Saturday, March 14, 2020

"সেই তুমি " পর্বঃ ৭



রাতে খাবার খেতে বসে অন্তুর চোখ ভিজে আসছিল,  ব্যাপারটা তানহা খেয়াল করল। কিন্তু কিছু বলল না,অন্তু কোন রকমে খাবার খেয়ে দ্রুত নিজের রুমে চলে আসলো।  অন্তুর ছেলেবেলা থেকেই ডাইরি লিখার অভ্যাস ছিল। সে প্রতিটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা লিখে রাখে ডাইরি তে। আজ ও ডাইরি লিখতে বসল। 
(ওর লিখাটা এখানে হুবহু তুলে ধরার চেষ্টা করেছি)

"অনেক দিন পর ডাইরি লিখতে বসেছি। কি লিখবো তা নিজেও জানি না। মনের ভেতরে ঝড় বয়ে যাচ্ছে! ভেতরটা কোন এক অজানা ভয়ে কাঁপছে.........জল কি সত্যি আমার সাথে প্রেমের অভিনয় করল! গত বৃহস্পতি বার সম্পর্ক করার পর এই বৃহস্পতিবার ই সে সব ভেংগে দিল!! অনেক কষ্ট হচ্ছে আমার....... কলম চলছে না.......মনে হচ্ছে ছুরি দিয়ে কেউ কলিজাটা কুচিকুচি করে কাটছে!!! জল যদি ফিরে আসে সত্যি আমি কখনো ওকে আর কাঁদাবো না.......প্লিজ জান.......ফিরে এসো........

ডাইরি লিখতে গিয়ে কখন যে অন্তু ঘুমিয়ে পড়েছিল টের ই পায় না, মোবাইলটা যখন বেজে উঠল তখন রাত ২ টা! এতো রাতে কে হতে পারে? কল টা ধরতে ধরতে কেটে গেলো! রিপিট কল করতে গিয়ে দেখলো মোবাইলে ব্যালেন্স নেই এক টাকাও। লোন ও গত ২ মাসে পরিশোধ করেনি কিপটেমি করে...........নাম্বারটা অপরিচিত তাই ঘুমটা আর আসছে না...........এটা জল নয় ত আবার! নিজের অজান্তেই নিজেকে প্রশ্নটা করে হেসে উঠল অন্তু............নাহ! পাগল হয়ে যাচ্ছি এক রাতেই!


****আমি কেন অন্তুর নাম্বার ডায়েল করলাম!! আমি ত ওকে ভুলে গেছি! কি হচ্ছে আমার সাথে এসব! তাহলে কি আমি এবার ওকে সত্যি ভালো বেসে ফেলেছি! কখনো না! কথাগুলো নিজেকে নিজেই এক মনে শুনিয়ে চলল জল। এফ, এম থেকে কোন একটা ফেমাস আর জের ব্রটকাস্ট শুনছিল জল, হঠাৎ কি যেন মনে হতেই অন্তুর নাম্বার টা ডায়েল করল! রিং হচ্ছে,  বুকের ভেতর টা ধকধক করতে লাগলো! 

জল সাথে সাথে কল টা কেটে দিলো। 

"ইস! মেজাজটা এতো খারাপ হয়!"রাতের ঘুম টা ও এখন দেখছি ওই বদমাশ টার জন্য আসতে চায় না!! দাঁতে দাঁত চেপে বললঃ আর একবার ঘুমের ভিতর আসলে ঘুসি দিয়ে বারোটা বাজিয়ে দিবো! ভাগ্যিস কল টা ধরে নি, ধলে কি বলতাম আমি!! 
নিজে নিজেই হেসে উঠল। পাশে হেনা বেগম ঘুমাচ্ছিল, হাসির শব্দ টা সামান্য হলেও উনার কানে পৌছাতে বেশি সময় লাগলো না! 

হেনা বেগম ঃ কিরে, তুই এতো রাতে কার সাথে হাসিস? 
চোখ গরম করে ঘাড় উচু করে তাকাল জলের দিকে। 
জল মোবাইলের পাএয়ার বাটনা টা অফ করে মোবাইল বালিশের নিচে রেখে কাপা কাপা কন্ঠে বললঃ ক...কই! তু..তুমি এতো বেশি বুঝো কেন ত মা? আমি শুয়েই আছি, গোয়েন্দাগিরি বন্ধ করে ঘুমাও রাত ২ টা বাজে এখন। কথাটা বলে অন্যপাশে ঘুরে শুয়ে পড়ল, কিন্তু মনে মনে বললঃ 
যাক বাবা! অল্পের জন্যে বেচেঁ গেছি! দাজ্জাল মা!

পরদিন সকালে অন্তুর ঘুমটা অনেক আগেই ভেংগে গেলো। কিছুতেই যেন সময় কাটতে চাইছে না। ভোর ৫.৩০ বাজে। অন্তু বিছানা ছেড়ে বারান্দায় এসে দাঁড়াল। আকাশের দিকে মুখ করে মনে মনে বললঃ আজ শুক্রবার,  যদি জল না আসে! আল্লাহ ওকে এনে দিও প্লিজ।

***সময়গুলি কাটতেই চাইছেনা! আমার ত কখনো এমন হয়নি! ইস! কল টা ও ধরে নাই, যদি ধরত বা বেক কল করত বুঝতাম হয়ত অন্তু আমাকে রিয়েল লাভ করে........ঘোড়ার ডিম!  তা না হলে মানুষ ত একবার হলে ও নাম্বার চেক করে। জল কথাগুলি নিজের সাথেই নিজে বিড়বিড় করে বলতে লাগল। 

পাশের ঘর থেকে বকুল হোসেন খুব জোড়ে জোড়ে দরজায় কড়া,নাড়তে লাগলো!  জল অনেকটা বিরক্তি নিয়ে উঠল দরজা খুলতে......মাত্র বাজে ৬ টা! এতো সকালে কি হলো আবার! দরজা খুলে দিলো.......

জলঃ আব্বু এতো সকালে চিল্লাইতাছ কেন? কি হয়েছে? 

বকুল হোসেনঃ তোর আম্মু কে উঠাইয়া রেডি হতে বল। আমাদের এখনি গ্রামে যেতে হবে। কল আসছে। তোর দাদিমা অসুস্থ অনেক। তাড়াতাড়ি যা।

জল একটা চাপা নিশ্বাস ফেলল! মনে মনে বলল......এমনিতেই সময়টা কাটতে চাইছে না, তারউপর যদি আজকে ওই শয়তান পোলার চেহারা না দেখি মন ত আরো লাফাবে! কি করি এখন........ফিসফিস করে কথা বলতে বলতে দাঁত দিয়ে হাতের নখ কাটতে লাগলো। 


***সকালের ব্যাচ এ সবাই আসছে। অন্তু অনেক আগ্রহ নিয়ে দরজার দিকে তাকিয়ে রইল।সবাই রুমে ঢুকার পরও সে তাকিয়ে রইল। 
জান্নাত ব্যাপার টা খেয়াল করে গলা কাশি দিয়ে বললঃ স্যার, আজকে জল আসবে না। ওরা গ্রামে চলে গেছে। আমাকে সকালে কল দিয়েছিল।

অন্তু ভেতরে ভেতরে একেবারে ভেংগে পড়ল। কিন্তু মুখে প্রকাশ না করে বলল, কে গেলো, কে আসলো তা দেখে আমার লাভ নেই। তোমরা পড়।

নন্দিনি চাপা হাসি দিয়ে বললঃ স্যার, জল এমন ই। ও ফালতু কাজ বেশি করে। সব জিনিস নিয়ে ই মজা করে। ও কোন প্রেম টেম করে না। আপনার সাথে কেমন করল দেখলেন না।
ছেলে ৪ জন একে অপরের দিকে তাকিয়ে রইল। আহমেদ বললঃ স্যার, মেয়েরা ত সব পেকে গেছে! সব বুঝে! 

আবুল ছেলেটা দেখতে যেমন মোটা ঠিক তেমন ই বোকা। সে দাঁত বের করে হেসে বললঃ 
আরে মিয়া এইটাই ত বয়স ওদের। এখন করবে না, কবে করবে! 
সবাই হেসে উঠল কিন্তু টিপ্পনী টা জান্নাতের সহ্য হলো না, সে একটা বই ছুড়ে মারল টেবিলে আর বললঃ স্যার, আমরা কেউ ই ছেলেদের সাথে পড়তে চাইনা!  
যদিও কথাটা বলার পিছনে জান্নাতের অন্য রকম একটা উদ্দেশ্য ছিল যা কেউ ই ধরতে পারে নি। 
অন্তু সবাই কে শান্ত করে বললঃ বাকিরা কি বলো? 
আহমেদ বললঃ ওদের সাথে পড়ার আমাদের ও কোন ইচ্ছে নাই! কিন্তু নন্দিনি, উষা, লিজা চুপ করেই রইল।
অন্তু বললঃ বিকেল থেকে সবার সময় চেঞ্জ থাকবে। 

সবাই পড়ার মাঝে খেয়াল করল, অন্তুর আজ পড়ানোর প্রতি এককেবারেই মনোযোগ নেই। সে বারবার কেমন যেন চুপ হয়ে যায়। 

জান্নাতঃ স্যার, আপনি কি অসুস্থ?  যদি অসুস্থ হন তবে বিশ্রাম নিতে পারেন। আমরা না হয় চলে যাই? 
অন্তু স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করে বললঃ না না! আমি ঠিক আছি,  তোমরা পড়। মুখে কথাগুলো বললেও ওর ভেতরে ঝড় বয়ে যাচ্ছিল জলের জন্য অন্যরকম এক ধরনের ঘৃন্না সৃষ্ট জন্মাতে শুরু করল মনের ভেতর।


***জুম্মার নামাজে না গিয়ে কি করতাছ তুমি দাদা? তানহা ভ্রু কুচকে প্রশ্ন করল। 

অন্তুঃ যাবো না! ভালো লাগছে না, তুই তোর কাজ কর, যা ভাগ!

তানহাঃ হুম্ম.......সেটা ত দেখতেই পাচ্ছি....তুমি কি লুকাতে চাইতাছ তা ঠিক ই বুঝতে পেরেছি। 
তানহা এমনিতেও অনেক চালাক। অন্তু বুঝল তানহার হাতে ধরা পড়ে গেছে তাই একটু লজ্জাবোধ করে বললঃ আরে না.....সব বাদ। কালকে আমার এক্সাম আছে। ওটা নিয়ে ভাবছি। যদি খারাপ হয়......
 তানহাঃ রেজাল্ট ভালো করতে হলে ত পড়তে হয়, তুমি ত বই ই খুলে দেখো না!এবার গায়ে লাগল কথাটা তাই
অন্তু রাগের ভান করে বলল, নিজের এক্সামের চিন্তা কর যা! সামনে তোর ইন্টার ফাইল।  
তানহাঃ হুম নিজেকে কোন কথা বললেই আপনার চেহারা অন্ধকার হয়ে যায়, এটা বলে সে অন্য রুমে চলে গেলো।  তানহা চলে যাওয়ার পর অন্তুর মনে হলো তাই তো! শনিবার ত ওর এক্সাম সত্যি ই! তখন ত মিথ্যে বলেছে কিন্তু সত্যি সত্যি ই এক্সাম!!! 


No comments:

Post a Comment