Friday, March 20, 2020

"সেই তুমি " পর্বঃ ১৩



আবুল যখন দরজায় ডাক দিলো তখন জলের মনে পড়েছে ও বাবার কাছে কি বলে আসছে! সে তাড়াতাড়ি শাড়ি খুলে থ্রি পিছ আর বোরকা পড়তে পড়তে বললঃ 
" আজকে আব্বু মাইরা ই ফেলবে"! শুধু তোমার রাগ ভাংগানোর জন্যে আমি আজকে এতো বৃষ্টির ভিতর আব্বু আম্মুর সাথে ঝগড়া করে এসেছি! কত্ত দেরি হয়ে গেছে!! 

অন্তু বললঃ কিচ্ছু হবে না, তুমি বইল যে আজকে পার্টি ছিলো তাই একটু দেরি হইছে, না খেয়ে যাওয়া যাবে না, এটা আমার জন্মদিন! আমি তোমাকে না খেয়ে জীবনেও যেতে দিবো না!

জল ঠোঁট থেকে লিপিস্টিক আর চোখ থেকে কাজল মুছতে মুছতে বললঃ না, জান! একটু বুঝো! আব্বু বাসায়, সকাল থেকে আসার জন্যে আম্মুর থেকে ঝগড়া করতাছি, আম্মু তবু দেয় না! আমি একরকম জোড় করেই বের হয়েছি! আব্বু ও রেগে আছে নিশ্চিত!

অন্তু কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল, এমন সময় জান্নাত এসে বললঃ স্যার, আপনাদের রোমান্স শেষ হলে এবার একটু দয়া করে আসেন? আমাদের সবার ই আজ বাসায় বকা খেতে হবে, এমনি তে ই অনেক লেট হয়ে গেছে......কথাগুলো বলতে বলতে আড় চোখে জলের দিকে তাকাল,  জলের চেহারাতে স্পষ্ট হয়ে ফুটে আছে ব্যাথার তীব্রতা!  জল পেট এ ধরে বসে পড়েছে! 

জান্নাত বুঝেও না বুঝার ভান করে ঠোঁট বাকা করে বললঃ কি রে! এমন করছিস কেন? হাঁটতে পারবি তো, নাকি আবার বাসায় নিতে হবে কোলে করে! এমনিতেই তুই যেই মোটা তোকে কোলে নেওয়া ত আমাদের কারো দ্বারা,সম্ভব না!

জান্নাতের বাকাবাকা কথাগুলো জলের গায়ে কাটার মতো লাগলো তাই ঠোঁট চেপে ধরে উঠে দাঁড়িয়ে বলঃ শোন, আমি একাই ১০০, আমার কারো হেল্প লাগেনা। যা, আমরা আসছি!

জলের কথায় জান্নাত শুধু একটু হাসলো তারপর খাবার টেবিলে গিয়ে বসে নন্দিনি আর বাকি মেয়েদের সাথে ফিসফিস করে কিছু একটা বলে হাসতে লাগলো!  

জল অন্তুর গালে একটা চুমু দিয়ে বললঃ জান, রাগ করোনা, আর থাকা সম্ভব না! রাত ৮টা বেজে গেছে, আমি এখন ই যাবো,  তুমি খেয়ে নিও, প্লিজ??

অন্তু জলকে আর কোন বাধা দিলো না, জল ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছিল, সবাই হেসে উঠল!  কেউ একজন অল্প আওয়াজ করে বললঃ হয়তো অন্য খাবার টা বেশি হয়ে গেছে তাই না খেয়ে চলে যাচ্ছে! 

জান্নাত নন্দিনি অনেক জোড় করল কিন্তু জল দেরি না করে বেরিয়ে গেলো দরজা দিয়ে.......অন্তু তানহাকে বলল সবাইকে খাবার দিতে, এটা বলে সে ও জল কে পৌঁছে দেওয়ার জন্যে জলের পিছে পিছে সিঁড়ি দিয়ে নেমে গেলো। 

রাস্তায় পেক- কাদাতে একাকার হয়ে আছে, জল অনেকটা দ্রুত হাঁটছিল, রাস্তায় কোন মানুষ নেই, অন্তু একটু দৌড়ে জলের পাশে গিয়ে বললঃ তুমি কিছু খাওনি, তাই আমি ও খাবো না, বাসায় গিয়ে কারো সাথে মুখে মুখে তর্ক করার দরকার নেই, যে যা বলে চুপচাপ মাথা নিচু করে শুনবা, কোন জবাব দিবা না।

জল গম্ভীর ভাবে বললঃ আমার পেট অনেক ব্যাথা করছে, যদি বাসায় যাওয়ার পর আম্মু টের পেয়ে যায়! আমি তো তখন শেষ!!

অন্তু বললঃ কষ্ট করে রাত টা পার করো, কালকে ডাক্তার এর কাছ থেকে ব্যাথার ঔষধ এনে দিবো।

জল হেসে উঠল!  ঔষধ লাগবে না, আমার ঔষধ তো তুমি ই.....এবার যাও, বাসায় এসে পড়েছি! 

কথায় কথায় অন্তু খেয়াল ই করেনি জলের বাসার গেটের কাছে পৌছে গেছে দুজন!  অন্তু মাথা নেড়ে বললঃ হুম, যাও, আজকের দিনটা সারা জীবন মনে থাকবে আমার! 

জল অন্তুর গালে হাত রেখে বললঃ আর রাগ করবানা কিন্তু!  আমার সারা জিবন মনে থাকবে!!! 


**** অন্তু ঘরে এসে দেখলো সবাই খাওয়া দাওয়া করে চলে গেছে কিন্তু ছেলেরা ওর জন্যে বসে আছে না খেয়ে। আবুল বিচলিত হয়ে বললঃ ও স্যার,পেটে ত আর সইতে পারছে না, আসেন না তাড়াতাড়ি!  

সাজু বললঃ স্যার,  আপনার জন্য বসে আছি সেই কখন থেকে! কেকটাও কাটার সময় এলেন না, এখন খাওয়ার সময় ও নেই আপনি, এটা হলো!

আহমেদ একটু কেশে বললঃ তোরা বেশি বুঝস বেটা! স্যার, যা খাইছে তা ই মনে থাকবে, বলে হালকা জিহবা টা নাড়া দিয়ে চোখ গোল করে বললঃ you know, আমি কিন্তু খারাপ কোন ইংগিত দেইনি, তোমরা কেউ আবার বেশি বুইঝো না কিন্তু...... 

সবাই হেসে উঠল। অন্তুর মন খারাপ। জল না খেয়েই চলে গেছে। তাই ঠিক করল ও খাবেনা। সে সবাই কে বুঝিয়ে খাওয়ার জন্যে রাজি করিয়ে ভেতরের রুমে চলে গেলো!
   

জল ঘরের ভেতর ঢুকতে ই হেনা বেগম গর্জে উঠলেন! 
মহারানীর আসার সময় হইছে তাহলে! 

জল অনেক ভয় পেয়েছিল কারন জানে মা আজকে ওর বারোটা বাজিয়ে ছাড়বে। তাই মুখে একটা কৃত্রিম হাসি আনার চেষ্টা করে বললঃ 
আম্মু,  স্যারের বোন আসতে দিতাছিল না! সবাই একসাথে অনেক আড্ডা দিছি তাই একটু দেরি হয়ে গেছে, আর বাইরেও কতো বৃষ্টি দেখছ তুমি? আমি কেমনে আসমু তুমি কও!

হেনা বেগম হাতে একটা স্কেল নিয়ে তেড়ে এসে বললেনঃ বৃষ্টি তে যাইতে পারছস আর আসতে পারস নাই? বলেই স্কেল দিয়ে পিঠে দুইটা জোড়ে বারি দিলেন। 

জল চুপ করে ভেতরে চলে যাচ্ছিল, হেনা বেগম বললেনঃ কাল থেকে তোর কাল থেকে আর পড়তে যাওয়া লাগবে না, আমি যেনো তোকে আর পড়তে যেতে না দেখি!

জল ভেতরে চলে আসল! ব্যাগ বোরকা রেখে বিছানায় শুতেই ওর ব্যথা টা বাড়তে লাগলো। তাই চুপ করে শুয়ে রইল। হেনা বেগম রাগলে এসব ই বলে, শান্ত হলে আবার নিজেই আদর করবে ভেবে ঘুমানোর চেষ্টা করছিল হঠাৎ রুমে আবার হেনা বেগম এসে ঢুকলেন।
 
জল কে শুয়ে থাকতে দেখে জিজ্ঞেস করলেনঃ কাজগুলো কে করবে? আর তুই কি এমন করে আসছিস যে, আসার পর পর ই তোর বিছানায় গা ভাসাতে হবে! 

এবার জলের গায়ে কথাগুলো লাগলো কারন ও জানে হেনা বেগম কে এখন ই না থামালে উল্টাপাল্টা প্রশ্ন করতে করতে আসল কথাই বের করে ফেলবে, আর এমনিতে ও ওর  শরির আজ খারাপ অনেক তাই রেগে বললঃ 
আম্মু! মুখে যা আসে তা ই কি বলবা? আমি ত একা ছিলাম না কোথাও, আমার সাথে সবাই ছিলো আর আমি কোন ছেলেদের সাথেও কথা বলিনি, সামনে যাইনি! কি বলতাছ এসব তুমি? 
  
জলের রাগ দেখে হেনা বেগম শান্ত হয়ে গেলেন। মনে মনে ভাবলেন হয়তোবা জলের কথাই ঠিক, উনি ই একটু বেশি সন্দেহ করে ফেলছেন ইদানীং!!  


হেনা বেগম চলে যাবার পর জল ব্যাগ থেকে কাপড় গুলো বের করে আলমারি তে রাখছিল হঠাৎ দেখলো ওর ব্লাউজের ফিতে তে কিছু একটা লেগে আছে! ব্লাউজটা হাতে নিতেই দেখলো একটা চিরকুট!  বড় একটা নিশ্বাস ছাড়ল, মনে মনে ভাবলঃ কি না কি ভেবেছিলাম!  আমিও না........অযথাই সন্দেহ করি....... ভেবেছিলাম অন্তুর চিঠি! 
 অন্তু দেয় নি তো আবার! আলমারির লক লাগিয়ে কাগজটা খুলতেই জলের চোখ বড় হয়ে উঠল! কি লিখা এটা! অন্তুকে জান্নাত চিঠি লিখছে!! 

জল ধপাস করে বিছানায় বসে পড়ল! সারা গা যেনো ঝাকুনি দিয়ে উঠেছে! হাত দিয়ে মুখের ঘাম মুছে এলোমেলো চুলে হাত ফিরাতে ফিরাতে কাগজ টা বার ছয়েক পড়ল........."তাইতো বলি! আমার কোন কথা ও কেনো অন্তুর কাছে গিয়ে বলে না! সকাল টা হোক! কি যে করবো এই জান্নাতের এক আল্লাহ ই জানে! নিজেকে নিজেই কথাগুলো শোনাতে লাগল।


**** আমাদের দেশে কোন মানুষের ভালো দিক টা যতো কম ভাইরাল হয় ঠিক ততোতাই বেশি ভাইরাল হয় কোন একটা ছোটখাটো অপরাধ....... জল রাতে বাসায় দেরি করে ফিরাতে জলের এই ঘটনা টা পাশের ঘরের কোন এক মহিলা সকালের বাজারে হেনা বেগম কে দেখেই প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন!  

হেনা বেগম সব্জি কিনছিলেন। হঠাৎ হাসির মা খ্যাত মহিলাটি পান চিবাতে চিবাতে হেনা বেগমের পাশ ঘেসে দাঁড়িয়ে বললেন ঃ

 দিন কাল ভালো না, মেয়েরে এতো স্বাধীনতা দিও না, কাল কে নাকি তোমার মেয়ে কোন বাসা থেকে অনেক রাত করে ফিরছে? আমগো হাসি কইল সকালে আমারে! আর, মেয়ে মানুষ কে রাতে পড়তে অন্য জায়গায় দেওয়া ঠিক না! কখন কি হয়ে যায়..... 

হেনা বেগম সব্জি না কিনেই বাসায় চলে আসলেন। ঘরে ঢুকে দেখে জল নেই, স্কুলে চলে গেছে।  
হাসির মায়ের কথায় সারা গা জ্বলে যাচ্ছে। আসুক আজকে, ওর প্রাইভেট পড়া ই লাগবে না।ওর জন্য রাস্তায় কথা শুনতে হয়!



 

No comments:

Post a Comment