Wednesday, July 29, 2020

শুভকামনা



বর্তমানে করোনা পরিস্থিতির কারনে মানুষের জীবন যাত্রার মান এতোটা ই কমে গেছে যে ঢাকা আনুমানিক ৫০% খালি হয়ে গেছে। যেই ঢাকাতে আসার জন্য মানুষ পাগল হয়ে থাকতো এখন কর্মহীনতার কারনে সেই প্রিয় ঢাকাকেই মানুষ ছেড়ে চলে যাচ্ছে........ঢাকার কয়েকটা জায়গা ঘুরে অনেকটা অবাক ই হয়েছি কারন যেসব জায়গাগুলো আগে লোকে পরিপূর্ণ থাকতো করোনার কারনে মাত্র ৪/৫ মাসের ব্যবধানে সেসব জায়গায় বিরাজ করছে থমথমে নিরবতা!! তবু দিন শেষে প্রতিটা মানুষ স্বপ্ন দেখে আবার সুস্থ হয়ে উঠবে পৃথিবী, করোনা মুক্ত হবে প্রতিটি দেশ আর রাজধানীবাসি পুনরায় ফিরতে পারবে তাদের প্রিয় ঢাকাতে….........

Tuesday, June 23, 2020

পরিকল্পিত স্পষ্ট হত্যা??




গত ১৪ ই জুন মারা যান বলিউডের অন্যতম প্রতিভাবান অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুত...... স্বাভাবিক ভাবে এটাকে আত্মহত্যা বলে উল্লেখ করলেও আসলে এটা ছিল একটা পূর্ব পরিকল্পিত মার্ডার। অনেকে ই হয়তো আমার সাথে দ্বিমত পোষণ করবেন। একটু সময় নিয়ে আমার লেখাটি পড়ুন, আপনি নিজেও বুঝে যাবেন কোনটা সত্যি আর কোনটা মিথ্যা......কয়েকটি ধাপ ব্যাখ্যা করি.........

(১) প্রথমে একটু ঠান্ডা মাথায় ভাবুন তো, যে আত্মহত্যা করবে সেই ব্যক্তির ঘরে ফ্যানের সাথে ঝুলার জন্যে অবশ্য ই চেয়ার অথবা উচু কোন জিনিসের প্র‍য়োজন হবে......সুশান্তের আত্মহত্যার রুমে না ছিল কোন চেয়ার, না ছিল ফাঁসির দড়ির পাশে কোন উঁচু কোন জিনিস!!! তাহলে আত্মহত্যা করার জন্যে সুশান্ত ভৌতিক ভাবে ১৫/১৬ ফুট লম্বা হয়ে গিয়েছিল?


(২) যে ফাঁসি দিয়ে মারা যায় তার শরীরের অন্য কোন পরিবর্তন হোক বা না হোক তার ঘাড় অবশ্যই ভাংগা থাকবে, চোখ বের করা থাকবে,পা বাঁকা থাকবে......সুশান্তের মৃত দেহের ছবিটি ভালো করে দেখলে বুঝতে পারবেন ওর এক চোখ খোলা অন্য চোখ বন্ধ!! পোস্ট মর্টেম রিপোর্টে ও উল্লেখ ছিল ওর ঘাড় ভাংগেনি!!

(৩) যে আত্মহত্যা করবে তার দুই হাতের কব্জিতে ১০ আংগুলের ছাপ থাকবে কেন?? এতে স্পষ্ট ই বোঝা যায় ওকে কয়েকজন জোড় করে চেপে ধরে রেখেছিল!!

(৪) যারা ই বলিউডে খান, কাপুর, কারণ কে নিয়ে প্রতিবাদ করে শুধু তাদের ই ডিপ্রেশন থাকে? আর,ওরা সবাই আত্মহত্যা করে মারা যায়? আজ পর্যন্ত বলিউডে যতোজন এভাবে মারা গেছে সবার ইতিহাস ঘেটে দেখুন, সবাই এসব স্বজন প্রীতি নিয়ে প্রতিবাদ করেছিল যার ফল মৃত্যু দিয়ে ভোগ করেছে....

এমন ১০০০ টা কারন ব্যাখ্যা করা যাবে যাতে এটা স্পষ্ট বোঝা যায় পর্দার এম,এস ধনী আত্মহত্যা করেনি তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে.......আমরা সাধারণ মানুষ যদি ঘটনাস্থল না গিয়ে এতো কিছু বের করতে পারি তাহলে ভারতীয় পুলিশ আর সিবিআই কি ঘোড়ার ঘাস কাটে বসে বসে!!! আসলে বিচার কে ধামা চাপা দেওয়ার অপচেষ্টা চলছে তা বোঝা ই যাচ্ছে.....

** হাসিখুশি, প্রানবন্ত চমৎকার সুদর্শন একজন মধ্যবিত্ত ঘরের একমাত্র ছেলের মৃত্যুতে পরিবারের কি অবস্থা হয় তা এসব আজন্মা রা বুঝবেনা.......

Thursday, April 23, 2020

"ভয়ংকর সন্ধ্যা" শেষ পর্ব



পপি কে এ অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে সবার হুশ ঊড়ে গেলো! সবাই ভয়ে স্তব্ধ হয়ে গেছে মনে হচ্ছিল! আবির সবার দিকে একবার তাকালো তারপর রাতুল কে মৃদু ধাক্কা দিয়ে বললঃ দোস্ত কিছু কর! মরে গেলে ত সবাই ফাঁসবো! 

আবিরের কথায় রাতুলের হুশ হলো! সবাইকে নিয়ে রাতুল জমিদার বাড়ির ভিতর ঢুকলো। সিড়িগুলো এখনো অনেক মজদুত আছে! বাড়ির দেয়ালগুলোতে আগাছা জন্মে আছে। গা ছমছমে রহস্যময়তায় ভরা যেন এক মৃত্যুপুরী এটা!! সবাই পপির কাছে গোল হয়ে দাঁড়িয়ে গম্ভীরমুখে একে অন্যের দিকে তাকাতে লাগলো। রাতুল পপির নাকে পাশে হাত নিয়ে পরিক্ষা করল জীবিত আছে কি না!....... হ্যাঁ..... জীবিত! 

রাতুল চেঁচিয়ে সবাইকে নির্দেশ দিলো পপিকে কে নিচে নিয়ে যেতে।সবাই ধরাধরি করে কোন রকমে পপিকে যখন গ্রামের ভিতর নিয়ে আসছিল আশেপাশের বাড়িগুলোতে তখন রীতিমতো গবেষণা শুরু হয়ে গেছে!! এ বিষয়টা যে যেমন পারছে তেমন ই ব্যাখ্যা দিতে শুরু করেছে!! 

পপির মা আর দাদী প্রায় জ্ঞান হারানোর অবস্থা!  পপির দাদী তো রীতিমতো মাতম শুরু করে দিয়েছে! সবাইকে উদ্দেশ্য করে টেনে টেনে বলতে লাগলোঃ যদি....আ-মার না-ত--নীর কিছু হয় তোগোরে জেলে দিমু গোলামেরা!! আমার একটা ই মাত্র না-তনী! আল্লাহ বাঁচাও আমার নাতনীরে!!

কেউ একজন গিয়ে হরিবল তান্ত্রিক কে খবর দিলো। হরিবল এসে ঘটনা পর্যবেক্ষণ করে গম্ভীর হয়ে বললঃ হুম্........ ঘটনা বেশি ভালা না! পপিরে ডাকিনী ধরছিল! ভগবানের কৃপায় এ যাত্রায় বেঁচে গেছে তবু স্বাভাবিক হতে সময় নিবে!!
ঘটনা টা সবার মনে গেঁথে গেলো। সেদিনের পর থেকে কেউ ই আর বাহিরে তেমন আড্ডা দিতে বের হতো না। রাতুল রা গ্রামে আসার পর থেকেই খেয়াল করল সন্ধ্যার পর পর ই পুরো গ্রামের আবহাওয়া কেমন যেনো থমকে যায়! স্তব্ধতায় ঢেকে যায় পুরো গ্রাম। ভয়ানক লাগে তখন। নেহায়েত অতি আবশ্যক কোন কাজ ছাড়া কেউ তেমন একটা বের হয় না! যাই হোক দেখতে দেখতে পরিক্ষা প্রায় শেষের দিকে চলে এলো। আর মাত্র ২ টা পরিক্ষা আছে। দুটা পরিক্ষা দিতে সময় লাগবে ৭ দিন! তাই একটু রিলাক্স মুডে ই রইল সব পরিক্ষার্থী রা। এ কয়েক দিনে সবার মন থেকে ভয় টা দূরে সরে গেছে। গ্রামের কোথাও মেলা বসেছে। গ্রামের বেশিরভাগ কিশোর কিশোরীরা সেখানে যাচ্ছে। বাবলু,আনিকা,পপি সহ আরো কয়েক জন পরিক্ষার্থী ও গেলো মেলা দেখতে। রাতুল যায় নি। সে মাঠের মাঝে বিশালাকৃতির বটগাছের নিচে বসে আবির, জামাল, কাদের সহ আরো কয়েক জন স্থানীয়দের সাথে বসে আড্ডা দিচ্ছিল। কথায় কথায় বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নেমে আসল। আড্ডা টা মাতিয়ে তুলল রাতুল গান গেয়ে তাই কেউ টের ই পেলো না কখন সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে.…....রাতুল গান গাইছিল হঠাৎ ওরা দেখলো ওদের দিকে একটা মহিলা এগিয়ে আসছে! কোলে একটা বাচ্চা, পড়নে সাদা রং এর একটা শাড়ি.... আবির কে তাকিয়ে থাকতে দেখে সবাই হেসে উঠল।  রাতুল গান থামিয়ে বললঃ ভিখারি হবে শিউর ই।

মহিলা টা ওদের সামনে দিয়ে হেঁটে চলে গেলো,বাচ্চাটা কান্না করছিল, অন্ধকারে মহিলার মুখ বোঝা গেলোনা.........

***রাতুল হাসি তামাশায় সবাইকে মাতিয়ে তুললো।  বন্ধু বান্ধবরা সবাই আড্ডাতে এতোটাই মশগুল ছিল যে খেয়াল ই করেনি কখন যে সবাই হাঁটতে হাঁটতে পুরাতন সেই শশ্মশান ঘাটে এসে পড়েছে! রাতুল যখন গান থামালো তখন সবার হুঁশ হলো।  সাজিদ নামের একজন রাতুলের দিকে তাকিয়ে চোখ কটমট করে বলল- 

তুই আমাকে আগে বললি না কেন! আমি যদি জানতাম তোরা শশ্মানে আসবি আমি কখনোই আসতাম না! আমি এক মার এক ছেলে! 

কথাটা বলেই সাজিদ মেয়েদের মতো চোখ মুছতে লাগলো যা দেখে বাকি সবাই হেসে উঠলো। কিন্তু ওদের হাসি মিশে যেতে বেশি সময় লাগলো না কেননা আবির চোখ বড় বড় করে শশ্মানের এক কোনে তাকিয়ে রইল। ওর চোখ অনুসরণ করে বাকিরা যখন সেই দিকে তাকালো তখন সবার শ্বাস বন্ধ হওয়ার উপক্রম হলো!  সবাই দেখলো একটু আগের সেই মহিলাটি কোলের বাচ্চাটা কে হাটুর উপর রেখে ডান হাত দিয়ে কলিজাটা টেনে বের করে খাচ্ছে! সারা মুখে রক্ত লেগে আছে! মুখে পৈশাচিক হাসি! ওদের দেখে রক্তমাখা মুখে হাসিটা আরো চওড়া করে হাত ইশারায় ওদের কে কাছে ডাকলো........!!!

এ দৃশ্য দেখে সবার অন্তর আত্মা কেঁপে উঠল! রাতুলের হাত ধরে সাজিদ জোড়ে টান দিয়ে বাবাগো বলে চিতকার করে দৌড় দিলো! ওদের পিছু পিছু বাকিরাও দৌড়ে পালাতে শুরু করলো........ সেই মানুষ খেকো মহিলাটিও ওদের পিছু পিছু ধাওয়া করতে শুরু করল! এ দৃশ্য দেখে একেক জনের জ্ঞান হারানোর অবস্থা প্রায়!! 
এভাবে এতোক্ষণ দৌড়েছে কেউ বলতে পারবেনা, ওদের যখন হুঁশ ফিরলো তখন দেখলো ওদেরকে ঘিরে আছে গ্রামের শ খানেক লোক, সবাই ওদের নানান কথা জিজ্ঞেস করছিল........কিন্তু কারো কথায় ওদের কান নেই, সব শেষে এরা বেঁচে আছে এটা ভেবে দীর্ঘ একটা নিশ্বাস ছেড়ে সবাই একে অন্যকে জড়িয়ে ধরলো আর ওয়াদা করলো আর ভুলেও কখনও শশ্মান ঘাটে যাবে না কেউ.......রাতুল সেদিন বাসায় ফিরেই বাবলু আর আনিকাকে ব্যাগ গুছাতে বলল..........এখানে আর এক মূহুর্তও নয়........


(শেষ) 

Saturday, April 18, 2020

"ভয়ংকর সন্ধ্যা" পর্বঃ৪



রাতের এই ভয়ানক ঘটনা টা পরদিন সকালে পরিক্ষা দিতে গিয়ে বাবলু কিছুটা শুনতে পেয়েছিল আশে পাশের বন্ধু বান্ধব থেকে কিন্তু পুরোপুরি বুঝতে পারেনি তাই সে পরিক্ষা শেষে বাসায় এসে রাতুলের সংগে ব্যাপার টা শেয়ার করল। রাতুল ঘটনা শুনে হেসে বললঃ 

"আমি নিজেই ছিলাম এই ঘটনায়"!! তুই ত শুধু শুনেছিস আর আমি পুরো ঘটনা লাইভ দেখেছি!! 

রাতুলের কথায় আনিকা আর বাবলু চোখ গোল করে হা করে তাকিয়ে রইল। বাবলুর একবার মনে হলো রাতুল ওদের কে ভয় দেখানোর জন্যে এসব কিছু বলছে কিন্তু একটু পর ই ওর ভুল ভেংগে গেলো কেননা ইতিমধ্যেই রাতের ব্যাপারটা পুরো গ্রামেই ডাক পড়ে গেছে যার প্রভাব টা এই বাড়িতেও পড়েছে! 

পপি মেয়েটা আনিকাকে ডেকে নিয়ে আরো কয়েক জন মেয়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছিল এমন সময় ওর দাদী ই আগে কথাটা সবার সামনে তুলল। বৃদ্ধা মহিলার বয়স হয়েছে অনেক কিন্তু মুখের একটা দাঁত ও পড়ে নি। তিনি পান মুখে দিয়ে গম্ভীরমুখে সবার দিকে তাকিয়ে বললঃ 

"এই পপি! তোরা কেউ সন্ধ্যার পর কাজ ছাড়া ঘর থেকে এক পাও বের করবি না! গতকাল রাতে তোর বাচ্চু চাচার মেয়েরে খাটাস এ ধইরা মাইরা ফেলতে চাইছিল! কোন রকমে ওরে গ্রামের মানুষ বাঁচাইয়া আনছে"! 

আনিকা উৎসুক হয়ে জিজ্ঞেস করলঃ কি হয়েছিল দাদী? আমার ভাইয়াও আজকে ঘটনা টা বলেছে কিন্তু আমরা কেউ বিশ্বাস করি নি, ভেবেছি হয়ত আমাদের কে ভয় দেখাচ্ছে!!

মহিলা আরো গম্ভীর হয়ে বললঃ তোমরা ত জানো না, আমাদের এ গায়ে বহু আত্মা, প্রেতাত্মা, রাক্ষাস আছে! দিন দুপুরেই হেরা যারে তারে মাইরা গাছে ঝুলাইয়া রাখে! গত রাতে ত এই গ্রামের সেরা তান্ত্রিক হরিবল রে অজ্ঞান ই কইরা ফালাইয়া রাখছিল প্রেত্নীরা!! ভাগ্য ভালো যে অনেক মানুষ আছিল আর ঠিক সময় বাঁচাইতে পারছে!! সাবধান থাকো সবাই!! দিন কাল খারাপ!! 

মহিলার কথা শুনে আনিকার কিছুটা ভয় লাগলো, পপি মেয়েটা আনিকার মুখের দিকে তাকিয়ে বললঃ আমাদের বাসা থেকে সোজা যেই বাড়িটা দেখা যায় বট গাছের পিছনে, ওইটা চেয়ারম্যান বাড়ি। ওই বাড়িতেও ভূত আছে! চেয়ার ম্যানের ছোট পোলা, ফাঁসি দিয়ে মারা গেছিল! গ্রামে হের আত্মা ঘুরে বেড়ায়,  অনেকে ই দেখছে রাত দুপুরে!!

আনিকা এবার ঢোক গিলে চোখ গোল করে সবার মুখের দিকে তাকিয়ে রইল ফেলফেল করে! সে মনে মনে বললঃ এ কোন ভূতুড়ে গ্রামে এসে পড়েছি!! সব কিছুই ভৌতিক লাগছে এখন!!
রাতুল বিকেলে যখন বাবলুর কাছে রাতের সেই অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা করছিল তখন আনিকাও যোগ দিলো। তাদের কথার মাঝে সেখানে পপি, কান্তা আর কয়েকজন যুক্ত হলো। সবাই মনোযোগ দিয়ে রাতুলের কথা শুনছিল। কথার ফাঁকে ফাঁকে সুকৌশলে পপি বাবলু কে একটা চিঠি ধরিয়ে দিলো! বাবলু ভেতরে ভেতরে অনেক excited হয়ে পড়েছিল,  প্রেমের আভাস পাচ্ছিল সে। তাই সবাই যখন কথার মাঝে ব্যস্ত তখন সে আড়ালে গিয়ে চিঠিটা খুলে দেখলো কি লিখা আছে.......কিন্তু চিঠিতে কিছু লিখা নেই!! সাদা পেজ! বাবলু বিরক্তি নিয়ে কাগজটা ফেলে দিলো!  তারপর আবার আগের জায়গায় এসে সবার সাথে আলোচনায় যোগ দিলো। রাতুল তার অভিজ্ঞতার সাথে আরো রসিকতা মিলিয়ে এমন ভাবে ঘটনা টা উপস্থাপনা করতে লাগলো যে উপস্থিত সবাই ভীমড়ি খেয়ে গেলো! 


দেখতে দেখতে এ গ্রামে প্রায় রাতুল দের ১৫ দিন কেটে গেছে যার মাঝে গ্রামের অনেকের সাথেই তাদের খুব ভালো সম্পর্ক হয়ে গেছিল। এর ফলে প্রতিদিন বিকেলে বিভিন্ন বাসার পরিক্ষার্থী রাও আড্ডা দেওয়ার জন্যে রাতুলদের সাথে এসে যোগ দিতো। সামনে গণিত পরিক্ষা তাই ৩ দিন গ্যাপ দেওয়া হয়েছে পরিক্ষার মাঝে। এর ফলে অনেকে ই অবসর সময় টা উপভোগ করার জন্যে রাতুলদের সাথে যুক্ত হলো। বাবলুদের গ্রাম থেকে ওর যে সব সহপাঠী পরিক্ষা দিতে এসেছে তাদের অনেক অনুরোধের পর রাতুল রাজি হলো আজকে সবাই মিলে গ্রামের মাঝখানে যে বিশাল বড় জমিদার বাড়ি টা আছে সেখানে ঘুরতে যাবে। ওদের সাথে আনিকা,পপি কান্তা ও যুক্ত হলো।

রাতুল অনেক রসিক মানুষ। ওর কথা সবার ভালো লাগে তাই ও যখন কোন মিথ্যা কথা সবার সামনে সত্য বলে চালিয়ে যায়, তখন কেউ এ নিয়ে দ্বিমত পোষণ করে না। রাতুল আবির কে সাথে নিয়ে নিলো।

ওরা সবাই যখন বের হলো তখন বিকেল ৫ টার মতো বাজে। আকাশ পরিস্কার ই ছিল কিন্তু জমিদার বাড়ির পাশে পৌঁছাতে পৌঁছাতে আকাশটা মেঘলা হয়ে গেছে। প্রায় কুড়ি মিনিট হাঁটার পর ওরা যখন প্রাচীন সেই জমিদার বাড়ির সামনে এসে পৌঁছাল তখন পুরো আকাশ কালো হয়ে গেছে মেঘে!! পরিবেশটা কেমন যেন থমথমে হয়ে গেছে!  আকাশের এমন অবস্থা দেখে সবাই মন খারাপ করে ফেললেও রাতুল হেসে বললঃ 

"এটাই তো সুন্দর পরিবেশ "!! বৃষ্টি বৃষ্টি ভাব থাকবে, ঝড়ো বাতাস থাকবে! এসব না থাকলে হান্টেড প্লেস এ এসে কি কোন মজা আছে! তোমরাই বলো! 

সবাই রাতুলের কথায় ইতিবাচক সাড়া দিলো। আবির গ্রামের স্থানীয় ছেলে। সে একে একে সবাই কে জমিদার বাড়ির সব ঐতিহ্য ব্যাখ্যা করতে লাগলো। ওরা সবাই জমিদার বাড়ির সামনে বিশাল মাঠ টায় এসে বসল। সবার ভিতরেই এক অন্য রকম ভালো লাগা কাজ করছিল। আবির যখন জমিদার বাড়ির ঘটনা বলতে ব্যস্ত তখন কথার ছলে আনিকা হঠাৎ আবির কে উদ্দেশ্য করে বললঃ " ভাইয়া, মনে কিছু না করলে আপনি যদি আমাদের কে একটু বলতেন..... আপনার চেহারা এসিডে কি করে ঝলসে গেছে? 

আনিকার প্রশ্নে আবির কথার মাঝে হঠাৎ চুপ হয়ে গেলো।  রাতুল ব্যাপার টা খেয়াল করে সাথে সাথেই আনিকা ধমক দিয়ে বললঃ "পাগলের মতো কথা বলস কেন! ঘুরতে আসছিস, ঘুর, এতো বাড়তি কথা বলতে কে বলছে তোকে? 

রাতুলের কথার পাত্তা না দিয়ে অন্য সবাইও আনিকা কে সমর্থন করল। রাতুল সবাইকে ই বিষয়টি নিয়ে কথা না বলার অনুরোধ করতে যাচ্ছিল কিন্তু ওর কথা মাঝ পথে থামিয়ে দিয়ে আবির কিছুক্ষন চুপ করে নিচের দিকে তাকিয়ে রইল..... তারপর বড় একটা নিশ্বাস ছেড়ে বলতে শুরু করলঃ 

" আমার এ অবস্থা আসলে অনেকটা আমার খালামনির জন্যেই হয়েছে! আমাদের দু টা বাড়ি পরেই একটা বাসা আছে। ওই বাড়ির বড় ছেলেটা আমার খালামনিকে ভালো বাসতো কিন্তু খালামনি পাত্তা দিতো না!.... 

আবির কিছুক্ষন আবার চুপ করে রইল। ওর সিরিয়াস মুড দেখে সবাই চুপ হয়ে গেলো।  কিছুক্ষন চুপ থাকার পর আবির আবার বলতে লাগলো....... 

"খালামনি প্রতিদিন যে ঘরে থাকতো সে ঘরে আমি বেশি একটা যেতাম না, কিন্তু ওই রাতে আমাদের ঘরে মেহমান ছিল অনেক তাই আমি আর আমার ছোট বোন খালামনির রুমে ছিলাম। আমি খালা মনির জায়গায় ঘুমিয়ে ছিলাম, উনি আমার বোনার সাথে নিচে শুয়ে ছিল হঠাৎ মাঝ রাতে সেই পাশের বাসার ছেলেটা জানালা দিয়ে খালামনিকে ভেবে আমার গায়ে এসিড ঢেলে পালিয়ে যায়! আমার গায়ে এসিড পড়েছে, খালার গায়েও পড়েছে কিছুটা!!! 

সবাই নিশ্চুপ হয়ে গেছে। আনিকা আবার জিজ্ঞেস করলঃ যে এসিড মেরেছে তাকে ধরতে পারছিলেন পরে?

আবির মাথা নেড়ে বললঃ না! সে সেদিন থেকেই গ্রাম থেকে পালিয়েছে!! 

এ ঘটনা শুনে কেউ আর কোন কথা বলল না।রাতুল সবার সিরিয়াস মুড ঠিক করার জন্যে হেসে কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল কিন্তু আকাশে খুব ঘন ঘন বিজলি চমকাতে দেখে সবাই বাসায় ফিরতে ব্যস্ত হতে উঠলো। এর মাঝে সেখানে ছোটখাটো একটা দুর্ঘটনা ঘটে গেলো.......

আবির যখন নিজের কথাগুলো বলছিল তখন ওদের কথার মাঝে পপি মেয়েটা হাঁটতে হাঁটতে জমিদার বাড়ির চিলে কোঠার দিকে চলে গেছিল। কেউ খেয়াল করে নি। হঠাৎ ওর চিতকার শুনে সবাই তড়িঘড়ি করে ওকে খুঁজতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো!  কোথাও দেখা যাচ্ছে না ওকে কিন্তু ওর চিতকার শুনা যাচ্ছে বারবার!!  
অনেক্ষন পর পাভেল নামে বাবলুর বন্ধু টা চিলে কোঠার  জানালায় পপিকে দেখে, সবাই কে ডাক দিয়ে আংগুল দিয়ে দেখাতে লাগল!! সবাই পাভেলের হাতের দিকে নজর দিয়ে যখন উপরে তাকালো, সবার চোখ ছানাবড়া হয়ে গেছে!!!

পপির অর্ধেক শরির জানালার বাহিরে আর অর্ধেক শরির জানালার ভিতরে ছিল! পপি অজ্ঞান হয়ে জানালার মাঝখানে পড়ে আছে, চুল দিয়ে ওর পুরো মুখ ঢেকে গেছে,হাত দুটি ছড়িয়ে দুপাশে পড়ে আছে!!!

এ দৃশ্য দেখে সবাই 'থ' হয়ে গেলো, সবাই যেনো নড়ার শক্তি হারিয়ে ফেলেছে!!!


Monday, April 13, 2020

"ভয়ংকর সন্ধ্যা" পর্বঃ ৩



বাবলুদের বাসায় পরিক্ষা উপলক্ষ্যে মিলাদ পড়ানো হচ্ছিল। মসজিদের ইমাম সাহেব আর কিছু মুসল্লি ছাড়াও বাড়ির মুরুব্বিরা ও এতে ছিলো।  আনুমানিক ২ টার দিকে সবার খাওয়া দাওয়া শেষে রাতুল, আনিকা আর বাবলু অটো রিক্সায় তাদের জিনিসপত্র উঠাচ্ছিল, শায়লা বেগম বাসার গেট পর্যন্ত এসে বার বার বাবলুর মাথায় হাত বুলিয়ে দোয়া করতে লাগলো।  ভালো করে পরিক্ষা দিবি, কারো দিকে তাকাবি না, প্রশ্ন একবারের জায়গায় দশ বার পড়বি ইত্যাদি নানা নির্দেশনা দিয়ে শেষ বার বাবলু কে দোয়া করে বিদায় দিলো। বাবলুর মনে হলো সে কোন পরিক্ষা দিতে যাচ্ছে না, যুদ্ধে যাচ্ছে, সবার এতো সিরিয়াস মনোভাব দেখে মনে মনে অবাক ই হলো। 


আঁকাবাঁকা রাস্তা দিয়ে তাদের গাড়ি এগিয়ে চলছে।আনিকা গাড়ির ভিতর কখনোই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে না। সেটা বাস হলে ত একেবারে ই নয়, অটো রিক্সা তেও ওর সমস্যা। সারা রাস্তা সে ক্ষনে ক্ষনে জিজ্ঞেস করতে লাগলো কখন শেষ হবে রাস্তা, কখন
পৌঁছাতে পারবে..... 
অন্যদিনের তুলনায় আজকে ওদের পৌঁছাতে অনেক দেরি হলো কারন রাস্তায় গাড়ির বেশি ভির ছিল। ওদের গাড়ি যখন রূপসদী গ্রামে প্রবেশ করেছে তখন বিকেল প্রায় ৫ টা বেজে গেছে, সারা গ্রামে  একটা খুশির আমেজ বিরাজ করছিল, পরিক্ষার্থী দিয়ে পুরো গ্রামের বাড়িগুলো ভরে গেছে, এ যেনো অন্য রকম এক আনন্দময় পরিবেশ!! 

আনিকার ঘরে ঢুকে ব্যাগ পত্র রেখেই শুয়ে পড়ল,  কারন গাড়ির ধকল সে সামলাতে পারে না। অনেক ক্লান্ত হয়ে গেছে। রাতুল ব্যাগ থেকে কাপড় বের করে গোসল করার জন্যে বের হয়ে ফিরে এলো। গোসল খানায় পপি গোসল করছে। বাবলু পড়ার টেবিল টা ভালো করে গুছিয়ে বই নিয়ে পড়তে বসে গেলো..........
রাতুল এই গ্রামের অনেক কে ই ভালো করে চিনে কারন সে এই গ্রামে থেকেই পরীক্ষা দিয়েছিল। সন্ধ্যার দিকে সে বেরিয়ে গেলো স্থানীয় কিছু বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে। 

সন্ধ্যার পর পর ই পুরো গ্রাম থমথমে হয়ে যায়। নেহাৎ ঠেকায় না পড়লে খুব বেশি মানুষ জন বের হয় না। দোকান পাটের মৃদু আলো ছাড়া আর তেমন কিছু তখন চোখে পড়েনা কিন্তু কানে বাজে দূর কোথাও থেকে  ভেসে আসা শিয়ালের হুক্কাহুয়া ডাক আর ঝিঝি পোকার শব্দ........
রাতুল, আবির, পলাশ সহ আরো ৩/৪ জন মাঠের নিচের বটগাছটার নিচে বসে আড্ডা দিচ্ছিল। রাতুল কথা প্রসঙ্গে আবির কে জিজ্ঞেস করলঃ 

"আচ্ছা আবির,  শুনলাম তোদের গ্রামে নাকি ভূতপ্রেত আছে? সত্যি নাকি কথাটা"?

আবির কিছু বলার আগেই পলাশ বললঃ দোস্ত তুমি সত্যি ই শুনছো! আমাদের গ্রামের ইতিহাস ত তোমরা জানোই। বাপ দাদার আমলের জমিদার আর লাঠিয়াল রা যে অত্যাচার করে গেছে তাদের সেই অভিশাপ ই সারা গ্রাম বহন করছে। এই তো সামনেই একটা বিশাল বড় জমিদার বাড়ি আর একটা লাঠিয়াল বাড়ি আছে! সন্ধ্যার পরে ওই দিক টায় কোন মানুষ জন যায় না কারন যারা ই আজ পর্যন্ত গেছে সবাই বলছে সেখানে খারাপ আত্মা রা ঘোরাঘুরি করে, কাউকে কাউকে ত দিন দুপুরেও অনেক ক্ষতি করেছে!

রাতুল হেসে বললঃ বন্ধু আমার ত এ সব হান্টেড প্লেস অনেক ভালো লাগে। চলোনা একদিন সবাই মিলে সেখানে গিয়ে বসে আড্ডা দিবো!

আবির ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বললঃ তুই জানোস ওইখানে চিতাখোলা আছে? দিনে যাইতেই ভয় লাগে, আবার তুই বলস সন্ধ্যার পর যাইতে! বাপ দাদার দেওয়া জান টার প্রতি তর মায়া না থাকতে পারে, আমাদের মায়া আছে! 

আবিরের কথায় রাতুল ছাড়া বাকি সবাই সম্মতি দিলো। ওদের আড্ডা টা প্রায় শেষ হয়েই আসছিল এমন সময় কারেন্ট চলে গেলো!  কারেন্ট চলে যেতেই মূহুর্তের ভিতর পুরো গ্রাম কেমন যেনো থমথমে হয়ে উঠল!  পিনপন নিরবতা বিরাজ করছিল চারপাশে! হঠাৎ খুব দূর থেকে কোন একজন লোক কে দৌড়ে আসতে দেখে রাতুল,আবির সহ সবাই নড়েচড়ে বসল! লোকটা পাগলের মতো দৌড়াচ্ছিল তাই রাতুল অনেকটা আগ্রহ নিয়েই জিজ্ঞেস করলঃ 
"চাচা, এভাবে অন্ধকারে দৌড়ে কোথায় যাচ্ছেন! কি হয়েছে?

লোকটা দৌড়ের মাঝে থেকেই বললঃ লাইঠঠাল বাড়িতে কারে জানি বেল গাছে ঝুলাইয়া রাখছে! বেবাগ লোকেরা হেইদিকেই যাইতাছে, তোমরা গেলে আহো! 

লোকটা কারো জন্যে অপেক্ষা করলো না। যেভাবে দৌড়ে এসেছিল সেই গতিতেই চলে গেলো।  রাতুল আবির কে অনেক বার যাওয়ার জন্যে বলার পর সবার অনিচ্ছা থাকা স্বত্তেও আবিরসহ সবাই যেতে রাজি হলো। রাতুল মনে মনে অনেক উত্তেজনা অনুভব করছিল! অনেক দিন পর স্বচোক্ষে কোন ভূতে ধরা মানুষ দেখতে পাবে ভেবেই রোমাঞ্চকর অনুভূতি কাজ করতে লাগলো কিন্তু বাকিদের চেহারা দেখে মনে হচ্ছিল যেনো সবাইকে কোন যুদ্ধে পাঠানো হচ্ছে যেখান থেকে ওদের ফিরার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে!!

১০/১৫ মিনিট হাঁটার পর ওরা গ্রামের দক্ষিন দিকে একটা পুরাতন হিন্দু বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ালো। এখানে আসার আগে সবার ভিতরেই একটা ভয় কাজ করছিল কিন্তু আসার পর যখন দেখলো কম পক্ষে ১০০/১৫০ জন লোক জমে গেছে ইতিমধ্যেই, তাই সবাই মনে ভরসা পেলো। রাতুল, আবির, পলাশ সহ বাকিরা ভির ঠেলে একটু সামনে যেতেই দেখলো সত্যি সত্যি একটা ১০/১২ বছরের মেয়েকে বেল গাছের মাথায় কে যেনো বসিয়ে রেখেছে!! মেয়েটার চুলগুলো খোলা, এলোমেলো হয়ে আছে,বুকে উড়না নেই, অন্ধকারে ও বেশ ওর বিশ্রি হাসিটা সবার কানে বাজছিল!!

মধ্য বয়সের কোন একজন মেয়েটাকে গাছ থেকে নামাতে গাছে উঠতে যাচ্ছিল কিন্তু মেয়ে ভয়ংকর গলায় চেঁচিয়ে উঠে বললঃ খবরদার!! কেউ যদি গাছে উঠস তাইলে আমি গাছ থেকে লাফ দিয়া আত্মহত্যা করমু!!
লোকটা গাছে উঠতে যাবে কিনা অন্যদের সম্মুতির জন্যে যখন সবার দিকে তাকালো, দাঁত ছাড়া ৬৫/৭০ বছরের এক বৃদ্ধ ভাংগা ভাংগা কন্ঠে বললঃ 
"আরে মিয়া দেখো কি! গাছে উঠো!নামাইয়া আনো কমলারে"! ওরে প্রেতনী ধরছে, হরিবলরে দিয়া ঝাড়াইতে হইবো!


ভিড়ের মাঝখান থেকে লম্বা চুলওলা মধ্যবয়সী এক লোক দাঁড়িয়ে বললঃ কাদেরে বাপ, ভয় পাও কেন, গাছে উঠো, আমি প্রেতাত্মা তাড়ানোর মন্ত্র জপতাছি, তুমি শুধু মাইয়াডারে গাছ থেকে নামাইয়া আনো! 
কাদের বাপ খ্যাত লোকটি পুনরায় গাছে উঠে এক রকম জোড় করেই মেয়েটাকে গাছ থেকে নামিয়ে আনলো। সবাই অনেক আগ্রহ নিয়ে ঝুকে মেয়েটাকে দেখছিল, অন্ধকারের মধ্যে তেমন কিছু দেখা যাচ্ছিল না, দু এক জন লোক হাতের টর্চ জ্বেলে রেখেছিল। মেয়েটা চুপ হয়ে বসে নিজ মনে কি যেন বিড়বিড় করছি........হরিবল হাতে থাকা শংখটা তে কিছু একটা পড়ে ফুঁ দিয়ে মেয়েটার মাথায় রাখার সাথে সাথেই মেয়েটা তীব্র চিতকার করে উঠলো!!  ওর কন্ঠটা অনেক ভয়ানক শোনাচ্ছিল! উপস্থিত সকলেই ভয়ে কয়েক পা পিছিয়ে গেলো কিন্তু হরিবল আগের মতোই নির্বিকার ভাবে মন্ত্র জপ করতে করতে মেয়েটাকে ঝাড় ফুঁ দিতে লাগলো। মেয়ের চিতকার ক্রমশ বাড়ছিল......এভাবে হরিবল যখন ক্রমাগত মন্ত্র জপ করছিল মেয়েটা কিছু একটা ছুড়ে মারল হরির গায়ে!! হরিবল জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো!!  ঘটনাটি এতোই দ্রুত ঘটলো যে উপস্থিত সকলেই হতবাক হয়ে গেলো!  মেয়েটা লাফিয়ে উঠে চোখ পাকিয়ে জোড়ে চিতকার করে বলে উঠলঃ

 "আমি কাউকে ছাড়বো না! সব কয় টাকে আজ শেষ করে দিবো"! 
মেয়েটা মাথা ডানে বায়ে পাগলের মতো ঘোরাতে শুরু করল যা দেখে সবাই ভয়ে জ্ঞান হারানোর অবস্থা! সবাই দৌড়ে পালাতে লাগলো!! রাতুলের দিকে কটমট চোখে তাকিয়ে পলাশ বললঃ তুই আজ আমাদের কে মারার জন্যে এখানে আনছিস!! পালা জান থাকতে!! তোর কথায় আর কখনো আমি কোথাও যাবো না!
রাতুল ও ওদের সাথে দৌড়াতে দৌড়াতে বললঃ আরে মজা ই ত লাগছিল! তোরা দৌড় না দিলে ত আমি সব টা দেখে আসতাম! 
আবির ভয়ানক হাসি দিয়ে বললঃ দোস্ত আর এক মিনিট ওই জায়গায় দাঁড়ালে আমাদের জান আর দেহে থাকতো না! তুই বেটা মানুষ না নাকি! ভয় ডর তর নাই! 

রাতুল ও মনে মনে বেশ ভয় পেয়েছিল কিন্তু মুখে প্রকাশ না করে আগের মতোই হেসে বললঃ এটাই ত আসল সাসপেন্স!! যা তোরা বুঝবি না কখনো!!




Saturday, April 11, 2020

"মানুষরূপী কিছু অমানুষ "

বন্ধুরা আমার আজকের লিখাটি কোন গল্প নয়। আজকে আমি আপনাদের সামনে কয়েকজন মানুষ বেশের অমানুষদের চিত্র তুলে ধরবো। যারা দিনের পর দিন সহজ সরল মানুষের সরলতার সুযোগ নিয়ে তাদের রক্ত পানি করে উপার্জিত টাকা কে হজম করে চলেছে। সময় থাকতে এদের থেকে সাবধান হন....
আসুন তাহলে আমাদের Expose এর প্রথম পর্বে আমরা আজকের ভন্ডদের তালিকা টা একটু দেখে আসি.........
আমার তালিকায় যাদের নাম আজকে প্রকাশ করছি তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে আমার কাছে কম করে হলে ৪০/৫০ টা জালিয়াতির প্রমাণ আছে, কবে কোথায়,কার কাছ থেকে কতো টাকা নিয়েছে আর নেওয়ার পর কি করে সেই অসহায় মানুষ গুলোকে ব্লক করে রাখছে। তান্ত্রিক ব্লাক ম্যাজিক চ্যানেলটি তারা বেশি চিনবেন যারা ইউটিউব এ আশা নিয়ে ঢুকেন যে, কোন বাবা হয়তোবা আপনার কষ্টটা লাঘব করতে আপনাকে হেল্প করবে।এ চ্যানেল টা যে চালায় তার নাম রেজওয়ান রফিকি! বয়স ২৫/৩০ এর বেশি হবে না। নিজেকে বড় মাপের কবিরাজ দাবী করলেও প্রকৃত অর্থে সে একজন বড় মাপের ধোকাবাজ, সে বিভিন্ন বই থেকে মন্ত্র তন্ত্র সংগ্রহ করে সেটা ইউটিউব এ নিজের বলে চালায়। তাকে আপনি কখনো কল দিয়ে পাবেন না কারন টাকা মারতে মারতে এমন পর্যায়ে পৌছে গেছে যে, কল ধরতেও ভয় পায়, বাটপারির প্রথম ধাপ হচ্ছে সে সবাইকে এস এম এস করে নিজেদের সমস্যা বলতে বলে কারন দেখে যারা এস এম এস করছে তাদের কাছ থেকে আগে টাকা মেরেছে কিনা, যদি দেখে আগের পরিচিত তাহলে ব্লক দিয়ে দেয় আর অপরিচিত হলে সাথে সাথে ই এস এম এস করে, এমন ভাবে আপনাকে পটাবে যে কাজ রাত ভোর হলেই শেষ কিন্তু ও ত কাজের "ক"ও জানে না এটা বেশিরভাগ মানুষ ই জানেন না। যেমনঃগত দু মাস আগে সৌদি প্রবাসি এক ভাইয়ের কাছ থেকে কাজ করে দেওয়ার প্রতিশ্রতি ফিয়ে ৩৫০০০ টাকা নিয়েছে, এখন সেই লোক কে ব্লক দিয়ে রেখেছে। ওই প্রবাসী ভাই দিন রাত এস এম এস করে কিন্তু রেজওয়ান ত টাকা মেরে সাথে সাথেই মোবাইল অফ করে ফেলে,পাবে কই???এই রেজওয়ান নিজের এলাকায় ২/৩ বার বিচারের মুখোমুখি হয়েছে, এলাকাবাসী তাকে কয়েকবার মারধর ও করেছে, এক শালিসে সে প্রায় ২৫০০০ টাকা মুচলেখা ও দিয়েছিল যে আর এমন ভন্ডামি করবে না কিন্তু লোভ আর ধোকাবাজি তার রক্তে মিশে আছে সে তা ছাড়তে পারেনি।চ্যানেল যখন খুলেছিল তখন ওর দাদার কিছু লোক দিয়ে প্রচার করাত। গত মার্চ এ এই রেজওয়ান কে গ্রামবাসী প্রায় ৪ ঘন্টা গাছের সাথে বেধে রেখে নির্যাতন করেছিল কারন সে গ্রামের এক লোক কে ৭ দিনে বৌকে বশিকরন করে দিবে বলে ২০০০০ টাকা নিয়েছিল কিন্তু টাকা নেওয়ার পর রেজওয়ান আগের মতোই হাওয়া! তাই এবার তাকে পুলিশে দেওয়া হয়। বর্তমানে জামিনে আছে সে।
বড় মাপের বাটপার যে শুধু বাংলাদেশের তান্ত্রিক চ্যানেল গুলো তা নয়। এই লোক কে হয়ত অনেকে ই চিনবেন। নিজেকে মা তারার ভক্ত পরিচয় দেওয়া এই বাটপারের নাম তারানাথ। সে কোন তান্ত্রিক নয়, সাধনা মাত্র শিখতে চলেছে, ভিডিওতে যা বলে তার সবটাই হলো মিষ্টি কথায় লোক ভুলানো আর টাকা মারার ধান্দা, অনেক প্রবাসী ভাইয়েরা থাকেন যারা কষ্ট করে টাকা উপার্জন করেন, তান্ত্রিকদের কাছে বিভিন্ন কাজের জন্যে আসেন, সেই সব প্রবাসীদের টার্গেট করাই এই ভণ্ডর কাজ। সে এ পর্যন্ত প্রায় ২০/৩০ হাজার টাকার জালিয়াতি করে ফেলেছে আমাদের ই বাংলাদেশের এক ভাইয়ের সাথে আর তার ১০০% প্রমাণ ও আছে।





এমন আরো অসংখ্য চ্যানেল আছে যারা প্রতিনিয়ত সহজ সরল মানুষের সরলতার সুযোগ নিয়ে তাদের রক্ত পানি করে উপার্জিত টাকা কে মেরে খাচ্ছে! ভাই আপনারা একটু বিবেক দিয়ে ভাবেন, কাদের হাতে টাকা দিচ্ছেন! এরা ত মানুষ না! ওরা হচ্ছে একেকটা নরপশু!  রক্তচোষা বাদুর!ইউটিউব এ কোন তান্ত্রিক নেই! যে কয়েকজন আছেন তারা কেউ ই ইউটিউবার নয়, উনারা কোন তান্ত্রিক নয়, সবাই আল্লাওলা, পীর, আর এসব গাজাখোর রা  ত নামাজ কি এটাই জানে না, সাধনার কোন নাম ও বলতে পারেনা! তারানাথ এর ভিডিও যারা দেখছেন তারা বুঝবেন, সে জিন কি এটাই জানে না! রুহ কি তা জানে না!রেজাউল গায়েব কি তা কোন তান্ত্রিক জানে না! বশিকরন ২৪ ঘন্টায় করতে হলে কোন জায়গায় কি লাগবে তাও বলতে পারে না, বই বিদ্যা দিয়ে যদি সব হতো তাইলে ত দোকানদার রা আরো বড় কবিরাজ হয়ে যেতো! সব ই বিবেক দিয়ে চিন্তা করতে পারেন তাহলে এদের কে বিশ্বাস করে টাকা ধরা খেয়ে কান্না করতে হবে না! একবার ভাবেন, বশিকরন কি হাতের মোয়া যে চাইলেই ১ ঘন্টায়, ১ দিনে হয়ে যাবে? এসব হচ্ছে টাকা খাওয়ার ধান্দা।বিবেক কে জাগান.........



 সবাই যে খারাপ তা নয়, যে আপনার কাজের মূল্যায়ন করবে, যে কাজের সাথে সাথে জবান রক্ষা করবে, কাজ না হলে টাকা ফেরত দেওয়ার স্ট্যাম্প সই করবে এসব তান্ত্রিকদের অভাব নেই কিন্তু এমন লোক ইউটিউব এ খুজলে পাবেন কই? যারা ইউটিউব চালায় ওরা কবিরাজ না, তান্ত্রিক না, এরা ব্যবসায়ী,  এদের মাথায় একটা জিনিস ই কাজ করে ১০ জন ভিডিও দেখলে এক জন ফোন দেবেই আর সেটাই ওদের ধান্দার মূল উদ্দেশ্য। এসব জানোয়ারদের থেকে নিজে সাবধান থাকুন,অন্যকে সাবধান করুন।

Wednesday, April 8, 2020

"ভয়ংকর সন্ধ্যা " পর্বঃ ২



পরিক্ষার আর মাত্র দুদিন বাকি আছে তাই বাবলু জোড়াজুড়ি করতে লাগলো আজকেই জিনিস পত্র নিয়ে ওই বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিতে.......রাতুল বাসায় ছিল না তাই মায়ের কানের কাছেই ঘ্যানঘ্যান করতে থাকলো বাবলু।

বাবলুরা ছিল ৫ভাই, ৪ বোন। ওর বাবা ছিলেন সরকারি চাকুরিজীবী। অল্প বয়সেই তিনি ব্রেনস্টোক করে মারা যান যার ফলে বাবলুর বড় ভাই প্রবাসী হতে বাধ্য হন পরিবারের তাগিদে। বাবলুর মা শায়লা বেগম অনেক কষ্ট করে স্বামির অবর্তমানে সন্তানদের মানুষ করেছেন। বাবলু কে নিয়ে উনার গর্ব অনেক কারন অন্যদের তুলনায় বাবলু পড়াশোনায় একটু এগিয়ে ছিল, মেধা ভালো থাকায় মায়ের আদর টাও বেশিই পেয়েছে।যাই হোক,শায়লা বেগম কিছুতেই দুই দিন আগে যেতে দিতে নারাজ। বাবলু অনেকক্ষন চেচামেচি করলেও তেমন কোন ফল হয় নি দেখে মুখ ভার করে বড়ুই গাছের নিচে বসে রইল।

বাবলু মনে মনে বললঃ আমি ত আজকেই যাবো, দরকার হলে ঝগড়া করবো! ইস কত সুন্দর গ্রাম, এক দুই দিন আগে গিয়ে গ্রামটা দেখতে হবে না!

এমন করে অনেক ক্ষন ভাবার পর উঠতে যাচ্ছিল এমন সময় বাবলুর মেঝো বোন আনিকা এলো। সে চোখ দুটো গোল করে বাবলুর দিকে তাকিয়ে বললঃ কিরে! এতো যাওয়ার জন্যে পাগল হইছস ক্যান, কি আছে ওই গ্রামে? পরিক্ষা দিতে যাবি নাকি ভ্রমন করতে?

বাবলু হেসে বললঃ আরে তুই জানস না, কি সুন্দর গ্রাম! পুরা ই ছবির মতো! আর অনেক ভয়ানক!
আনিকা হেসে বললঃ আমি ও যাচ্ছি তোদের সাথে! একা যেতে পারবি না, রাতুল ভাইয়া তুই আর আমি যাবো।

বাবলু হেসে বললঃ তাই নাকি! তুই গেলে ত আমার ভালো ই হয়, ওই বাসায় একটা মেয়ে আছে, পটাইয়া দিবি আমাকে!
আনিকা বাবলুর দিকে নাক ফুলিয়ে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বললঃ

"আজেবাজে কথা কম বল! পরিক্ষা দিতে গিয়ে এসব করলে পরিক্ষা খারাপ হবে আর আম্মা জানতে পারলে জুতা দিবে তোকে"!

বাবলু মুখ কালা করে বললঃ আরে! মজা ও বুঝোস না! আমি ত এমনি মজা করে বলছি!
আনিকা বাবলুর দিকে তাকিয়ে রইল কিন্তু কিছু বলল না কারন সে জানে বাবলু কথাটা দুষ্টমি করে বলে নি, বাবলু যেখানেই যায় মেয়েদের আড্ডা থাকেই তাই কথাটা যে নিছক দুষ্টমি ছিল না তা আনিকা বুঝেই চুপ করে রইল।

দুপুর আনুমানিক ১২টার দিকে যখন রাতুল বাসায় এলো তখন শায়লা বেগম ই আগে বললেন বাবলুর মালপত্র আজকে নিয়ে যেতে। বাবলু মন খারাপ করে ছিলো কিন্তু মায়ের কথায় ওর মন সাথে সাথেই ভালো হয়ে উঠল।

শায়লা বেগম বললেনঃ মাল পত্র রেখে চলে আসিস, আগামীকাল মিলাদ পড়ানোর পর চলে যাস আনিকা আর রাতুল কে নিয়ে। আনিকা রান্না করবে।

রাতুল একটু আলসে প্রকৃতির! সে সহজে কোন জায়গায় নড়তে নারাজ তাই একটু বেকে বসলো। শায়লা বেগমের অনেক জোড়াজুড়ির পর রাতুল বাজার থেকে অটো রিক্সা নিয়ে এলো!
বাবলুর মন খুশিতে ছটফট করছিল! সে আগেই সব বই পত্র,বিছানা, কিছু হারিপাতিল গুছিয়ে রেখেছিল আনিকার সাথে মিলে। তাই অটো আসার পর গাড়ি ভরতে বেশি বেগ পেতে হলো না ওদের। আজকে শুধু রাতুল আর বাবলু ই যাবে, ওরা আবার বিকেল নাগাদ ফিরে আসবে।

গাড়িতে সারা রাস্তা বাবলু মনে মনে ছক কষছিল সেখানে গিয়ে আগে কোন কোন বন্ধু বান্ধবের সাথে দেখা করবে! ওর ধারনাতে এস এস সি ছিলোই না, ওর মনে হচ্ছিল কোথাও পিকনিক করতে যাচ্ছে!!

ঘন্টা খানিক পর ওরা যখন নির্ধারিত বাসার সামনে পৌছল কিছু উৎসুক ছোট ছেলে মেয়ে দৌড়ে এলো অটো রিক্সার সামনে!
ওদের মাঝে কেউ একজন গলা ফাটিয়ে ডাকছিলঃ পপি আপা তোমাগো মেহমান রা আইসা পড়ছে, চালাইয়া(জলদি) আহো(আসো)!!!

রাতুল গাড়ি থেকে নেমে মাল পত্র ভিতরে নিয়ে যাওয়ার জন্যে রেডি হচ্ছিল, সব ছেলে মেয়েরা হুড়োহুড়ি করে মাল পত্র নিজেরা এগিয়ে নিতে লাগলো।

এমন সময় গাড়ির সামনে শ্যামলা চেহারার ১৩/১৪ বছরের একটা মেয়ে এসে দাঁড়াল। বাবলু চিনতে পারলো, সেইদিন এই মেয়েই দরজার পাশে দাঁড়িয়ে ওদের দেখছিল, বাবলুর মনে হলো অনেকটাই মোটা!

মেয়েটা বলল ঃ ব্যাগটা আমার কাছে দেন মামা!!

রাতুলের হাত থেকে ব্যাগ টা নিতে চাইলে রাতুল অনেক বিনয়ী হয়ে কাচুমাচু স্বরে বললঃ না না! তুমি কেন নিবে, আমি ই নিতে পারবো!

রাতুল ব্যাগ নিয়ে ভেতরে চলে গেলো। বাবলুর মনে মনে রাগ হলো! মামা ডাকে কেন এই মেয়ে!! সব মজা টা ই নষ্ট হয়ে গেলো!

ঘরটা ছোট হলেও পরিবেশ টা খুব সুন্দর, বিশেষ করে জানালার সামনে পড়ার টেবিলে বসছে সামনে বিশাল মাঠ, আর মাঠের মাঝখানে বিশাল বড় বট গাছ টা চোখে পড়ে যা দেখতে অনেক সুন্দর লাগে। বাবলু ব্যাগ থেকে বই পত্র গুছিয়ে টেবিলে রাখছিল, রাতুল বিছানায় চাদর বালিশ রাখছিল হঠাৎ বাইরে কিসের গন্ডগোল শুনি দৌড়ে বেরিয়ে এলো ওরা উঠানে! উঠানে অনেক মানুষ জমে গেছে!! কান্তা নামের কোন এক মেয়েকে নাকি পাশের গাব গাছ থেকে কিসে তাড়া করেছে, মেয়েটা পপির সমবয়সী, এক বাড়িতেই থাকে, দুটা ঘর পরে ওদের ঘর!মেয়েটা হাঁপাতে হাঁপাতে উঠানের উপর শুয়ে পড়লো! জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে!!

ঘটনার আগামাথা বুঝতে রাতুল বাবলুদের কষ্ট হলেও উঠানে উপস্থিত সবার চোখ ই তখন ছানাবড়া হয়ে আছে, কেউ কেউ মেয়ের মাথায়, মুখে পানি ছিটাচ্ছে,আবার কেউ কেউ নানান আজগুবি কথা শোনাচ্ছে।
প্রায় দাঁত নেই বললেই চলে এমন একজন দাদী বয়সী মহিলা পান চিবুতে চিবুতে সবার দিকে তাকিয়ে হাত নেড়ে বললঃ

 "আমি ত আগেই কইছিলাম, চেয়ারম্যান বাড়ির আশেপাশে ভরদুপুরে,  সন্ধায়, রাত বিরাইতে মাতামতি না করতে"! চেয়ারম্যান এর পোলার আত্মা ঘোরে,টঠল দেয়! মাইয়া ডাংগর হইছে, আমাগো উচিৎ কথা ত ভালা লাগে না, এখন বুঝুক,থাপ্পড় টোপ্পড় দিয়া দিছে নি ভালা কইরা তোমরা দেখ! 

বুড়ির পান চিবানো কথার বেশিরভাগ কথাই কেউ না বুঝলেও ঘটনাটা যে বেশ ভয়াবহ ই ঘটেছে তা সবাই বুঝতে পারলো। প্রায় আধা ঘন্টা পর যখন মেয়ের হুশ ফিরল ওর মুখের কথা শুনে উপস্থিত সবার সাথে সাথে রাতুল বাবলুও হা হয়ে তাকিয়ে রইল! 

মেয়েটা কাঁপাকাঁপা কন্ঠে ঘটনার বর্ণনা দিতে লাগলো ঃ

" আমি লাকড়ি কুড়াইয়া চেয়ারম্যান বাড়ির পাশের গাব গাছের নিচে যখন আইছি, আমার মনে হইতাছিল কেউ আমার পিছে আছে! আমি ঘাড় ফিরিয়ে দেখি কেউ নাই! আবার যখন গাব গাছ তলা থেকে একটু সামনে আসছি, দেখি একটা মহিলা বাচ্চা কোলে নিয়া আমার দিকেই আসতাছে!

কিছুক্ষন থেমে থেকে কান্তা আবার বলতে লাগলোঃ আমার সামনে আইসা কয়, আমার কাছে হের কোলের বাচ্চাটারে রাখতে! আমি কইলাম" আমি কেমনে কোলে নিমু, আমার মাথায় লাকড়ির বোঝা দেহেন না! তখন মহলাটা হাত লম্বা কইরা আমার মাথা থেকে লাকড়ির বোঝাটা টানতে লাগলো! কি বড় হাত যে হইছিল আপনারা না দেখলে বিশ্বাস করবেন না!! আমি লাকড়ির ঝুড়ি রাইখা দৌড় দিতেই দেখি মহিলা এক হাতে আমার উড়না টাইনা ধইরা হাসতাছে, আর এক হাতে বাচ্চাটারে আলগাই ধইরা কামড়াইতাছে!! সারা মুখে রক্ত!! আমি কোন রকমে জান লইয়া পলাইছি!!

কান্তার কথা শেষ হতেই আরেক জন বললঃ তোরা ত মুরিব্বিদের কথা হুনোস না! মানা করার পর ও দূষিত জায়গায় ঘোরাঘুরি করস, কোন দিন জানি মাইরা তোগোরে ওই বট গাছে ঝুলাইয়া রাখে, দেখিস!! 

রাতুল ঘটনাটি মনোযোগ দিয়ে শুনছিল কিন্তু বাবলুর ভয়ে হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে গেছে, সে রাতুল কে বাসায় ফিরে যাওয়ার জন্যে টেনেটুনে বের করে নিয়ে আসলো! 

রাতুল মাঠে বেরিয়ে বললঃ খুব মজার ব্যাপার তো! গ্রামটা দেখেই মনে হয়েছিল এখানে ভূত প্রেত থাকতে পারে! 

বাবলু চোখ গোল করে বললঃ তোমার কাছে কি মনে হয় এই মেয়ে সত্যি কথা বলছে সব? 

রাতুল হেসে বললঃ অবশ্যই সত্যি বলছে, মেয়ের চোখ মুখ ই বলে দিচ্ছে মেয়ের অবস্থা কতোটা খারাপ হয়ে গেছে এই ঘটনায়! 

বাবলু সব জান্তার মতো মাথা নেড়ে সায় দিলো।  ওরা বটগাছ টার নিচে আসতেই বাবলুর মনে কেমন জানি একটা ভয় কাজ করতে লাগলো তাই সে রাতুলের ঘা ঘেসে হাঁটতে শুরু করল! 

ওদের কপাল খারাপ, রাস্তায় কোন রিক্সা বা অটোরিকশা পেলো না তাই বাধ্য হয়ে এই বিকেল বেলা হেঁটে হেঁটেই বাড়ি পৌছার সিদ্ধান্ত নিয়ে গ্রামের ভিতর দিয়ে শটকার্ট রাস্তা ধরে এগুতে থাকলো। 

রাতুল এই গ্রামের খুটিনাটি সব চিনে, জানে তাই বাবলুকে যখন সামনে যা পড়লো তা নিয়েই বড় বড় ইতিহাস শোনাতে লাগলো যার কিছুটা সত্য আবার কিছুটা নেহায়েতই বাবলু কে ভয় দেখানোর জন্যে! ওরা যখন রূপসদী গ্রাম টা ছেড়ে বিশাল ধান ক্ষেতের পাশ ঘেসে হাটঁছিল তখন হঠাৎই রাতুল দাঁড়িয়ে গেলো! বাবলু চোখ গোল করে জিজ্ঞেস করলোঃ 

"কি হইল আবার!  তোমারে ভূতে ধরছে নাকি!! 

রাতুল এক গাল হেসে বললঃ আরে সামনে দেখ! কি বিশাল বড় কবরস্থান!! মাইকপুর কবরস্থান বলে এটাকে!! জমিদার আমলে এই কবরস্থানে হাজার হাজার মানুষকে জ্যন্ত সমাহিত করা হয়েছিল! ওদের আত্মা এখনো ঘুরে ফিরে! যদি আমাদের ধরে.....!!!

বাবলু ঢোক গিলে চোখ সরু করে বললঃ কি কও এইসব!! সত্যি ই যদি ধরে তাইলে আমার পরিক্ষার কি হইবো!! বাসায় আমগোরে না পাইলে কই খুঁজবে আম্মা!!

রাতুল বুঝল বাবলু বেশ ভয় পেয়ে গেছে তাই হেসে বললঃ কি বলিস তুই! আমি সব ভূত প্রেত, ডাকিনী যোগীনির ওস্তাদ!! আমার কাছে আসলে ফু দিয়ে উড়িয়ে দিবো! 

কথাটা বলে গোল করে বাবলুর দিকে তাকিয়ে বললঃ অবশ্য তুই যেই চিকনা! তোরে ত ভূতেরা কোলে করে নিয়েই দৌড় দিবে, তখন অবশ্য তোরে বাঁচাতে আমার আবার একটু শক্তি খরচ হবে, সেটা ব্যাপার না! 

বাবলু ঢোক গিলে চোখ গোল করে ফেল ফেল করে তাকিয়ে মনে মনে বললঃ আরে বাপরে! আমার ভাই এতো বড় ক্ষমতাশালী আগে জান্তাম না! আয় রে ভূত দেখি কেমনে ধরস!!

আরো একটা গ্রাম পার হয়ে ওরা যখন ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল বাবলুকে নিয়ে একটা বড় আম গাছের নিচে দাঁড়িয়ে বিশ্রাম নিতে লাগলো রাতুল। 

বাবলু চারপাশে ভালো করে তাকিয়ে দেখে বললঃ আরে বাহ! গ্রামেও কি আংগুর ফল গাছ আছে নাকি!! 

রাতুল বললঃ কই আংগুর ফল গাছ রে, ট্যাংরা!!!

রাতুলের মুখে নিজের খিতাবী নামটা শুনে বাবলু অপমানিত বোধ করল তাই একটা গাছ দেখিয়ে বললঃ এটা কি গাছ তাইলে? 

রাতুল গাছ টা দেখে হেসে বললঃ তোর ত সেই ট্যালেন্ট,  আমি চিনি নাই, তুই চিনে ফেলেছিস! খাবি নাকি আংগুর ফল? পাড়বো গাছ থেকে? 

রাতুলের কথায় বাবলুর জিবে জল এসে গেছে! তাই তো! খিদে পেয়েছে বেশ!সেই ১ ঘন্টা যাবত হাঁটছে! যদিও আংগুর গুলো দেখতে কাচা, তাতে কি, খাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে হেসে বললঃ যাও বেশি করে আনো! 

রাতুল হেসে বললঃ এক নাইলা গাছ, উপরে উঠতে পারবো না! তোকে নিচে থেকে কুড়িয়ে দেই, খা! 

রাতুল কয়েকটা নিচে থেকে কুড়িয়ে বাবলুর হাতে দিলো, পাশেই একটা ছোটখাটো বিল ছিল, বাবলু সেখান থেকে ফলগুলি হাতে নিয়ে ধুয়ে একসাথে ৩ টা মুখে দিয়েই চিবাতে গেছে সারা মুখ তিতায় বিষাক্ত হয়ে উঠল!! বাবলু সাথে সাথে মুখ থেকে ফেলে, বিল থেকে বেশি করে পানি নিয়ে মুখ পরিস্কার করতে করতে চিল্লাতে লাগলোঃ

 "কি খাওয়াইছ এটা"! আংগুর কি এতো তিতা হয় জীবনে!! বমি আসতাছে আমার!!

রাতুল হেসে অস্থির! সে মুলার মতো দাঁতগুলো বের করে হাসতে হাসতে বললঃ SSC পরিক্ষা দিবি এখনো নিম গাছ আর আংগুর গাছ চিনস না!! এটা নিম!! 

রাতুলের কথায় বাবলু থ হয়ে দাঁড়িয়ে রইল!!! বোকা এতোটা আগে লাগেনি নিজেকে!!!





Wednesday, April 1, 2020

"ভয়ংকর সন্ধ্যা" ১ম পর্ব



আমার আজকের গল্পটি তাদের জন্যে নয় যারা ভূতপ্রেত বিশ্বাস করেন না অথবা যারা অতিশিক্ষিত হওয়ার নামে কাকের মতো চোখ বুঝে থাকেন আর আশেপাশের সব সত্যগুলো কে অবজ্ঞা করে যান।আমি আমার Blogg এ শুধু সেসব ঘটনাগুলো ই উপস্থাপন করি যেসব ঘটনার চাক্ষুষ প্রমাণ আছে এবং যা বাস্তব।আমি কোন মনগড়া কাহিনী লিখি না, আমি নিজেও গ্র‍্যাজুয়েশন কমপ্লিট করেছি, সত্য মিথ্যা যাচাই করার ক্ষমতা আমার ও একটু আধটু আছে তাই। আজকের ঘটনা টা আমি যাদের কাছে শুনেছি তারা বেশিরভাগ ই এই ঘটনা স্বচোখে দেখেছে। আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে........

সালঃ২০১০, মার্চ মাস;

সময়টা SSC exam এর। আমাদের দেশে তখন ম্রেট্রিক পরিক্ষাটা মার্চ মাসেই শুরু হতো আর প্রতিটি পরিক্ষার ভিতর প্রায় ২/৪ দিন করে বন্ধ থাকতো। যার ফলে ১৪ টা পেপার দিতে প্রায় ১মাসের উপরে সময় লেগে যেতো। গ্রামে সাধারণত পরিক্ষার কেন্দ্রগুলো অনেক দূরে হয়। কারো কারো পরিক্ষার কেন্দ্র ত ৫ গ্রাম পড়েও পড়তো। যার ফলে বেশিরভাগ ছাত্র ছাত্রীদেরই যাতায়াতে অনেক অসুবিধা দেখা দিতো ফলে পরিক্ষা শুরু হওয়ার ১মাস আগেই কেন্দ্রের আশে পাশের গ্রামগুলোতে তারা সেই এক মাসের জন্যে বাসা ভাড়া নিয়ে রাখতো। বাবলুর বেলায় ও তেমন ই হলো। বাবলু ssc পরিক্ষার্থী ছিলো। ওর স্কুলের কেন্দ্র পড়েছিল ওদের গ্রাম থেকে ৪/৫ গ্রাম পরে রূপসদী তে। রূপসদী কুমিল্লার অন্তর্ভুক্ত অনেক প্রাচীন আর অনেক বৃহৎ একটা গ্রাম। চার পাশের গ্রামগুলোর তুলনায় এ গ্রামটি সবচেয়ে বেশি আকর্ষণীয় ছিল জমিদারি আমলের বাড়িঘরের জন্যে আর বিশাল খাল হ্রদের কারনে। যাই হোক, বাবলু ও অন্যদের মতো ওর পরিবারের সম্মুতিতে রূপসদী গ্রামে বাসা ভাড়া নেওয়ার জন্যে গেলো। ওর সাথে ছিল ওর সেজো ভাই রাতুল। যেহেতু আর এক সপ্তাহ পরেই এস, এস, সি এক্সাম শুরু হয়ে যাবে তাই শেষ মূহুর্তে বাসা ভাড়া নিতে এসে বাবলুদের প্রায় দিশেহারা অবস্থা। রাতুল যখন এস,এস,সি এক্সাম দিয়েছিল তখন ও এই গ্রামেই ওদের পরিক্ষার কেন্দ্র ছিল। রাতুল যখন বাবলু কে নিয়ে সেই কেন্দ্রের কাছে এলো তখন প্রায় মধ্যবিকেল হয়ে গেছে। রোদের তীব্রতা নেই বললেই চলে। হালকা হাওয়া বইছে। সাধারনত মার্চ মাসে প্রচন্ড গরম পড়ে। রূপসদীতে গরমের তীব্রতা আরো বেশি এর কারন হলো এ গ্রামের কোথাও মাটি নেই, নদি নেই.....আছে শুধু বালি আর খাল!

রাতুল বাবলুর সেজো ভাই হলেও ওদের দুজনের মাঝে সম্পর্ক টা বন্ধুর মতো ই। রাতুল একদম সাদা মনের মানুষ। সহজ সরল আর চঞ্চল স্বভাবের। কোন জায়গায় গেলে সে জায়গার অতীত ঐতিহ্য নিয়ে বিস্তারিত না বলতে পারলে রাতুলের পেটের ভাত হজম হয় না! তাই ওরা দুজন যখন কেন্দ্রের সামনে এসে উপস্থিত হলো, রাতুল হাত দিয়ে ইশারা করে বাবলু কে দেখিয়ে বললঃ
"দেখ! এইটা তোদের কেন্দ্র! আমরাও এই কেন্দ্রেই পরিক্ষা দিয়েছি! কি সুন্দর"!

বাবলু দেখলো চোখের সামনে দাঁড়িয়ে আছে বিশার বড় এক বিদ্যালয়ের গেট যার উপর বড় করে লিখা আছে" রূপসদী বিন্দাবন উচ্চ বিদ্যালয়"

বিদ্যালয়ের গেট তালা দেওয়া তাই ভেতরে ঢোকার সুযোগ তখন ওদের হয়নি। খুব সুন্দর আর মনোরম পরিবেশ বাবলুর মন কে খুশি করে তুলল! সে দাঁত বের করে হেসে বললঃ সত্যি অনেক সুন্দর কিন্তু অনেক পুরাতন!

বাবলুর কথায় রাতুল ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বললঃ তুই সুন্দরের কি বুঝিছস! যে জিনিস যতো পুরান হবে সে জিনিসের সৌন্দর্য ততোই বাড়বে! মূর্খ কোথাকার!

শেষের কথাটায় বাবলুর দাঁত বন্ধ হয়ে গেলো। সে চোখ গোল করে ফেলফেল করে তাকিয়ে রইল।

রাতুল ছেলেবেলা থেকেই ছিল কবি স্বভাবের আর প্রকৃতি প্রেমি।বলা বাহুল্য, এক ই সাথে বিশ্বপ্রেমিক বললেও ভুল হবে না কেননা প্রেমের যদি রেকর্ড গননা করা হতো তাহলে এতোদিনে সেঞ্চুরি করে ফেলতো!!

অনেক খোঁজাখুঁজি করেও যখন কোন বাসা পাওয়া যাচ্ছিল না, তখন রাতুলের দেখা হয়ে গেলো ওর সাথে পরিক্ষা দেওয়া এক বন্ধুর সাথে। রাতুল অনেক মিশুক স্বভাবের ছেলে তাই সহজেই সবার মন কাড়তে পারে। রাতুল কে দেখে আবির ডাক দিতেই দুজন ঘাড় ফিরিয়ে তাকালো। রাতুল হেসে উঠল আবির কে দেখে কিন্তু বাবলু যেনো চোখের সামনে জলজ্যান্ত একটা ভূত দেখছিল! সে নড়তে পারছিল না, হা করে তাকিয়ে রইল‌! ওদের দিকেই তাকিয়ে আছে ভূতটা,হাসছে,এদিকেই আসছে!!

ভয়ে সারা গা কাটা দিয়ে উঠল বাবলুর! কি ভয়ানক চেহারা! আসলে ভয় পাওয়ার ই কথা কারন আবিরের সারা দেহের বেশিরভাগ জায়গায় ই এসিডে ঝলসে গেছে, বিশেষ করে মুখটা! শুধু চোখ দুটো কিছুটা ভালো আছে, যে কোন মানুষ প্রথম দেখাতে আবির কে ভূত ই ভাববে!

আবির পোড়া মুখে হেসে রাতুলের দিকে তাকিয়ে বললঃ কি দোস্ত, তুমি এখানে?

রাতুল বাবলুর দিকে দেখিয়ে বললঃ আমার ছোট ভাই, ও এবার পরিক্ষার্থী, ওর জন্যে বাসা খুঁজতে আসছি।

ওদের কথোপকথন এ বাবলু মনে মনে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল! ও আগে কখনো এসিডে ঝলসে যাওয়া কাউকে দেখে নি তাই ওর কাছে আবির কে প্রথম ভূত মনে হয়েছিল!

আবির বললঃ দোস্ত তোমরা অনেক দেরি করে আসছ, এতোদিনে ত সবাই ভাড়া নিয়ে নিছে, চলো তবু একটু খুঁজে দেখি।

আবির কে সাথে নিয়ে রাতুল আর বাবলু প্রায় ৩ ঘন্টা খুঁজার পর স্কুলের সামনেই একটা বাসা পেলো। বাসার মালিক থাকেন সৌদিতে, বাসায় শুধু ওনার বৌ, দুইটা মেয়ে,বৃদ্ধা মা থাকেন। বাসা টা সবার ই পছন্দ হলো। ওদের কে যে রুম টা দেওয়া হলো ওই ঘরে প্রবশ করে চারদিন ভালো করে দেখে সন্তুষ্টির হাসি ফুটলো সবার মুখে। বাবলু দেখলো পড়ার টেবিলের সামনে বসলে সোজা মাঠ টা দেখা যায়, বিশাল বড় মাঠ! যার ঠিক মাঝখান জুড়ে শত বছরের পুরানো একটা বিশালাকার বট গাছ দাঁড়িয়ে আছে! জায়গাটা খুব সুন্দর আর ভৌতিক! রাতুল বাসার মালিকের বৃদ্ধা মায়ের সাথে যখন সব কথা পাকা করছিল, দরজার আড়ালে দাঁড়িয়ে বৃদ্ধার বড় নাত্নী উকি দিয়ে বাবলুর দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসছিল! ব্যাপার টা রাতুল বাবলু দুজন ই খেয়াল করল। সব কথা পাকাপোক্ত করে ওরা যখন এডভান্সড দিয়ে বেরিয়ে আসলো তখন প্রায় সন্ধ্যা ৭টা বেজে গেছে! যা এই গ্রামের জন্যে অনেক রাত!!


Tuesday, March 24, 2020

"সেই তুমি " পর্বঃ১৬



জল রাস্তায় বেরিয়ে চোখ মুছতে মুছতে ভাবছিল অন্তু কে গিয়ে কি বলবে.....অন্তু ওকে এই অসময়ে বের হতে দেখে আবার যদি উল্টো রাগ করে বসে.........জল যখন অন্তুদের বাসার সামনে আসলো তখন বাসার সামনের দেয়ালের উপর সেদিনের বখাটে ছেলে গুলো বসে ছিল। কেউ একজন জল কে দেখে বেসুরো গলায় গান গেয়ে উঠলো.... "ও টুনির মা তোমার টুনি কথা শুনে না"

অন্যরাও গানের সাথে তাল মিলালো। তাদের সবার মাঝে অপেক্ষাকৃত বেশি খাটো বিদঘুটে চেহারার ছেলে টা গানের মাঝে বললঃ "যদি কথা না শোনে তুইল্লা লইয়া যামু"

জল বুঝতেই পেরেছে কথাগুলো ওকে উদ্দেশ্য করে বলা হচ্ছে তাই রাগে সারা গা জ্বালা করছিল ওর কিন্তু আজকে আর ঝগড়া করার মন মানসিকতা নেই,  এমনিতেই ঘরে সমস্যা চলতাছে তাই দ্রুত হেঁটে অন্তুদের বাসার গেটে ঢুকে গেলো। 

রুমের সামনে এসে আবারো দুগাল, দুচোখ ভালো করে মুছে দরজায় কড়া নাড়ল। ভেতর থেকে কোন শব্দ আসছে না......অন্তু কি ঘুমিয়ে আছে নাকি বুঝতে একটু জোড়ে আবারও নক করতেই অন্তু এসে দরজা খুলল। কেন জানি জলের মনে এখন অন্য রকম একটা সন্দেহ ঢুকলো। সে মনে মনে বললঃ নিশ্চয়ই ঘরে কেউ আছে! তা না হলে দরজা খুলতে এতো দেরি হলো কেন ওর! 

জল অন্তুর সাথে কোন কথা না বলে সোজা ভিতরের রুমে চলে গেলো।  ভালো করে খাটের নিচে, বারান্দায়, পাকের ঘর এমনকি বাথরুম টা ও খুঁজে দেখলো! অন্তু রাজ্যের বিরক্তি নিয়ে বললঃ এই কি খুঁজো তুমি!

জল এমনিতেই রেগে ছিল, আরো রেগে বললঃ আমার ইচ্ছা, আমি যা খুশি খুঁজবো! আপনার কি!

জলের মুখে "আপনি"কথাটা শুনেই অন্তু বুঝতে পেরেছে জল এখনো রেগে আছে আর হয়তোবা ঘরে কিছু একটা হয়েছে তাই নরম স্বরে বললঃ কি হয়েছে তোমার?  ঘরে কিছু হয়েছে? 

অন্তুর মায়াভরা কন্ঠ শুনে জলের কাঁন্না যেনো আরো বেড়ে গেলো!  সে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো!  অন্তু বোকা হয়ে গেলো!  বুঝতে পারল না কি করবে। জল বোরকা, জামা খুলে ফেললো!  অন্তু অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। জল জামা খুলে পিঠ টা দেখালো। 
জলের পিঠের দিকে তাকিয়ে অন্তুর গা শিউরে ওঠলো! জলের পিঠে, হাতের বাহুতে চার আংগুল পরিমান মোটা লাল দাগ ফুলে ফুটে আছে! ফর্সা শরিলে বেমানান দাগগুলো যেনো উপহাস করছিল! 

অন্তু জলকে বুকে জড়িয়ে ধরে বললঃ জান! কে করছে তোমার এই অবস্থা?

জল কাঁদতে কাঁদতে অন্তুর কাছে সব খুলে বলল। রাস্তায় আসার সময় যে বখাটেরা বিরক্ত করে তাও বললো। অন্তুর অনেক রাগ হচ্ছিল তাই সে জলের হাত ধরে ওকে বাসার নিচে নিয়ে এলো। ছেলেগুলো তখনও সেখানেই বসে ছিলো, জলের হাত ধরে অন্তুকে আসতে দেখে সবাই তাকিয়ে রইল।  

অন্তু জলকে নিয়ে ছেলেগুলোর সামনে গিয়ে নরম স্বরে বললঃ এটা কি ভাই? তোমরা আমরা একই এলাকায় থাকি, এক এলাকায় থাকার পর যদি তোমাদের জন্যে আমার ভালোবাসার মানুষ টার ক্ষতি হয়, এটা কি হলো? ওকে বিরক্ত করো কেন তোমরা?  

অন্তুর স্বাভাবিকভাবে বলা কথাগুলো ছেলেদের কাছে তেমন খারাপ মনে হয় নি, খাটো ছেলেটা কেশে বললঃ 
ভুল বুঝছেন আপনারা, আমরা সৌখিন মানুষ,  গান গাই তারমানে এই না যে আমরা উনাকে দেখে এসব করি! 
অন্য আরেকজন বললঃ আপনাকে আমরা ভালো করেই চিনি, আপনাদের দুজন কে হাতে ধরে আসতে দেখেই আমরা বুঝে গেছি আপনাদের মাঝে সম্পর্ক টা কি, তাই চিন্তামুক্ত থাকেন। আজকের পর আমরা আর ওনাকে কিছু বলবো না।

ছেলেদের কথায় অন্তু উষ্ণ একটা ধন্যবাদ দিয়ে  জল কে নিয়ে আবার রুমে চলে এলো।  
জল কিছুক্ষন চুপ করে থেকে অন্তুর দিকে তাকিয়ে বললঃ "তুমি আমাকে কতোটুকু ভালোবাসো? 

অন্তু জলের কোলে মাথা রেখে শুয়ে ছিল। সে জলের হাতটা ধরে চুমো খেয়ে বললঃ ভালোবাসা যদি মাপা যেতো তাহলে আমার ভালোবাসার ওজন হয়ত বুঝাতে পারতাম! 

জল অন্তুর চুলে হাত বুলাতে বুলাতে বললঃ ভনিতা শুনতে চাই না, তুমি শুধু এটা বলো তুমি আমার জন্যে কি করতে পারবা?

অন্তু জলের হাতটা শক্ত করে ধরে বললঃ তুমি যা বলবা আমি তা ই করতে পারবো তোমার জন্যে! 

জলের চোখের একফোঁটা পানি অন্তুর কপালে পড়লো।  

জল অন্তুর দিকে কিছুক্ষণ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে গলা কাশি দিয়ে বললঃ তাহলে আমাকে নিয়ে পালাতে পারবা?

অন্তু লাফিয়ে উঠল শোয়া থেকে! প্রথমে ঠিক করে শুনতে পায়নি তাই আবার জিজ্ঞেস করলোঃ ক....কি বললে তুমি এখন?!!

জল আগের মতোই পলকহীন চোখে জলের দিকে তাকিয়ে থেকে বললঃ আমাকে নিয়ে পালাতে পারবা?

অন্তু জলের চেহারা দেখেই বুঝতে পেরেছে কথাটা মজার জন্য বলা হয় নি।সে জলকে আরো কাছে টেনে নিয়ে জড়িয়ে ধরে বললঃ 

" জানা, এক ঘরে থাকলে এমন একটু আধটু ঝগড়াঝাটি হয় ই, তার মানে তো এটা না যে তুমি বাসা থেকে পালানোর মতো এমন একটা বড় সিদ্ধান্ত নিয়ে নিবা"!!

জল অন্তুর দিকে তাকিয়ে ভ্রুজোড়া কুচকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললঃ এতো যেহেতু ভয় পাও প্রেম করতে আসছিলা কেন? কেন একবারও বলো নাই যে, বিপদ আসলে তুমি সরে যাইবা? আমি অনেক দিন থেকেই খেয়াল করছি তুমি আমাকে এখন আগের মতো ভালোবাসো না! যতোই আমি তোমার কাছে যেতে চাই, তোমাকে পাশে পেতে চাই, তুমি ততোই আমার থেকে দূরে যেতে চাও!! সমস্যাটা কি তোমার?

অন্তু জলের গালে হাত রেখে বললঃ এসব কি উল্টাপাল্টা কথা বলতাছ তুমি! আমি তোমার প্রতি আগে যেমন ছিলাম, এখনো ও তেমন ই আছি! বিশ্বাস করো তুমি!

জল অন্তুর হাত টা সরিয়ে দলো গাল থেকে। সে আরো রেগে উঠল আর চোখ দিয়ে পানি ঝড়তে লাগলো...... সে চোখ মুছতে মুছতে বললঃ তুমি এক বিন্দু ও আগের মতো নেই, যেই তুমি আমাকে এক সেকেন্ড না দেখলে পাগল হয়ে যেতে সেই তুমি এ কয়েকদিনে আমার সাথে ভালো করে কথাও বলো নি! আমার দোষ টা কি একটু বলবা? দোষ কি এটাই যে আমি তোমাকে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ভালোবাসি নাকি দোষ এটা যে, তোমাকে সব দিয়েছি!

অন্তু কি বলবে ভেবে পাচ্ছিল না। সে বুঝতেই পারেনি জল তার ছোট ছোট অভিমানগুলোকে এভাবে বুকে চেপে রেখেছে, আর ভুল বুঝেছে। অন্তুকে কোন কথা বলার সুযোগ দিলো না জল। সে আবারও চোখ মুছে বিরতিহীন ভাবে বলেই চললঃ " সারাদিনে আমাকে কয়টা call, sms,দাও তুমি! আমি কল না দিলে জিবনে কোন দিন কল দিছ তুমি? কল না দাও, আমার কলটা তো অন্তত ধরবা? আজ পর্যন্ত একদিন ও আমার একবার কল দেওয়াতে তুমি কল ধরো নি! তোমার গায়েই লাগে না যে আমি কত রিক্স নিয়ে তোমাকে হাজারটা কল দেই! কেন দেই জানো! আমার কাছে ভালো বাসার মূল্যটা বেশি, আমার কাছে ভালোবাসা মানে শুধুই তুমি,আমার অন্তর আত্মাটাও তোমার জন্যে প্রতি নিয়ত কাঁদে! তুমি বুঝো আমাকে! পালাতে না পারলে বিছানায় নিছিলা কেন! জবাব দিতে পারবা?

জলের কথাগুলো র কোন টা সত্যি কোন টা মিথ্যা অন্তু তা খুঁজার চেষ্টা করল না,  সব কথার বাইরে সে এটাই ভাবতে লাগলো,  ওর অজান্তেই জলের প্রতি হয়তোবা ওর অবহেলা সৃষ্টি হয়েছে আর এই কারনেই জল এতো সন্দেহ শুরু করেছে।
অন্তু জলের হাত টা ধরতে গেল কিন্তু জল ধরতে দলো না। জল অন্তুর দিকে তাকিয়ে কান্নাভেজা কন্ঠে বললঃ

 তুমি বুঝো না কেন! আমার সহ্য হয় না তোমার পাশে কাউকে! আমি নিশ্বাস নিতে পারিনা যখন তোমার পাশে জান্নাত বা অন্য কোন মেয়েকে দেখি! আমাদের সম্পর্ক টা আমাদের দুজনের কারো পরিবার ই মানবে না! তুমি ভাবো কি করবা, যদি পালাতে না পারো, পালাইওনা.....আমি মরে যাবো তবু অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারবো না, আর একটা কথা ভালো করে মনে রেখো, আমি যদি তোমাকে না পাই অন্য কাউকে পাইতেও দিবোনা আর তুমি ও অন্য কাউকে লাইফে জড়াতে পারবা না! 

অন্তু জলের কথায় একটু ও রাগ কএওলো না,  বরংচো জলের প্রতি অন্তুর ভালোবাসা আরো বেড়ে গেলো! সে উঠে দাঁড়িয়ে জল কে জড়িয়ে ধরে ঠোঁটে চুমো দিতে দিতে বিছানায় শুইয়ে জলের বুকের উপর মাথা রেখে বললঃ আচ্ছা, জান, Sorry....ভুল করছি, এখন মাফ চাইছি, আচ্ছা পালাবো তবে আর কয়েক মাস পর! 

জল অন্তুর চুলে হাত বুলাতে বুলাতে বললঃ ওয়াদা দাও?  

অন্তু জলের মাথায় হাত রেখে ওয়াদা করল......যার ফলে দুজনের মাঝে তখন আর কোন পর্দা ছিলো না.......ভালোবাসার সমুদ্রে দুজন যখন সাঁতার কাটছিল মাঝখানে বাঁধা হয়ে আসলো জান্নাতের একটা SmS যা সেকেন্ডের ভিতর জল আর অন্তুর মাঝে আকাশ পাতাল ব্যবধান গড়ে দিল! 

অন্তু যখন জলের গালো,ঠোঁটে চুমো খাচ্ছিল তখন অন্তুর প্যান্টের পকেটে মোবাইলটা ছিল যা জলের পেটে চাপ লাগছিল। জল অন্তু কে মোবাইলটা সরাতে বলল। অন্তু এতোটাই উত্তেজিত ছিলো যে জলের কথায় পাত্তাই দিচ্ছিল না।জল নিজেই হাত দিয়ে পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে পাশে রাখতে গিয়ে দেখলো জান্নাতের নাম্বার থেকে ৫ টা SMS স্কিনে ভেসে আছে! সাথে সাথেই জলের মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। সে অন্তুকে প্রথমে কিছু বললো না। আস্তে করে একটা sms open করল।sms এ লিখা ছিল

"কিছু ভালো বাসা না চাইওতেও হয়ে যায়, তোমার প্রতি আমার ভালো বাসা টাও তেমন"

প্রথম এস এম এস পড়ার পরই জলের গা কাঁপছিল। সে এক ধাক্কা দিয়ে অন্তুকে গায়ের উপর থেকি সরিয়ে দিলো! অন্তু অবাক হয়ে গেলো!  জল জামা পড়তে পড়তে চিতকার বললঃ এসবের মানে কি! 
অন্তু বুঝতে পারছিল না জল কি বলতে চাইছে তাই মোবাইলটা হাত থেকে নিয়ে দেখতে চাইলো কিন্তু মোবাইলে হাত দিতেই জল আরো জোড়ে চিতকার করে বললঃ খবরদার! মোবাইলে হাত দিবিনা! জান্নাত তোকে SmS করার সাহস কই পায়! কুত্তার বাচ্চাটার এতো সাহস তুই ছাড়া ত হয়নি! 

জলের ভাষা শুনে অন্তুর ও অনেক রাগ হচ্ছিল। সে বারবার বোঝাতে চাইলো এসবে ওর কোন সম্পৃক্ততা নেই কিন্তু জল কোন কথাই শুনতে নারাজ ছিল! সে পাগলের মতো হয়ে গেলো!  টেবিলে রাখা কাঁচের গ্লাসের পানিটা এক ঢোক এ পান করে হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে ঠোঁট মুছে আবার কড়া স্বরে বললঃ " তুই আমাকে এতোই বোকা ভাবিস! আমি কি দেইনি তোকে! কেন তুই আবার অন্য মেয়েকে চাস! জান্নাতের এত্ত সাহস হয় কি করে তোর নাম্বারে এস এম এস করার! তোর আজকে থেকে মোবাইল চালানো বন্ধ! 
জল রাগে ফেটে পড়ল!  সে অন্তুর মোবাইল থেকে দুইটা সিম খুলে সাথে সাথে ভেংগে ফেলে মোবাইলটা নিজের ব্যাগে রেখে বললঃ তোর মতো জানোয়ারের কাছে কেঁদে আমার কোন লাভ নেই! তাইতো বলি! তুই পালানোর কথায় এতো লাফিয়ে উঠলি কেন! এখন তো আমার প্রতি মন উঠে গেছে! আসতে বলিস তোর জান্নাত কে! ওর চুল একটাও থাকে কি না......

অন্তু জলের হাত ধরার জন্য সামনে যেতেই জল টেবিলের উপর থেকে স্কেল টা নিয়ে বললঃ খবরদার! তোর ওই নোংরা হাত দিয়ে তুই আমাকে স্পর্শ করবি না! আমি তোরে এতো সহজেই সেড়ে দিবো? তুই আমাকে রেখে অন্য মেয়ের দিকে চোখ তুলে তাকাবি! 

জল যেন পাগল হয়ে উঠেছিল! সে অন্তুর কোন কথা ই শুনতে চাইলো না। ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে গেলো! জলের সাথে অন্তুর যতো রাগারাগি ই হোক না কেন অন্তু সব সময় জল কে বাসায় পৌঁছে দিয়ে আসে, আজকে জলের ব্যবহার অন্তুর এতোই খারাপ লাগলো যে ও আর ঘর থেকেই বের হলো না। জল দরজা দিয়ে বের হতে হতে মনে মনে বললঃ দেখবো আজকে আসে কি না পিছনে পিছনে....

জল বাসার নিচে প্রায় ১৫ মিনিট দাঁড়িয়ে রইল,  অন্তু নামে নি তাই ওর রাগ টা,এতোটাই বেড়ে গেলো যে, সে আবার অন্তুর রুমে গেলো। অন্তু বাইরের দরজাও লাগায় নি, ওই রুমেই শুয়ে শুয়ে ভাবছিল কি করা যায়, এমন সময় জল ঘরে ঢুকে টেবিল থেকে স্কলে টা নিয়ে অন্তুর পিঠে অনেক জোড়ে আঘাত করে বললঃ অন্য সময় ত তুই আমার একটু লেট হলে পিছনে পিছনে বাসা পর্যন্ত যাস, আজকে জান্নাতকে বকা দেওয়াতে তুই ঘর থেকেও বের হলি না! মানে কি এসবের! 

জল রাগে খেয়াই ই করে নি স্কেলের আঘাতে অন্তুর পিঠ কেটে রক্ত বের হচ্ছিল! অন্তু খালি গায়ে ছিল তাই পিঠে হাত দিতেই রক্ত দেখে ও আরো রেগে উঠল!  জল এতোক্ষনে খেয়াল করল অন্তুর পিঠ কেটে রক্ত আসছে! সে অন্তুর দিকে তাকিয়ে বললঃ ঘোর, দেখি কতোটুকু কেটেছে! 

অন্তু জল কে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো।মুখে কোন শব্দ করলো না। জল এতে আরো খেপে গেল। সে অন্তুর দিকে তাকিয়ে বললঃ 

"দরজা খোলা রেখেছিস কি জান্নাতের আসার জন্যে"? আচ্ছা, তুই ই বল- সন্দেহ করবো ই বা না কেন! কি করতাছিস তুই এসব! যদি আমার মোবাইলে কোন ছেলে এমন এস এম এস করতো তুই কি করতি আমার সাথে!

জলের কথায় অন্তু মনে মনে বললঃ খুন করে ফেলতাম!  
কিন্ত মুখে কোন কথা বলল না। জল কাঁধের টা রেখে অন্তুর পিঠের রক্ত নিজের জামা দিয়ে মুছতে মুছতে বললঃ তুই যদি আমাকে সত্যি ভালোবেসে থাকিস তাহলে এই সপ্তাহের ভিতর আমাকে বিয়ে করবি, আমরা পালিয়ে বিয়ে করবো। আর তোর জান্নাতের যে কি করবো তা কাল সকালেই জানতে পারবি! 

অন্তু জলের কোন কথাতে পাত্তা না দিয়ে জল কে বললঃ আমার মোবাইল দেন! আমি আপনার মতো মেয়ের সাথে কোন সম্পর্ক রাখতে চাইনা! 

জল অন্তুর রাগ দেখে ঘাবড়ে গিয়েছিল।নিজেকে সামলে নিয়ে বললঃ না না! সম্পর্ক রাখবা কেন! এখন তো তোমার জান্নাত আছে, নন্দিনি আছে! আমি তো পুরান হয়ে গেছি, তাই না! 
কথাগুলো বলতে জলের ভিতরটা কাঁন্নায় ফেটে যাচ্ছিল! সে কেঁদে কেঁদে বললঃ এত্ত সহজে তোকে আমি ছেড়ে দিবো? আমার দেহে এক ফোঁটা রক্ত থাকতে আমি তোকে কখনো অন্য কারো হতে দিবো না, কথাটা মনে রাখিস! তুই শুধু আমার! 

জল ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে গেলো!  অন্তু জায়গায় বসে রাগে বই খাতা ছিঁড়তে লাগলো।

সেদিন দুজনের মাঝে যে ফাটল সৃষ্টি হয়েছিল তার জন্যে কে দায়ী, কে নয় তা জানি না কিন্তু সেদিনের পর থেকে অন্তুর প্রতি জলের ভালোবাসা যেমন বেড়েছিল সেই সাথে ঘৃন্নাও বেড়েছিল শতভাগ আর এর ফলেই কিছু কাজ শয়তানের জন্যে অনেক সহজ হয়ে গিয়েছিল!





Monday, March 23, 2020

"সেই তুমি" পর্বঃ ১৫



শনিবার সকালে জলের ঘটনাটা চায়ের দোকানে বসে কোন এক জন আলোচনা করছিল। বকুল হোসেন ও সেখানে উপস্থিত ছিলেন কিন্তু তিনি খেয়াল করেন নি মেয়েটা কে। বকুল হোসেন খেয়াল না করলেও ঘটনা বাসা পর্যন্ত পৌঁছাতে বেশি সময় লাগলো না। 
হেনা বেগম বাসার নিচে ভ্যান গাড়ি থেকে তরকারি কিনছিলেন। এমন সময় জান্নাতের মা সেখানে এসে উপস্থিত হলো। মুখে পান চিবুতে চিবুতে হেনা বেগমের দিকে তাকিয়ে বললঃ কিরে জলের মা, জল কে বিয়ে দিয়েছিস কবে? আমাদের কে দাওয়াত ত দিলি না!

হেনা বেগম অবাক হয়ে বললঃ কে বলছে আমার মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি? 
জান্নাতের মা মুচকি হেসে বললঃ শুনলাম যে স্যারের কাছে পড়তে দিয়েছিস ওই স্যারের সাথে নাকি তোর মেয়ের বিয়ে হয়েছে? আর তোর মেয়েতো এখন সব সময় ই নাক ফুল পড়ে থাকে!

হেনা বেগম কি বলবেন বুঝে উঠতে পারছিলেন না তাই কিছুটা বিব্রতবোধ করতে লাগলো। 
হেনা বেগম কে কথাটা বলতে পেরে জান্নাতের মায়ের অনেক খুশি লাগছিল তাই আরো একটু দলিল দেওয়ার চেষ্টা করতে গিয়ে বললঃ যারা যারা ওই স্যারের কাছে পড়ে সবাই এই কথাই বলে যে, তোর মেয়ের সাথে স্যারের সম্পর্ক আছে আর তোর মেয়ে নাকি অনেক মাতবুরি করে ওই বাসায়!

হেনা বেগম বিরক্ত হয়ে বললেনঃ আরে এসব বাজে কথায় কান দিও না তোমরা। আমার মেয়ে একটু চঞ্চল এটা ঠিক কিন্তু আমার মেয়ে এসব করবে না।

জান্নাতের মা হেসে বললঃ তুই তাহলে কিছুই জানিস না। গতকাল আমার মেয়ে র অংকে কি জানি সমস্যা হয়েছিল,  আমাকে বলল, আম্মু আমি একটু স্যারের বাসায় যাবো। মেয়ে বলাতে আমি বললাম, একা যাস না, জল কে নিয়ে যা। আমার মেয়ে তোর মেয়েকে ফোন দিলো আর তোর মেয়ে রেগে বলল "এখন কারো ওর বাসায় যাওয়া যাবেনা! আমি ওকে তালা দিয়ে রেখে চাবি নিয়ে চলে এসেছি"! 
তুই ই বল, এটা কোন কথা হলো? কথাগুলো বলে সরু চোখে হেনা বেগমের দিকে তাকিয়ে রইল দেখার জন্যে যে হেনা বেগমের অবস্থায় কোন পরিবর্তন হয় না কি!

হেনা বেগম মাথা নিচু করে বাজার নিয়ে উপরে উঠে গেলেন! মনের ভিতর বার বার জান্নাতের মায়ের কথাগুলো বাজতে লাগলো। ঘরে ঢুকে ই দেখলো জল নেই, মেজাজটা আরো খারাপ হয়ে গেলো!  মনে মনে বললঃ আজকে আসুক স্কুল থেকে! ওর একদিন, কি আমার একদিন!


জল স্কুলে ঢুকেই জান্নাত কে খুজে বের করল। সাথে নন্দনি ছিল। জল জান্নাতের দিকে তাকিয়ে বললঃ যদি নিজের ভালো চাস অন্তুর পিছন থেকে সরে যা, তা না হলে খুব খারাপ হবে! কাল রাতে তুই অন্তুর খালি ঘরে যেতে চাইছিলি কেন? সমস্যা কি তোর? 

জান্নাত নদিনির দিকে তাকিয়ে বললঃ জল কে চুপ করতে বল, তা না হলে কিন্তু আমার মুখ ছুটবে!

নন্দিনি কিছু বলার আগেই জল চেঁচিয়ে উঠলো!  সে রেগে বললঃ ওয় কি বলবে! তুই অন্য টিচার দেখ, অন্তুর কাছে তোর পড়ার কোন দরকার নাই! 

নন্দিনি জলের দিকে তাকিয়ে শুকনো মুখে বললঃ জল, এটা কেমন কথা তোর! আমরা স্যারের কাছে শুধু পড়তে যাই, প্রেম করতে যাই না, ঠিক আছে? তুই প্রেম করিস এটা তোর ব্যাপার কিন্তু আমাদের কে অযথা সন্দেহ করা ছাড়! 

নন্দিনি সরাসরি জান্নাতের সাপোর্ট করাতে জল বুঝেই গেছে, ওরা দুজন মিলে আছে তাই কড়া নজরে দুজনের দিকে তাকিয়ে বললঃ এমন কোন মার মেয়ের সাহস নাই যে অন্তুকে আমার কাছ থেকে আলাদা করতে পারবে! 
বলে দ্রত ক্লাস রুমে ঢুকে পড়লো 

জান্নাত আর নন্দিনি একে অপরের দিকে তাকিয়ে রইল।  নন্দিনির দিকে গম্ভীর মুখ করে জান্নাত বললঃ জলের একটা ব্যবস্থা করতে হবে, তা না হলে ওর সাহস দিন দিন বেড়েই চলেছে! 

নন্দিনি মাথা নেড়ে সায় দিল!


অন্তু যখন ছেলেদের কে পড়াচ্ছিল আবুল একটু কাচুমাচু করে হেসে বললঃ স্যার, আমি আপনার বেস্ট স্টুডেন্ট, তাই না? একদিন ও বন্ধ কতিনাই!

সাজু বললঃ মিয়া, তুমি বন্ধ করবা কেমনে, তুমি ত এখনো ললিপপ খাও! 

আহমেদ বললঃ মেনশন নট, তবে তুই (আবুল) দেখতেই ত বোকা মার্কা তাই শুক্রবারে ও পড়তে আসিস!

আবুল হেসে বললঃ তোমরা ত পড়ো না, শুধু আড্ডা দাও, আমি পড়ি তাই প্রতিদিন আসতে হয়!

অন্তু সহ সবাই হেসে উঠল।  

*** স্কুল ছুটির পর জল যখন বাসার দিকে যাচ্ছিল, গত রাতের সেই বখাটে ছেলেগুলো জল কে দেখে একে অন্যকে বলতে লাগলোঃ আজকাল জুতার দাম অনেক বেড়ে গেছে, তাই পায়ের জুতা পায়েই যেনো থাকে, তা না হলে নিয়ে গেলে বাপ মায় আবার কানবে!
সবাই হেসে উঠল!  জল বুঝতে পেরেছে কথাগুলো ওকে বলছে কিন্তু আজকে সে আর জবাব দিলো না, অনেক ক্লান্ত লাগছিল ওর, তাই পাত্তা না দিয়ে দ্রুত বাসায় চলে গেলো! বাসায় গিয়ে রুমে ঢুকতেই হেনা বেগম ডাক দিলেন।জল মায়ের কন্ঠ শুনেই বুঝে গিয়েছিল কিছু একটা হয়েছে তাই মনে মনে অনেক ঘাবড়ে গেলো। শান্ত থাকার চেষ্টা করে হেনা বেগমের সামনে গিয়ে বললঃ

" মাত্র আসছি, আগে ফ্রেস তো হতে দাও, তারপর বলতে পারবা কথা"

হেনা বেগম কড়া সুরে বললঃ এসব কি শুনতাছি তোর নামে! 

জলের ভেতটা কেঁপে উঠল!  মনে মনে বললঃ মা কি জেনে গেছে সব কিছু! 
মুখে বললঃ আমি আবার কি করলাম! আর কি শুনছ তুমি আমার নামে? 

হেনা বেগম ঃ তুই নাক ফুল খোল আগে! সারা মহল্লা ডাক পড়ে গেছে তোর নাকি বিয়ে হয়ে গেছে স্যারের সাথে! এসবের মানে কি! আর,তুই নাকি স্যারের বাসায় গিয়ে অতিরিক্ত করিস?

মায়ের কথা বলার ঢং দেখেই জল বুঝে ফেলেছিল কেউ একজন প্যাঁচ লাগিয়েছে তাই রাগে গা জ্বলে উঠল ওর! সে মায়ের দিকে তাকিয়ে বললঃ কে কি বলছে তোমারে! নাম বলো কে বলছে! 

হেনা বেগম জলের রাগ দেখে কিছুটা থতমত খেয়ে গেলো,  তাই আগের চেয়ে একটু নরম স্বরে বললঃ হুম যে বলছে তার নাম আমি তোর কাছে বলি আর তুই গিয়ে ঝগড়াঝাটি শুরু করে দে! বড় হইতাছিস সে খেয়াল আছে! এমনিতেই ত তোকে দেখলে মনে হয় তুই কত বড় তার উপর যদি এমন করিস তোকে ভালো বিয়ে দিবো কি করে! তোর সাইজের ত কোন মেয়েই নেই আমাদের এলাকায়! এখন ই নাক ফুল খোল!

জলের রাগ আরো বেড়ে গেলো,  সে নাকফুল টা মায়ের সামনেই খুলে ফেলল! নাক ফুল খুলার সময় ওর অনেক কান্না পাচ্ছিল কারন অন্তুর সাথে সব হওয়ার পর পর ই জল ঘরে ঝগড়া করে নাক ফুটিয়েছিল, সে নিজেকে অন্তুর বৌ ভাবতে গর্ববোধ করতো, ওর নাকফুল পড়াটাও অন্তুর অনেক পছন্দ ছিল তাই চোখ ভিজে উঠল! মুখে কোন কথা না বলে রেগে ভিতরের রুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিলো! 

হেনা বেগম চিল্লাইয়া বললেন ঃ আজকে থেকে আর পড়তে যাওয়া লাগবে না, আমি অন্য মাস্টার ঠিক করে দিবো তোকে!

**** বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে আসছিল কিন্ত ছেলেরা ছাড়া আর কেউ পড়তে এলো না। সবাই না আসা নিয়ে অন্তুর মাথাব্যথা ছিল না, জল আসেনি তাই ভেতটা,অস্থির হয়ে উঠল।  নানান চিন্তা মাথায় ঘোর পাক খাচ্ছিল। এই রুম, ওই রুম পায়চারী করতে থাকলো, কিছুই ভালো লাগছিল না তাই জলের নাম্বারে sms করল কিন্তু কোন রিপ্লাই আসলো না! অস্থিরতা আরো বেড়ে গেলো অন্তুর।


জল কয়েকবার চেষ্টা করল কিন্তু তার কোন কথা হেনা বেগম শুনতে রাজি হলেন না। পড়তে যেতে দিতে দিতে কোন রকমেই রাজি হলেন না। এমন সময় পাশের ঘরের এক মেয়ে আসলো জলের মায়ের কাছে। নাম মিম। সে হেনা বেগমের সাথে বসে কথা বলতে বলতে জলের দিকে তাকিয়ে বললঃ 

"আন্টি জল কে আর ওই অন্তু স্যারের কাছে পড়তে দিয়েন না, আমি ওর জন্যে মেয়ে টিচার ঠিক করে দিবো"!  কারন জলকে নিয়ে চারদিকে অনেক কথা ছড়িয়ে পড়েছে!

একে মা পড়তে যেতে দিচ্ছিল না তার উপর মিমের মাতুব্বরি তে জলের গায়ে যেনো আগুনের ফোস্কা পড়লো!  
সে রেগে বললঃ দেখো মিম আপু! আমার নামে কে কি বলে না বলে তা নিয়ে আমার কোন মাথা ব্যথা নেই! আমি এই স্যারের কাছেই পড়বো! স্যার তো কোন দিন আমাকে এমন কোন কথা বলেনি! যদি বলতো আমি নিজেই চলে আসতাম স্যারের কাছ থেকে! আমাকে নিয়ে তোমার এতো ভাবতে হবে না! 


মিম হেনা বেগমের দিকে তাকিয়ে বললঃ ভালোই বলছি তোর, খারাপ চাই নি! আন্টি আপনার মেয়ে বেশি বুঝে, পরে একটা বিপদে পড়লে বুঝবে কেমন লাগে, কথাগুলো বলে চলে গেলো! 

মিম ছিল জান্নাতের ফুফাতো বোনের বান্ধবি তাই জলের বুঝতে বেশি অসুবিধা হলো না প্যাচগুলো কে লাগাচ্ছে! জলের মন মেজাজ আরো খারাপ হয়ে গেছে, কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল তার আগেই হেনা বেগম একটা মাঝারি সাইজের বেত দিয়ে খুব জোড়ে জল কে দু চার টা আঘাত করে রেগে বললঃ অনেক সাহস বেড়ে গেছে এ কয়েক মাসে তোর! যারতার সামনে যা তা বলে বসিস কেন তুই! 

এটা বলে আরো কয়েকটি আঘাত করল যা জলের সহ্যের বাইরে ছিল কিন্তু জল মায়ের মুখের উপর কোন কথা বলল না। ভেতরে গিয়ে বোরকা পড়ে ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছিল, হেনা বেগম চিতকার করে বললঃ যাচ্ছিস যা! কিন্তু জিবনে আর কখনো এই ঘরে ঢুকার চিন্তা করবিনা! আসুক আজকে তোর বাবা! আদর দিতে দিতে তোকে মাথায় তুলে রেখেছে! 

জল কোন কথাই পাত্তা দিলো না, চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছিল, সে বেরিয়ে গেলো অন্তুর বাসার উদ্দেশ্যে!! 




Saturday, March 21, 2020

"সেই তুমি" পর্বঃ১৪



মানুষ যখন বেশী আনন্দে থাকে শয়তানের নাকি তা হিংসের কারন হয়ে দাড়াঁয়। জল আর অন্তুর ভালোবাসাতেও ঠিক তাই হলো কিন্তু এক্ষেত্রে শয়তান নিজে নেমে আসেনি, তার কিছু মানুষ বেশের শয়তান দিয়ে উপরে থেকেই কাজ সারিয়ে নিয়েছে........


জল আর অন্তুর সম্পর্ক টা না চাইতেও অনেকের কানে পৌছে গেলো। এর অন্যতম কারন ছিল জলের প্রতি অন্তুর অতিরিক্ত ভালোবাসা। জলের সাথে অন্তুর প্রেমের ৪মাস হতে চলেছে। জল এর ভিতর অন্তুর কোন কথার খেলাপ করেনি কিন্তু জল কয়েক মাস আগে যখন অন্তু কে লিখা জান্নাতের চিঠিটা পেয়েছিল সে থেকে ই জান্নাতের সাথে জলের দূরত্ব সৃষ্টি হয়ে গিয়েছিল। চিঠির লিখাটা সে জান্নাত কে দেখিয়েছিল কিন্তু জান্নাত এসব কথা নিয়ে জলের সাথে কোন কথা বলতে রাজি তো হয় ই নি বরং এ ঘটনার পর থেকে নন্দিনি আর অন্য মেয়ের ভিতর অন্যরকম হিংসের সৃষ্টি করে জান্নাত সহ সবাই আলাদা আলাদাভাবে পড়া শুরু করল! যার ফলে জান্নাত, নন্দিনিদের সাথে জলের সম্পর্ক একেবারেই শেষ পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছিল! জলের ভিতর ও অন্তুকে নিয়ে সন্দেহ সৃষ্টি হতে বেশিক্ষন লাগলো না যদিও নন্দিনিরা আলাদা হওয়ার পর থেকে এই কয়েক মাসে অন্তুর সাথে জলের অনেক ছোটখাটো ঝগড়া হলেও তা বেশি দিন স্থায়ী হয় নি। কিন্তু ১৪ ই এপ্রিলের  ঘটনা টা অন্তু আর জলের মাঝে বিশাল ব্যবধান গড়ে দিয়েছিল! 

অন্তুর বাসায় কেউ নেই। সবাই গ্রামের বাড়িতে গেছে। অন্তু একাই ছিলো।  জান্নাত পড়ার বাহানা করে অন্তুর বাসায় আসলো। অন্তুর পাখি পোষার অনেক শখ ছিল। বারান্দায় খাঁচাতে ৩ জোড়া ঘুঘু পাখি পুষতো অন্তু। জান্নাত ঘরে ঢুকে দেখলো অন্তু রান্না ঘরে রান্না করছে। তাই সোজা রান্দায় গিয়ে অন্তুর পাখিগুলো নিয়ে দুষ্টুমি করতে লাগলো। 

জল জানে অন্তু বাসায় একা, তাই সে আজকে অন্য দিনের তুলনায় একটু আগেই নিজের বাসা থেকে বেরিয়ে গেলো। হেনা বেগম কিছু একটা বলছিল কিন্তু জল পাত্তা না দিয়ে বের হয়ে এলো। জল আসার আগে জান্নাতের বাসায় ফোন করেছিল। জান্নাতের মা বলেছে ও পড়তে গেছে! এই কথাটাই জলের দুশ্চিন্তার কারন। জল জান্নাতকে একদম ই দেখতে পারে না কারন জান্নাত অন্তুকে লাভ করে এটা সে জানে। জল একটু তাড়াতাড়ি হেঁটে অন্তুর বাসার সামনে পৌছাতেই পেছন থেকে নন্দিনি ডাক দিলো!  
নিন্দিনির ডাকে জল কেবল মাত্র হাত ইশারা করল কিন্তু কোথাও দাঁড়াল না, সোজা সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে এলো। দরজা ধাক্কা দিয়ে দেখল ভেতর থেকে লক করা!  জলের মাথা সাথে সাথে ই গরম হয়ে গেলো! সে দাঁত চেপে খুব জোড়ে দরজায় নক করতে লাগলো। 

অন্তু রান্না ঘরে ছিল তাই শব্দটা ততোটা শুনতে পায়নি। জান্নাত বুঝতে পেরেছিল জল আসছে তাই ইচ্ছে করেই একটু দেরি করে দরজাটা খুলল! 

দরজা খুলতেই জল দরজা টা জোড়ে ধাক্কা দিয়ে ভেতরে চলে গেলো!  জান্নাত বিরক্ত হলো কিন্তু মুখে কিছু বললো না। সে চুপচাপ আবার আগের মতো ই পাখি নিয়ে দুষ্টুমি করতে লাগলো যা দেখে জলের গায়ে আগুন লেগে গেলো রাগে! সে ব্যাগটা বিছানায় ছুড়ে মেরে অন্তুকে ডাক দিয়ে বললঃ এই!  এইদিকে আসো একটু!

অন্তু রান্না ঘর থেকে যখন এলো দেখলো জল কোমড়ে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।  অন্তুকে দেখে জল গলার স্বরটা তীব্র করে বললঃ খালি ঘরে দরজা খুলতে এতো ক্ষন লাগলো কেন তোমার? আর খালি ঘরে তুমি জান্নাতকে কেন ভেতরের রুমে এনে রাখছ! 

সামনাসামনি অপমানে জান্নাত রেগে উঠল!  সে অন্তুর দিকে তাকিয়ে বললঃ স্যার, আমার ব্যাপারে আপনার Gf যেনো কোন কথা না বলে! আমি পড়তে আসছি, ওর মতো প্রেম করতে আসিনি! 


অন্তু কিছু বলার আগেই জল আরো জোড়ে চেঁচিয়ে উঠে ভ্রুজোড়া উপরে তুলে বললঃ তোর স্বভাব আমার জানা আছে! তুই তো এটা জানিস,  ওর সাথে আমার সব হইছে তাও একবার দুবার না! হাজারবার! ওকে আমি স্বামী মানি মন থেকে! তুই কি বুঝস, একটা মেয়ের কাছে স্বামী মানে কি! আমি পূজা করি ওর! আমার রাতে ঘুম হয় না ওর জন্যে চিন্তা করতে করতে! তুই কেন আমার জিনিসটাতে ভাগ বসাতে চাস!

জান্নাত নত স্বিকার না করে উল্টো আরো রেগে গেলো।  সে চাইছিল অন্তু ওর পক্ষ নিয়ে জল কে কিছু বলুক তাই অন্তুর দিকে তাকিয়ে বললঃ স্যার, জল যদি আর একবার বাজে কথা বলে আমার হাত উঠবে ওর গায়ে আর তারপর যা হবে তা আপনি সহ্য করতে পারবেন না, আমি আমার আব্বু আম্মু নিয়ে আসবো বলে দিলাম! 

অন্তু এতোটা অবাক আগে কখনো হয়নি! সে ভেবে পেলোনা জল এতো বাজে ব্যবহার কেন করছে আর কেন ই বা সামনাসামনি জান্নাতকে এতো অপমান করছে! 
অন্তু এবার জলের দিকে তাকিয়ে বললঃ তুমি অযথা কেনো এমন করতাছ? আমি রান্না ঘরে ছিলাম তাই শুনিনি, আর জান্নাত ত দরজা খুলছেই! এতে রাগার কি হলো! 

অন্তুর কথায় জলের মেজাজ এতোটা ই খারাপ হলো যে, সে হাত থেকে কলম টা ফ্লোরে ছুড়ে মারল তারপর জান্নাতের দিকে তাকিয়ে বললঃ
 আমার গায়ে হাত তুলবি? তুলে দেখা? তোর মতো ১০ টা কে আমি এক থাপ্পড় দিয়েই অজ্ঞান বানাতে পারবো, আয় সামনে?  

জান্নাত টিটকারি দিয়ে বললঃ 
আল্লাহ তোর মতো সাইজ আমাকে দেয় নি এটাতে আমি আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞ! আর শোনেন স্যার, আমি চলে যাচ্ছি! এতো অপমান সহ্য করে পড়ার তো কোন দরকার নাই আমার! জান্নাত ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছিল,কিন্তু দরজা পর্যন্ত গিয়ে  আবার ফিরে এলো! জলের দিকে তাকিয়ে বললঃ এখনো বিয়ে করিস নি, অধিকার কম দেখাবি তা না হলে অনেক ভোগান্তি আছে তোর কপালে, কথাটা মনে রাখিস! বলেই দ্রুত বেরিয়ে গেলো। 


জান্নাত চলে যাওয়ার পর অন্তুর দিকে কড়া নজরে জল কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল, তারপর বললঃ ঘরের তালা কই? 

অন্তুঃ আলমারির উপর।

জল আলমারির উপর থেকে তালা চাবি নিয়ে বললঃ 
আমি যাওয়ার সময় তোমাকে বাসায় তালা দিয়ে যাবো। তোমার তো বাইরে কোন কাজ নেই, আর ঘরে ত অন্য কেউ ও আসবে না তাই আজকে কাউকে পড়াইতে হবে না, আমি কালকে এসে তালা খুলবো কারন বলা ত যায় না, ছেলেদের মন, কখন দেখা যাবে জান্নাত রাতে চলে আসবে!

জলের কথাগুলো অন্তুর কাছে কাটা ঘায়ে নুনের ছিটার মতো লাগছিল, সে একটু কেশে বললঃ 
তুমি কি শুরু করছ এসব! ভালো লাগতাছে না তো আমার এসব শুনতে! আমি কোন অপরাধ করিনাই! তালা দিয়ে যাইবা, আমি দোকানে যাবো না? খাবো কি- তোমাকে রেঁধে? 


জল  ঠোঁট চুষতে চুষতে বললঃ আমি খাবার নিয়ে আসবো বাসা থেকে! বের হওয়ার কোন দরকার নেই! 

অন্তু বুঝলো জল আজকে অনেক রেগে আছে তাই আর কথা কাটাকাটি করতে চাইলো না। জল কে শান্ত করার জন্য বললঃ আচ্ছা, তালা দিয়ে ই যাইও, আগে বসো, তোমাকে দেখিনা মন ভরে একটু দেখি!

অন্তুর কথা ঘোরানোর স্বভাবটা জল আগে থেকেই টের পেয়েছিল তাই ওর দিকে কড়া নজরে তাকিয়ে রইল, অন্তু হেসে বললঃ 
" আচ্ছা, এতো পাগলামি করতাছ কেন?  কি হইছে বলবা তো"! 

জল একটু ভেবে বললঃ যা বলবো তা শুনবা? 

অন্তু মাথা নেড়ে সায় দিলো। জল একটা মুচকি হাসি দিয়ে বললঃ আচ্ছা, আজকে থেকে আর জান্নাত কে পড়াতে পারবানা!

অন্তু অবাক হয়ে বললঃ এইসব কি! আর কয়েকদিন পর SSC এক্সাম, আমি এখন যদি ওকে ছেড়ে দেই তাহলে ওর পরিবার কি ভাববে! 

জলের ঠোঁটের হাসি টা বন্ধ হয়ে গেলো,  সে বিছানা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে  কড়া স্বরে বললঃ  
তার মানে তুমি আমার কথা রাখতে পারবা না? এটাই তো?

অন্তু জল কে শান্ত করার চেষ্টা করতে চাইলো কিন্তু জল আরো একবার বললঃ just এটা বলো, পারবা কি না? 

অন্তু মাথা নিচু করে বললঃ এই মূহুর্তে এটা করতে পারবো না! 

জল মুখে আর কোন শব্দ ই করলো না, সোজা ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে গেলো,  অন্তু জায়গায় ই বসে ছিল, এক মিনিট পর জল আবার ফিরে এলো...তালা চাবিটা টেবিলের উপর থেকে নিয়ে দরজাটা খুব জোড়ে লাগিয়ে তালা মেরে চাবি নিয়ে চলে গেলো!!  

অন্তুর  অনেক রাগ হচ্ছিল! সে হাতের পাশে রাখা ডাইরিটা বিছানা থেকে ছুরে নিচে ফেলে দিয়ে জোড়ে একটা আর্তনাদ করে উঠলো!  সব কিছু বিরক্ত লাগছিল! জল কেনো এতো সন্দেহ করতে শুরু করেছে তা ভেবে পেলো না.......


জান্নাত বাসায় এসে রাগে ফুলে ফেঁপে উঠল! ঠোঁট কামড়াতে লাগলো...... মনে মনে বললঃ আজকের অপমানের প্রতিশোধ তো আমি নিয়েই ছাড়বো! আমি বেঁচে থাকতে অন্তুর সাথে তোর মিল হতে দিবো না। 

জান্নাত ছিলো অনেক চালাক। সে অনেক ভেবেচিন্তে একটা বুদ্ধি বের করল জলের সাথে অন্তুর ঝগড়া লাগানোর জন্যে। বুদ্ধিটা বের করে নিজেই নিজেকে ধন্যবাদ দিতে লাগলো!   জান্নাত নন্দিনি কে ফোন করে ওর বাসায় আসতে বলল। নন্দিনি যখন জান্নাতের বাসায় এলো জান্নাত নন্দিনি কে আজকের অপমানের কথাটা অনেকটা ই বাড়িয়ে কান্নাভেজা কন্ঠে বলতে থাকলো। সব শুনে নন্দিনি ও রেগে গেলো। নন্দিনি জান্নাতের দিকে তাকিয়ে বললঃ 
"আজকে রাতেই কাজটা করবো, ভাবিস না"! 


নন্দিনি চলের যাওয়ার পর জান্নাতের ভিতর অন্তুকে নিয়ে অন্যরকম একটা অনুভূতি কাজ করছিল! সে পাগল হয়ে যাচ্ছিল অন্তুকে কাছে পাওয়ার জন্য! সে অন্তুকে কল দিলো।অনেক ক্ষন রিং হওয়ার পর অন্তু ফোন টা রিসিভ  করতেই জান্নাত বললঃ 
" স্যার, আপনার মেডামের যদি পড়া শেষ হয় আমাকে একটু জানাইয়েন, আমি হিসাব বিজ্ঞানের একটা অধ্যায় বুঝতে পারছিনা, ওটা বুঝতে হবে।

অন্তু রেগেই ছিল। সে আরো রেগে বললঃ ও পড়েনি, ও আমাকে ঘরে তালাবদ্ধ করে রেখে রেগে চলে গেছে!
 
জান্নাত সুযোগ টা হাত ছাড়া করল না, সাথে সাথেই অনেকটা টিটকারির সুরে বললঃ ঢং ইজ কুয়ারা! আপনাকে তালা দিয়ে যায় আর আপনি বসে বসে মুড়ি খান! ওয়াও!!

জান্নাতের টিটকারি অন্তুর গায়ে লাগলো। অন্তু বললঃ আজেবাজে কথা বাদ দাও তো! মন মেজাজ এমনিতেই খারাপ,  আমি রান্না করার জন্য কোন জিনিস আনতে যাবো, সেই টা ও পারছিনা!  
কথাটা বলে অন্তু ফোন রেখে দিলো! জান্নাতের এত্তো রাগ হলো জলের উপর!  সে রাগে হুঁশ হারিয়ে ফেললো!  জলের নাম্বারে কল দিতেই ওর মা ফোন ধরল।

হেনা বেগম ঃ কে?
জান্নাত বললঃ আন্টি আমি জান্নাত, জল কে একটু দেওয়া যাবে?

হেনা বেগম ফোন কানে রেখেই জল কে জোড়ে ডাক দিয়ে বললঃ এই তোর ফোন আসছে, জান্নাত ফোন দিছে।

জান্নাতের নাম শুনতেই জলের মেজাজ এতোটা ই খারাপ হলো যে কোল থেকে ছোট বোন কে একরকম আছাড় দিয়েই খাটে নামিয়ে দৌঁড়ে এলো। 

জলঃ কেন ফোন করেছিস? 

জান্নাত ঃ স্যার বলছে চাবি দিতে! আমি স্যারের বাসায় একাউন্টিং করতে যাবো, আমি আসতাছি, চাবি টা রেডি রাখিস!

জান্নাত খুব স্বাভাবিক ভাবেই মিথ্যে কথাগুলো সত্য হিসেবে বলে গেলো কিন্তু ওর কথাতে জল আরো বেঁকে বসলো!  জল বড় একটা নিশ্বাস ছেড়ে জান্নাতকে বললঃ 

তাই নাকি! চাবি দেওয়ার জন্যে তোকে দিয়ে ফোন দেওয়াইছে? ওকে বলে দে, চাবি আমি কালকের আগে দিবো না, আর দরজা টা ও কালকের আগে খুলবো না!

জান্নাতঃ কাজটা কিন্তু বেশি বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে জল! চাবি দিবি,  আমি আসবো!

জল স্বাভাবিকভাবেই বললঃ কখনো সম্ভব না। রাখি! 
জল ফোন রেখে দিতেই জান্নাত রাগে ফেটে পড়ল! দেখলো পাশে ওর মা দাঁড়িয়ে আছে!  
জান্নাতের মা কড়া কন্ঠে জিজ্ঞেস করল ঃ কিসের চাবি? কাকে আটকে রাখা হইছে?

জান্নাত রাগে মায়ের কাছে সব বলে দিলো! জান্নাতের মা অবাক হয়ে বললেনঃ আরে বাপ রে! বকুলের মাইয়ার এতো পাখা গজাইছে! আমি কালকেই বলতাছি জলের মার কাছে সব!
জান্নাত মাথা নেড়ে না করে বলল বললঃ না, তোমার কিছু বলার দরকার নাই, যা বলার আমি ই বলবো! 

জান্নাতের সাথে কথা বলে জল অন্তুর উপর রেগে ফেটে পড়ছিল! সে পাগল হয়ে যাচ্ছিল!  উঁকি দিয়ে দেখলো মা কি করে। হেনা বেগম পাকের ঘরে রান্না করছিল, জল বললঃ আম্মু আমি নিচের দোকান থেকে একটা ডিম নিয়ে আসি! কথাটা বলে উত্তরের আশায় না থেকে বোরকা পড়ে অন্তুর বাসার চাবি নিয়ে রাস্তা দিয়ে পাগলের মতো দ্রুত হেঁটে আসছিল, অন্তুর বাসার নিচে আসতেই কয়েকটা বখাটে ছেলে জল কে উদ্দেশ্য করে বাজে বাজে মন্তব্য করতে লাগলো!  অন্য সময় হলে জল চুপ থাকতো কিন্তু আজকে রাগে ওর মেজাজ এতোটা ই খারাপ হয়ে গেছিল যে, সে কথাগুলো শুনা মাত্র ছেলে গুলির সামনে গিয়ে বললঃ 
এই!  কি বলছিস তোরা?

জলের কথায় একটু অবাক হয়ে গেলো সবাই, কেউ একজন রাগ দেখিয়ে জায়গায় থেকে উঠতে যাচ্ছিল জল পা থেকে জুতা টা খুলে দেখিয়ে বললঃ এটা চিনিস? জুতা দিয়ে পিটিয়ে ইভটিজিং করা বের করে দিবো জানোয়ারের দল! 

জলের চেচামেচি দেখে অন্য লোকজন এদিকে আসতে লাগলো যা দেখে ছেলেগুলো সেখান থেকে চলে গেলো.... 

জল দরজার কাছে এসে হাত দিয়ে দুপাশের গাল মুছে দরজার তালা খুলে ভেতরে ঢুকে দেখলো অন্তু লুংগি পড়ে শুয়ে আছে, যা দেখার পর জলের মেজাজ আরো খারাপ হয়ে গেলো!  সে অন্তুর দিকে তাকিয়ে হাত থেকে ডিম দুইটা দিয়ে বললঃ 
ভালোইতো! জান্নাত আসবে, তাই প্যান্ট চ্যাঞ্জ করে লুংগি পড়ে অপেক্ষা করা হচ্ছে! ওয়াও! আশ্চর্য না হয়ে পারলাম না!

অন্তু আগেই রেগে ছিল তাই জল এসব বলাতে সাথে সাথে ই বললঃ তোমার কি সমস্যা? আমি কার জন্যে অপেক্ষা করবো না করবো আমার ব্যাপার!  

অন্তু জানতো না জান্নাত জল কে কল দিয়ে চাবির মিথ্যে কথাটা বলেছে তাই অন্তু যখন জলের কথার এমন উত্তর দিলো জলের মন করল জান্নাত সত্যি ই বলেছে! জলের রাগ এতো টাই বাড়লো সে টেবিলের উপর থেকে একটা স্কেল নিয়ে অনুর গায়ে ঢিল মারলো! স্টিলের স্কেল ছুড়ে মারাতে অন্তুর হাতের এক পাশ কেটে রক্ত বের হচ্ছিল যা দেখে জল প্রথমে একটু নরম হয়ে পড়েছিল কিন্তু মূহুর্তের ভিতর ই নিজেকে সামলে নিয়ে বললঃ 
তোর এত্ত বড় সাহস! আমার সাথে প্রেম করে, আমার সাথে সব কিছু করার পর তুই আবার অন্য মেয়ের কাছে যাবি! আমি বেঁচে থাকতে তা কোন দিন ই সম্ভব না! 

একে রেগে ছিলো, তারপর জল হাত কেটে ফেলেছে তারউপর জলের মুখে তুই করে কথা শুনার পর অন্তুর মেজাজ এতোটাই বিগড়ে গেলো যে, সে জলের দিকে আংগুল তুলে বললঃ যদি নিজের ভালো চান আমার সামনে থেকে এখন চলে যান! তা না হলে অনেক খারাপ হবে! প্রত্যেক বৃহস্পতিবার আপনার কি হয়! আপনি ঝামেলা করেন ই! পাইছেন কি! কথাগুলো বলে ব্যাথায় হাতে টিস্যু দিয়ে চেপে ধরল!

জল অন্তুর হাতের দিকে তাকিয়ে মনে মনে অনেক কষ্ট পাচ্ছিল কিন্তু মুখে সেই আগের রাগ রেখেই বললঃ তুই আমার সাথে এমন করতাছস কেন তাইলে! আমি কি না করছি তোর জন্যে! সব ছেড়ে দিছি! ঘর থেকে এক পা ও বের হইনা, কারো সাথে কথা বলি না! এমন কি আপন মামা র সাথেও তুই না করার পর কথা বলি নাই আর তুই রাত আট্টার সময় জান্নায় কে খালি বাসায় আনার কথা ভাবিস! মজা শেষ হয়ে গেছে বুঝি আমার কাছ থেকে, তাই না! জান্নাত রাগে কেঁদে ফেলল! 

অন্তু ওর কাঁন্নার দিকে না তাকিয়ে বললঃ আমার না,  বলেন আপনার মন উঠে গেছে আমার উপর থেকে! মেয়েরা তো একজনের কাছে বেশি দিন থাকতে পারেনা তাই অন্যজনের কাছে যাওয়ার বাহানা খুঁজে!  পুরনো হয়ে গেছি তাই অবহেলাটাও বেশি ই করতাছেন! যাকে তাকে নিয়ে সন্দেহ করেন! একটা কথা মনে রাখবেন, আল্লাহ কারো জন্যে এককভাবে রাত রাখেনা! রাতের পর দিন আসবেই!আজকে আমাকে যতোটা কষ্ট দিয়েছেন একদিন আপনিও ততোটাই কষ্ট পাবেন!

জল বুঝল অন্তু অনেক কষ্ট পেয়েছে। জল ইচ্ছে করে আঘাত করে নি, স্কেল যে এতো জোড়ে লাগবে জল বুঝে উঠতে পারে নি, সে মুখে তা প্রকাশ করল না। জল কান্নাভেজা কন্ঠে বললঃ একটা কথা মনে রাখিস, ভালোবাসি মন থেকে আর তোকে বিশ্বাস করি হৃদয় থেকে! আমার সাথে অন্য কারো তুলনা দিতে আসিস না! আমার ধারের কাছেও একটাও নেই তবু আমি শুধু তোকেই ভালোবাসি আর তোর জন্যেই অপেক্ষা করে পথ চেয়ে থাকি! বাসায় গেলে মনে হয় দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে!
 কথাগুলো বলে জল অন্তুর সামনে গিয়ে ওর হাতটা ধরতে চাইল কিন্তু অন্তু হাত স্পর্শ করতে দিলো না! জল অন্তুর ব্যবহারে কষ্ট পেলেও মুখে কিছু না বলে অন্তুকে জড়িয়ে ধরে ঠোঁটে কিস করতে লাগলো! জল ভেবেছিল অন্তুর রাগ হয়তোবা এতে কমবে কিন্তু অন্তু আরো রেগে গেলো! 

অন্তুঃ গায়ে হাত দিবেন না! বাসায় যান! 

জল স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করে বললঃ না, যাবো না, তুই আমাকে রাগাইলি কেন! এখন রাগ ভাংগা, তারপর যাবো! 
অন্তু ঃ সামনে থেকে যদি এখন ই না যান অনেক খারাপ হবে! 

এবার জলের অনেক ঘৃন্না লাগছিল! সে আবার রেগে উঠল! কাঁন্নাভেজা কন্ঠে রেগে বললঃ শোন তোকে যদি আমি না পাই, অন্য কাউকে পাইতেও দিবোনা! এমন অবস্থা করবো যে আমি না পেলে তুই নিজেও থাকবি না! তুই শুধু আমার! কোন মেয়ের কলিজাতে এতো সাহস নেই যে তোকে আমার কাছ থেকে আলাদা কর‍তে পারে! 

জলের শেষের কথাগুলোতে অন্তুর রাগ  একেবারেই শেষ হয়ে গিয়েছিল কিন্তু ততোক্ষনে জল দরজা জোড়ে ধাক্কা দিয়ে বেরিয়ে গেছে! জলের কথায় অন্তুর নিজেকে অনেক ভাগ্যবান মনে হতে লাগলো!  সে মনে মনে বললঃ সত্যি আমি তোমার মতো কাউকে দেখিনি কখনো!