Tuesday, March 24, 2020

"সেই তুমি " পর্বঃ১৬



জল রাস্তায় বেরিয়ে চোখ মুছতে মুছতে ভাবছিল অন্তু কে গিয়ে কি বলবে.....অন্তু ওকে এই অসময়ে বের হতে দেখে আবার যদি উল্টো রাগ করে বসে.........জল যখন অন্তুদের বাসার সামনে আসলো তখন বাসার সামনের দেয়ালের উপর সেদিনের বখাটে ছেলে গুলো বসে ছিল। কেউ একজন জল কে দেখে বেসুরো গলায় গান গেয়ে উঠলো.... "ও টুনির মা তোমার টুনি কথা শুনে না"

অন্যরাও গানের সাথে তাল মিলালো। তাদের সবার মাঝে অপেক্ষাকৃত বেশি খাটো বিদঘুটে চেহারার ছেলে টা গানের মাঝে বললঃ "যদি কথা না শোনে তুইল্লা লইয়া যামু"

জল বুঝতেই পেরেছে কথাগুলো ওকে উদ্দেশ্য করে বলা হচ্ছে তাই রাগে সারা গা জ্বালা করছিল ওর কিন্তু আজকে আর ঝগড়া করার মন মানসিকতা নেই,  এমনিতেই ঘরে সমস্যা চলতাছে তাই দ্রুত হেঁটে অন্তুদের বাসার গেটে ঢুকে গেলো। 

রুমের সামনে এসে আবারো দুগাল, দুচোখ ভালো করে মুছে দরজায় কড়া নাড়ল। ভেতর থেকে কোন শব্দ আসছে না......অন্তু কি ঘুমিয়ে আছে নাকি বুঝতে একটু জোড়ে আবারও নক করতেই অন্তু এসে দরজা খুলল। কেন জানি জলের মনে এখন অন্য রকম একটা সন্দেহ ঢুকলো। সে মনে মনে বললঃ নিশ্চয়ই ঘরে কেউ আছে! তা না হলে দরজা খুলতে এতো দেরি হলো কেন ওর! 

জল অন্তুর সাথে কোন কথা না বলে সোজা ভিতরের রুমে চলে গেলো।  ভালো করে খাটের নিচে, বারান্দায়, পাকের ঘর এমনকি বাথরুম টা ও খুঁজে দেখলো! অন্তু রাজ্যের বিরক্তি নিয়ে বললঃ এই কি খুঁজো তুমি!

জল এমনিতেই রেগে ছিল, আরো রেগে বললঃ আমার ইচ্ছা, আমি যা খুশি খুঁজবো! আপনার কি!

জলের মুখে "আপনি"কথাটা শুনেই অন্তু বুঝতে পেরেছে জল এখনো রেগে আছে আর হয়তোবা ঘরে কিছু একটা হয়েছে তাই নরম স্বরে বললঃ কি হয়েছে তোমার?  ঘরে কিছু হয়েছে? 

অন্তুর মায়াভরা কন্ঠ শুনে জলের কাঁন্না যেনো আরো বেড়ে গেলো!  সে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো!  অন্তু বোকা হয়ে গেলো!  বুঝতে পারল না কি করবে। জল বোরকা, জামা খুলে ফেললো!  অন্তু অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। জল জামা খুলে পিঠ টা দেখালো। 
জলের পিঠের দিকে তাকিয়ে অন্তুর গা শিউরে ওঠলো! জলের পিঠে, হাতের বাহুতে চার আংগুল পরিমান মোটা লাল দাগ ফুলে ফুটে আছে! ফর্সা শরিলে বেমানান দাগগুলো যেনো উপহাস করছিল! 

অন্তু জলকে বুকে জড়িয়ে ধরে বললঃ জান! কে করছে তোমার এই অবস্থা?

জল কাঁদতে কাঁদতে অন্তুর কাছে সব খুলে বলল। রাস্তায় আসার সময় যে বখাটেরা বিরক্ত করে তাও বললো। অন্তুর অনেক রাগ হচ্ছিল তাই সে জলের হাত ধরে ওকে বাসার নিচে নিয়ে এলো। ছেলেগুলো তখনও সেখানেই বসে ছিলো, জলের হাত ধরে অন্তুকে আসতে দেখে সবাই তাকিয়ে রইল।  

অন্তু জলকে নিয়ে ছেলেগুলোর সামনে গিয়ে নরম স্বরে বললঃ এটা কি ভাই? তোমরা আমরা একই এলাকায় থাকি, এক এলাকায় থাকার পর যদি তোমাদের জন্যে আমার ভালোবাসার মানুষ টার ক্ষতি হয়, এটা কি হলো? ওকে বিরক্ত করো কেন তোমরা?  

অন্তুর স্বাভাবিকভাবে বলা কথাগুলো ছেলেদের কাছে তেমন খারাপ মনে হয় নি, খাটো ছেলেটা কেশে বললঃ 
ভুল বুঝছেন আপনারা, আমরা সৌখিন মানুষ,  গান গাই তারমানে এই না যে আমরা উনাকে দেখে এসব করি! 
অন্য আরেকজন বললঃ আপনাকে আমরা ভালো করেই চিনি, আপনাদের দুজন কে হাতে ধরে আসতে দেখেই আমরা বুঝে গেছি আপনাদের মাঝে সম্পর্ক টা কি, তাই চিন্তামুক্ত থাকেন। আজকের পর আমরা আর ওনাকে কিছু বলবো না।

ছেলেদের কথায় অন্তু উষ্ণ একটা ধন্যবাদ দিয়ে  জল কে নিয়ে আবার রুমে চলে এলো।  
জল কিছুক্ষন চুপ করে থেকে অন্তুর দিকে তাকিয়ে বললঃ "তুমি আমাকে কতোটুকু ভালোবাসো? 

অন্তু জলের কোলে মাথা রেখে শুয়ে ছিল। সে জলের হাতটা ধরে চুমো খেয়ে বললঃ ভালোবাসা যদি মাপা যেতো তাহলে আমার ভালোবাসার ওজন হয়ত বুঝাতে পারতাম! 

জল অন্তুর চুলে হাত বুলাতে বুলাতে বললঃ ভনিতা শুনতে চাই না, তুমি শুধু এটা বলো তুমি আমার জন্যে কি করতে পারবা?

অন্তু জলের হাতটা শক্ত করে ধরে বললঃ তুমি যা বলবা আমি তা ই করতে পারবো তোমার জন্যে! 

জলের চোখের একফোঁটা পানি অন্তুর কপালে পড়লো।  

জল অন্তুর দিকে কিছুক্ষণ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে গলা কাশি দিয়ে বললঃ তাহলে আমাকে নিয়ে পালাতে পারবা?

অন্তু লাফিয়ে উঠল শোয়া থেকে! প্রথমে ঠিক করে শুনতে পায়নি তাই আবার জিজ্ঞেস করলোঃ ক....কি বললে তুমি এখন?!!

জল আগের মতোই পলকহীন চোখে জলের দিকে তাকিয়ে থেকে বললঃ আমাকে নিয়ে পালাতে পারবা?

অন্তু জলের চেহারা দেখেই বুঝতে পেরেছে কথাটা মজার জন্য বলা হয় নি।সে জলকে আরো কাছে টেনে নিয়ে জড়িয়ে ধরে বললঃ 

" জানা, এক ঘরে থাকলে এমন একটু আধটু ঝগড়াঝাটি হয় ই, তার মানে তো এটা না যে তুমি বাসা থেকে পালানোর মতো এমন একটা বড় সিদ্ধান্ত নিয়ে নিবা"!!

জল অন্তুর দিকে তাকিয়ে ভ্রুজোড়া কুচকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললঃ এতো যেহেতু ভয় পাও প্রেম করতে আসছিলা কেন? কেন একবারও বলো নাই যে, বিপদ আসলে তুমি সরে যাইবা? আমি অনেক দিন থেকেই খেয়াল করছি তুমি আমাকে এখন আগের মতো ভালোবাসো না! যতোই আমি তোমার কাছে যেতে চাই, তোমাকে পাশে পেতে চাই, তুমি ততোই আমার থেকে দূরে যেতে চাও!! সমস্যাটা কি তোমার?

অন্তু জলের গালে হাত রেখে বললঃ এসব কি উল্টাপাল্টা কথা বলতাছ তুমি! আমি তোমার প্রতি আগে যেমন ছিলাম, এখনো ও তেমন ই আছি! বিশ্বাস করো তুমি!

জল অন্তুর হাত টা সরিয়ে দলো গাল থেকে। সে আরো রেগে উঠল আর চোখ দিয়ে পানি ঝড়তে লাগলো...... সে চোখ মুছতে মুছতে বললঃ তুমি এক বিন্দু ও আগের মতো নেই, যেই তুমি আমাকে এক সেকেন্ড না দেখলে পাগল হয়ে যেতে সেই তুমি এ কয়েকদিনে আমার সাথে ভালো করে কথাও বলো নি! আমার দোষ টা কি একটু বলবা? দোষ কি এটাই যে আমি তোমাকে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ভালোবাসি নাকি দোষ এটা যে, তোমাকে সব দিয়েছি!

অন্তু কি বলবে ভেবে পাচ্ছিল না। সে বুঝতেই পারেনি জল তার ছোট ছোট অভিমানগুলোকে এভাবে বুকে চেপে রেখেছে, আর ভুল বুঝেছে। অন্তুকে কোন কথা বলার সুযোগ দিলো না জল। সে আবারও চোখ মুছে বিরতিহীন ভাবে বলেই চললঃ " সারাদিনে আমাকে কয়টা call, sms,দাও তুমি! আমি কল না দিলে জিবনে কোন দিন কল দিছ তুমি? কল না দাও, আমার কলটা তো অন্তত ধরবা? আজ পর্যন্ত একদিন ও আমার একবার কল দেওয়াতে তুমি কল ধরো নি! তোমার গায়েই লাগে না যে আমি কত রিক্স নিয়ে তোমাকে হাজারটা কল দেই! কেন দেই জানো! আমার কাছে ভালো বাসার মূল্যটা বেশি, আমার কাছে ভালোবাসা মানে শুধুই তুমি,আমার অন্তর আত্মাটাও তোমার জন্যে প্রতি নিয়ত কাঁদে! তুমি বুঝো আমাকে! পালাতে না পারলে বিছানায় নিছিলা কেন! জবাব দিতে পারবা?

জলের কথাগুলো র কোন টা সত্যি কোন টা মিথ্যা অন্তু তা খুঁজার চেষ্টা করল না,  সব কথার বাইরে সে এটাই ভাবতে লাগলো,  ওর অজান্তেই জলের প্রতি হয়তোবা ওর অবহেলা সৃষ্টি হয়েছে আর এই কারনেই জল এতো সন্দেহ শুরু করেছে।
অন্তু জলের হাত টা ধরতে গেল কিন্তু জল ধরতে দলো না। জল অন্তুর দিকে তাকিয়ে কান্নাভেজা কন্ঠে বললঃ

 তুমি বুঝো না কেন! আমার সহ্য হয় না তোমার পাশে কাউকে! আমি নিশ্বাস নিতে পারিনা যখন তোমার পাশে জান্নাত বা অন্য কোন মেয়েকে দেখি! আমাদের সম্পর্ক টা আমাদের দুজনের কারো পরিবার ই মানবে না! তুমি ভাবো কি করবা, যদি পালাতে না পারো, পালাইওনা.....আমি মরে যাবো তবু অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারবো না, আর একটা কথা ভালো করে মনে রেখো, আমি যদি তোমাকে না পাই অন্য কাউকে পাইতেও দিবোনা আর তুমি ও অন্য কাউকে লাইফে জড়াতে পারবা না! 

অন্তু জলের কথায় একটু ও রাগ কএওলো না,  বরংচো জলের প্রতি অন্তুর ভালোবাসা আরো বেড়ে গেলো! সে উঠে দাঁড়িয়ে জল কে জড়িয়ে ধরে ঠোঁটে চুমো দিতে দিতে বিছানায় শুইয়ে জলের বুকের উপর মাথা রেখে বললঃ আচ্ছা, জান, Sorry....ভুল করছি, এখন মাফ চাইছি, আচ্ছা পালাবো তবে আর কয়েক মাস পর! 

জল অন্তুর চুলে হাত বুলাতে বুলাতে বললঃ ওয়াদা দাও?  

অন্তু জলের মাথায় হাত রেখে ওয়াদা করল......যার ফলে দুজনের মাঝে তখন আর কোন পর্দা ছিলো না.......ভালোবাসার সমুদ্রে দুজন যখন সাঁতার কাটছিল মাঝখানে বাঁধা হয়ে আসলো জান্নাতের একটা SmS যা সেকেন্ডের ভিতর জল আর অন্তুর মাঝে আকাশ পাতাল ব্যবধান গড়ে দিল! 

অন্তু যখন জলের গালো,ঠোঁটে চুমো খাচ্ছিল তখন অন্তুর প্যান্টের পকেটে মোবাইলটা ছিল যা জলের পেটে চাপ লাগছিল। জল অন্তু কে মোবাইলটা সরাতে বলল। অন্তু এতোটাই উত্তেজিত ছিলো যে জলের কথায় পাত্তাই দিচ্ছিল না।জল নিজেই হাত দিয়ে পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে পাশে রাখতে গিয়ে দেখলো জান্নাতের নাম্বার থেকে ৫ টা SMS স্কিনে ভেসে আছে! সাথে সাথেই জলের মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। সে অন্তুকে প্রথমে কিছু বললো না। আস্তে করে একটা sms open করল।sms এ লিখা ছিল

"কিছু ভালো বাসা না চাইওতেও হয়ে যায়, তোমার প্রতি আমার ভালো বাসা টাও তেমন"

প্রথম এস এম এস পড়ার পরই জলের গা কাঁপছিল। সে এক ধাক্কা দিয়ে অন্তুকে গায়ের উপর থেকি সরিয়ে দিলো! অন্তু অবাক হয়ে গেলো!  জল জামা পড়তে পড়তে চিতকার বললঃ এসবের মানে কি! 
অন্তু বুঝতে পারছিল না জল কি বলতে চাইছে তাই মোবাইলটা হাত থেকে নিয়ে দেখতে চাইলো কিন্তু মোবাইলে হাত দিতেই জল আরো জোড়ে চিতকার করে বললঃ খবরদার! মোবাইলে হাত দিবিনা! জান্নাত তোকে SmS করার সাহস কই পায়! কুত্তার বাচ্চাটার এতো সাহস তুই ছাড়া ত হয়নি! 

জলের ভাষা শুনে অন্তুর ও অনেক রাগ হচ্ছিল। সে বারবার বোঝাতে চাইলো এসবে ওর কোন সম্পৃক্ততা নেই কিন্তু জল কোন কথাই শুনতে নারাজ ছিল! সে পাগলের মতো হয়ে গেলো!  টেবিলে রাখা কাঁচের গ্লাসের পানিটা এক ঢোক এ পান করে হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে ঠোঁট মুছে আবার কড়া স্বরে বললঃ " তুই আমাকে এতোই বোকা ভাবিস! আমি কি দেইনি তোকে! কেন তুই আবার অন্য মেয়েকে চাস! জান্নাতের এত্ত সাহস হয় কি করে তোর নাম্বারে এস এম এস করার! তোর আজকে থেকে মোবাইল চালানো বন্ধ! 
জল রাগে ফেটে পড়ল!  সে অন্তুর মোবাইল থেকে দুইটা সিম খুলে সাথে সাথে ভেংগে ফেলে মোবাইলটা নিজের ব্যাগে রেখে বললঃ তোর মতো জানোয়ারের কাছে কেঁদে আমার কোন লাভ নেই! তাইতো বলি! তুই পালানোর কথায় এতো লাফিয়ে উঠলি কেন! এখন তো আমার প্রতি মন উঠে গেছে! আসতে বলিস তোর জান্নাত কে! ওর চুল একটাও থাকে কি না......

অন্তু জলের হাত ধরার জন্য সামনে যেতেই জল টেবিলের উপর থেকে স্কেল টা নিয়ে বললঃ খবরদার! তোর ওই নোংরা হাত দিয়ে তুই আমাকে স্পর্শ করবি না! আমি তোরে এতো সহজেই সেড়ে দিবো? তুই আমাকে রেখে অন্য মেয়ের দিকে চোখ তুলে তাকাবি! 

জল যেন পাগল হয়ে উঠেছিল! সে অন্তুর কোন কথা ই শুনতে চাইলো না। ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে গেলো! জলের সাথে অন্তুর যতো রাগারাগি ই হোক না কেন অন্তু সব সময় জল কে বাসায় পৌঁছে দিয়ে আসে, আজকে জলের ব্যবহার অন্তুর এতোই খারাপ লাগলো যে ও আর ঘর থেকেই বের হলো না। জল দরজা দিয়ে বের হতে হতে মনে মনে বললঃ দেখবো আজকে আসে কি না পিছনে পিছনে....

জল বাসার নিচে প্রায় ১৫ মিনিট দাঁড়িয়ে রইল,  অন্তু নামে নি তাই ওর রাগ টা,এতোটাই বেড়ে গেলো যে, সে আবার অন্তুর রুমে গেলো। অন্তু বাইরের দরজাও লাগায় নি, ওই রুমেই শুয়ে শুয়ে ভাবছিল কি করা যায়, এমন সময় জল ঘরে ঢুকে টেবিল থেকে স্কলে টা নিয়ে অন্তুর পিঠে অনেক জোড়ে আঘাত করে বললঃ অন্য সময় ত তুই আমার একটু লেট হলে পিছনে পিছনে বাসা পর্যন্ত যাস, আজকে জান্নাতকে বকা দেওয়াতে তুই ঘর থেকেও বের হলি না! মানে কি এসবের! 

জল রাগে খেয়াই ই করে নি স্কেলের আঘাতে অন্তুর পিঠ কেটে রক্ত বের হচ্ছিল! অন্তু খালি গায়ে ছিল তাই পিঠে হাত দিতেই রক্ত দেখে ও আরো রেগে উঠল!  জল এতোক্ষনে খেয়াল করল অন্তুর পিঠ কেটে রক্ত আসছে! সে অন্তুর দিকে তাকিয়ে বললঃ ঘোর, দেখি কতোটুকু কেটেছে! 

অন্তু জল কে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো।মুখে কোন শব্দ করলো না। জল এতে আরো খেপে গেল। সে অন্তুর দিকে তাকিয়ে বললঃ 

"দরজা খোলা রেখেছিস কি জান্নাতের আসার জন্যে"? আচ্ছা, তুই ই বল- সন্দেহ করবো ই বা না কেন! কি করতাছিস তুই এসব! যদি আমার মোবাইলে কোন ছেলে এমন এস এম এস করতো তুই কি করতি আমার সাথে!

জলের কথায় অন্তু মনে মনে বললঃ খুন করে ফেলতাম!  
কিন্ত মুখে কোন কথা বলল না। জল কাঁধের টা রেখে অন্তুর পিঠের রক্ত নিজের জামা দিয়ে মুছতে মুছতে বললঃ তুই যদি আমাকে সত্যি ভালোবেসে থাকিস তাহলে এই সপ্তাহের ভিতর আমাকে বিয়ে করবি, আমরা পালিয়ে বিয়ে করবো। আর তোর জান্নাতের যে কি করবো তা কাল সকালেই জানতে পারবি! 

অন্তু জলের কোন কথাতে পাত্তা না দিয়ে জল কে বললঃ আমার মোবাইল দেন! আমি আপনার মতো মেয়ের সাথে কোন সম্পর্ক রাখতে চাইনা! 

জল অন্তুর রাগ দেখে ঘাবড়ে গিয়েছিল।নিজেকে সামলে নিয়ে বললঃ না না! সম্পর্ক রাখবা কেন! এখন তো তোমার জান্নাত আছে, নন্দিনি আছে! আমি তো পুরান হয়ে গেছি, তাই না! 
কথাগুলো বলতে জলের ভিতরটা কাঁন্নায় ফেটে যাচ্ছিল! সে কেঁদে কেঁদে বললঃ এত্ত সহজে তোকে আমি ছেড়ে দিবো? আমার দেহে এক ফোঁটা রক্ত থাকতে আমি তোকে কখনো অন্য কারো হতে দিবো না, কথাটা মনে রাখিস! তুই শুধু আমার! 

জল ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে গেলো!  অন্তু জায়গায় বসে রাগে বই খাতা ছিঁড়তে লাগলো।

সেদিন দুজনের মাঝে যে ফাটল সৃষ্টি হয়েছিল তার জন্যে কে দায়ী, কে নয় তা জানি না কিন্তু সেদিনের পর থেকে অন্তুর প্রতি জলের ভালোবাসা যেমন বেড়েছিল সেই সাথে ঘৃন্নাও বেড়েছিল শতভাগ আর এর ফলেই কিছু কাজ শয়তানের জন্যে অনেক সহজ হয়ে গিয়েছিল!





Monday, March 23, 2020

"সেই তুমি" পর্বঃ ১৫



শনিবার সকালে জলের ঘটনাটা চায়ের দোকানে বসে কোন এক জন আলোচনা করছিল। বকুল হোসেন ও সেখানে উপস্থিত ছিলেন কিন্তু তিনি খেয়াল করেন নি মেয়েটা কে। বকুল হোসেন খেয়াল না করলেও ঘটনা বাসা পর্যন্ত পৌঁছাতে বেশি সময় লাগলো না। 
হেনা বেগম বাসার নিচে ভ্যান গাড়ি থেকে তরকারি কিনছিলেন। এমন সময় জান্নাতের মা সেখানে এসে উপস্থিত হলো। মুখে পান চিবুতে চিবুতে হেনা বেগমের দিকে তাকিয়ে বললঃ কিরে জলের মা, জল কে বিয়ে দিয়েছিস কবে? আমাদের কে দাওয়াত ত দিলি না!

হেনা বেগম অবাক হয়ে বললঃ কে বলছে আমার মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি? 
জান্নাতের মা মুচকি হেসে বললঃ শুনলাম যে স্যারের কাছে পড়তে দিয়েছিস ওই স্যারের সাথে নাকি তোর মেয়ের বিয়ে হয়েছে? আর তোর মেয়েতো এখন সব সময় ই নাক ফুল পড়ে থাকে!

হেনা বেগম কি বলবেন বুঝে উঠতে পারছিলেন না তাই কিছুটা বিব্রতবোধ করতে লাগলো। 
হেনা বেগম কে কথাটা বলতে পেরে জান্নাতের মায়ের অনেক খুশি লাগছিল তাই আরো একটু দলিল দেওয়ার চেষ্টা করতে গিয়ে বললঃ যারা যারা ওই স্যারের কাছে পড়ে সবাই এই কথাই বলে যে, তোর মেয়ের সাথে স্যারের সম্পর্ক আছে আর তোর মেয়ে নাকি অনেক মাতবুরি করে ওই বাসায়!

হেনা বেগম বিরক্ত হয়ে বললেনঃ আরে এসব বাজে কথায় কান দিও না তোমরা। আমার মেয়ে একটু চঞ্চল এটা ঠিক কিন্তু আমার মেয়ে এসব করবে না।

জান্নাতের মা হেসে বললঃ তুই তাহলে কিছুই জানিস না। গতকাল আমার মেয়ে র অংকে কি জানি সমস্যা হয়েছিল,  আমাকে বলল, আম্মু আমি একটু স্যারের বাসায় যাবো। মেয়ে বলাতে আমি বললাম, একা যাস না, জল কে নিয়ে যা। আমার মেয়ে তোর মেয়েকে ফোন দিলো আর তোর মেয়ে রেগে বলল "এখন কারো ওর বাসায় যাওয়া যাবেনা! আমি ওকে তালা দিয়ে রেখে চাবি নিয়ে চলে এসেছি"! 
তুই ই বল, এটা কোন কথা হলো? কথাগুলো বলে সরু চোখে হেনা বেগমের দিকে তাকিয়ে রইল দেখার জন্যে যে হেনা বেগমের অবস্থায় কোন পরিবর্তন হয় না কি!

হেনা বেগম মাথা নিচু করে বাজার নিয়ে উপরে উঠে গেলেন! মনের ভিতর বার বার জান্নাতের মায়ের কথাগুলো বাজতে লাগলো। ঘরে ঢুকে ই দেখলো জল নেই, মেজাজটা আরো খারাপ হয়ে গেলো!  মনে মনে বললঃ আজকে আসুক স্কুল থেকে! ওর একদিন, কি আমার একদিন!


জল স্কুলে ঢুকেই জান্নাত কে খুজে বের করল। সাথে নন্দনি ছিল। জল জান্নাতের দিকে তাকিয়ে বললঃ যদি নিজের ভালো চাস অন্তুর পিছন থেকে সরে যা, তা না হলে খুব খারাপ হবে! কাল রাতে তুই অন্তুর খালি ঘরে যেতে চাইছিলি কেন? সমস্যা কি তোর? 

জান্নাত নদিনির দিকে তাকিয়ে বললঃ জল কে চুপ করতে বল, তা না হলে কিন্তু আমার মুখ ছুটবে!

নন্দিনি কিছু বলার আগেই জল চেঁচিয়ে উঠলো!  সে রেগে বললঃ ওয় কি বলবে! তুই অন্য টিচার দেখ, অন্তুর কাছে তোর পড়ার কোন দরকার নাই! 

নন্দিনি জলের দিকে তাকিয়ে শুকনো মুখে বললঃ জল, এটা কেমন কথা তোর! আমরা স্যারের কাছে শুধু পড়তে যাই, প্রেম করতে যাই না, ঠিক আছে? তুই প্রেম করিস এটা তোর ব্যাপার কিন্তু আমাদের কে অযথা সন্দেহ করা ছাড়! 

নন্দিনি সরাসরি জান্নাতের সাপোর্ট করাতে জল বুঝেই গেছে, ওরা দুজন মিলে আছে তাই কড়া নজরে দুজনের দিকে তাকিয়ে বললঃ এমন কোন মার মেয়ের সাহস নাই যে অন্তুকে আমার কাছ থেকে আলাদা করতে পারবে! 
বলে দ্রত ক্লাস রুমে ঢুকে পড়লো 

জান্নাত আর নন্দিনি একে অপরের দিকে তাকিয়ে রইল।  নন্দিনির দিকে গম্ভীর মুখ করে জান্নাত বললঃ জলের একটা ব্যবস্থা করতে হবে, তা না হলে ওর সাহস দিন দিন বেড়েই চলেছে! 

নন্দিনি মাথা নেড়ে সায় দিল!


অন্তু যখন ছেলেদের কে পড়াচ্ছিল আবুল একটু কাচুমাচু করে হেসে বললঃ স্যার, আমি আপনার বেস্ট স্টুডেন্ট, তাই না? একদিন ও বন্ধ কতিনাই!

সাজু বললঃ মিয়া, তুমি বন্ধ করবা কেমনে, তুমি ত এখনো ললিপপ খাও! 

আহমেদ বললঃ মেনশন নট, তবে তুই (আবুল) দেখতেই ত বোকা মার্কা তাই শুক্রবারে ও পড়তে আসিস!

আবুল হেসে বললঃ তোমরা ত পড়ো না, শুধু আড্ডা দাও, আমি পড়ি তাই প্রতিদিন আসতে হয়!

অন্তু সহ সবাই হেসে উঠল।  

*** স্কুল ছুটির পর জল যখন বাসার দিকে যাচ্ছিল, গত রাতের সেই বখাটে ছেলেগুলো জল কে দেখে একে অন্যকে বলতে লাগলোঃ আজকাল জুতার দাম অনেক বেড়ে গেছে, তাই পায়ের জুতা পায়েই যেনো থাকে, তা না হলে নিয়ে গেলে বাপ মায় আবার কানবে!
সবাই হেসে উঠল!  জল বুঝতে পেরেছে কথাগুলো ওকে বলছে কিন্তু আজকে সে আর জবাব দিলো না, অনেক ক্লান্ত লাগছিল ওর, তাই পাত্তা না দিয়ে দ্রুত বাসায় চলে গেলো! বাসায় গিয়ে রুমে ঢুকতেই হেনা বেগম ডাক দিলেন।জল মায়ের কন্ঠ শুনেই বুঝে গিয়েছিল কিছু একটা হয়েছে তাই মনে মনে অনেক ঘাবড়ে গেলো। শান্ত থাকার চেষ্টা করে হেনা বেগমের সামনে গিয়ে বললঃ

" মাত্র আসছি, আগে ফ্রেস তো হতে দাও, তারপর বলতে পারবা কথা"

হেনা বেগম কড়া সুরে বললঃ এসব কি শুনতাছি তোর নামে! 

জলের ভেতটা কেঁপে উঠল!  মনে মনে বললঃ মা কি জেনে গেছে সব কিছু! 
মুখে বললঃ আমি আবার কি করলাম! আর কি শুনছ তুমি আমার নামে? 

হেনা বেগম ঃ তুই নাক ফুল খোল আগে! সারা মহল্লা ডাক পড়ে গেছে তোর নাকি বিয়ে হয়ে গেছে স্যারের সাথে! এসবের মানে কি! আর,তুই নাকি স্যারের বাসায় গিয়ে অতিরিক্ত করিস?

মায়ের কথা বলার ঢং দেখেই জল বুঝে ফেলেছিল কেউ একজন প্যাঁচ লাগিয়েছে তাই রাগে গা জ্বলে উঠল ওর! সে মায়ের দিকে তাকিয়ে বললঃ কে কি বলছে তোমারে! নাম বলো কে বলছে! 

হেনা বেগম জলের রাগ দেখে কিছুটা থতমত খেয়ে গেলো,  তাই আগের চেয়ে একটু নরম স্বরে বললঃ হুম যে বলছে তার নাম আমি তোর কাছে বলি আর তুই গিয়ে ঝগড়াঝাটি শুরু করে দে! বড় হইতাছিস সে খেয়াল আছে! এমনিতেই ত তোকে দেখলে মনে হয় তুই কত বড় তার উপর যদি এমন করিস তোকে ভালো বিয়ে দিবো কি করে! তোর সাইজের ত কোন মেয়েই নেই আমাদের এলাকায়! এখন ই নাক ফুল খোল!

জলের রাগ আরো বেড়ে গেলো,  সে নাকফুল টা মায়ের সামনেই খুলে ফেলল! নাক ফুল খুলার সময় ওর অনেক কান্না পাচ্ছিল কারন অন্তুর সাথে সব হওয়ার পর পর ই জল ঘরে ঝগড়া করে নাক ফুটিয়েছিল, সে নিজেকে অন্তুর বৌ ভাবতে গর্ববোধ করতো, ওর নাকফুল পড়াটাও অন্তুর অনেক পছন্দ ছিল তাই চোখ ভিজে উঠল! মুখে কোন কথা না বলে রেগে ভিতরের রুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিলো! 

হেনা বেগম চিল্লাইয়া বললেন ঃ আজকে থেকে আর পড়তে যাওয়া লাগবে না, আমি অন্য মাস্টার ঠিক করে দিবো তোকে!

**** বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে আসছিল কিন্ত ছেলেরা ছাড়া আর কেউ পড়তে এলো না। সবাই না আসা নিয়ে অন্তুর মাথাব্যথা ছিল না, জল আসেনি তাই ভেতটা,অস্থির হয়ে উঠল।  নানান চিন্তা মাথায় ঘোর পাক খাচ্ছিল। এই রুম, ওই রুম পায়চারী করতে থাকলো, কিছুই ভালো লাগছিল না তাই জলের নাম্বারে sms করল কিন্তু কোন রিপ্লাই আসলো না! অস্থিরতা আরো বেড়ে গেলো অন্তুর।


জল কয়েকবার চেষ্টা করল কিন্তু তার কোন কথা হেনা বেগম শুনতে রাজি হলেন না। পড়তে যেতে দিতে দিতে কোন রকমেই রাজি হলেন না। এমন সময় পাশের ঘরের এক মেয়ে আসলো জলের মায়ের কাছে। নাম মিম। সে হেনা বেগমের সাথে বসে কথা বলতে বলতে জলের দিকে তাকিয়ে বললঃ 

"আন্টি জল কে আর ওই অন্তু স্যারের কাছে পড়তে দিয়েন না, আমি ওর জন্যে মেয়ে টিচার ঠিক করে দিবো"!  কারন জলকে নিয়ে চারদিকে অনেক কথা ছড়িয়ে পড়েছে!

একে মা পড়তে যেতে দিচ্ছিল না তার উপর মিমের মাতুব্বরি তে জলের গায়ে যেনো আগুনের ফোস্কা পড়লো!  
সে রেগে বললঃ দেখো মিম আপু! আমার নামে কে কি বলে না বলে তা নিয়ে আমার কোন মাথা ব্যথা নেই! আমি এই স্যারের কাছেই পড়বো! স্যার তো কোন দিন আমাকে এমন কোন কথা বলেনি! যদি বলতো আমি নিজেই চলে আসতাম স্যারের কাছ থেকে! আমাকে নিয়ে তোমার এতো ভাবতে হবে না! 


মিম হেনা বেগমের দিকে তাকিয়ে বললঃ ভালোই বলছি তোর, খারাপ চাই নি! আন্টি আপনার মেয়ে বেশি বুঝে, পরে একটা বিপদে পড়লে বুঝবে কেমন লাগে, কথাগুলো বলে চলে গেলো! 

মিম ছিল জান্নাতের ফুফাতো বোনের বান্ধবি তাই জলের বুঝতে বেশি অসুবিধা হলো না প্যাচগুলো কে লাগাচ্ছে! জলের মন মেজাজ আরো খারাপ হয়ে গেছে, কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল তার আগেই হেনা বেগম একটা মাঝারি সাইজের বেত দিয়ে খুব জোড়ে জল কে দু চার টা আঘাত করে রেগে বললঃ অনেক সাহস বেড়ে গেছে এ কয়েক মাসে তোর! যারতার সামনে যা তা বলে বসিস কেন তুই! 

এটা বলে আরো কয়েকটি আঘাত করল যা জলের সহ্যের বাইরে ছিল কিন্তু জল মায়ের মুখের উপর কোন কথা বলল না। ভেতরে গিয়ে বোরকা পড়ে ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছিল, হেনা বেগম চিতকার করে বললঃ যাচ্ছিস যা! কিন্তু জিবনে আর কখনো এই ঘরে ঢুকার চিন্তা করবিনা! আসুক আজকে তোর বাবা! আদর দিতে দিতে তোকে মাথায় তুলে রেখেছে! 

জল কোন কথাই পাত্তা দিলো না, চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছিল, সে বেরিয়ে গেলো অন্তুর বাসার উদ্দেশ্যে!! 




Saturday, March 21, 2020

"সেই তুমি" পর্বঃ১৪



মানুষ যখন বেশী আনন্দে থাকে শয়তানের নাকি তা হিংসের কারন হয়ে দাড়াঁয়। জল আর অন্তুর ভালোবাসাতেও ঠিক তাই হলো কিন্তু এক্ষেত্রে শয়তান নিজে নেমে আসেনি, তার কিছু মানুষ বেশের শয়তান দিয়ে উপরে থেকেই কাজ সারিয়ে নিয়েছে........


জল আর অন্তুর সম্পর্ক টা না চাইতেও অনেকের কানে পৌছে গেলো। এর অন্যতম কারন ছিল জলের প্রতি অন্তুর অতিরিক্ত ভালোবাসা। জলের সাথে অন্তুর প্রেমের ৪মাস হতে চলেছে। জল এর ভিতর অন্তুর কোন কথার খেলাপ করেনি কিন্তু জল কয়েক মাস আগে যখন অন্তু কে লিখা জান্নাতের চিঠিটা পেয়েছিল সে থেকে ই জান্নাতের সাথে জলের দূরত্ব সৃষ্টি হয়ে গিয়েছিল। চিঠির লিখাটা সে জান্নাত কে দেখিয়েছিল কিন্তু জান্নাত এসব কথা নিয়ে জলের সাথে কোন কথা বলতে রাজি তো হয় ই নি বরং এ ঘটনার পর থেকে নন্দিনি আর অন্য মেয়ের ভিতর অন্যরকম হিংসের সৃষ্টি করে জান্নাত সহ সবাই আলাদা আলাদাভাবে পড়া শুরু করল! যার ফলে জান্নাত, নন্দিনিদের সাথে জলের সম্পর্ক একেবারেই শেষ পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছিল! জলের ভিতর ও অন্তুকে নিয়ে সন্দেহ সৃষ্টি হতে বেশিক্ষন লাগলো না যদিও নন্দিনিরা আলাদা হওয়ার পর থেকে এই কয়েক মাসে অন্তুর সাথে জলের অনেক ছোটখাটো ঝগড়া হলেও তা বেশি দিন স্থায়ী হয় নি। কিন্তু ১৪ ই এপ্রিলের  ঘটনা টা অন্তু আর জলের মাঝে বিশাল ব্যবধান গড়ে দিয়েছিল! 

অন্তুর বাসায় কেউ নেই। সবাই গ্রামের বাড়িতে গেছে। অন্তু একাই ছিলো।  জান্নাত পড়ার বাহানা করে অন্তুর বাসায় আসলো। অন্তুর পাখি পোষার অনেক শখ ছিল। বারান্দায় খাঁচাতে ৩ জোড়া ঘুঘু পাখি পুষতো অন্তু। জান্নাত ঘরে ঢুকে দেখলো অন্তু রান্না ঘরে রান্না করছে। তাই সোজা রান্দায় গিয়ে অন্তুর পাখিগুলো নিয়ে দুষ্টুমি করতে লাগলো। 

জল জানে অন্তু বাসায় একা, তাই সে আজকে অন্য দিনের তুলনায় একটু আগেই নিজের বাসা থেকে বেরিয়ে গেলো। হেনা বেগম কিছু একটা বলছিল কিন্তু জল পাত্তা না দিয়ে বের হয়ে এলো। জল আসার আগে জান্নাতের বাসায় ফোন করেছিল। জান্নাতের মা বলেছে ও পড়তে গেছে! এই কথাটাই জলের দুশ্চিন্তার কারন। জল জান্নাতকে একদম ই দেখতে পারে না কারন জান্নাত অন্তুকে লাভ করে এটা সে জানে। জল একটু তাড়াতাড়ি হেঁটে অন্তুর বাসার সামনে পৌছাতেই পেছন থেকে নন্দিনি ডাক দিলো!  
নিন্দিনির ডাকে জল কেবল মাত্র হাত ইশারা করল কিন্তু কোথাও দাঁড়াল না, সোজা সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে এলো। দরজা ধাক্কা দিয়ে দেখল ভেতর থেকে লক করা!  জলের মাথা সাথে সাথে ই গরম হয়ে গেলো! সে দাঁত চেপে খুব জোড়ে দরজায় নক করতে লাগলো। 

অন্তু রান্না ঘরে ছিল তাই শব্দটা ততোটা শুনতে পায়নি। জান্নাত বুঝতে পেরেছিল জল আসছে তাই ইচ্ছে করেই একটু দেরি করে দরজাটা খুলল! 

দরজা খুলতেই জল দরজা টা জোড়ে ধাক্কা দিয়ে ভেতরে চলে গেলো!  জান্নাত বিরক্ত হলো কিন্তু মুখে কিছু বললো না। সে চুপচাপ আবার আগের মতো ই পাখি নিয়ে দুষ্টুমি করতে লাগলো যা দেখে জলের গায়ে আগুন লেগে গেলো রাগে! সে ব্যাগটা বিছানায় ছুড়ে মেরে অন্তুকে ডাক দিয়ে বললঃ এই!  এইদিকে আসো একটু!

অন্তু রান্না ঘর থেকে যখন এলো দেখলো জল কোমড়ে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।  অন্তুকে দেখে জল গলার স্বরটা তীব্র করে বললঃ খালি ঘরে দরজা খুলতে এতো ক্ষন লাগলো কেন তোমার? আর খালি ঘরে তুমি জান্নাতকে কেন ভেতরের রুমে এনে রাখছ! 

সামনাসামনি অপমানে জান্নাত রেগে উঠল!  সে অন্তুর দিকে তাকিয়ে বললঃ স্যার, আমার ব্যাপারে আপনার Gf যেনো কোন কথা না বলে! আমি পড়তে আসছি, ওর মতো প্রেম করতে আসিনি! 


অন্তু কিছু বলার আগেই জল আরো জোড়ে চেঁচিয়ে উঠে ভ্রুজোড়া উপরে তুলে বললঃ তোর স্বভাব আমার জানা আছে! তুই তো এটা জানিস,  ওর সাথে আমার সব হইছে তাও একবার দুবার না! হাজারবার! ওকে আমি স্বামী মানি মন থেকে! তুই কি বুঝস, একটা মেয়ের কাছে স্বামী মানে কি! আমি পূজা করি ওর! আমার রাতে ঘুম হয় না ওর জন্যে চিন্তা করতে করতে! তুই কেন আমার জিনিসটাতে ভাগ বসাতে চাস!

জান্নাত নত স্বিকার না করে উল্টো আরো রেগে গেলো।  সে চাইছিল অন্তু ওর পক্ষ নিয়ে জল কে কিছু বলুক তাই অন্তুর দিকে তাকিয়ে বললঃ স্যার, জল যদি আর একবার বাজে কথা বলে আমার হাত উঠবে ওর গায়ে আর তারপর যা হবে তা আপনি সহ্য করতে পারবেন না, আমি আমার আব্বু আম্মু নিয়ে আসবো বলে দিলাম! 

অন্তু এতোটা অবাক আগে কখনো হয়নি! সে ভেবে পেলোনা জল এতো বাজে ব্যবহার কেন করছে আর কেন ই বা সামনাসামনি জান্নাতকে এতো অপমান করছে! 
অন্তু এবার জলের দিকে তাকিয়ে বললঃ তুমি অযথা কেনো এমন করতাছ? আমি রান্না ঘরে ছিলাম তাই শুনিনি, আর জান্নাত ত দরজা খুলছেই! এতে রাগার কি হলো! 

অন্তুর কথায় জলের মেজাজ এতোটা ই খারাপ হলো যে, সে হাত থেকে কলম টা ফ্লোরে ছুড়ে মারল তারপর জান্নাতের দিকে তাকিয়ে বললঃ
 আমার গায়ে হাত তুলবি? তুলে দেখা? তোর মতো ১০ টা কে আমি এক থাপ্পড় দিয়েই অজ্ঞান বানাতে পারবো, আয় সামনে?  

জান্নাত টিটকারি দিয়ে বললঃ 
আল্লাহ তোর মতো সাইজ আমাকে দেয় নি এটাতে আমি আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞ! আর শোনেন স্যার, আমি চলে যাচ্ছি! এতো অপমান সহ্য করে পড়ার তো কোন দরকার নাই আমার! জান্নাত ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছিল,কিন্তু দরজা পর্যন্ত গিয়ে  আবার ফিরে এলো! জলের দিকে তাকিয়ে বললঃ এখনো বিয়ে করিস নি, অধিকার কম দেখাবি তা না হলে অনেক ভোগান্তি আছে তোর কপালে, কথাটা মনে রাখিস! বলেই দ্রুত বেরিয়ে গেলো। 


জান্নাত চলে যাওয়ার পর অন্তুর দিকে কড়া নজরে জল কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল, তারপর বললঃ ঘরের তালা কই? 

অন্তুঃ আলমারির উপর।

জল আলমারির উপর থেকে তালা চাবি নিয়ে বললঃ 
আমি যাওয়ার সময় তোমাকে বাসায় তালা দিয়ে যাবো। তোমার তো বাইরে কোন কাজ নেই, আর ঘরে ত অন্য কেউ ও আসবে না তাই আজকে কাউকে পড়াইতে হবে না, আমি কালকে এসে তালা খুলবো কারন বলা ত যায় না, ছেলেদের মন, কখন দেখা যাবে জান্নাত রাতে চলে আসবে!

জলের কথাগুলো অন্তুর কাছে কাটা ঘায়ে নুনের ছিটার মতো লাগছিল, সে একটু কেশে বললঃ 
তুমি কি শুরু করছ এসব! ভালো লাগতাছে না তো আমার এসব শুনতে! আমি কোন অপরাধ করিনাই! তালা দিয়ে যাইবা, আমি দোকানে যাবো না? খাবো কি- তোমাকে রেঁধে? 


জল  ঠোঁট চুষতে চুষতে বললঃ আমি খাবার নিয়ে আসবো বাসা থেকে! বের হওয়ার কোন দরকার নেই! 

অন্তু বুঝলো জল আজকে অনেক রেগে আছে তাই আর কথা কাটাকাটি করতে চাইলো না। জল কে শান্ত করার জন্য বললঃ আচ্ছা, তালা দিয়ে ই যাইও, আগে বসো, তোমাকে দেখিনা মন ভরে একটু দেখি!

অন্তুর কথা ঘোরানোর স্বভাবটা জল আগে থেকেই টের পেয়েছিল তাই ওর দিকে কড়া নজরে তাকিয়ে রইল, অন্তু হেসে বললঃ 
" আচ্ছা, এতো পাগলামি করতাছ কেন?  কি হইছে বলবা তো"! 

জল একটু ভেবে বললঃ যা বলবো তা শুনবা? 

অন্তু মাথা নেড়ে সায় দিলো। জল একটা মুচকি হাসি দিয়ে বললঃ আচ্ছা, আজকে থেকে আর জান্নাত কে পড়াতে পারবানা!

অন্তু অবাক হয়ে বললঃ এইসব কি! আর কয়েকদিন পর SSC এক্সাম, আমি এখন যদি ওকে ছেড়ে দেই তাহলে ওর পরিবার কি ভাববে! 

জলের ঠোঁটের হাসি টা বন্ধ হয়ে গেলো,  সে বিছানা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে  কড়া স্বরে বললঃ  
তার মানে তুমি আমার কথা রাখতে পারবা না? এটাই তো?

অন্তু জল কে শান্ত করার চেষ্টা করতে চাইলো কিন্তু জল আরো একবার বললঃ just এটা বলো, পারবা কি না? 

অন্তু মাথা নিচু করে বললঃ এই মূহুর্তে এটা করতে পারবো না! 

জল মুখে আর কোন শব্দ ই করলো না, সোজা ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে গেলো,  অন্তু জায়গায় ই বসে ছিল, এক মিনিট পর জল আবার ফিরে এলো...তালা চাবিটা টেবিলের উপর থেকে নিয়ে দরজাটা খুব জোড়ে লাগিয়ে তালা মেরে চাবি নিয়ে চলে গেলো!!  

অন্তুর  অনেক রাগ হচ্ছিল! সে হাতের পাশে রাখা ডাইরিটা বিছানা থেকে ছুরে নিচে ফেলে দিয়ে জোড়ে একটা আর্তনাদ করে উঠলো!  সব কিছু বিরক্ত লাগছিল! জল কেনো এতো সন্দেহ করতে শুরু করেছে তা ভেবে পেলো না.......


জান্নাত বাসায় এসে রাগে ফুলে ফেঁপে উঠল! ঠোঁট কামড়াতে লাগলো...... মনে মনে বললঃ আজকের অপমানের প্রতিশোধ তো আমি নিয়েই ছাড়বো! আমি বেঁচে থাকতে অন্তুর সাথে তোর মিল হতে দিবো না। 

জান্নাত ছিলো অনেক চালাক। সে অনেক ভেবেচিন্তে একটা বুদ্ধি বের করল জলের সাথে অন্তুর ঝগড়া লাগানোর জন্যে। বুদ্ধিটা বের করে নিজেই নিজেকে ধন্যবাদ দিতে লাগলো!   জান্নাত নন্দিনি কে ফোন করে ওর বাসায় আসতে বলল। নন্দিনি যখন জান্নাতের বাসায় এলো জান্নাত নন্দিনি কে আজকের অপমানের কথাটা অনেকটা ই বাড়িয়ে কান্নাভেজা কন্ঠে বলতে থাকলো। সব শুনে নন্দিনি ও রেগে গেলো। নন্দিনি জান্নাতের দিকে তাকিয়ে বললঃ 
"আজকে রাতেই কাজটা করবো, ভাবিস না"! 


নন্দিনি চলের যাওয়ার পর জান্নাতের ভিতর অন্তুকে নিয়ে অন্যরকম একটা অনুভূতি কাজ করছিল! সে পাগল হয়ে যাচ্ছিল অন্তুকে কাছে পাওয়ার জন্য! সে অন্তুকে কল দিলো।অনেক ক্ষন রিং হওয়ার পর অন্তু ফোন টা রিসিভ  করতেই জান্নাত বললঃ 
" স্যার, আপনার মেডামের যদি পড়া শেষ হয় আমাকে একটু জানাইয়েন, আমি হিসাব বিজ্ঞানের একটা অধ্যায় বুঝতে পারছিনা, ওটা বুঝতে হবে।

অন্তু রেগেই ছিল। সে আরো রেগে বললঃ ও পড়েনি, ও আমাকে ঘরে তালাবদ্ধ করে রেখে রেগে চলে গেছে!
 
জান্নাত সুযোগ টা হাত ছাড়া করল না, সাথে সাথেই অনেকটা টিটকারির সুরে বললঃ ঢং ইজ কুয়ারা! আপনাকে তালা দিয়ে যায় আর আপনি বসে বসে মুড়ি খান! ওয়াও!!

জান্নাতের টিটকারি অন্তুর গায়ে লাগলো। অন্তু বললঃ আজেবাজে কথা বাদ দাও তো! মন মেজাজ এমনিতেই খারাপ,  আমি রান্না করার জন্য কোন জিনিস আনতে যাবো, সেই টা ও পারছিনা!  
কথাটা বলে অন্তু ফোন রেখে দিলো! জান্নাতের এত্তো রাগ হলো জলের উপর!  সে রাগে হুঁশ হারিয়ে ফেললো!  জলের নাম্বারে কল দিতেই ওর মা ফোন ধরল।

হেনা বেগম ঃ কে?
জান্নাত বললঃ আন্টি আমি জান্নাত, জল কে একটু দেওয়া যাবে?

হেনা বেগম ফোন কানে রেখেই জল কে জোড়ে ডাক দিয়ে বললঃ এই তোর ফোন আসছে, জান্নাত ফোন দিছে।

জান্নাতের নাম শুনতেই জলের মেজাজ এতোটা ই খারাপ হলো যে কোল থেকে ছোট বোন কে একরকম আছাড় দিয়েই খাটে নামিয়ে দৌঁড়ে এলো। 

জলঃ কেন ফোন করেছিস? 

জান্নাত ঃ স্যার বলছে চাবি দিতে! আমি স্যারের বাসায় একাউন্টিং করতে যাবো, আমি আসতাছি, চাবি টা রেডি রাখিস!

জান্নাত খুব স্বাভাবিক ভাবেই মিথ্যে কথাগুলো সত্য হিসেবে বলে গেলো কিন্তু ওর কথাতে জল আরো বেঁকে বসলো!  জল বড় একটা নিশ্বাস ছেড়ে জান্নাতকে বললঃ 

তাই নাকি! চাবি দেওয়ার জন্যে তোকে দিয়ে ফোন দেওয়াইছে? ওকে বলে দে, চাবি আমি কালকের আগে দিবো না, আর দরজা টা ও কালকের আগে খুলবো না!

জান্নাতঃ কাজটা কিন্তু বেশি বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে জল! চাবি দিবি,  আমি আসবো!

জল স্বাভাবিকভাবেই বললঃ কখনো সম্ভব না। রাখি! 
জল ফোন রেখে দিতেই জান্নাত রাগে ফেটে পড়ল! দেখলো পাশে ওর মা দাঁড়িয়ে আছে!  
জান্নাতের মা কড়া কন্ঠে জিজ্ঞেস করল ঃ কিসের চাবি? কাকে আটকে রাখা হইছে?

জান্নাত রাগে মায়ের কাছে সব বলে দিলো! জান্নাতের মা অবাক হয়ে বললেনঃ আরে বাপ রে! বকুলের মাইয়ার এতো পাখা গজাইছে! আমি কালকেই বলতাছি জলের মার কাছে সব!
জান্নাত মাথা নেড়ে না করে বলল বললঃ না, তোমার কিছু বলার দরকার নাই, যা বলার আমি ই বলবো! 

জান্নাতের সাথে কথা বলে জল অন্তুর উপর রেগে ফেটে পড়ছিল! সে পাগল হয়ে যাচ্ছিল!  উঁকি দিয়ে দেখলো মা কি করে। হেনা বেগম পাকের ঘরে রান্না করছিল, জল বললঃ আম্মু আমি নিচের দোকান থেকে একটা ডিম নিয়ে আসি! কথাটা বলে উত্তরের আশায় না থেকে বোরকা পড়ে অন্তুর বাসার চাবি নিয়ে রাস্তা দিয়ে পাগলের মতো দ্রুত হেঁটে আসছিল, অন্তুর বাসার নিচে আসতেই কয়েকটা বখাটে ছেলে জল কে উদ্দেশ্য করে বাজে বাজে মন্তব্য করতে লাগলো!  অন্য সময় হলে জল চুপ থাকতো কিন্তু আজকে রাগে ওর মেজাজ এতোটা ই খারাপ হয়ে গেছিল যে, সে কথাগুলো শুনা মাত্র ছেলে গুলির সামনে গিয়ে বললঃ 
এই!  কি বলছিস তোরা?

জলের কথায় একটু অবাক হয়ে গেলো সবাই, কেউ একজন রাগ দেখিয়ে জায়গায় থেকে উঠতে যাচ্ছিল জল পা থেকে জুতা টা খুলে দেখিয়ে বললঃ এটা চিনিস? জুতা দিয়ে পিটিয়ে ইভটিজিং করা বের করে দিবো জানোয়ারের দল! 

জলের চেচামেচি দেখে অন্য লোকজন এদিকে আসতে লাগলো যা দেখে ছেলেগুলো সেখান থেকে চলে গেলো.... 

জল দরজার কাছে এসে হাত দিয়ে দুপাশের গাল মুছে দরজার তালা খুলে ভেতরে ঢুকে দেখলো অন্তু লুংগি পড়ে শুয়ে আছে, যা দেখার পর জলের মেজাজ আরো খারাপ হয়ে গেলো!  সে অন্তুর দিকে তাকিয়ে হাত থেকে ডিম দুইটা দিয়ে বললঃ 
ভালোইতো! জান্নাত আসবে, তাই প্যান্ট চ্যাঞ্জ করে লুংগি পড়ে অপেক্ষা করা হচ্ছে! ওয়াও! আশ্চর্য না হয়ে পারলাম না!

অন্তু আগেই রেগে ছিল তাই জল এসব বলাতে সাথে সাথে ই বললঃ তোমার কি সমস্যা? আমি কার জন্যে অপেক্ষা করবো না করবো আমার ব্যাপার!  

অন্তু জানতো না জান্নাত জল কে কল দিয়ে চাবির মিথ্যে কথাটা বলেছে তাই অন্তু যখন জলের কথার এমন উত্তর দিলো জলের মন করল জান্নাত সত্যি ই বলেছে! জলের রাগ এতো টাই বাড়লো সে টেবিলের উপর থেকে একটা স্কেল নিয়ে অনুর গায়ে ঢিল মারলো! স্টিলের স্কেল ছুড়ে মারাতে অন্তুর হাতের এক পাশ কেটে রক্ত বের হচ্ছিল যা দেখে জল প্রথমে একটু নরম হয়ে পড়েছিল কিন্তু মূহুর্তের ভিতর ই নিজেকে সামলে নিয়ে বললঃ 
তোর এত্ত বড় সাহস! আমার সাথে প্রেম করে, আমার সাথে সব কিছু করার পর তুই আবার অন্য মেয়ের কাছে যাবি! আমি বেঁচে থাকতে তা কোন দিন ই সম্ভব না! 

একে রেগে ছিলো, তারপর জল হাত কেটে ফেলেছে তারউপর জলের মুখে তুই করে কথা শুনার পর অন্তুর মেজাজ এতোটাই বিগড়ে গেলো যে, সে জলের দিকে আংগুল তুলে বললঃ যদি নিজের ভালো চান আমার সামনে থেকে এখন চলে যান! তা না হলে অনেক খারাপ হবে! প্রত্যেক বৃহস্পতিবার আপনার কি হয়! আপনি ঝামেলা করেন ই! পাইছেন কি! কথাগুলো বলে ব্যাথায় হাতে টিস্যু দিয়ে চেপে ধরল!

জল অন্তুর হাতের দিকে তাকিয়ে মনে মনে অনেক কষ্ট পাচ্ছিল কিন্তু মুখে সেই আগের রাগ রেখেই বললঃ তুই আমার সাথে এমন করতাছস কেন তাইলে! আমি কি না করছি তোর জন্যে! সব ছেড়ে দিছি! ঘর থেকে এক পা ও বের হইনা, কারো সাথে কথা বলি না! এমন কি আপন মামা র সাথেও তুই না করার পর কথা বলি নাই আর তুই রাত আট্টার সময় জান্নায় কে খালি বাসায় আনার কথা ভাবিস! মজা শেষ হয়ে গেছে বুঝি আমার কাছ থেকে, তাই না! জান্নাত রাগে কেঁদে ফেলল! 

অন্তু ওর কাঁন্নার দিকে না তাকিয়ে বললঃ আমার না,  বলেন আপনার মন উঠে গেছে আমার উপর থেকে! মেয়েরা তো একজনের কাছে বেশি দিন থাকতে পারেনা তাই অন্যজনের কাছে যাওয়ার বাহানা খুঁজে!  পুরনো হয়ে গেছি তাই অবহেলাটাও বেশি ই করতাছেন! যাকে তাকে নিয়ে সন্দেহ করেন! একটা কথা মনে রাখবেন, আল্লাহ কারো জন্যে এককভাবে রাত রাখেনা! রাতের পর দিন আসবেই!আজকে আমাকে যতোটা কষ্ট দিয়েছেন একদিন আপনিও ততোটাই কষ্ট পাবেন!

জল বুঝল অন্তু অনেক কষ্ট পেয়েছে। জল ইচ্ছে করে আঘাত করে নি, স্কেল যে এতো জোড়ে লাগবে জল বুঝে উঠতে পারে নি, সে মুখে তা প্রকাশ করল না। জল কান্নাভেজা কন্ঠে বললঃ একটা কথা মনে রাখিস, ভালোবাসি মন থেকে আর তোকে বিশ্বাস করি হৃদয় থেকে! আমার সাথে অন্য কারো তুলনা দিতে আসিস না! আমার ধারের কাছেও একটাও নেই তবু আমি শুধু তোকেই ভালোবাসি আর তোর জন্যেই অপেক্ষা করে পথ চেয়ে থাকি! বাসায় গেলে মনে হয় দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে!
 কথাগুলো বলে জল অন্তুর সামনে গিয়ে ওর হাতটা ধরতে চাইল কিন্তু অন্তু হাত স্পর্শ করতে দিলো না! জল অন্তুর ব্যবহারে কষ্ট পেলেও মুখে কিছু না বলে অন্তুকে জড়িয়ে ধরে ঠোঁটে কিস করতে লাগলো! জল ভেবেছিল অন্তুর রাগ হয়তোবা এতে কমবে কিন্তু অন্তু আরো রেগে গেলো! 

অন্তুঃ গায়ে হাত দিবেন না! বাসায় যান! 

জল স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করে বললঃ না, যাবো না, তুই আমাকে রাগাইলি কেন! এখন রাগ ভাংগা, তারপর যাবো! 
অন্তু ঃ সামনে থেকে যদি এখন ই না যান অনেক খারাপ হবে! 

এবার জলের অনেক ঘৃন্না লাগছিল! সে আবার রেগে উঠল! কাঁন্নাভেজা কন্ঠে রেগে বললঃ শোন তোকে যদি আমি না পাই, অন্য কাউকে পাইতেও দিবোনা! এমন অবস্থা করবো যে আমি না পেলে তুই নিজেও থাকবি না! তুই শুধু আমার! কোন মেয়ের কলিজাতে এতো সাহস নেই যে তোকে আমার কাছ থেকে আলাদা কর‍তে পারে! 

জলের শেষের কথাগুলোতে অন্তুর রাগ  একেবারেই শেষ হয়ে গিয়েছিল কিন্তু ততোক্ষনে জল দরজা জোড়ে ধাক্কা দিয়ে বেরিয়ে গেছে! জলের কথায় অন্তুর নিজেকে অনেক ভাগ্যবান মনে হতে লাগলো!  সে মনে মনে বললঃ সত্যি আমি তোমার মতো কাউকে দেখিনি কখনো!











Friday, March 20, 2020

"সেই তুমি " পর্বঃ ১৩



আবুল যখন দরজায় ডাক দিলো তখন জলের মনে পড়েছে ও বাবার কাছে কি বলে আসছে! সে তাড়াতাড়ি শাড়ি খুলে থ্রি পিছ আর বোরকা পড়তে পড়তে বললঃ 
" আজকে আব্বু মাইরা ই ফেলবে"! শুধু তোমার রাগ ভাংগানোর জন্যে আমি আজকে এতো বৃষ্টির ভিতর আব্বু আম্মুর সাথে ঝগড়া করে এসেছি! কত্ত দেরি হয়ে গেছে!! 

অন্তু বললঃ কিচ্ছু হবে না, তুমি বইল যে আজকে পার্টি ছিলো তাই একটু দেরি হইছে, না খেয়ে যাওয়া যাবে না, এটা আমার জন্মদিন! আমি তোমাকে না খেয়ে জীবনেও যেতে দিবো না!

জল ঠোঁট থেকে লিপিস্টিক আর চোখ থেকে কাজল মুছতে মুছতে বললঃ না, জান! একটু বুঝো! আব্বু বাসায়, সকাল থেকে আসার জন্যে আম্মুর থেকে ঝগড়া করতাছি, আম্মু তবু দেয় না! আমি একরকম জোড় করেই বের হয়েছি! আব্বু ও রেগে আছে নিশ্চিত!

অন্তু কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল, এমন সময় জান্নাত এসে বললঃ স্যার, আপনাদের রোমান্স শেষ হলে এবার একটু দয়া করে আসেন? আমাদের সবার ই আজ বাসায় বকা খেতে হবে, এমনি তে ই অনেক লেট হয়ে গেছে......কথাগুলো বলতে বলতে আড় চোখে জলের দিকে তাকাল,  জলের চেহারাতে স্পষ্ট হয়ে ফুটে আছে ব্যাথার তীব্রতা!  জল পেট এ ধরে বসে পড়েছে! 

জান্নাত বুঝেও না বুঝার ভান করে ঠোঁট বাকা করে বললঃ কি রে! এমন করছিস কেন? হাঁটতে পারবি তো, নাকি আবার বাসায় নিতে হবে কোলে করে! এমনিতেই তুই যেই মোটা তোকে কোলে নেওয়া ত আমাদের কারো দ্বারা,সম্ভব না!

জান্নাতের বাকাবাকা কথাগুলো জলের গায়ে কাটার মতো লাগলো তাই ঠোঁট চেপে ধরে উঠে দাঁড়িয়ে বলঃ শোন, আমি একাই ১০০, আমার কারো হেল্প লাগেনা। যা, আমরা আসছি!

জলের কথায় জান্নাত শুধু একটু হাসলো তারপর খাবার টেবিলে গিয়ে বসে নন্দিনি আর বাকি মেয়েদের সাথে ফিসফিস করে কিছু একটা বলে হাসতে লাগলো!  

জল অন্তুর গালে একটা চুমু দিয়ে বললঃ জান, রাগ করোনা, আর থাকা সম্ভব না! রাত ৮টা বেজে গেছে, আমি এখন ই যাবো,  তুমি খেয়ে নিও, প্লিজ??

অন্তু জলকে আর কোন বাধা দিলো না, জল ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছিল, সবাই হেসে উঠল!  কেউ একজন অল্প আওয়াজ করে বললঃ হয়তো অন্য খাবার টা বেশি হয়ে গেছে তাই না খেয়ে চলে যাচ্ছে! 

জান্নাত নন্দিনি অনেক জোড় করল কিন্তু জল দেরি না করে বেরিয়ে গেলো দরজা দিয়ে.......অন্তু তানহাকে বলল সবাইকে খাবার দিতে, এটা বলে সে ও জল কে পৌঁছে দেওয়ার জন্যে জলের পিছে পিছে সিঁড়ি দিয়ে নেমে গেলো। 

রাস্তায় পেক- কাদাতে একাকার হয়ে আছে, জল অনেকটা দ্রুত হাঁটছিল, রাস্তায় কোন মানুষ নেই, অন্তু একটু দৌড়ে জলের পাশে গিয়ে বললঃ তুমি কিছু খাওনি, তাই আমি ও খাবো না, বাসায় গিয়ে কারো সাথে মুখে মুখে তর্ক করার দরকার নেই, যে যা বলে চুপচাপ মাথা নিচু করে শুনবা, কোন জবাব দিবা না।

জল গম্ভীর ভাবে বললঃ আমার পেট অনেক ব্যাথা করছে, যদি বাসায় যাওয়ার পর আম্মু টের পেয়ে যায়! আমি তো তখন শেষ!!

অন্তু বললঃ কষ্ট করে রাত টা পার করো, কালকে ডাক্তার এর কাছ থেকে ব্যাথার ঔষধ এনে দিবো।

জল হেসে উঠল!  ঔষধ লাগবে না, আমার ঔষধ তো তুমি ই.....এবার যাও, বাসায় এসে পড়েছি! 

কথায় কথায় অন্তু খেয়াল ই করেনি জলের বাসার গেটের কাছে পৌছে গেছে দুজন!  অন্তু মাথা নেড়ে বললঃ হুম, যাও, আজকের দিনটা সারা জীবন মনে থাকবে আমার! 

জল অন্তুর গালে হাত রেখে বললঃ আর রাগ করবানা কিন্তু!  আমার সারা জিবন মনে থাকবে!!! 


**** অন্তু ঘরে এসে দেখলো সবাই খাওয়া দাওয়া করে চলে গেছে কিন্তু ছেলেরা ওর জন্যে বসে আছে না খেয়ে। আবুল বিচলিত হয়ে বললঃ ও স্যার,পেটে ত আর সইতে পারছে না, আসেন না তাড়াতাড়ি!  

সাজু বললঃ স্যার,  আপনার জন্য বসে আছি সেই কখন থেকে! কেকটাও কাটার সময় এলেন না, এখন খাওয়ার সময় ও নেই আপনি, এটা হলো!

আহমেদ একটু কেশে বললঃ তোরা বেশি বুঝস বেটা! স্যার, যা খাইছে তা ই মনে থাকবে, বলে হালকা জিহবা টা নাড়া দিয়ে চোখ গোল করে বললঃ you know, আমি কিন্তু খারাপ কোন ইংগিত দেইনি, তোমরা কেউ আবার বেশি বুইঝো না কিন্তু...... 

সবাই হেসে উঠল। অন্তুর মন খারাপ। জল না খেয়েই চলে গেছে। তাই ঠিক করল ও খাবেনা। সে সবাই কে বুঝিয়ে খাওয়ার জন্যে রাজি করিয়ে ভেতরের রুমে চলে গেলো!
   

জল ঘরের ভেতর ঢুকতে ই হেনা বেগম গর্জে উঠলেন! 
মহারানীর আসার সময় হইছে তাহলে! 

জল অনেক ভয় পেয়েছিল কারন জানে মা আজকে ওর বারোটা বাজিয়ে ছাড়বে। তাই মুখে একটা কৃত্রিম হাসি আনার চেষ্টা করে বললঃ 
আম্মু,  স্যারের বোন আসতে দিতাছিল না! সবাই একসাথে অনেক আড্ডা দিছি তাই একটু দেরি হয়ে গেছে, আর বাইরেও কতো বৃষ্টি দেখছ তুমি? আমি কেমনে আসমু তুমি কও!

হেনা বেগম হাতে একটা স্কেল নিয়ে তেড়ে এসে বললেনঃ বৃষ্টি তে যাইতে পারছস আর আসতে পারস নাই? বলেই স্কেল দিয়ে পিঠে দুইটা জোড়ে বারি দিলেন। 

জল চুপ করে ভেতরে চলে যাচ্ছিল, হেনা বেগম বললেনঃ কাল থেকে তোর কাল থেকে আর পড়তে যাওয়া লাগবে না, আমি যেনো তোকে আর পড়তে যেতে না দেখি!

জল ভেতরে চলে আসল! ব্যাগ বোরকা রেখে বিছানায় শুতেই ওর ব্যথা টা বাড়তে লাগলো। তাই চুপ করে শুয়ে রইল। হেনা বেগম রাগলে এসব ই বলে, শান্ত হলে আবার নিজেই আদর করবে ভেবে ঘুমানোর চেষ্টা করছিল হঠাৎ রুমে আবার হেনা বেগম এসে ঢুকলেন।
 
জল কে শুয়ে থাকতে দেখে জিজ্ঞেস করলেনঃ কাজগুলো কে করবে? আর তুই কি এমন করে আসছিস যে, আসার পর পর ই তোর বিছানায় গা ভাসাতে হবে! 

এবার জলের গায়ে কথাগুলো লাগলো কারন ও জানে হেনা বেগম কে এখন ই না থামালে উল্টাপাল্টা প্রশ্ন করতে করতে আসল কথাই বের করে ফেলবে, আর এমনিতে ও ওর  শরির আজ খারাপ অনেক তাই রেগে বললঃ 
আম্মু! মুখে যা আসে তা ই কি বলবা? আমি ত একা ছিলাম না কোথাও, আমার সাথে সবাই ছিলো আর আমি কোন ছেলেদের সাথেও কথা বলিনি, সামনে যাইনি! কি বলতাছ এসব তুমি? 
  
জলের রাগ দেখে হেনা বেগম শান্ত হয়ে গেলেন। মনে মনে ভাবলেন হয়তোবা জলের কথাই ঠিক, উনি ই একটু বেশি সন্দেহ করে ফেলছেন ইদানীং!!  


হেনা বেগম চলে যাবার পর জল ব্যাগ থেকে কাপড় গুলো বের করে আলমারি তে রাখছিল হঠাৎ দেখলো ওর ব্লাউজের ফিতে তে কিছু একটা লেগে আছে! ব্লাউজটা হাতে নিতেই দেখলো একটা চিরকুট!  বড় একটা নিশ্বাস ছাড়ল, মনে মনে ভাবলঃ কি না কি ভেবেছিলাম!  আমিও না........অযথাই সন্দেহ করি....... ভেবেছিলাম অন্তুর চিঠি! 
 অন্তু দেয় নি তো আবার! আলমারির লক লাগিয়ে কাগজটা খুলতেই জলের চোখ বড় হয়ে উঠল! কি লিখা এটা! অন্তুকে জান্নাত চিঠি লিখছে!! 

জল ধপাস করে বিছানায় বসে পড়ল! সারা গা যেনো ঝাকুনি দিয়ে উঠেছে! হাত দিয়ে মুখের ঘাম মুছে এলোমেলো চুলে হাত ফিরাতে ফিরাতে কাগজ টা বার ছয়েক পড়ল........."তাইতো বলি! আমার কোন কথা ও কেনো অন্তুর কাছে গিয়ে বলে না! সকাল টা হোক! কি যে করবো এই জান্নাতের এক আল্লাহ ই জানে! নিজেকে নিজেই কথাগুলো শোনাতে লাগল।


**** আমাদের দেশে কোন মানুষের ভালো দিক টা যতো কম ভাইরাল হয় ঠিক ততোতাই বেশি ভাইরাল হয় কোন একটা ছোটখাটো অপরাধ....... জল রাতে বাসায় দেরি করে ফিরাতে জলের এই ঘটনা টা পাশের ঘরের কোন এক মহিলা সকালের বাজারে হেনা বেগম কে দেখেই প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন!  

হেনা বেগম সব্জি কিনছিলেন। হঠাৎ হাসির মা খ্যাত মহিলাটি পান চিবাতে চিবাতে হেনা বেগমের পাশ ঘেসে দাঁড়িয়ে বললেন ঃ

 দিন কাল ভালো না, মেয়েরে এতো স্বাধীনতা দিও না, কাল কে নাকি তোমার মেয়ে কোন বাসা থেকে অনেক রাত করে ফিরছে? আমগো হাসি কইল সকালে আমারে! আর, মেয়ে মানুষ কে রাতে পড়তে অন্য জায়গায় দেওয়া ঠিক না! কখন কি হয়ে যায়..... 

হেনা বেগম সব্জি না কিনেই বাসায় চলে আসলেন। ঘরে ঢুকে দেখে জল নেই, স্কুলে চলে গেছে।  
হাসির মায়ের কথায় সারা গা জ্বলে যাচ্ছে। আসুক আজকে, ওর প্রাইভেট পড়া ই লাগবে না।ওর জন্য রাস্তায় কথা শুনতে হয়!



 

Thursday, March 19, 2020

"সেই তুমি" পর্বঃ ১২



সকাল থেকেই আকাশটা মেঘলা হয়ে আছে, সেই সাথে বাতাস বইছে কিছুটা জোড়ে। বৃষ্টি যে আসবে তা বোঝা ই যাচ্ছিল। জল দাঁত দিয়ে নখ কাটছিল আর মনে মনে সৃষ্টকর্তার কাছে প্রার্থনা করছিল যেনো বৃষ্টি না আসে। অন্তু এর উপর এমনিতেই অনেক রেগে আছে তার উপর আজকে ওর বার্থ ডে! যদি যেতে না পারে অন্তু ভীষণ কষ্ট পাবে......তাই ঘরের কাজগুলো হেনা বেগম না বলতেও জল সব করে ফেলল। হেনা বেগম মাঝে মাঝে আড়চোখে জল কে দেখছিল। মনে মনে ভাবলেনঃ 
'এতো ভালো  হলো কবে'!  না বলতেই সব কাজ সেরে ফেলছে! নিশ্চয়ই কোন মতলব আছে। 
কিন্তু মুখে কোন কথা বললেন না। ইদানিং জলের আচার ব্যবহার হেনা বেগম কে ভাবিয়ে তুলছে কারন জল অনেকটা ই চঞ্চল স্বভাবের কিন্তু গত ১ মাসে জলের এই স্বভাব টা একেবারেই পরিবর্তন হয়ে গেছে! জল এখন আগের মতো বায়না করেনা, নিজে নিজে হাসে, কারো সাথে কথা বলতে চায় না! যে মেয়েকে সপ্তাহে অন্তত একবার ঘুরতে না নিয়ে গেলে রাগারাগি কর‍তো সে মেয়েকে এখন জোড় করেও ঘরের বাইরে বের করা যায় না! কেমন জানি এক ঘেয়ে হয়ে যাচ্ছে মেয়ে! হেনা বেগম আরো বেশি চিন্তায় পড়ে গেলেন। 
মনে মনে বললঃ আমি তোর মা, দুনিয়া তোর আগে দেখেছি, তোর সমস্যা ত আমি বের করবো ই! 
তাই তীক্ষ্ণ নজর রাখার চিন্তা করলেন। ঘড়িতে তখন সকাল ১০ টা বাজে। দিন খারাপ তাই স্কুলে যাওয়ার জন্যে হেনা বেগম না করলেন। জল কোন জবাব দিলো না।বোরকা পড়ে ব্যাগ নিয়ে বের হতে যাচ্ছিল। 

হেনা বেগম বললেন ঃ কিরে! আজকের দিনেও তোর প্রাইভেট পড়তে যেতে হবে? আজ যাওয়ার দরকার নাই। ঘরে বসে থাক, বৃষ্টি আসবে।

জলের হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে আসছিল মায়ের কথায়! যে ভয়টা পেয়েছিল সেই টা ই হচ্ছে! জল নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে বললঃ 
'আম্মু আজকে যেতে হবে, বিকেলে স্যারের বাসায় পার্টি আছে! 
হেনা বেগম ভ্রু কুচকে বললঃ এই রকম দিনে কোন পার্টি ফাটি করতে হবে না! চুপচাপ ঘরে বসে থাক, আর পার্টি যদি থাকেও সেটা বিকেলে,  এই খারাপ আবহাওয়া তে আজকে দুইবার পড়তে যাওয়ার কোন দরকার নাই! 

জলের মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে গেলো। সে অনেক ভাবে চেষ্টা করল হেনা বেগম কে মানাতে কিন্তু হেনা বেগম নিজের সিন্ধান্ত থেকে এক বিন্দু পরিমান ও নড়লেন না। জল রাগে ফেটে পড়ল কিন্তু মায়ের মুখের উপর কিছু বলার সাহস ওর হলো না। তাই সে ঘরে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিলো.....অনেক কান্না পাচ্ছে ওর! 

জলের প্রতিটি মুহূর্তের প্রতি হেনা বেগম সূক্ষ্ম নজর রাখার সিদ্ধান্ত নিলেন। তিনি ভাবতে লাগলেনঃ যে মেয়েকে আগে বকাঝকা করেও প্রাইভেট পড়তে পাঠাতে পারেনি সেই মেয়ে গত ১ মাসে একবার ও প্রাইভেট মিস দেয় নি, হোক না হোক এই প্রাইভেট এ ই কিছু একটা আছে, বের করা লাগবে! 


আকাশের অবস্থা দেখে অন্তুর মন টা আরো খারাপ হয়ে গেলো।  বাতাসের পরিমাণ ও বেড়েই চলেছে, যে কোন মূহুর্তে বৃষ্টি আসবে......সকালে কেউ ই পড়তে আসে নি, সবাই জানে আজ অন্তুর জন্মদিন তাই সবাই কল দিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়েছে। কেউ আজ পড়তে আসবে না কিন্তু সন্ধ্যায় পার্টিতে আসবে। 


প্রায় পৌনে বারোটার দিকে প্রচন্ড বৃষ্টি শুরু হলো! জল ভেবেছিল আকাশের অবস্থা হয়ত ভালো হবে কিন্তু ওর ধারনা পাল্টে দিয়ে আকাশ যেনো আরো কালো হয়ে উঠল আরটানা বৃষ্টি পড়তেই লাগল......জানালার পাশে হাটুর উপর মাথা রেখে বিষন্ন মন নিয়ে জল বৃষ্টি দেখতে লাগল। মনের ভিতর নানা প্রশ্ন ঘোর পাক খাচ্ছে! কি হতে কি হয়ে গেছে বুঝেই উঠতে পারছেনা! অন্তু এতো সামান্য একটা ব্যাপার নিয়ে কথা বলাই বন্ধ করে দিলো এটা ভেবে চোখের পানিতে গাল ভিজে গেছে জলের.......


বৃষ্টির তীব্রতা দেখে তানহা অন্তুকে বললঃ দাদা, আজকে তোমার স্টুডেন্ট রা মনে হয় মনের সুখে ঘুমাচ্ছে! প্রায় ৩ টা বাজে, বৃষ্টি থামার কোন নাম ও নেই.........

তানহার কথার জবাবে অন্তু শুধু ওর মুখের দিকে তাকালো, কোন কথা বলল না। তানহা চলে যাবার পর,অনেক ক্ষন বৃষ্টি তে হাত ভিজিয়ে অন্তু তানহার রুমে গিয়ে বলল-

"তানহা, আজকে পার্টির সব তুই রান্না করিস, আমার মন ভালো না, রান্না খারাপ হবে আমার......."

তানহা হেসে বললঃ আরে সব আমি আরবো না, তুমি বিরিয়ানি টা রান্না করে দিও, বাকিগুলো আমি করবো, আর ওরা আসবে বলে ত মনে হয়না........

অন্তু আগের মতোই নিরস কন্ঠে বললঃ আসবে.........

***জল অনেক ভেবে সিদ্ধান্ত নিলো যা ই হোক ও যাবে অন্তুর বাসায় এক মিনিটের জন্যে হলেও.......তাই নন্দিনির ফোনে কল দিলো.......নন্দিনির ফোন ওর মাসি ধরলঃ 

"হ্যালো'!! কে বলতাছেন?

জলঃ আমি জল, নন্দিনি আছে বাসায়?

মাসিঃ নন্দিনি ত একটু আগে পড়তে চলে গেছে!  

জল ফোন কেটে দিলো। 
"জান্নাতকে কল দিয়ে লাভ নেই, নন্দিনি গেলে বাকিরাও সবাই গেছে! আমিও যাবো"! জল নিজে নিজেই রেগে উঠল......  
সে রেডি হয়ে ব্যাগ নিয়ে বের হতে যাচ্ছিল এমন সময় বকুল হোসেন ছাতা নিয়ে ঘরে ঢুকল.......  

বকুল হোসেনঃ কিরে! এই বৃষ্টি তে কই যাস তুই? 

জল মাথা নিচু করে বললঃ আব্বু স্যারের বাসায় আমরা সব স্টুডেন্ট রা টাকা দিয়ে পার্টি করতাছি, সবাই গেছে, আমি দেরি করে যাচ্ছি! 

বকুল হোসেনঃ না, থাক,  ওই পার্টিতে যাওয়া লাগবে না, তুই বৃষ্টি থামলে তোর মাকে নিয়ে একটু তোর খালাদের বাসায় যাইস, আমি ওই বাসায় কিছু কাপড় কিনে রেখে এসেছি তোর জন্য, বৃষ্টির জন্য আনি নি, নিয়ে আসিস গিয়ে! 

জলের অনেক কান্না পাচ্ছিল তবু নিজেকে সামলে বললঃ আচ্ছা,আমি খাবো না, শুধু যাবো আর আসবো! কথাটা বলে বকুল হোসেনের উত্তরের জন্য অপেক্ষা না করে সামনে দিয়ে বের হয়ে গেলো! 

বকুল হোসেন জিবিনেও এইটা ভাবেনি যে মেয়ে এমন করতে পারে, উনি 'থ' হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন সেখানেই!


অন্তুর মন খারাপ দেখে জান্নাত নন্দিনিকে ইশারা দিয়ে বললঃ তুই একটু তানহা আপু কে হেল্প কর, আমি দেখি স্যারের কি হয়েছে......

নন্দিনিকে তানহার কাছে পাঠিয়ে জান্নাত অন্তুর আশে গিয়ে বসে হেসে বললঃ 

জানেন তো, আমার আবার ঘোমরা মুখ একদম ভালো লাগেনা! আজকে আপনার ডাউনলোড দিবস, কই আমাদেরকে একটু আনন্দ করার জন্য উৎসাহিত করবেন, তা না করে মুখ ভার করে আছেন! 

অন্তু জান্নাতের দিকে তাকিয়ে বললঃ আজকের দিনে মিথ্যে বলবো না......আমার জন্যে মনে হয় বৃহস্পতিবার টা অনেক কুফা দিন কারন জলের সাথে সম্পর্ক টাও বৃহস্পতিবার হয়েছে আর প্রতিটা ঝগড়া ও ঘটনাক্রমে সেই বৃহস্পতিবার ই হয়েছে! 

অন্তুর মুখে জলের কথা শুনে জান্নাত নাক ফুলিয়ে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে রইল। সে একটু চুপ থেকে বলতে লাগলো ঃ আপনি কি! ওর কথাটা আজকের দিনে না বললে কি হয়! জল কে এই বৃষ্টি তে ওর ঘরের কেউ বের হতে দিবেনা! আপনি ত জলের কথাই ভাবলেন, আমার কথা ত একবারও ভাবেন না! জলের চেয়ে কোন অংশে কম ভালো ত আমি বাসি নাই আপনাকে!

অন্তু বুঝল জান্নাত আবার সেই আগের কথা শুরু করেছে তাই কথাটা এড়ানোর জন্যে কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল, পাশের রুম থেকে আবুল দৌড়ে এসে বললঃ স্যার!! মেডাম আইছে! মানে জল আপু আসছে! 

আবুলের মুখের কথা শেষ ও হয়নি জল রুমে ঢুকলো।  ভেতরে ঢুকেই জলের মেজাজটা আর খারাপ হয়ে গেলো জান্নাত কে অন্তুর এতো পাশ ঘেসে বসে থাকতে দেখে! জান্নাত হাতের শো পিস টা বিছানার এক পাশে একটু জোড়েই ছুড়ে মারল....... সারা রাস্তা জল এই কথাটাই ভাবছিল যে, জান্নাত যেহেতু আছে ঘরে, কিছু না কিছু প্যাচ ত হবেই, তাই অন্তুর জন্যে ভিজে একটা গ্রিফট কিনে তড়িঘড়ি করে অন্তুর বাসায় চলে এলো কিন্তু এসে এমন করে বসে থাকতে দেখে জলের মেজাজ এতোটা ই খারাপ হলো যে, ও ভুলেই গেলো বাসা থেকে ৫ মিনিটের কথা বলে আসছে! জল ভেজা বোরকা টা খুলে চুলগুলো হাত দিয়ে বারি দিয়ে পানি ঝাড়তে ঝাড়তে জান্নাতের দিকে তাকিয়ে বললঃ 

' জান্নাত, তুই একটু তানহার রুমে যা ত'..... তানহা যেনো এ ঘরে না আসতে পারে খেয়াল রাখিস! আর আবুল ভাইয়া, তুমি ছেলেদেরকে বইল বাহিরের দরজায় কেউ নক করলে আগে যেনো আমাদের রুমে এসে বলে তারপর দরজা খুলে আর কেউ যেনো এ রুমে না আসে! 

কথাগুলো বলে জল ইচ্ছে করেই জান্নাতের সামনে অন্তুর দিকে তাকিয়ে কিছু হয়নি এমন ভাবে বললঃ তোমার কি মনে হয়েছিল?  তোমার জন্মদিন আর আমি আসবো না? তা কি হয় জান, বলো?

জান্নাতের গা জলছিল কিন্তু মুখে কিছু না বলে হাসি হাসি মুখে বললঃ ঢং ইজ কুয়ারা! তুই না স্যারের সাথে ঝগড়া করেছিস!

জল অন্তুর দিকে তাকিয়ে বললঃ তাই নাকি! কবে, কখন! আমার তো মনে নেই! আরে তুই যা, দেরি হয়ে যাচ্ছে আমার! 
জল একরকম জোড় করেই আবুল আর জান্নাত কে রুম থেকে বের করে দিলো!  

জল ওদের বের করে অন্তুর দিকে কড়া নজড়ে তাকিয়ে বললঃ এসবের মানে কি! তুমি আমার সাথে কথা বলবা না, আমার ফোন ধরবা না ভালো কথা! তুমি জান্নাত কে কোলে নিয়ে বসে আছো কেন? 


অন্তু জলের কথায় চোখ সরু করে দাঁত খিঁচিয়ে বললঃ আজেবাজে কথা কম বলেন! এসব স্বভাব আপনার থাকতে পারে, আমার নেই! 

অন্তুর কন্ঠ শুনেই জল বুঝতে পারল অন্তুর রাগ এখনো কমে নি তাই হেসে বললঃ আজকে তোমার খবর আছে, এখন রুম থেকে বের হও! আমি শাড়ি নিয়ে আসছি! শাড়ি পড়ব, তানহা আপু কে পাঠাও, যাও বের হও!

জল অন্তুকে জোড় করে ঘর থেকে বের করে দিলো। নন্দিনি জান্নাত আর তানহাকে জোড়ে রুমে ঢুকিয়ে ধপাস করে দরজা লাগিয়ে দিলো! 


ছেলেরা আর বাকি মেয়েরা সবাই পাশের রুমে জোড়ে শব্দ করে গান বাজাচ্ছিল কিন্তু ওদের গানের শব্দ বাহিরে ভালো করে শোনা যাচ্ছিল না, বৃষ্টির শব্দ ছিল তার চেয়ে বেশি প্রকট! 

প্রায় ২০ মিনিট পর তানহাকে নিয়ে জান্নাত আর নন্দিনি যখন বের হয়ে গেলো তখন ও জল ভিতর থেকে দরজা চাপিয়ে রেখেছিল। তানহা কে কথার ছলে নন্দিনি অন্য রুমে নিয়ে গল্পে জড়িয়ে পড়ল। জান্নাতের ভিষণ রাগ হচ্ছিল তবু অনিচ্ছাকৃত ভাবেই অন্তুর সামনে এসে বললঃ 

" আপনাকে জল ডাকে! বলছে জরুরি কথা আছে.....

জলের উপর অন্তুর রাগ একটু ও কমে নি বরং আরো বেড়ে গেছে এখন! কারন অন্তুর হিংসে হচ্ছিল!  ঘর ভর্তি ছেলে স্টুডেন্ট, ওদের সামনে জল শাড়ি পড়ে সেজে দেখাবে! অন্তুর মেজাজ সাথে সাথেই আরো বেশি খারাপ হয়ে গেলো। সে চোখ গরম করে বললঃ " আমি পারবো না যেতে, যার কথা আছে তাকে বলো এসে বলে যেতে! 


জান্নাত ভিতরে গিয়ে কথাটা বলতেই জল রেগে চিতকার করে বললঃ ওই!! তুমি আসবা নাকি আমি সবার সামনে এই সাজ নিয়ে বেরিয়ে আসবো! তাড়াতাড়ি আসো, শুধু একটা কথা আছে, শুনেই চলে যেও.....


সাজু হেসে বললঃ স্যার যান, আমরা আমরাই ত! 

আবুল বললঃ আরে স্যার, ভাই রাগ করিয়েন না! ভাবি রে মাফ করে দেন! 

আহমেদ বললঃ মেনশন নট, তবে পারসন টা কিন্তু বিপদ জনক, যান, না হলে এখানে লংকাকান্ড ঘটে যেতে পারে! 

অনিচ্ছা থাকা সত্বেও অন্তু জলের কাছে গেলো....... ভেতরে ঢুকতেই জল কে দেখে অন্তু থমকে গেলো! জল লাল একটা শাড়ি পড়েছে, লাল টিপ আর লাল লিপিস্টিক যেনো চেহারার সৌন্দর্য আরো বাড়িয়ে তুলেছে! আগে কখনো জল কে এমন সাজতে দেখেনি অন্তু! মনে হচ্ছে সামনে কোন মানুষ নয়, একটা পরী বসে আছে! জল এমনিতেও অনেক সুন্দর ছিলো। গায়ের রং কাঁচা হলুদের মত, টানা চোখ, জোড়া ভ্রু আর গোলাপি ঠোঁট যেন স্রষ্টার এক অনন্য সৃষ্টি!  

জল অন্তুকে রুমে ঢুকতে দেখে হেসে বললঃ জান! সুন্দর লাগছে না আমাকে! দেখো! 
বলেই হাত দুটি তে পড়া লাল চুড়িগুলো দেখালো! অন্তু ততক্ষণে নিজেকে সামলে নিয়েছে। আগের মতো ই রাগ দেখিয়ে বললঃ আমাকে এসব দেখাতে কে বলেছে! আপনি যাদের কে দেখাতে সাজছেন আর যার সাথে মেলায় গেছেন তাদের কে দেখান, কাজে দিবে! 

অন্তুর কথায় জল অনেক কষ্ট পেলো তবু নিজেকে সামলে বললঃ আমি একমাত্র তোমাকে দেখাতে সেজেছি, আমি ত এই ঘরে কোন পুরুষ মানুষ ঢুকতে দিবো না আজকে! তুমি দেখার পর পর ই আমি সব খুলে বোরকা পড়ে নিবো! 

অন্তুঃ তাতে,আমার কি! আপিনার যা খুশি করেন! 

জল মাথা নিচু করে দাঁত দিয়ে নখ কাটছিল,  হঠাৎ উঠে দরজাটা লাগিয়ে ঘরের বাতি অফ করে দিলো। অন্তুকে ধাক্কা দিয়ে খাটে ফেলে পাগলের মতো ওর দুই ঠোঁটে, গালে একের পর এক চুমো দিতে লাগলো!  অন্তু নিজেকে ছাড়ানোর বৃথা চেষ্টা করল, লাভ হলো না! জল অন্তুকে আরো শক্ত করে ধরে চুমো দিতে লাগলো......... এভাবে অনেক্ষন কিস করার পর বললঃ আজকে আমার জীবনের প্রথম কোন ছেলেকে নিজের দেহ দিলাম, একটা,অবিবাহিত মেয়ের কাছে তার ইজ্জৎ সব চেয়ে দামি, আমি আমার সব আমার ভালোবাসার জন্য তোমার কাছে বিলিয়ে দিয়েছি, আশা করিনা এর পর তোমার মনে আমার ভালোবাসা নিয়ে আর কোন সন্দেহ থাকতে পারে.......আমি তোমাকে ছাড়া অন্য কাউকে ভালবাসার কথা কল্পনাতেও আনতে পারিনা.....আমি আজ থেকে মন থেকেই তোমাকে আমার স্বামি মেনে নিলাম......ধোকা দিওনা! 

জল অন্তুর উপর থেকে নেমে গেলো। চোখ ভিজে গেছে পানিতে......অন্তুর রাগ কমে গেছে........সে জলের হাত ধরে বললঃ 

ভালোবাসি বলেই তোমাকে অন্য কারো সাথে দেখলে হিংসে হয়, ভালোবাসি তাই তোমাকে এক দিন না দেখলে ভিষন কষ্ট হয়! তুমি বুঝো? আমি এক মূহুর্ত তোমাকে না দেখলে পাগল হয়ে যাই! তুমি না এলে সারাদিন ই মন খারাপ থাকে, আমি চাইলেও নিজেকে সামলাতে পারি না! আমি তোমাকে সত্যি অনেক, অনেক ভালোবাসি!  তুমি আর এমন ভুল করোনা তাহলে আমি সত্যিই মরে যাবো! 

কথাগুলো শুনে জলের চোখ দিয়ে পানি পড়ে দুগাল ভিজে উঠল!  অন্ধকারেও জলের চোখের ছলছল চোখ অন্তু স্পষ্ট লক্ষ্য করল তাই জল কে বুকে জড়িয়ে নিলো! 

বাহির থেকে নন্দিনি আর জান্নাত বুঝার চেষ্টা করছিল ভিতরে কি হচ্ছে কিন্তু বৃষ্টির শব্দের ভিতর অন্য কোন শব্দ তাদের কানে আসলো না আসলেও জলের তীব্র একটা চিতকার কানে ঠিক ই বাজল যার ফলে বাহিরের অন্য কারো বুঝতে কোন অসুবিধা হলো না ভেতরে কি হচ্ছে!

এভাবে কতোক্ষন ছিল অন্তু আর জলের মনে নেই! দুজল ঘেমে উঠেছে! হাঁপাতে লাগলো দুজন! জলের পাঁচ আংলের দাগ অন্তুর পিঠে বসে গেছে! এমন সময় আবুল দরজায় কড়া নেড়ে বললঃ ও স্যার, জলদি আসেন, খাবার রেডি!!! 

জল কাপড় পড়তে পড়তে বললঃ অন্তু যা ছিল সব তোমার কাছে আমানত রেখেছি! ঠকাইও না আমাকে......মরে যাবো তাহলে!

অন্তু কি বলবে ভেবে পেলো না, শুধু জলের কান্নাভেজা মুখের দিকে তাকিয়ে রইল!!! 





Wednesday, March 18, 2020

"সেই তুমি " পর্বঃ ১১



দেখতে দেখতে জলের সাথে অন্তুর প্রেমের ১মাস হয়ে গেছে। এ এক মাসে জল অন্তুর প্রতিটি কথা মাথা নত করে বিনাদ্বিধায় মেনে চলেছে যার ফলে জলের জন্য অন্তুর মায়া, ভালোবাসা আগের চেয়ে দ্বিগুণ বেড়ে গেলো। বিশ্বাস বেড়ে গেছে জলের প্রতি। হয়তো আরো বাড়তো যদিনা সেদিন এই অনাকাঙ্খিত ঘটনা টা ঘটতো। 

প্রতিদিনের মতো অন্তু জলের জন্য বাসায় অপেক্ষা করছিল। রেলিশনের ১ মাসে জল কোনদিন ১ মিনিট ও দেরি করে নি কিন্তু আজকে সবাই চলে আসার পর ও আরো ২০ মিনিট হয়ে গেলো, জল আসেনি.....জল না আসাতে অন্তুর অনেক অস্থির লাগছিল, কাউকে পড়াতে ভালো লাগছিল না। অন্তু এতোটাই অন্যমনস্ক হয়ে পড়েছিল যে জান্নাত অনেক বার বলার পর ওর ডাক অন্তুর কানে পৌছে নি। তাই জান্নাত কিছু টা রেগেই বললঃ 
স্যার, একজন নেই তারমানে ত এটা না যে আপনি বাকিদের ভুলে যাবেন! আমরাও ত পড়তে আসছি নাকি! 

জান্নাতের গলায় স্লেজ টের পেয়ে অন্তু স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করে বললঃ ওহ! সরি! তোমাদের ত মেথ করা হয়নি, দাও করে দিচ্ছি!  

জান্নাত মুখ ভেচকি দিয়ে বললঃ না থাক! আপনি ত আবার চিন্তায় মগ্ন তাই বিরক্ত করতে চাইনা! তবে এটা ঠিক যে, জল না থাকলে আপনি আমাদেরকে ভালো করে পড়ান না। 

নন্দিনি হেসে বললঃ দেখতে হবে তো! আমরা ত আর জলের মতো না, তাই না স্যার?

ওদের কথাতে অন্তুর ধ্যান নেই, সে মনে মনে নানান চিন্তা করতে লাগলো। কেন এলোনা, কি হতে পারে ইত্যাদি নানা ভাবনা ওকে আরো বেশি অস্থির করে তুললো।  জল না আসাতে অন্তুর যতোটা খারাপ লাগছে ঠিক ততোটাই ভালো লাগছিল জান্নাতের। আজ কিস ডে। জল না আসাতে অন্তুর সাথে জলের দূরত্ব যেনো আরো বাড়ে জান্নাত মনে মনে সেই দোয়া করতে লাগল। অন্তু আর জলের রেলিশনের ব্যাপারটা একটু আধটু সবাই জেনে গেছে তাই সবাই বুঝতে পারল আজকে আর ওদের পড়া হবেনা কারন অন্তু ওর নিজের ভিতর নেই!

অন্তু র দিকে পলকহীন চোখে জান্নাত কে তাকিয়ে থাকতে দেখে নন্দিনি গলা কাশি দিয়ে বললঃ অন্যজনের জিনিস এতো দেখিস না, বিপদে পড়বি।

জান্নাত হেসে উঠল কিন্তু মুখে কিছু বলল না। অন্তু র মনে নানা প্রশ্ন বাসা বাধতে থাকলো। মনটা,ভারী হয়ে উঠল এসব চিন্তায়। হঠাৎ দরজায় কে যেনো নক করল।  তানহা ভেতর থেকে এসে দরজা খুলতেই রুমে আহমেদ আর সাজু প্রবশ করল। সাজু হাঁপাতে হাঁপাতে বললঃ 
স্যার, একটা পাক্কা খবর নিয়ে আসছি আপনার জন্যে! 

সাজু আর আহমেদ এর এই সময় আসার কারন অন্তু জানে। ওরা জলের খবর নিয়ে আসছে কারন অন্তু জলের গতিবিধি লক্ষ্য রাখার জন্যে ছেলেদের বলে রেখেছিল। কারন ছেলেরা সকল পাড়ায় ঘুরে তাই জল যদি অন্তুকে না বলে কোথাও যায় তাহলে কারো না কারো চোখে পড়বেই। অন্তুর ভয় হচ্ছিল, হয়তোবা জল কে ওরা কোথাও, কারো সাথে দেখেছে! অন্তুর দিকে তাকিয়ে আহমেদ বললঃ 
স্যার, আমি আর চিকনা (সাজু) মেলায় গেছিলাম ঘুরতে, সেখানে দেখি আমাদের......মেনশন নট, আই হোপ আপনি বুঝতে পারছেন কার কথা বলতে চাইছি! 

অন্তু কিছু একটা বলতে চাইছিল ওর মুখ থেকে কথাটা বের করার আগেই জান্নাত বললঃ মেনশন না করতে চাইলেও আমরা জানি আপনারা কার কথা বলবেন! জল আজকে মেলায় যাবে আমাদের আগেই বলেছিল, স্যার কে বলতে মানা করছিল কারন স্যার জানলে যেতে দিবেনা। জল ওর মামা মামির সাথে গেছে সাথে একটা ছেলেও আছে.....

নন্দিনর পছন্দ হলো না জান্নাতের কথা বলার ঢং টা তাই সে তড়িঘড়ি করে বললঃ স্যার, ছেলে মানে.....ওর চাচাতো ভাই। 

সাজু হেসে বললঃ পোলা ত পোলা ই, আপন ভাই ছাড়া সবাই ই ত অন্য কিছু হতে পারে! ঠিক বলি নাই স্যার?  
 ওদের কারো কথায় অন্তুর মনোযোগ নেই কারন ও যখন শুনছে জল বাসা থেকে বের হয়েছে তাও ওকে না বলে তারউপর সাথে ছেলে আছে অন্তুর মেজাজ এতোটা ই খারাপ হলো যে ওর হাত পা কাঁপতে লাগলো। অন্তু সবাইকে উদ্দেশ্যে করে বললঃ 
আমার.....শরিরটা ভালো লাগছে না.....যদি তোমাদের অসুবিধা না হয় তাহলে আজকে ছুটি তোমাদের।

ছেলেরা মাথা নাড়ল কিন্তু জান্নাত বললঃ স্যার, সবাই চলে গেলেও আমি এতো আগে বাসায় গেলে আব্বু বকবে, বলবে কি পড়ছি মাত্র ৩০ মিনিটে, আমি থাকি? আমি কোন ডিস্টার্ব করবো না আপনাকে।আপনি ভিতর ঘরেই থাকেন, আমি জাস্ট বসে থাকবো।

অন্তু আগেই জানে জান্নাত কেন থাকতে চায় তাই সে বললঃ না, বাসায় যাও, বইল স্যার অসুস্থ তাই আজ আগেই ছুটি দিয়ে দিছে।
 
জান্নাতের চেহারাটা অন্ধকার হয়ে গেলো, সে ব্যাগ নিয়ে রেগে উঠে বেরিয়ে যেতেই আহমেদ নন্দিনির দিকে তাকিয়ে বললঃ ওই তোমার বান্ধবীর কি এলার্জি আছে নাকি? ওয় এতো লাফায় কেন? 
নন্দিনি ঠোঁট উল্টে দু দিকে মাথা নাড়ল।  

অন্তু ভিতরের রুমে ঢুকে বাতি নিভিয়ে শুয়ে পড়ল। সব বিরক্ত লাগছে ওর! মনে হচ্ছে চোখে ঝাপসা দেখছে সব।এভাবে এতোক্ষণ শুয়ে ছিল অন্তু বলতে পারবেনা, যখন চোখ খুলল দেখলো বাতি জ্বালিয়ে জল সামনে দাঁড়িয়ে দাঁত দিয়ে নখ কাটছে আর অন্তুর দিকে তাকিয়ে আছে! অন্তু জল কে দেখে খুশি হওয়ার পরিবর্তে রেগে গেলো! সে চেচিয়ে উঠলোঃ 
"সামনে থেকে দূরে যাও"! আমার কাছে আসছো কেন! 

জল অবাক হয়ে বললঃ মানে! আমি তোমার কাছে আসবো না তো কই যাবো! জান, আজকে বাসায় এতো কাজ ছিলো যে আসতে পারিনি, আম্মু দেয় ই নি বের হতে! 

জলের পরিস্কার মিথ্যে কথাতে অন্তু আরো রেগে গেলো।  সে বিছানা থেকে উঠে বসে বললঃ শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করতাছ কেন? আমি ত  জানি তুমি কোথায় গেছিলা! মেলাতে যাওয়ার এতো শখ? ঠিক আছে! যাও মেলায়, ভাই না, সাথে যতো ছেলে পারো নিয়ে যেও, আমার কিছু বলার নেই।

অন্তুর কথাগুলি জলের গায়ে কাঁটার মতো লাগছিল।  সে মাথা নিচু করে বললঃ তুমি কষ্ট পাবে তাই বলিনি, মামা মামির সাথে গেছিলাম, ওনারা আম্মু আব্বুর সামনে এতো জোড়াজুড়ি করতে লাগলো যে না করেও যেতে হয়েছে। আর আমাদের সাথে যে ভাইয়া টা গেছে উনি বিবাহিত। উনার বৌয়ের জন্য চুড়ি কিনতে গেছে, কাল ভালোবাসা দিবস ত তাই........কথাগুলি বলে জল অন্তুর পায়ের কাছে বসে অন্তুর হাত দুটি শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললঃ Sorry jaan, এমন ভুল আর হবে না! আমি কখনো আর তোমাকে না বলে কোথাও যাবো না, সত্যি বলছি!

জলের কথার কোন প্রভাব অন্তুর উপর পড়ল না। সে ঝাড়া দিয়ে হাত সরিয়ে নিয়ে বললঃ এসব নাটক অন্য কারো কাছে গিয়ে করেন! যেসব মেয়েরা ছেলে নিয়ে ঘুরতে পারে তারা,সব ই করতে পারবে। দয়া করে আর আমার সামনে আইসেন না। প্লিজ বাসায় জান!

অন্তুর ব্যবহার টা জলের অনেক খারাপ লেগেছে, তার চোখে পানি এসে পড়লো।  জল অন্তুর দিকে তাকিয়ে ই রইল। অন্তুর মন তবু নরম হলোনা। জল অন্তুর দিকে তাকিয়ে চোখ মুছতে মুছতে বললঃ 
"আম্মুকে বলে এসেছি বই দাগাতে আসছি, তাই দেরি করতে পারবো না, তুমি মাফ করবা না আমাকে"?  

অন্তু আরো রেগে গেলো।  সে মুখ ঘুরিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে বললঃ কুত্তা ও মানুষের সাথে কয়েক দিন মিশলে পরিবর্তন হয় আর মানুষ হয়েও নষ্টামি ছাড়তে কষ্ট যেহেতু হয় আমার কাছে আসার কোন দরকার নেই। বাসায় জান।

জল আর সহ্য করতে পারছিল না। ওর দুচোখ ভরে উঠল পানিতে। চোখ দুটি ছলছল করছিল। সে দ্রুত বের হয়ে গেলো দরজা দিয়ে। জল চলে যাওয়ার পর অন্তু আবার শুয়ে পড়ল আর মনে মনে বললঃ 
'আমি সব সইতে পারবো কিন্তু তোকে অন্য কারো সাথে ভাগ করা সইতে পারবো না'!!


*** রাত যতো গভীর হতে লাগলো জলের মন ততোই ভারী হয়ে উঠল,  দুচোখ ভিজে যাচ্ছে কান্নায়! কিন্তু পাশেই মা আর ছোট বোন ঘুমাচ্ছে তাই চিতকার করে কান্না করার ও উপায় নেই........আজকে মোবাইলটাতে ও ব্যালেন্স নেই! মনে মনে সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে জলের হঠাৎ মনে হলো কাল ১৪ ই ফ্রেব্রুয়ারি!!!  অন্তুর জন্মদিন!! কথাটা,একেবারেই ভুলে গেছে সে!! তাড়াতাড়ি চোখ মুছে চুপিচুপি পাশের ঘরে গেলো। দেখলো বাবা ঘুমিয়ে আছে তাই আস্তে পা টিপে টিপে বাবার মোবাইলটা নিয়ে বারান্দায় চলে এলো। বুক কাঁপছে! হাতটা ও ঠান্ডা হয়ে আসছে! তবু বুকে সাহস নিয়ে বাম হাত দিয়ে মুখটা মুছে অন্তুর নাম্বার টা ডায়েল করল! 
একবার, দুবার..... এভাবে ৪ বার রিং হওয়ার পর অন্তু ফোন টা রিসিভ করল।

অন্তুঃ হ্যালো!........ হ্যালো???
জল নিরব হয়ে রইল, ভাষা হারিয়ে ফেলেছে, কি বলবে বুঝে উঠতে পারছেনা তাই বড় একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ফোনটা কেটে দিলো। 

অন্তু বুঝতে পেরেছে রাত ২ টায় জল ছাড়া আর কেউ কল দিবে না তাই মোবাইলটা রেখে দিল। শুয়ে পড়েছে সে কিন্তু ২ মিনিট পরই আবার ফোন টা বেজে উঠল!  কলটা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে কান্নাভেজা কন্ঠে জল ফিসফিস করে বললঃ 
Happy Birth Day!  

জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়েই জল কলটা কেটে দিলো।  অন্তুর ভয়েজটা ওর অনেক ভালো লাগে,আগেও অনেকবার অন্তুকে কথাটা জল বলেছে কিন্তু অন্তু গুরুত্ব দেয়না এসব। আজকে হ্যালো শব্দটা মনের ভিতর গেঁথে আছে! জল আবার চুপি চুপি বাবার রুমে গিয়ে ফোন টা রেখে মায়ের পাশে এসে শুয়ে পড়ল। ঘুম আসছেনা! 

'অন্তু এতো ছোট একটা ব্যাপারে এতো রাগ করল কেন'.....ও আমার সাথে এতো খারাপ ব্যবহার করতে পারে ভাবতেও পারিনি! নিজের মনেই কথাগুলো বলতে বলতে দুচোখ আবারও ভিজে উঠল ওর।


অন্তুর  ঘুম আর হবে না বুঝতে পেরেছে সে, কারন জোড় করে ভুলে থাকতে চাইলেও ওর মনের ভেতরে জলের জন্য চাপা উত্তেজনা কাজ করছিল। জলের কান্নাভেজা কন্ঠটা ওর অনেক খারাপ লেগেছে তবু নিজের জেদ এর কাছে মাথা নত করতে চায়নি। এসব ভাবতে ভাবতে মোবাইলটা হাতে নিয়ে এফ, বি তে ঢুকার জন্য লক খুলতেই দেখলো অন্য একটা নাম্বার থেকে ৫ টা SmS আসছে। এস এম এস অপেন করতেই দেখল বার্থডে শুভেচ্ছা জানিয়ে জান্নাত ৫ টা এস এম এস করে রেখেছে যার পুরোটা জুড়েই I Love you লিখা!

Tuesday, March 17, 2020

"সেই তুমি " পর্বঃ ১০



সময়টা কিছুতেই কাটতে চাইছে না......ট্রেনে জানালার পাশে বসে বারবার ঘড়ি দেখতে লাগল জল। প্রতিটি সেকেন্ড যেন এক একটি বছর মনে হতে লাগলো। যেই ভালোবাসা টা প্রথমে পায়ে ঠেলে দিয়েছিল সেই ভালোবাসার কাছে ই ফিরে যেতে মন এতো উতলা হয়ে আছে ভেবে ভেতরে ভেতরে একটু লজ্জাই লাগছিল ওর। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মনে মনে বললঃ লজ্জা পাবো কেন, আমি ত চুরি করিনি, আমি আমার ভালোবাসার মানুষটার কাছেই ফিরে যাচ্ছি, দরকার হলে পায়ে ধরবো তবু ওকে হারাতে চাই না।


অন্তুর আজ ভার্সিটিতে পরিক্ষা আছে তাই সকালের ব্যাচ পড়িয়ে সে বের হয়ে গেলো ঘর থেকে। জান্নাত আজকে হালকা ক্রিম কালারের একটা জামা পরেছে,কাকতালিয়ভাবে অন্তু ও আজকে হালকা ক্রিম কালারের একটা  শার্ট পরেছে, তাই দূর থেকেই জান্নাত অন্তুকে যেতে দেখে মনে মনে খুশি হয়ে উঠল!  
আমার সাথে মিলে গেছে! ও জানলো কেমন করে যে,আমি আজ এই কালার পড়বো!!! 

সে জোড়ে পেছন থেকে ডাক দিলোঃ স্যার!

অন্তু ঘাড় ফিরিয়ে তাকিয়ে দেখল জান্নাত ওর দিকেই দৌড়ে আসছে। কিছুটা অস্থির বোধ করল সে। 

জান্নাতঃ স্যার, পড়াবেন না?
অন্তুঃ না, আজকে আমার এক্সাম আছে, মোবাইলে ব্যালেন্স ছিলো না তাই জানাতে পারিনি, তুমি সবাইকে জানিয়ে দিও। 

জান্নাত কিছুটা হতাশ হয়ে বললঃ আমি মেথ করবো ভেবে একটু আগে আসলাম আর আপনি ই চলে যাচ্ছেন! আচ্ছা সমস্যা নেই, আমি সন্ধ্যায় এসে করবো, ভালো করে এক্সাম দিয়েন স্যার!

অন্তু মাথা নেড়ে চলে গেলো। 
জান্নাত তবু সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে রইল। সে অন্তুর চলে যাওয়া দেখছিল। অন্তুকে আজকে অনেক সুন্দর লাগছিল তাই একটা হাসি দিয়ে আবার খুব জোড়ে ডাক দিয়ে বললঃ স্যার! 
অন্তু কিছুটা বিব্রতবোধ করে তাকালো, জান্নাত হেসে বললঃ অনেক সুন্দর লাগছে আজকে আপনাকে! 
অন্তু কি বলবে ভেবে পেলো না, সে সামনের দিকে হাঁটতে হাঁটতে পিছে হাত নেড়ে বিদায় দিয়ে দিলো জান্নাত কে। জান্নাত তবু অন্তুর রাস্তায় দাঁড়িয়ে রইল যতোক্ষন ওকে দেখা যায়..........


অনেকক্ষন যাবত একটা কথাই জলের মাথায় ঘোরপেঁচ খাচ্ছিল। আজকে যদি আম্মু পড়তে যেতে না দেয়, তখন কি হবে? তাই বাসায় আসার পর থেকেই বার বার অযুহাত খুঁজতে লাগলো কি করে বের হতে পারবে। অনেকক্ষন ঘরে পায়চারি করে একটা বুদ্ধি বের করল। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে প্রথমে কথাগুলো প্যাক্টিস করে নিয়ে গলাটা ঝেড়ে পরিস্কার করে হেনা বেগমের রুমে গেলো। 
হেনা বেগম শুয়ে আছেন। জল পাশে গিয়ে বসে বললঃ 
আম্মু আজকে নাকি স্যারের বাসায় এক্সাম আছে, স্যার সাজেশন ও দিবে পরিক্ষার, আমি কি আজকে পড়তে যাবো?

হেনা বেগম ঃ পড়তে যাবি এটা আবার জিজ্ঞেস করার কি আছে? ছুটির পর সোজা বাসায় চলে আসবি, কোথাও আড্ডা দিতে গেলে খবর আছে।

জল অনেকটা ই খুশি হয়ে হেসে বললঃ আরে না! আমি পড়া শেষে সোজা বাসায় চলে আসবো, কোত্থাও যাবো না আম্মু!!

জল তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে ব্যাগ নিয়ে বেরিয়েই যাচ্ছিল, হেনা বেগম মাথা উঁকি দিয়ে ডাকলেনঃ এই! তোর প্রাইভেট ৬ টায় আর এখন বাজে মাত্র ৪ টা, তুই কোথায় যাস এই সময়? 

জল জিহ্বায় কামুড় দিয়ে মনে মনে বললঃ ইস! এখনো ঘুমায় নি! মুখে হাসি নিয়ে বললঃ আরে আম্মু এক্সাম ত তাই স্যার সবাইকেই বলছে ৩ টার দিকে চলে যেতে! আমি ১ ঘন্টা দেরি করে যাচ্ছি!
হেনা বেগম চোখ গোল করে বললেনঃ ১ ঘন্টা পরে যাচ্ছিস, কি এক্সাম দিবি তুই! অলস মেয়ে কোথাকার! তাড়াতাড়ি যা!

জল হেসে বেরিয়ে গেলো। রাস্তায় বের হয়ে মনে মনে হাসতে লাগলো আর নিজের বুদ্ধির প্রশংসা করতে লাগলো। জলের বাসার ২ টা বাসা পর ই অন্তুদের বাসা। জল যতোই অন্তুর বাসার কাছাকাছি পৌঁছাতে লাগলো ততোই ওর শরির কাঁপতে লাগলো!  ভেতর কেমন জানি একটা চাপা উত্তেজনা কাজ করছিল! প্রায় ১৩ দিন পর আজকে মনের কথাটা বলার সুযোগ পাবে ভেবেই একরকম আনন্দ কাজ করতে লাগল সারা মনে। অন্তুদের বাসার গলিতে ঢুকতেই দূর থেকে অন্তুকে আসতে দেখলো!

অন্তু কে দেখেই জলের ভেতটা কেমন যেনো করতে লাগলো।  ওর হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে গেছে! পা যেন আর চলতে চাইছে না! মনে হচ্ছে অবশ হয়ে আসছে সারা দেহ!

অন্তু প্রথমে জল কে দেখতে পায় নি, সে নিচের দিকে তাকিয়ে হাঁটছিল। হঠাৎ জলের দিকে চোখ পরতেই প্রথমে কিছুটা থমকে গিয়েছিল কিন্তু মূহুর্তের মধ্যেই নিজেকে সামলে নিয়ে নিজের ডান হাতের ঘড়িটার দিকে তাকিয়ে সময় মিলিয়ে নিতে নিতে জলের সামনে দিয়ে চলে গেলো! জল যতোটা অবাক হলো ঠিক ততোতাই রেগেও গেলো।  অন্তু ওর মুখের দিকে ভালো করে তাকায় ও নি! কোন কথাও বলেনি!
 তাহলে কি সে আমাকে ভুলে গেছে! মাত্র ১৫ দিনেই ওর ভালোবাসা শেষ হয়ে গেছে! 
জল নিজেকে নিজে কথাগুলো শোনাতে লাগল।

অন্তু রুমে ঢুকে দরজা খুলেই রাখল, সে জানে জল এর পিছু পিছু উঠেছে সিঁড়ি দিয়ে। অন্তু হাত মুখ ধুয়ে রুমের ভিতর আবারও উঁকি দিলো। জল আসেনি রুমে। কিছু টা অবাক হয়ে দরজার বাইরে উঁকি দিতেই দেখল জল দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে রয়েছে চুপ করে!! 

অন্তু কিছুটা বিব্রতবোধ করল,  জলের দিকে না তাকিয়েই বললঃ ভেতরে আসো না কেন? 
জল অন্তুর মুখের দিকে মন খারাপ করে তাকিয়ে রইল......কতোটা পরিবর্তন হয়ে গেছে অন্তু! এতো দিন পর আমাকে দেখেও একবার ও তাকাচ্ছেনা! ওর এ কি অবস্থা হয়েছে! মুখে খোঁচাখোঁচা দাঁড়ি,চোখের নিচে কালি জমে গেছে, ভেজা বড় চুলগুলো এলোমেলো হয়ে আছে....মনে হচ্ছে অনেকদিন যাবত ঘুমায়না! কথাগুলো ভেবে কান্নাই পাচ্ছিল জলের তবু সামলে বললঃ 
নাহ, অনেক দিন আসিনি তো, তাই ভাবলাম যদি আবার না পড়ান আমাকে! আর আমি ভেবেছি ছেলেরা থাকতে পারে ভেতরে তাই দাঁড়িয়ে আছি। 
অন্তু বুঝল কথাগুলো মিথ্যে তবু না বুঝার ভান করে বললঃ আজকে ছেলেরা আসবে না, ভেতরে আসো।

জল রুমের ভিতর ঢুকে টেবিলের এক কোনে গিয়ে বসে মাথা নিচু করে ব্যাগের উপির শুয়ে রইল। অন্তু ভেতর থেকে একবার ও আসছে না! 

জল নিজেই উঠে ভিতরে যাবে সিদ্ধান্ত নিলো আবার ভাবলো যদি তানহা কিছু মনে করে! ইতস্ততভাবে তবু ভেতরের দিকে যাওয়ার আগে তানহার রুমে উঁকি দিয়ে দেখলো তানহা কি করে......তানহা ঘুমাচ্ছে! এবার আর অন্য কিছু না ভেবে সোজা অন্তুর রুমে ঢুকে গেলো সে....ঢুকে দেখলো অন্তু বিছানায় উপুর হয়ে শুয়ে আছে। জল মুখে কোন কথা না বলে পিছন থেকে অন্তুর উপর শুয়ে পড়ল! অন্তু লাফিয়ে উঠতে সরে যেতে চাইছিল কিন্তু জল যেভাবে ধরেছে সরবে তো দূরের কথা নড়তেও পারছেনা! প্রচন্ড বিরক্ত লাগছে অন্তুর! 
মনে মনে বললঃ 
মোটু এখন আবার নতুন করে কোন নাটক করতে এসেছে! এবার আর ওর মিথ্যে অভিনয়ে পা দিবো না, যতোই চালাকি করুক! তাই কিছুটা রাগের স্বরে বললঃ এসব কি!! উপর থেকে উঠো! এতো সাহস কই পাইছো তুমি! 

জল অনেক অবাক হলো অন্তুর কথায়। সে বুঝে গেছে ওইদিনের কথায় অন্তু কষ্ট পেয়েছে আর তাই হয়তোবা এমন বলছে। জল আরো শক্ত করে অন্তুকে জড়িয়ে ধরে বললঃ 
জান, রাগ করে আছো? আরে ওইদিন আমার মাথা ঠিক ছিলো না, কি বলতে কি বলে ফেলেছিলাম বুঝে উঠতে পারিনি! বিশ্বাস করো তোমাকে এসব বলার পর থেকে আমি একটা দিন ও শান্তিতে ঘুমাতে পারিনি, অনেক খারাপ লাগছে! সারাক্ষণই ভাবছি কখন তোমার কাছে আসবো! যদি পাখি হতাম উড়ে চলে আসতাম! আমি ত মানুষ, আর ভুল তো মানুষ ই করে, প্লিজ???

জলের কথাগুলো র কোন প্রতিক্রিয়া অন্তুর ভেতরে দেখা গেলো না, সে আগের চেয়ে দ্বিগুন রেগে বললঃ হ্যা, ঠিক ই তো! এটাই ত ভালোবাসা!  যখন মনে চাইবে ভালোবাসবেন, যখন মন চাইবে না সবার সামনে যা খুশি বলে অপমান করে গায়েব হয়ে যাবেন! মাফ চাই! আমি কোন রেলিশনে আর জড়াতে চাই না! উঠেন উপর থেকে!  

অন্তুর কথায় জল অনেক কষ্ট পেলো তাই সে অন্তুর উপর থেকে উঠে গেলো কিন্তু অন্তু শুয়েই রইলো। জল দাঁত দিয়ে নখ কাটতে কাটতে একটু থেমে আবার বলতে লাগলোঃ 

আমি তোমাকে কষ্ট দিতে চাই নি, হ্যা, এটা আমি স্বিকার করি প্রথম যখন তোমাকে অফার দিছিলাম তখন আমার মনে কোন ভালোবাসা ছিলো না, আমি শুধু একটু মজা করতে চেয়েছিলাম কিন্তু এই মজা যে এতো কষ্ট দিবে আমাকে আমি একবারও বুঝিনি! জল অন্তুর পায়ের কাছে বসে পড়ল। অন্তু উপুর হয়ে শুয়ে ছিল তাই বুঝতে পারেনি। 

জল চোখ মুছে বললঃ সেদিন তোমাকে না করার পর থেকে যখন বাসায় গিয়েছি,আমার মনে হয়েছে সারা গায়ে কেউ আগুন লাগিয়ে দিয়েছে! তোমার কথা এক সেকেন্ড এর জন্য ভুলতে পারছিলাম না! আমি অনেকবার তোমার ফোনে কল দিছি, তুমি ধরো নাই!

অন্তু মনে মনে বললঃ  কলগুলো জল ই দিয়েছিল তাহলে! 
সে উঠে বসতে গেলো, দেখলো জল পায়ের কাছে বসে আছে! সে উঠে বসতে বলল কিন্তু জল উঠল না। জল মাথা নিচু করে বলতেই থাকলোঃ
 আমি জানি না ভালোবাসা মানে কি, শুধু এটা জানি আমার আত্মা তুমি.....তোমাকে না দেখে যে দিনগুলি পার করেছি প্রতিটি দিন ছিল আমার জন্য জাহান্নামের সমতুল্য!  প্লিজ মাফ করে দাও! আমি জান্নাতের কাছে ত সব বলেছিলাম,  ও কিছু বলে নি তোমাকে?

অন্তু বুঝল জান্নাত মিথ্যে বলেছে তাই রাগ টা মূহুর্তে ই ঠান্ডা হয়ে গেলো। জল কে বুঝতে দিলো না। 
সে আগের মতোই মুখ গম্ভীর করে বললঃ আমার ফোনে ব্যালেন্স ছিল না তাই বেক করতে পারিনি আর জান্নাত আমাকে কিছু বলেও নি।
অন্তুর কথাতে জল উপরের ঠোঁট দিয়ে নিচের ঠোঁট চেপে ধরে মনে মনে বললঃ  জানতাম জান্নাত এমন টা ই করবে! সমস্যা নেই, লাগবে না কারো হেল্প করার। আমার ভালোবাসা সত্যি হলে আমি ওকে আজ মানাতে পারবো ই। 

জল অন্তুর হাঁটুর উপর হাত রেখে বললঃ তুমি শুধু একবার এটা বলো তুমি আমাকে ভালো বাসো না? 

অন্তু এবার আর নিজেকে সামলাতে পারলো না,জলের কথায় ওর বুকের বা পাশ টা কেমন যেনো চিনচিন করে ব্যাথা করতে লাগল, হৃদ স্পন্দ বেড়ে গেলো........ অন্তু জলেকে বিছানার পাশে বসিয়ে হাঁটু গেড়ে জলের পাশে বসে ওর হাতদুটো নিজের হাতের উপর নিয়ে চোখে চোখ রেখে বললঃ 
"আমি তোমাকে আমার নিজের চেয়েও বেশি ভালোবাসি!  কিন্তু তোমার কথাগুলো আমাকে বাধ্য করেছিল বদলে যেতে। হ্যা, আমি তোমাকে ভালোবাসি কিন্তু তুমি যদি আমার ৩ টা শর্ত মানতে না পারো তাহলে আমি সরে যাবো"। 
অন্তুর কথায় জল যেন প্রাণ ফিরে পেলো! সে খুশিতে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে অন্তুকে জড়িয়ে ধরে বললঃ 
তুমি যা বলবে তা ই শুনবো, যেভাবে চলতে বলবা চলবো তবু তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও! আমি তোমাকে ছাড়া সত্যি ই বাঁচবো না! এবার একটু হাসো?

জলের কথায় অন্তুর সব রাগ অভিমান মূহুর্তের ভিতর ই চলে গেলো।সে জলকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললঃ I love you more than anything in the world!!!

জলঃ Me too...........








Monday, March 16, 2020

"সেই তুমি " পর্বঃ ৯



জল খাটের এক পাশে শুয়ে শুয়ে অন্তুর কথা ভাবছিল। ওর এখন নিজেকে অনেক অপরাধী মনে হচ্ছে কারন অন্তু কে যদিও সে তখন মন থেকে ভালোবাসে নি কিন্তু এখন মনে হচ্ছে সে অনেক বড় ভুল করেছে!  অন্তু কে অপমান করার পর থেকে জল এক মূহুর্তের জন্যেও অন্তুর কথা ভুলতে পারছে না। 
নাহ! অনেক হয়েছে, আজকে আর থাকতে পারছিনা! নিজেকে নিজেই বলল.....এবার যে করেই হোক ওর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে! ইস কতোদিন হয়ে গেছে! হয়তোবা পাগল টা আমার জন্যে কান্না করছে! জল বিছানা থেকে লাফিয়ে উঠে মায়ের মোবাইলটা খুঁজতে লাগলো। বাহিরে উঁকি দিয়ে দেখলো হেনা বেগম উঠানে এক দল মহিলা নিয়ে গল্প করছে। 

জলঃ এই যোগাযোগ টা ই কাজে লাগাতে হবে। কোথায় রাখছে মোবাইলটা!  অসহ্য লাগতাছে! এই তো পেয়েছি!! 

মোবাইলটা আলমারিতে রাখা ছিল, খুঁজে পাওয়ার পর মনে হলো হাত পা কাঁপছে!  কি বলবে ও অন্তু কে! অজান্তেই দাঁত দিয়ে নখ কাটতে লাগলো.......

নাহ! কিছু বলবো না, শুধু ওর কন্ঠ টা শুনবো! আজকে আব্বু আসার পর যে করেই হোক কান্নাকাটির নাটক করে হলেও কালকেই ঢাকা যাবো.......আমি ওকে সত্যি ভালো বেসে ফেলেছি! আর দেরি হলে আমি মরেই যাবো! আল্লাহ একটু সাহায্য কইরো প্লিজ! নিজে নিজেই কথাগুলো বলে উপরের দিকে দুহাত জোড় করে একটা চোখ টিপ দিলো সে! 
মোবাইলটা হাতে নিয়ে গলাটা একটু পরিস্কার করে নিয়ে অন্তুর নাম্বার টা ডায়েল করল। রিং হচ্ছে!!! মনটা ভিষণ ছটফট করতে লাগলো!  মনে মনে দোয়া করতে লাগলো....

 প্লিজ কলটা ধরো.........প্লিজ? 
একবার..... দুবার এভাবে ২৪ টা কল দিলো জল অন্তুর নাম্বারে কিন্তু কল রিসিভ করছেনা কেউ! জলের মুখ টা লাল হয়ে উঠল রাগে! দাঁত চেপে নিজেকে নিজে ই বললঃ কল ধরবে কেন! ওয় ত রং তামাশা নিয়ে অনেক ব্যস্ত! রং তামাশা বের করতাছি! 
জল জান্নাতের নাম্বারে কল দিলো।  একবার দুবার রিং হওয়ার পর ওপাশ থেকে জান্নাত রিসিভ করল।
জান্নাত ঃ হ্যালো!  কে, জল?

জলঃ হুম, কেমন আছিস?

জান্নাতঃ ভালো না রে, মন খারাপ। 

জলঃ কেন, কি হয়েছে? 

জান্নাত ঃ হয়েছে একটা কিছু, তুই আসলে বলল। এখন স্যারের বাসায় যাবো পড়তে। তুই আর পড়বি না?

জলঃ পড়বো না মানে!! আমি কালকেই আসতাছি। ওই শোন না....তুই কি এটা বলতে পারবি,  ও কি আমার উপর রাগ করে আছে? আমাকে মনে করে?

জান্নাত জলের কথা টা বুঝেও না বুঝার ভান করে এড়িয়ে যেতে চাইলো। সে বললঃ 
আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে, রাখিরে দোস্ত!

জলঃ এই! শোন..... প্লিজ? 

জান্নাতঃ বল। 

জলঃ আরে ওর জন্যে অনেক খারাপ লাগছে রে.....আমি ওকে ২৪ টা জল দিয়েছি, ও একবার ও ধরেনি, হয়তোবা নাম্বার চিনে না,কিন্তু একটা মিস কল অন্তত দিতে পারতো! তুই গিয়ে ওকে একটু বলিস, প্লিজ একটা মিস কল দিতে? আমি আজকে ওর কন্ঠ না শুনলে হয়তো পাগল হয়ে যাবো!

জলের কতগুলো শুনে জান্নাত মনে মনে রেগে উঠল কিন্তু কন্ঠটা স্বাভাবিক রেখেই বললঃ আচ্ছা বলবো, রাখি। 
জান্নাত কল টা কেটে দিলো। সে বুঝতে পেরেছে জল আবার ফিরে আসবে অন্তুর জিবনে, কিন্তু এটা হতে দিবো না আমি, মনে মনে ফিসফিস করে কথাগুলো বলার পর ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে গেলো অন্তুর বাসার উদ্দেশ্যে।


****চোখ গোল করে হা করে আবুল বসে আছে। সাজু বললঃ স্যার, আজকে কেউ যদি না আসে?  
অন্তুঃ আসবে, আর ওরা ত কেউ জানে না তোমরা বিচার চাইতে এখানে বসে আছো! 
আহমেদ মুচকি হাসি দিয়ে বললঃ স্যার, বিচার কিন্তু সিরিয়াস করতে হবে! 

অন্তু মাথা নাড়ল। 
তানহা ভিতর থেকে ডাকতে লাগলো। অন্তু খেয়াল করে নি। 
আবুল বিনয়ী হয়ে বললঃ আপু স্যার ব্যস্ত! 

তানহা ভেতর থেকে মোবাইলটা এনে দিয়ে বলল সেই কখন থেকে ফোন টা বাজছে, শুনতে পাও নাই? তোমার জিবনে কি কোন দিন ই একবার কল দেওয়া কোন লোকের কল ধরতে পারবা না? কোন দিন দেখলাম না কারো কল সাথে সাথে ধরতে পারছ! ২৪ টা কল আসছে কোন একটা নাম্বার থেকে! 

তানহার কথার কোন জবাব দিলো না অন্তু, শুধু হাসলো কারন অভিযোগ টা মিথ্যে নয়। অন্তু কখনও কারো কল ধরতে পারে না, ও মোবাইল ইউজ করে ঠিকি কিন্তু কোন কলের সময় ই ওর হাতে মোবাইলটা থাকে না, আর যদিও বা থাকে ওর তাড়াহুড়োর কারনে কল রিসিভ হওয়ার পরিবর্তে কেটে যায়!! 
  
দরজা লাগানো ছিলো কিন্তু কারো বুঝার বাকি রইলো না যে, মেয়েরা আসতাছে পড়তে কারন সিঁড়িঁ দিয়ে উঠার সময় ওরা এমন শব্দ করে উঠে মনে হয় সিঁড়িঁ ভেংগে ফেলবে! মেয়েদের কন্ঠ শুনে আবুল উৎসাহ নিয়ে বললঃ স্যার আসতাছে সব অপরাধী রা!  
আহমেদ মুখটা তে কৃত্রিম রাগ এনে বললঃ ওই সবাই গম্ভীর মুখ করে রাখ, যেনো ওরা বুঝে আমরা একদম সিরিয়াস! সাজু ও সায় দিলো। 

রুমের দরজা অন্তু খুলে দিলো। ভেতরে উকি দিয়ে যখন নন্দিনি দেখলো ছেলেরা যায় নি, ও অবাক হয়ে বললঃ স্যার, ছুটি দেন ওদের! আমরা অলরেডি ১০ মিনিট লেট করে আসছি! 

সাজু বললঃ দেখছেন স্যার, দেখছেন? না আসতেই কেমন শুরু টা করছে! 
অন্তু সবাইকে ভিতরে আসতে বলল। জান্নাত, নন্দিনি, আরশি, লিজা ভিতরের রুমে চলে যাচ্ছিল কিন্তু অন্তু ওদেরকে এই রুমেই বসতে বলে ওদের কে উদ্দেশ্য করে বললঃ  

তোমাদের মাঝে কে টেবিলে গরু নিয়ে এই অশুদ্ধ প্যারাগ্রাফ লিখেছ? 
মেয়েরা,একে অপরের দিকে তাকিয়ে রইল আর কেউ ই করেনি এমন একটা ভাব করল। 
আবুলঃ ওদের চেহারতে ই ভাসতাছে ওরা করছে!  স্যার, টাইট দেন! 

জান্নাত বললঃ ওই!  বেশি কথা বল কেন?
আমরা লিখছি তার কি প্রমাণ আছে? 

সাজুঃ চোর ত কাউকে বলে কিছু করে না? 

আহমেদ ঃ এটা তোমরা ছাড়া আর কেউ করে নি এটা আমি ডেম শিউর, বলে কপালটা কালো করার বৃথা চেষ্টা করল।

 জান্নাত ঃ স্যার, শোনেন, আমরা কেউ ই লিখি নি, আর এখানে কেউ যদি নিজেকে ডোমেস্টিক এনিমেল ভাবে আমাদের কি করার আছে! 

লিজাঃ স্যার, পোলারা এসব কি করে! ওরা নিজেরাই লিখছে আমাদেরকে বদনাম করার জন্যে! বিচার করেন ওদের! 
ছেলেরা সবাই এক সাথে বলে উঠলঃ বিচার আমরা ও চাই
পরিবেশটা আবারও খারাপ হয়ে যাচ্ছে তাই অন্তু বললঃ 
আজকের মতো যেহেতু কোন অপরাধী সনাক্ত হয়নি,  এটা বাদ, কিন্তু পরবর্তী তে যদি এমন হয় খারাপ হবে।  
 
অন্তু বুঝতে পেরেছে লিখা টা মেয়েরা ই লিখছে তাই ওদের দিকে তাকিয়ে বললঃ সবাই সবাইকে একটু শ্রদ্ধা করলেই মনে হয় তোমাদের সবার জন্যে ভালো হবে, তা না হলে নেক্স টাইম খারাপ হবে। 

বিচার টা মনের মতো হয়নি তবু স্যার আমরা আজকের মতো খুশি কিন্তু পরের বার কিন্তু খুশি হবোনা! আবুল হেসে বলল। 

ছেলেরা চলে যাওয়ার পর অন্তু জান্নাত কে বললঃ এটা তুমি লিখেছো, আমি শিউর ই জানতাম তবু বলি নি। পরের বার এমন করলে অনেক খারপ হবে! 

জান্নাতঃ জ্বি স্যার, আর হবে না। 
নন্দিনি জান্নাত কে ফিসফিস করে বললঃ ওই স্যার কে বল! জল যে স্যার কে মিসকল দিতে বলছে! 
জান্নাত বিরক্ত হয়ে বললঃ চুপ থাক! পারবো না!

**** জল মোবাইলটা হাতে নিয়ে বসে আছে
এটা ভেবে অন্তু হয়তো কল দিবে কিন্তু কোন কল এলো না.......রাগে ওর অনেক কান্না আসছিল। মোবাইলটা রেখে বালিশের নিচে মাথা দিয়ে কান্না করতে লাগল। মনে মনে বললঃ অবহেলা ই যদি করবে, কেন প্র‍্থম ভালোবেসে ছিল! আমি স্বিকার করি প্রথমে আমার ভুল ছিল কিন্তু এখন ত মন থেকেই ওর জন্যে ভালো বাসা আসছে! ও কেন বুঝতাছে না! জান্নাত, নন্দিনি দু জন কে ই ত কল দিয়ে বলেছি অন্তু যেন একটা মিস কল দেয়! ও তবু দিলো না!!! কাল ঢাকা যেতেই হবে........চোখ মুছে বকুল হোসেনের সামনে গিয়ে বললঃ 
আব্বু! আমার শনিবার এক্সাম আছে, নন্দিনি, জান্নাত ওরা কল করেছিল। আগামীকাল আমাদের নিয়ে যেও সাথে? 

 বকুল হোসেনঃ আগে বলিস নাই কেন তোর এক্সাম! এখন কালকে গিয়ে পড়ে পাস করবি কি করে?

হেনা বেগম ঃ তোমার মেয়ে যেই পড়াশোনা করে! সারাদিনেও ত বই নিয়ে বসতে দেখি না আমি! এইবার রেজাল্ট খারাপ হলে বিয়ে দিয়ে দিবো! 
মায়ের কথায় জল মুখ বাকা করে বকুল হোসেনের দিকে তাকিয়ে বললঃ আব্বু দেখছো! কি বলে এসব! 

বকুল হোসেন হেনা বেগমের দিকে তাকিয়ে চোখ গরম করে বললঃ খবরদার! আমার মেয়ে নিয়ে এখন ই এসব বলবা না! আমি আমার মেয়েকে অনেক বড় অফিসার বানাবো! আমি নিজে পড়াশোনা করিনাই তাতে কি! আমার মেয়ে অনেক বড় অফিসার হবে। যা মা, যা, তুই গিয়ে ব্যাগ গুছিয়ে নে, আমরা আগামীকাল ই রওনা হবো ঢাকার জন্যে! 

হেনা বেগম মুখ কালো করে বসে রইল। জলের মন খুশিতে ভরে উঠল! আল্লাহকে ধন্যবাদ দিতে দিতে সে বললঃ যাক! আমার মনের ডাক তুমি শুনেছ আল্লাহ!  আমি অনেক হ্যাপি! কাল ওকে গিয়ে যে কি ভাবে জড়িয়ে ধরে মাফ চাইবো তুমি দেইখো!



**** সবাই দরজা দিয়ে বেরিয়ে গেছে, জান্নাত হঠাৎ আবার ফিরে এসে অন্তুর হাতে একটা চিরকুট দিয়ে বললঃ স্যার, এটা একটু পড়ে দেখবেন, আর এটা নিয়ে কাউকে কিছু বলবেন না প্লিজ? কথাটা বলে দ্রুত সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে গেলো। 

অন্তু অনেক অবাক হয়ে গেছে তবু জান্নাত চলে যাওয়ার পর সে চিরকুট টা খুলে দেখল কি লিখা আছে.........

"আমি জানি না আমি আপনার যোগ্য কি না, তবে আমি জলের মতো বেঈমান না, আমি আপনাকে বিশ্বাস করে বলছি- I love you! ইতি- (J)


 চিঠিটা পড়ে জলের কথাটা মনে হয়ে গেলো অন্তুর! সাথে সাথেই রাগ টা বেড়ে গেলো আর বিরক্তিকর লাগলো জান্নাতের সব কথা! সে মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলেছে.....কারো সাথে সম্পর্কে জড়াবে না! ভুল একবার করেই বুঝেছে ভালোবাসার নামে প্রতারণা করার ফলে কি করে সবকিছু ছন্নছাড়া হয়ে যায়। 
সে রাতে অন্তুর আর ঘুম আসলো না। মোবাইলটা হাতে নিতেই দেখলো সেই অপরিচিত নাম্বার থেকে আবারো ৬ টা মিস কল উঠে আছে! মোবাইলটা এতো খালি কখনো রাখে না অন্তু কিন্তু এ কয়েকদিনের জলের কথা চিন্তা কর‍তে করতে ওর মন টা এতোটাই ই বেখেয়ালি হয়ে গেছিল যে সব ই ভুলে যাচ্ছিল। অন্তু গম্ভীর হয়ে গেছে আগের চেয়ে অনেক। এখন আর ওর জলের কথা একদম ই মনে পড়ে না! বদলে নিয়েছে সে নিজেকে নিজের মতো করে। বিছানায় এপাশ ওপাশ করতে করতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছে বুঝতেই পারল না।

জল অনেক ছটফট করতে লাগল! জান্নাত এটা কি বলল! অন্তু আমার নাম ও শুনতে চায় না! আমার অপরাধ টা কি এতোই বেশি ছিলো যে, ও আমাকে মাফ করতে পারবে না! আমি ত স্বিকার করছি আমার ভুল হয়েছে তবু কেন ও একবার ও ফোন টা ধরছেনা! কেন একটা মিস কল ও দিতে চায় না! ভালোবাসতে যখন চাইছি তখন কেন অন্তু আমাকে এতো কাঁদাচ্ছে! কথাগুলো ভাবতে ভাবতে জলের দুচোখ ভিজে উঠল। সে তবু আরেকবার অন্তুর মোবাইলে কল দিল! আগের মতোই রিং হচ্ছে কিন্তু কেউ ধরল না। ভালোবাসা কি অবঅহেলার কাছে হেরে যাচ্ছে! হয়তোবা.........নাহ! আমি হারতে দিবো না! আমি দরকার হলে ওর পায়ে ধরে কালকে মাফ চাইবো! এসব সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে জল ঘুমিয়ে পড়ল।

Sunday, March 15, 2020

"সেই তুমি" পর্বঃ ৮



গ্রামে আসার পর থেকে জলের অস্থিরতা আরো বেড়ে গেলো।  সে সারাক্ষণ ই সুযোগ খুঁজতে লাগলো কখন মায়ের হাত থেকে মোবাইলটা নিবে। গ্রামের পরিবেশে জল কখনোই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে না কারন সে ছোট বেলা থেকেই ঢাকায় বড় হয়েছে কিন্তু এখানে ওর সমবয়সী বান্ধবীদের সঙ্গে ওর উঠাবসা অনেক। যতোবার ই গ্রামে এসেছে সবার সাথে জমিয়ে আড্ডা দিয়েছে কিন্তু কেন জানি এবার আসার পর অন্য কারো সাথে কথা ই বলতে ইচ্ছে করছে না ওর!! নিজের উপর নিজেই অনেক বিরক্ত হতে লাগলো!! না চাইতেও অন্তু মনের এতো কাছে কি করে চলে আসছে তা ভেবে ভেতরে ভেতরে ঘেমে উঠল তার শরির মন....... 

উঠানের এক কোনে দাদি, কাকি রা বসে মাথায় তেল দিচ্ছিল। পোকড়া দাঁত বের করে ৬০ বছরের এক দাদি বয়সী মহিলা হেনা বেগম কে উদ্দেশ্য করে বললেনঃ 
মাগো মা! "তোর মেয়ে ত অনেক ঢাংগোর হইয়া গেছে"!! বিয়া শাদি দিবি নাকি? কথাটা বলে দুইটা পান এক সাথে মুখে দিয়ে চিবাতে লাগলো। 
হেনা বেগম এক গাল হেসে বললঃ খালা তুমি ভালো ছেলে পাইলে জানাইও আমাকে। বুড়ি এক একটু আড় চোখে জলের দিকে তাকিয়ে পরক্ষনেই আবার হেনা বেগমের দিকে ফিরে ফিসফিস করে বললঃ  
মেয়ে ত তোর অনেক সুন্দরী, লম্বাচুড়াও অনেক আর মোটা!  তাড়াতাড়ি বিয়ে দিয়ে দে। পরে না হলে প্রেমটেম করে পালাইয়া তোর মুখ কালা করবে!! 
এবারের কথাগুলো হেনা বেগমের সহ্য হলো না, তিনি জলের দিকে একবার চাইলেন, তারপর বৃদ্ধ মহিলার উদ্দেশ্যে বলতে লাগলেনঃ নাগো খালা, আমার মেয়ের মাত্র ১৬ বছর চলে, ও প্রেমের কি বুঝে? আর ও ঘর থেকে প্রাইভেট পড়তে যাওয়া ছাড়া অন্য কোথাও কখনও বের হয়না। প্রেম করবে কি করে? আমার মেয়ে আমি চিনি, এসব নিয়ে তাই ভাবি না।

বৃদ্ধাঃ আরে প্রেম কি সবাই রাস্তায় ই করে নাকি! আজ কাল জমানা খারাপ অনেক! মাস্টারের সাথেই প্রেম শুরু করে মেয়েরা! কথাটা বলে মুখটা একটু বাকা করে জলের দিকে তাকাল। জল উঠানের এক পাশে বসে দাঁত দিয়ে নখ কাটছিল। মা দাদির কথার সবটুকু না শুনলেও বুড়ি যে মায়ের কান ভারী করতাছে ওর বিরুদ্ধে তা বুঝতে দেরি হলো না। তাই উঠে যখন বৃদ্ধার দিকে আসছিল বৃদ্ধার চোখ বড় হয়ে গেলো। মনে মনে বুড়ি বললঃ 
মাগো মা! কি জোড়ে হাইটা আসতাছে! শুইনা ফেলছে নাকি কথা! হাতির মতো শরির গো বাবা!
জল সামনে আসতেই বৃদ্ধা হেসে বললঃ দাদুভাই তুই ত মেলা বড় হয়ে গেছিস? আমার মাথাটা,একটু বিলি দিয়ে দে ত? বলে কোন রকমে জলের দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে নিলো। 
হেনা বেগম কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল। জল হাত দিয়ে থামিয়ে, এক হাত কোমড়ে দিয়ে অন্য হাতের আংগুল খাড়া করে মহিলাকে বললঃ আহা! কি শখ বুড়ির!! এতোক্ষণ কি বলতাছিলা আমার মায়ের কাছে?  মনে করছ আমি বুঝি না? তোমার নিজের মেয়ের ত বয়স প্রায় ৩০ হতে চলেছে, আমার দিকে না তাকিয়ে নিজেরটার দিকে খেয়াল দেও, বিয়ে দাও, আল্লাহ্ ও খুশি হবে, মেয়েও দোয়া করবে বাপ মার জন্য। 
বৃদ্ধা চুপ করে মুখটা কালো করে বসে আছে। জল কথাটা বলে হেনা বেগমের দিকে তাকিয়ে বললঃ
 আম্মু ৫ দিন হয়ে গেছে! আর কতো দিন থাকবা? আমার পড়ার ক্ষতি হচ্ছে!! কালকে ঢাকায় ফিরবো,  আব্বু কে বলবা প্লিজ?? 
হেনা বেগম চোখ গরম করে তাকিয়ে বললঃ তোর আব্বু কে আগে এটা বলতে হবে যে তুই রহিমা খালার সাথে বেয়াদবি করেছিস!! 
বৃদ্ধা হেসে বললঃ মাইয়ার দোষ নাইরে, দোষ  জমানার! জলের চেহারার দিকে তাকিয়ে দেখলো জল নাক ফুলিয়ে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে তাই উঠে চলে যেতে যেতে বললঃ কি যুগ আসল!  ভালা ও বলা যায় না.......
রহিমা বেগম চলে যাবার পর হেনা বেগম আরো রেগে গেলেন। বললেনঃ
ওই তুই গ্রামে এসেছিস কি এসব কাপড় পরে থাকতে! টপস আর জিন্স কি কেউ গ্রামে পড়ে? বিয়ে শাদি দেখতে আসলে মানুষ কি ভাব্বে?
জল আগের মতোই রেগে হেনা বেগমের দিকে তাকিয়ে বললঃ ওওহ তারমানে বুড়ি এতোক্ষন এসব ই বলছিল!!! আমি ত না জেনেই আলগা ধাওয়া দিয়ে দেখছিলাম! আসুক আব্বু, বলব তুমি আমাকে ভাগাতে লোক ঠিক করতাছ!  কথা টা বলে সামনের বসার ছোট মোড়া টা একটা লাথি মেরে জল ঘরে ঢুকে গেলো!  
হেনা বেগম চারদিকে তাকিয়ে দেখলেন কেউ দেখেছে কি না........না, দেখেনি!  
মনে মনে বললঃ মেয়ের রাগের কারনে কোন দিন জানি কোন অঘটন ঘটে যায়!

**** অন্তু এ কয়েক দিনে নিজেকে অনেকটা ই পরিবর্তন করে নিয়েছে। সে মন কে বোঝাতে লাগলো, যে ওর নয় ওকে নিয়ে মিছেমিছি ভাবার কোন কারন নেই। মজা করার জন্য এসেছিল, জিবনটা এলোমেলো করে দিয়ে গেছে তাতে কি! জিবন ত ওর জন্য থেমে থাকবেনা। জল পড়তে আসে না আজকে ৭ দিন হয়ে গেছে। এই ৭ দিনে অন্তু নিজেকে পরিবর্তন করার জন্য যথেষ্ট চেষ্টা করেছে, আর সে অনেকটা সফল ও হয়েছে। ওর এখন আর জলের কথা মনে পড়েনা। 

বিকেলে সবাই যখন পড়তে আসলো তখন রুমের ভিতর একটা ছোটখাটো লংকা কান্ড ঘটে গেছে। ছাত্র ছাত্রী দের ভিতর থেকে কে যেন পড়ার টেবিলে বড় করে লিখে রেখেছে ঃ এই জায়গায় যে বসবে সে গরু, সে ঘাস খায়......গরু একটু মোটাসোটা থাকে! 

ছেলেদের ভিতর আহমেদ,আর আবুল একটু মোটা, বিশেষ করে আহমেদ একটু বেশি মোটা। আর ওই জায়গাটা তে সে ই বসে। সেদিন ও যথারীতি সে নাদুসনুদুস শরির টা নিয়ে সেখানে বসছে। অন্তু তখনো পড়ার ঘরে আসে নি।  আহমেদ বসার পর সাজুর সাথে কথা বলছিল। দুজন খুব ক্লোজ হয়ে কথা বলছিল এমন সময় সাজুর চোখ পড়ল টেবিলের উপর আর চোখ পড়তেই সে মুখটা বাকা করে বললঃ মামা! কাহিনি ঘটে গেছে তোমারে নিয়ে! হাসিটা মিশে গেলো আহমেদের মুখ থেকে। সে চোখ ছানাবড়া করে বললঃ কেন কি হইছে! 
সাজু এতোক্ষণে আংগুল দিয়ে আহমেদ কে লিখা টা দেখাচ্ছিল ততক্ষণে সবাই দেখে ফেলেছে। সাজু এবার তেলে একটু জ্বাল দিল। সে খুনসুটি করে বললঃ মামা! লেখাটি তোকে নিয়ে লিখছে এটা শিউর ই! কারন তুই ই দেখতে গরুর মতো মোটা! এটা নিশ্চিত মেয়েদের কাজ! ওরা আলাদা হয়েও কাহিনি করতাছে আমগো লগে! 
আহমেদ বেচারা মুখ কালো করে বললঃ তুই গরু হালা চিকনা! আজকে বিচার চাই আমি! স্যার কে ডাক দে! মেয়েরা আসলে আজকে বিচার না দেখে বাসায় যাবো না! ডাক দে স্যার রে! 
আবুল উঠে ভিতরের রুমে গিয়ে অন্তু কে বললঃ স্যার তাড়াতাড়ি আসেন, সমস্যা হয়ে গেছে বড়! অন্তু অবাক হয়ে যতোক্ষণে ভিতর থেকে আসলো ততোক্ষনে ঘরের পরিবেশ মেলার মত সরগরম হয়ে উঠেছে।আর তানহা ব্যাপার টা মধ্যস্থতা করার জন্যে দু হাত পিছনে দিয়ে দাঁড়িয়ে মুচকি মুচকি হাসছিল।

অন্তু রুমে ঢুকতেই তানহা হেসে বললঃ দাদা, তোর কোন ছাত্রী এই কাজ টা করল? বেচারাকে ত গরু বানিয়ে ছেড়েছে! অন্তু উপুর হয়ে লেখাটি দেখে চিনার একটা ব্যর্থ চেষ্টা চালাতে লাগলো।  আবুল অনেকটা সহজ সরল তাই সে বললঃ সাজু, মিয়া তুমি কেমনে বুঝলা এটা মেয়েদের লিখা? এটা ত অন্য কেউ ও লিখতে পারে.........আবুল কে মাঝ পথে থামিয়ে দিয়ে আহমেদ বললঃ 

স্যার, আমি বিচার চাই! মেয়েরা আমাদের থেকে টাইম আলাদা নিছে, ভালো কথা,কোন সমস্যা নাইক্কা মাগার আমার জায়গায়, আমি যেই জায়গায় প্রতিদিন বসি ওই জায়গায় ই কেন 'মেনশন নট' লিখা টা লিখে গেছে! আমি শিউর এটা ঝগড়াটে জান্নাত লিখছে! স্যার, বিচার করবেন না? আমি আজ লাগলে সারাদিন থাকবো তবু এই বিচার দেখে যাবো! 
সাজু এবার আরো উত্তেজিত হয়ে বললঃ স্যার লাগলে জেলে যামু তবু আজ কাহিনি একটা হইব! 
অন্তু কি বললে বুঝে উঠতে পারছে না তাই হেসে বললঃ আচ্ছা, তোমরা শান্ত হও, ব্যাপার টা আমি দেখছি!
আহমেদঃ ওই স্যার, আপনি প্লিজ আমাদের সামনে করবেন বিচার? 
সাজুঃ আমরা অপরাধী কে তা জানতে চাই!
আবুলঃ জাতি দেখতে চায় কে গরু, কে মহিষ! 
ওদের কথা শুনে তানহা হাসতে হাসতে বললঃ আরে ভাই, তোরা শান্ত হ্! তোদের স্যার ত আছে, বিচার হবে। 
আহমেদ ঃ হুম তানহা আপু ঠিক বলছে! আমরা স্যারের দিকে অধির আগ্রহে তাকিয়ে আছি দেখার জন্যে স্যার কি করে.......
অন্তু হেসে বললঃ আচ্ছা, আচ্ছা, এবার পড়ো, আমি দেখি কি করা যায়, এরা ত ৬ টায় আসবে, মাত্র বাজে ৪ টা। তোমরা পড়ো আমি তোমাদের সামনেই বিচার করবো। অন্তু ভিতরে চলে গেলো।  
আহমেদ বললঃ তানহা আপু, আপনি ত সব সময় ঘরে থাকেন, দেখেন নাই কোন এল, সি মাইয়া এটা লিখে পালাইছে?

তানহা হেসে শেষ হয়ে যাচ্ছিল আহমেদের চেহারার ভাব দেখে, অনেক কষ্ট করে হাসি থামিয়ে বললঃ নারে ভাই, আমি দেখি নাই! 

আবুল একটু কাছে এসে বললঃ আমার মনে হয় এটা অন্য কেউ করছে, মেয়েরা না, কি বলেন তানহা আপু, ঠিক না? 
আবুলের কথায় উপস্থিত সবাই ওর দিকে এমন করে তাকালো যেন আবুল ভিন গ্রহের এক শিংওলা প্রাণী! আবুল পরিবেশের গুরুত্ব বুঝে হেসে উঠল।  বললঃ আরে আমি মজা করছিলাম! এটা নিশ্চিত মেয়েরা, ই লিখছে!  কি বলেন তানহা আপু, ঠিক না? তানহা হেসে বললঃ ভাইরে তুই যা বলিস সব ই ঠিক।  তানহা ভিতরের রুমে চলে যাচ্ছিল, অর্ধেক গিয়ে আবার ফিরে আসলো।  আহমেদের দিকে তাকিয়ে বললঃ আচ্ছা ধর, এটা,ওরা লিখে নাই, তখন যদি ওরা উল্টো বিচার চায়? তখন কি করবি? 
সাজু বললঃ বিচার চাইবো মানে! লাগলে জেলে যামু তবু এইডিরে এমন পিডা দিমু যে চিনবো আমি কে! 
আবুল কথায় সসংশোধনি এনে বললঃ আমি কে না মিয়া, বলো আমরা কে! আমরা ও আছি তোমার সাথে, বিচার ত হবেই। সবাই এক সাথে হেসে বলল ঃ অবশ্যই!!! 

Saturday, March 14, 2020

"সেই তুমি " পর্বঃ ৭



রাতে খাবার খেতে বসে অন্তুর চোখ ভিজে আসছিল,  ব্যাপারটা তানহা খেয়াল করল। কিন্তু কিছু বলল না,অন্তু কোন রকমে খাবার খেয়ে দ্রুত নিজের রুমে চলে আসলো।  অন্তুর ছেলেবেলা থেকেই ডাইরি লিখার অভ্যাস ছিল। সে প্রতিটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা লিখে রাখে ডাইরি তে। আজ ও ডাইরি লিখতে বসল। 
(ওর লিখাটা এখানে হুবহু তুলে ধরার চেষ্টা করেছি)

"অনেক দিন পর ডাইরি লিখতে বসেছি। কি লিখবো তা নিজেও জানি না। মনের ভেতরে ঝড় বয়ে যাচ্ছে! ভেতরটা কোন এক অজানা ভয়ে কাঁপছে.........জল কি সত্যি আমার সাথে প্রেমের অভিনয় করল! গত বৃহস্পতি বার সম্পর্ক করার পর এই বৃহস্পতিবার ই সে সব ভেংগে দিল!! অনেক কষ্ট হচ্ছে আমার....... কলম চলছে না.......মনে হচ্ছে ছুরি দিয়ে কেউ কলিজাটা কুচিকুচি করে কাটছে!!! জল যদি ফিরে আসে সত্যি আমি কখনো ওকে আর কাঁদাবো না.......প্লিজ জান.......ফিরে এসো........

ডাইরি লিখতে গিয়ে কখন যে অন্তু ঘুমিয়ে পড়েছিল টের ই পায় না, মোবাইলটা যখন বেজে উঠল তখন রাত ২ টা! এতো রাতে কে হতে পারে? কল টা ধরতে ধরতে কেটে গেলো! রিপিট কল করতে গিয়ে দেখলো মোবাইলে ব্যালেন্স নেই এক টাকাও। লোন ও গত ২ মাসে পরিশোধ করেনি কিপটেমি করে...........নাম্বারটা অপরিচিত তাই ঘুমটা আর আসছে না...........এটা জল নয় ত আবার! নিজের অজান্তেই নিজেকে প্রশ্নটা করে হেসে উঠল অন্তু............নাহ! পাগল হয়ে যাচ্ছি এক রাতেই!


****আমি কেন অন্তুর নাম্বার ডায়েল করলাম!! আমি ত ওকে ভুলে গেছি! কি হচ্ছে আমার সাথে এসব! তাহলে কি আমি এবার ওকে সত্যি ভালো বেসে ফেলেছি! কখনো না! কথাগুলো নিজেকে নিজেই এক মনে শুনিয়ে চলল জল। এফ, এম থেকে কোন একটা ফেমাস আর জের ব্রটকাস্ট শুনছিল জল, হঠাৎ কি যেন মনে হতেই অন্তুর নাম্বার টা ডায়েল করল! রিং হচ্ছে,  বুকের ভেতর টা ধকধক করতে লাগলো! 

জল সাথে সাথে কল টা কেটে দিলো। 

"ইস! মেজাজটা এতো খারাপ হয়!"রাতের ঘুম টা ও এখন দেখছি ওই বদমাশ টার জন্য আসতে চায় না!! দাঁতে দাঁত চেপে বললঃ আর একবার ঘুমের ভিতর আসলে ঘুসি দিয়ে বারোটা বাজিয়ে দিবো! ভাগ্যিস কল টা ধরে নি, ধলে কি বলতাম আমি!! 
নিজে নিজেই হেসে উঠল। পাশে হেনা বেগম ঘুমাচ্ছিল, হাসির শব্দ টা সামান্য হলেও উনার কানে পৌছাতে বেশি সময় লাগলো না! 

হেনা বেগম ঃ কিরে, তুই এতো রাতে কার সাথে হাসিস? 
চোখ গরম করে ঘাড় উচু করে তাকাল জলের দিকে। 
জল মোবাইলের পাএয়ার বাটনা টা অফ করে মোবাইল বালিশের নিচে রেখে কাপা কাপা কন্ঠে বললঃ ক...কই! তু..তুমি এতো বেশি বুঝো কেন ত মা? আমি শুয়েই আছি, গোয়েন্দাগিরি বন্ধ করে ঘুমাও রাত ২ টা বাজে এখন। কথাটা বলে অন্যপাশে ঘুরে শুয়ে পড়ল, কিন্তু মনে মনে বললঃ 
যাক বাবা! অল্পের জন্যে বেচেঁ গেছি! দাজ্জাল মা!

পরদিন সকালে অন্তুর ঘুমটা অনেক আগেই ভেংগে গেলো। কিছুতেই যেন সময় কাটতে চাইছে না। ভোর ৫.৩০ বাজে। অন্তু বিছানা ছেড়ে বারান্দায় এসে দাঁড়াল। আকাশের দিকে মুখ করে মনে মনে বললঃ আজ শুক্রবার,  যদি জল না আসে! আল্লাহ ওকে এনে দিও প্লিজ।

***সময়গুলি কাটতেই চাইছেনা! আমার ত কখনো এমন হয়নি! ইস! কল টা ও ধরে নাই, যদি ধরত বা বেক কল করত বুঝতাম হয়ত অন্তু আমাকে রিয়েল লাভ করে........ঘোড়ার ডিম!  তা না হলে মানুষ ত একবার হলে ও নাম্বার চেক করে। জল কথাগুলি নিজের সাথেই নিজে বিড়বিড় করে বলতে লাগল। 

পাশের ঘর থেকে বকুল হোসেন খুব জোড়ে জোড়ে দরজায় কড়া,নাড়তে লাগলো!  জল অনেকটা বিরক্তি নিয়ে উঠল দরজা খুলতে......মাত্র বাজে ৬ টা! এতো সকালে কি হলো আবার! দরজা খুলে দিলো.......

জলঃ আব্বু এতো সকালে চিল্লাইতাছ কেন? কি হয়েছে? 

বকুল হোসেনঃ তোর আম্মু কে উঠাইয়া রেডি হতে বল। আমাদের এখনি গ্রামে যেতে হবে। কল আসছে। তোর দাদিমা অসুস্থ অনেক। তাড়াতাড়ি যা।

জল একটা চাপা নিশ্বাস ফেলল! মনে মনে বলল......এমনিতেই সময়টা কাটতে চাইছে না, তারউপর যদি আজকে ওই শয়তান পোলার চেহারা না দেখি মন ত আরো লাফাবে! কি করি এখন........ফিসফিস করে কথা বলতে বলতে দাঁত দিয়ে হাতের নখ কাটতে লাগলো। 


***সকালের ব্যাচ এ সবাই আসছে। অন্তু অনেক আগ্রহ নিয়ে দরজার দিকে তাকিয়ে রইল।সবাই রুমে ঢুকার পরও সে তাকিয়ে রইল। 
জান্নাত ব্যাপার টা খেয়াল করে গলা কাশি দিয়ে বললঃ স্যার, আজকে জল আসবে না। ওরা গ্রামে চলে গেছে। আমাকে সকালে কল দিয়েছিল।

অন্তু ভেতরে ভেতরে একেবারে ভেংগে পড়ল। কিন্তু মুখে প্রকাশ না করে বলল, কে গেলো, কে আসলো তা দেখে আমার লাভ নেই। তোমরা পড়।

নন্দিনি চাপা হাসি দিয়ে বললঃ স্যার, জল এমন ই। ও ফালতু কাজ বেশি করে। সব জিনিস নিয়ে ই মজা করে। ও কোন প্রেম টেম করে না। আপনার সাথে কেমন করল দেখলেন না।
ছেলে ৪ জন একে অপরের দিকে তাকিয়ে রইল। আহমেদ বললঃ স্যার, মেয়েরা ত সব পেকে গেছে! সব বুঝে! 

আবুল ছেলেটা দেখতে যেমন মোটা ঠিক তেমন ই বোকা। সে দাঁত বের করে হেসে বললঃ 
আরে মিয়া এইটাই ত বয়স ওদের। এখন করবে না, কবে করবে! 
সবাই হেসে উঠল কিন্তু টিপ্পনী টা জান্নাতের সহ্য হলো না, সে একটা বই ছুড়ে মারল টেবিলে আর বললঃ স্যার, আমরা কেউ ই ছেলেদের সাথে পড়তে চাইনা!  
যদিও কথাটা বলার পিছনে জান্নাতের অন্য রকম একটা উদ্দেশ্য ছিল যা কেউ ই ধরতে পারে নি। 
অন্তু সবাই কে শান্ত করে বললঃ বাকিরা কি বলো? 
আহমেদ বললঃ ওদের সাথে পড়ার আমাদের ও কোন ইচ্ছে নাই! কিন্তু নন্দিনি, উষা, লিজা চুপ করেই রইল।
অন্তু বললঃ বিকেল থেকে সবার সময় চেঞ্জ থাকবে। 

সবাই পড়ার মাঝে খেয়াল করল, অন্তুর আজ পড়ানোর প্রতি এককেবারেই মনোযোগ নেই। সে বারবার কেমন যেন চুপ হয়ে যায়। 

জান্নাতঃ স্যার, আপনি কি অসুস্থ?  যদি অসুস্থ হন তবে বিশ্রাম নিতে পারেন। আমরা না হয় চলে যাই? 
অন্তু স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করে বললঃ না না! আমি ঠিক আছি,  তোমরা পড়। মুখে কথাগুলো বললেও ওর ভেতরে ঝড় বয়ে যাচ্ছিল জলের জন্য অন্যরকম এক ধরনের ঘৃন্না সৃষ্ট জন্মাতে শুরু করল মনের ভেতর।


***জুম্মার নামাজে না গিয়ে কি করতাছ তুমি দাদা? তানহা ভ্রু কুচকে প্রশ্ন করল। 

অন্তুঃ যাবো না! ভালো লাগছে না, তুই তোর কাজ কর, যা ভাগ!

তানহাঃ হুম্ম.......সেটা ত দেখতেই পাচ্ছি....তুমি কি লুকাতে চাইতাছ তা ঠিক ই বুঝতে পেরেছি। 
তানহা এমনিতেও অনেক চালাক। অন্তু বুঝল তানহার হাতে ধরা পড়ে গেছে তাই একটু লজ্জাবোধ করে বললঃ আরে না.....সব বাদ। কালকে আমার এক্সাম আছে। ওটা নিয়ে ভাবছি। যদি খারাপ হয়......
 তানহাঃ রেজাল্ট ভালো করতে হলে ত পড়তে হয়, তুমি ত বই ই খুলে দেখো না!এবার গায়ে লাগল কথাটা তাই
অন্তু রাগের ভান করে বলল, নিজের এক্সামের চিন্তা কর যা! সামনে তোর ইন্টার ফাইল।  
তানহাঃ হুম নিজেকে কোন কথা বললেই আপনার চেহারা অন্ধকার হয়ে যায়, এটা বলে সে অন্য রুমে চলে গেলো।  তানহা চলে যাওয়ার পর অন্তুর মনে হলো তাই তো! শনিবার ত ওর এক্সাম সত্যি ই! তখন ত মিথ্যে বলেছে কিন্তু সত্যি সত্যি ই এক্সাম!!!