছে! আর কতো দিন থাকবা? আমার পড়ার ক্ষতি হচ্ছে!! কালকে ঢাকায় ফিরবো, আব্বু কে বলবা প্লিজ??
হেনা বেগম চোখ গরম করে তাকিয়ে বললঃ তোর আব্বু কে আগে এটা বলতে হবে যে তুই রহিমা খালার সাথে বেয়াদবি করেছিস!!
বৃদ্ধা হেসে বললঃ মাইয়ার দোষ নাইরে, দোষ জমানার! জলের চেহারার দিকে তাকিয়ে দেখলো জল নাক ফুলিয়ে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে তাই উঠে চলে যেতে যেতে বললঃ কি যুগ আসল! ভালা ও বলা যায় না.......
রহিমা বেগম চলে যাবার পর হেনা বেগম আরো রেগে গেলেন। বললেনঃ
ওই তুই গ্রামে এসেছিস কি এসব কাপড় পরে থাকতে! টপস আর জিন্স কি কেউ গ্রামে পড়ে? বিয়ে শাদি দেখতে আসলে মানুষ কি ভাব্বে?
জল আগের মতোই রেগে হেনা বেগমের দিকে তাকিয়ে বললঃ ওওহ তারমানে বুড়ি এতোক্ষন এসব ই বলছিল!!! আমি ত না জেনেই আলগা ধাওয়া দিয়ে দেখছিলাম! আসুক আব্বু, বলব তুমি আমাকে ভাগাতে লোক ঠিক করতাছ! কথা টা বলে সামনের বসার ছোট মোড়া টা একটা লাথি মেরে জল ঘরে ঢুকে গেলো!
হেনা বেগম চারদিকে তাকিয়ে দেখলেন কেউ দেখেছে কি না........না, দেখেনি!
মনে মনে বললঃ মেয়ের রাগের কারনে কোন দিন জানি কোন অঘটন ঘটে যায়!
**** অন্তু এ কয়েক দিনে নিজেকে অনেকটা ই পরিবর্তন করে নিয়েছে। সে মন কে বোঝাতে লাগলো, যে ওর নয় ওকে নিয়ে মিছেমিছি ভাবার কোন কারন নেই। মজা করার জন্য এসেছিল, জিবনটা এলোমেলো করে দিয়ে গেছে তাতে কি! জিবন ত ওর জন্য থেমে থাকবেনা। জল পড়তে আসে না আজকে ৭ দিন হয়ে গেছে। এই ৭ দিনে অন্তু নিজেকে পরিবর্তন করার জন্য যথেষ্ট চেষ্টা করেছে, আর সে অনেকটা সফল ও হয়েছে। ওর এখন আর জলের কথা মনে পড়েনা।
বিকেলে সবাই যখন পড়তে আসলো তখন রুমের ভিতর একটা ছোটখাটো লংকা কান্ড ঘটে গেছে। ছাত্র ছাত্রী দের ভিতর থেকে কে যেন পড়ার টেবিলে বড় করে লিখে রেখেছে ঃ এই জায়গায় যে বসবে সে গরু, সে ঘাস খায়......গরু একটু মোটাসোটা থাকে!
ছেলেদের ভিতর আহমেদ,আর আবুল একটু মোটা, বিশেষ করে আহমেদ একটু বেশি মোটা। আর ওই জায়গাটা তে সে ই বসে। সেদিন ও যথারীতি সে নাদুসনুদুস শরির টা নিয়ে সেখানে বসছে। অন্তু তখনো পড়ার ঘরে আসে নি। আহমেদ বসার পর সাজুর সাথে কথা বলছিল। দুজন খুব ক্লোজ হয়ে কথা বলছিল এমন সময় সাজুর চোখ পড়ল টেবিলের উপর আর চোখ পড়তেই সে মুখটা বাকা করে বললঃ মামা! কাহিনি ঘটে গেছে তোমারে নিয়ে! হাসিটা মিশে গেলো আহমেদের মুখ থেকে। সে চোখ ছানাবড়া করে বললঃ কেন কি হইছে!
সাজু এতোক্ষণে আংগুল দিয়ে আহমেদ কে লিখা টা দেখাচ্ছিল ততক্ষণে সবাই দেখে ফেলেছে। সাজু এবার তেলে একটু জ্বাল দিল। সে খুনসুটি করে বললঃ মামা! লেখাটি তোকে নিয়ে লিখছে এটা শিউর ই! কারন তুই ই দেখতে গরুর মতো মোটা! এটা নিশ্চিত মেয়েদের কাজ! ওরা আলাদা হয়েও কাহিনি করতাছে আমগো লগে!
আহমেদ বেচারা মুখ কালো করে বললঃ তুই গরু হালা চিকনা! আজকে বিচার চাই আমি! স্যার কে ডাক দে! মেয়েরা আসলে আজকে বিচার না দেখে বাসায় যাবো না! ডাক দে স্যার রে!
আবুল উঠে ভিতরের রুমে গিয়ে অন্তু কে বললঃ স্যার তাড়াতাড়ি আসেন, সমস্যা হয়ে গেছে বড়! অন্তু অবাক হয়ে যতোক্ষণে ভিতর থেকে আসলো ততোক্ষনে ঘরের পরিবেশ মেলার মত সরগরম হয়ে উঠেছে।আর তানহা ব্যাপার টা মধ্যস্থতা করার জন্যে দু হাত পিছনে দিয়ে দাঁড়িয়ে মুচকি মুচকি হাসছিল।
অন্তু রুমে ঢুকতেই তানহা হেসে বললঃ দাদা, তোর কোন ছাত্রী এই কাজ টা করল? বেচারাকে ত গরু বানিয়ে ছেড়েছে! অন্তু উপুর হয়ে লেখাটি দেখে চিনার একটা ব্যর্থ চেষ্টা চালাতে লাগলো। আবুল অনেকটা সহজ সরল তাই সে বললঃ সাজু, মিয়া তুমি কেমনে বুঝলা এটা মেয়েদের লিখা? এটা ত অন্য কেউ ও লিখতে পারে.........আবুল কে মাঝ পথে থামিয়ে দিয়ে আহমেদ বললঃ
স্যার, আমি বিচার চাই! মেয়েরা আমাদের থেকে টাইম আলাদা নিছে, ভালো কথা,কোন সমস্যা নাইক্কা মাগার আমার জায়গায়, আমি যেই জায়গায় প্রতিদিন বসি ওই জায়গায় ই কেন 'মেনশন নট' লিখা টা লিখে গেছে! আমি শিউর এটা ঝগড়াটে জান্নাত লিখছে! স্যার, বিচার করবেন না? আমি আজ লাগলে সারাদিন থাকবো তবু এই বিচার দেখে যাবো!
সাজু এবার আরো উত্তেজিত হয়ে বললঃ স্যার লাগলে জেলে যামু তবু আজ কাহিনি একটা হইব!
অন্তু কি বললে বুঝে উঠতে পারছে না তাই হেসে বললঃ আচ্ছা, তোমরা শান্ত হও, ব্যাপার টা আমি দেখছি!
আহমেদঃ ওই স্যার, আপনি প্লিজ আমাদের সামনে করবেন বিচার?
সাজুঃ আমরা অপরাধী কে তা জানতে চাই!
আবুলঃ জাতি দেখতে চায় কে গরু, কে মহিষ!
ওদের কথা শুনে তানহা হাসতে হাসতে বললঃ আরে ভাই, তোরা শান্ত হ্! তোদের স্যার ত আছে, বিচার হবে।
আহমেদ ঃ হুম তানহা আপু ঠিক বলছে! আমরা স্যারের দিকে অধির আগ্রহে তাকিয়ে আছি দেখার জন্যে স্যার কি করে.......
অন্তু হেসে বললঃ আচ্ছা, আচ্ছা, এবার পড়ো, আমি দেখি কি করা যায়, এরা ত ৬ টায় আসবে, মাত্র বাজে ৪ টা। তোমরা পড়ো আমি তোমাদের সামনেই বিচার করবো। অন্তু ভিতরে চলে গেলো।
আহমেদ বললঃ তানহা আপু, আপনি ত সব সময় ঘরে থাকেন, দেখেন নাই কোন এল, সি মাইয়া এটা লিখে পালাইছে?
তানহা হেসে শেষ হয়ে যাচ্ছিল আহমেদের চেহারার ভাব দেখে, অনেক কষ্ট করে হাসি থামিয়ে বললঃ নারে ভাই, আমি দেখি নাই!
আবুল একটু কাছে এসে বললঃ আমার মনে হয় এটা অন্য কেউ করছে, মেয়েরা না, কি বলেন তানহা আপু, ঠিক না?
আবুলের কথায় উপস্থিত সবাই ওর দিকে এমন করে তাকালো যেন আবুল ভিন গ্রহের এক শিংওলা প্রাণী! আবুল পরিবেশের গুরুত্ব বুঝে হেসে উঠল। বললঃ আরে আমি মজা করছিলাম! এটা নিশ্চিত মেয়েরা, ই লিখছে! কি বলেন তানহা আপু, ঠিক না? তানহা হেসে বললঃ ভাইরে তুই যা বলিস সব ই ঠিক। তানহা ভিতরের রুমে চলে যাচ্ছিল, অর্ধেক গিয়ে আবার ফিরে আসলো। আহমেদের দিকে তাকিয়ে বললঃ আচ্ছা ধর, এটা,ওরা লিখে নাই, তখন যদি ওরা উল্টো বিচার চায়? তখন কি করবি?
সাজু বললঃ বিচার চাইবো মানে! লাগলে জেলে যামু তবু এইডিরে এমন পিডা দিমু যে চিনবো আমি কে!
আবুল কথায় সসংশোধনি এনে বললঃ আমি কে না মিয়া, বলো আমরা কে! আমরা ও আছি তোমার সাথে, বিচার ত হবেই। সবাই এক সাথে হেসে বলল ঃ অবশ্যই!!!
No comments:
Post a Comment