অন্তুর আজ ভার্সিটিতে পরিক্ষা আছে তাই সকালের ব্যাচ পড়িয়ে সে বের হয়ে গেলো ঘর থেকে। জান্নাত আজকে হালকা ক্রিম কালারের একটা জামা পরেছে,কাকতালিয়ভাবে অন্তু ও আজকে হালকা ক্রিম কালারের একটা শার্ট পরেছে, তাই দূর থেকেই জান্নাত অন্তুকে যেতে দেখে মনে মনে খুশি হয়ে উঠল!
আমার সাথে মিলে গেছে! ও জানলো কেমন করে যে,আমি আজ এই কালার পড়বো!!!
সে জোড়ে পেছন থেকে ডাক দিলোঃ স্যার!
অন্তু ঘাড় ফিরিয়ে তাকিয়ে দেখল জান্নাত ওর দিকেই দৌড়ে আসছে। কিছুটা অস্থির বোধ করল সে।
জান্নাতঃ স্যার, পড়াবেন না?
অন্তুঃ না, আজকে আমার এক্সাম আছে, মোবাইলে ব্যালেন্স ছিলো না তাই জানাতে পারিনি, তুমি সবাইকে জানিয়ে দিও।
জান্নাত কিছুটা হতাশ হয়ে বললঃ আমি মেথ করবো ভেবে একটু আগে আসলাম আর আপনি ই চলে যাচ্ছেন! আচ্ছা সমস্যা নেই, আমি সন্ধ্যায় এসে করবো, ভালো করে এক্সাম দিয়েন স্যার!
অন্তু মাথা নেড়ে চলে গেলো।
জান্নাত তবু সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে রইল। সে অন্তুর চলে যাওয়া দেখছিল। অন্তুকে আজকে অনেক সুন্দর লাগছিল তাই একটা হাসি দিয়ে আবার খুব জোড়ে ডাক দিয়ে বললঃ স্যার!
অন্তু কিছুটা বিব্রতবোধ করে তাকালো, জান্নাত হেসে বললঃ অনেক সুন্দর লাগছে আজকে আপনাকে!
অন্তু কি বলবে ভেবে পেলো না, সে সামনের দিকে হাঁটতে হাঁটতে পিছে হাত নেড়ে বিদায় দিয়ে দিলো জান্নাত কে। জান্নাত তবু অন্তুর রাস্তায় দাঁড়িয়ে রইল যতোক্ষন ওকে দেখা যায়..........
অনেকক্ষন যাবত একটা কথাই জলের মাথায় ঘোরপেঁচ খাচ্ছিল। আজকে যদি আম্মু পড়তে যেতে না দেয়, তখন কি হবে? তাই বাসায় আসার পর থেকেই বার বার অযুহাত খুঁজতে লাগলো কি করে বের হতে পারবে। অনেকক্ষন ঘরে পায়চারি করে একটা বুদ্ধি বের করল। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে প্রথমে কথাগুলো প্যাক্টিস করে নিয়ে গলাটা ঝেড়ে পরিস্কার করে হেনা বেগমের রুমে গেলো।
হেনা বেগম শুয়ে আছেন। জল পাশে গিয়ে বসে বললঃ
আম্মু আজকে নাকি স্যারের বাসায় এক্সাম আছে, স্যার সাজেশন ও দিবে পরিক্ষার, আমি কি আজকে পড়তে যাবো?
হেনা বেগম ঃ পড়তে যাবি এটা আবার জিজ্ঞেস করার কি আছে? ছুটির পর সোজা বাসায় চলে আসবি, কোথাও আড্ডা দিতে গেলে খবর আছে।
জল অনেকটা ই খুশি হয়ে হেসে বললঃ আরে না! আমি পড়া শেষে সোজা বাসায় চলে আসবো, কোত্থাও যাবো না আম্মু!!
জল তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে ব্যাগ নিয়ে বেরিয়েই যাচ্ছিল, হেনা বেগম মাথা উঁকি দিয়ে ডাকলেনঃ এই! তোর প্রাইভেট ৬ টায় আর এখন বাজে মাত্র ৪ টা, তুই কোথায় যাস এই সময়?
জল জিহ্বায় কামুড় দিয়ে মনে মনে বললঃ ইস! এখনো ঘুমায় নি! মুখে হাসি নিয়ে বললঃ আরে আম্মু এক্সাম ত তাই স্যার সবাইকেই বলছে ৩ টার দিকে চলে যেতে! আমি ১ ঘন্টা দেরি করে যাচ্ছি!
হেনা বেগম চোখ গোল করে বললেনঃ ১ ঘন্টা পরে যাচ্ছিস, কি এক্সাম দিবি তুই! অলস মেয়ে কোথাকার! তাড়াতাড়ি যা!
জল হেসে বেরিয়ে গেলো। রাস্তায় বের হয়ে মনে মনে হাসতে লাগলো আর নিজের বুদ্ধির প্রশংসা করতে লাগলো। জলের বাসার ২ টা বাসা পর ই অন্তুদের বাসা। জল যতোই অন্তুর বাসার কাছাকাছি পৌঁছাতে লাগলো ততোই ওর শরির কাঁপতে লাগলো! ভেতর কেমন জানি একটা চাপা উত্তেজনা কাজ করছিল! প্রায় ১৩ দিন পর আজকে মনের কথাটা বলার সুযোগ পাবে ভেবেই একরকম আনন্দ কাজ করতে লাগল সারা মনে। অন্তুদের বাসার গলিতে ঢুকতেই দূর থেকে অন্তুকে আসতে দেখলো!
অন্তু কে দেখেই জলের ভেতটা কেমন যেনো করতে লাগলো। ওর হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে গেছে! পা যেন আর চলতে চাইছে না! মনে হচ্ছে অবশ হয়ে আসছে সারা দেহ!
অন্তু প্রথমে জল কে দেখতে পায় নি, সে নিচের দিকে তাকিয়ে হাঁটছিল। হঠাৎ জলের দিকে চোখ পরতেই প্রথমে কিছুটা থমকে গিয়েছিল কিন্তু মূহুর্তের মধ্যেই নিজেকে সামলে নিয়ে নিজের ডান হাতের ঘড়িটার দিকে তাকিয়ে সময় মিলিয়ে নিতে নিতে জলের সামনে দিয়ে চলে গেলো! জল যতোটা অবাক হলো ঠিক ততোতাই রেগেও গেলো। অন্তু ওর মুখের দিকে ভালো করে তাকায় ও নি! কোন কথাও বলেনি!
তাহলে কি সে আমাকে ভুলে গেছে! মাত্র ১৫ দিনেই ওর ভালোবাসা শেষ হয়ে গেছে!
জল নিজেকে নিজে কথাগুলো শোনাতে লাগল।
অন্তু রুমে ঢুকে দরজা খুলেই রাখল, সে জানে জল এর পিছু পিছু উঠেছে সিঁড়ি দিয়ে। অন্তু হাত মুখ ধুয়ে রুমের ভিতর আবারও উঁকি দিলো। জল আসেনি রুমে। কিছু টা অবাক হয়ে দরজার বাইরে উঁকি দিতেই দেখল জল দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে রয়েছে চুপ করে!!
অন্তু কিছুটা বিব্রতবোধ করল, জলের দিকে না তাকিয়েই বললঃ ভেতরে আসো না কেন?
জল অন্তুর মুখের দিকে মন খারাপ করে তাকিয়ে রইল......কতোটা পরিবর্তন হয়ে গেছে অন্তু! এতো দিন পর আমাকে দেখেও একবার ও তাকাচ্ছেনা! ওর এ কি অবস্থা হয়েছে! মুখে খোঁচাখোঁচা দাঁড়ি,চোখের নিচে কালি জমে গেছে, ভেজা বড় চুলগুলো এলোমেলো হয়ে আছে....মনে হচ্ছে অনেকদিন যাবত ঘুমায়না! কথাগুলো ভেবে কান্নাই পাচ্ছিল জলের তবু সামলে বললঃ
নাহ, অনেক দিন আসিনি তো, তাই ভাবলাম যদি আবার না পড়ান আমাকে! আর আমি ভেবেছি ছেলেরা থাকতে পারে ভেতরে তাই দাঁড়িয়ে আছি।
অন্তু বুঝল কথাগুলো মিথ্যে তবু না বুঝার ভান করে বললঃ আজকে ছেলেরা আসবে না, ভেতরে আসো।
জল রুমের ভিতর ঢুকে টেবিলের এক কোনে গিয়ে বসে মাথা নিচু করে ব্যাগের উপির শুয়ে রইল। অন্তু ভেতর থেকে একবার ও আসছে না!
জল নিজেই উঠে ভিতরে যাবে সিদ্ধান্ত নিলো আবার ভাবলো যদি তানহা কিছু মনে করে! ইতস্ততভাবে তবু ভেতরের দিকে যাওয়ার আগে তানহার রুমে উঁকি দিয়ে দেখলো তানহা কি করে......তানহা ঘুমাচ্ছে! এবার আর অন্য কিছু না ভেবে সোজা অন্তুর রুমে ঢুকে গেলো সে....ঢুকে দেখলো অন্তু বিছানায় উপুর হয়ে শুয়ে আছে। জল মুখে কোন কথা না বলে পিছন থেকে অন্তুর উপর শুয়ে পড়ল! অন্তু লাফিয়ে উঠতে সরে যেতে চাইছিল কিন্তু জল যেভাবে ধরেছে সরবে তো দূরের কথা নড়তেও পারছেনা! প্রচন্ড বিরক্ত লাগছে অন্তুর!
মনে মনে বললঃ
মোটু এখন আবার নতুন করে কোন নাটক করতে এসেছে! এবার আর ওর মিথ্যে অভিনয়ে পা দিবো না, যতোই চালাকি করুক! তাই কিছুটা রাগের স্বরে বললঃ এসব কি!! উপর থেকে উঠো! এতো সাহস কই পাইছো তুমি!
জল অনেক অবাক হলো অন্তুর কথায়। সে বুঝে গেছে ওইদিনের কথায় অন্তু কষ্ট পেয়েছে আর তাই হয়তোবা এমন বলছে। জল আরো শক্ত করে অন্তুকে জড়িয়ে ধরে বললঃ
জান, রাগ করে আছো? আরে ওইদিন আমার মাথা ঠিক ছিলো না, কি বলতে কি বলে ফেলেছিলাম বুঝে উঠতে পারিনি! বিশ্বাস করো তোমাকে এসব বলার পর থেকে আমি একটা দিন ও শান্তিতে ঘুমাতে পারিনি, অনেক খারাপ লাগছে! সারাক্ষণই ভাবছি কখন তোমার কাছে আসবো! যদি পাখি হতাম উড়ে চলে আসতাম! আমি ত মানুষ, আর ভুল তো মানুষ ই করে, প্লিজ???
জলের কথাগুলো র কোন প্রতিক্রিয়া অন্তুর ভেতরে দেখা গেলো না, সে আগের চেয়ে দ্বিগুন রেগে বললঃ হ্যা, ঠিক ই তো! এটাই ত ভালোবাসা! যখন মনে চাইবে ভালোবাসবেন, যখন মন চাইবে না সবার সামনে যা খুশি বলে অপমান করে গায়েব হয়ে যাবেন! মাফ চাই! আমি কোন রেলিশনে আর জড়াতে চাই না! উঠেন উপর থেকে!
অন্তুর কথায় জল অনেক কষ্ট পেলো তাই সে অন্তুর উপর থেকে উঠে গেলো কিন্তু অন্তু শুয়েই রইলো। জল দাঁত দিয়ে নখ কাটতে কাটতে একটু থেমে আবার বলতে লাগলোঃ
আমি তোমাকে কষ্ট দিতে চাই নি, হ্যা, এটা আমি স্বিকার করি প্রথম যখন তোমাকে অফার দিছিলাম তখন আমার মনে কোন ভালোবাসা ছিলো না, আমি শুধু একটু মজা করতে চেয়েছিলাম কিন্তু এই মজা যে এতো কষ্ট দিবে আমাকে আমি একবারও বুঝিনি! জল অন্তুর পায়ের কাছে বসে পড়ল। অন্তু উপুর হয়ে শুয়ে ছিল তাই বুঝতে পারেনি।
জল চোখ মুছে বললঃ সেদিন তোমাকে না করার পর থেকে যখন বাসায় গিয়েছি,আমার মনে হয়েছে সারা গায়ে কেউ আগুন লাগিয়ে দিয়েছে! তোমার কথা এক সেকেন্ড এর জন্য ভুলতে পারছিলাম না! আমি অনেকবার তোমার ফোনে কল দিছি, তুমি ধরো নাই!
অন্তু মনে মনে বললঃ কলগুলো জল ই দিয়েছিল তাহলে!
সে উঠে বসতে গেলো, দেখলো জল পায়ের কাছে বসে আছে! সে উঠে বসতে বলল কিন্তু জল উঠল না। জল মাথা নিচু করে বলতেই থাকলোঃ
আমি জানি না ভালোবাসা মানে কি, শুধু এটা জানি আমার আত্মা তুমি.....তোমাকে না দেখে যে দিনগুলি পার করেছি প্রতিটি দিন ছিল আমার জন্য জাহান্নামের সমতুল্য! প্লিজ মাফ করে দাও! আমি জান্নাতের কাছে ত সব বলেছিলাম, ও কিছু বলে নি তোমাকে?
অন্তু বুঝল জান্নাত মিথ্যে বলেছে তাই রাগ টা মূহুর্তে ই ঠান্ডা হয়ে গেলো। জল কে বুঝতে দিলো না।
সে আগের মতোই মুখ গম্ভীর করে বললঃ আমার ফোনে ব্যালেন্স ছিল না তাই বেক করতে পারিনি আর জান্নাত আমাকে কিছু বলেও নি।
অন্তুর কথাতে জল উপরের ঠোঁট দিয়ে নিচের ঠোঁট চেপে ধরে মনে মনে বললঃ জানতাম জান্নাত এমন টা ই করবে! সমস্যা নেই, লাগবে না কারো হেল্প করার। আমার ভালোবাসা সত্যি হলে আমি ওকে আজ মানাতে পারবো ই।
জল অন্তুর হাঁটুর উপর হাত রেখে বললঃ তুমি শুধু একবার এটা বলো তুমি আমাকে ভালো বাসো না?
অন্তু এবার আর নিজেকে সামলাতে পারলো না,জলের কথায় ওর বুকের বা পাশ টা কেমন যেনো চিনচিন করে ব্যাথা করতে লাগল, হৃদ স্পন্দ বেড়ে গেলো........ অন্তু জলেকে বিছানার পাশে বসিয়ে হাঁটু গেড়ে জলের পাশে বসে ওর হাতদুটো নিজের হাতের উপর নিয়ে চোখে চোখ রেখে বললঃ
আ
"আমি তোমাকে আমার নিজের চেয়েও বেশি ভালোবাসি! কিন্তু তোমার কথাগুলো আমাকে বাধ্য করেছিল বদলে যেতে। হ্যা, আমি তোমাকে ভালোবাসি কিন্তু তুমি যদি আমার ৩ টা শর্ত মানতে না পারো তাহলে আমি সরে যাবো"।
অন্তুর কথায় জল যেন প্রাণ ফিরে পেলো! সে খুশিতে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে অন্তুকে জড়িয়ে ধরে বললঃ
তুমি যা বলবে তা ই শুনবো, যেভাবে চলতে বলবা চলবো তবু তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও! আমি তোমাকে ছাড়া সত্যি ই বাঁচবো না! এবার একটু হাসো?
জলের কথায় অন্তুর সব রাগ অভিমান মূহুর্তের ভিতর ই চলে গেলো।সে জলকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললঃ I love you more than anything in the world!!!
জলঃ Me too...........
No comments:
Post a Comment